ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

গাংনীতে গৃহহীনদের জন্য নির্মিত ঘরে বাস করছেন অন্যরা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৩৩:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • / ১২ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় হতদরিদ্র, অসহায়, ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য সরকারিভাবে আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহনির্মাণ করে তাদের বসবাসের জন্য একটা ঠিকানা করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে উপকারভোগী গরীব অসহায় পরিবার বসবাস করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দেখা গেছে নির্মিত আশ্রয়ন প্রকল্পের গৃহে উপকারভোগীরা বসবাস না করে বাস করছেন অন্যরা। তাহলে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর আসলে কাদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে! এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর মিলছে না।

স্থানীয়দের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বামন্দী ইউনিয়নের আওতাধীন জোড়পুকুরিয়া-ষোলটাকা সড়কের পার্শ্বে আশ্রয়ন প্রকল্পের ৭টি ঘর পাশাপাশি নির্মিত হয়েছে। উপজেলা ভূমি অফিস কর্তৃক বন্দোবস্তকৃত খাসজমির ওপর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের বাস্তবায়নে ঘরগুলি নির্মাণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় মেম্বার কর্তৃক যাচাই-বাছাই শেষে প্রকৃত গরীব অসহায় গৃহহীনদের জন্য ঘরগুলি নির্মাণ করা হলেও উপকারভোগীরা তাদের জন্য বরাদ্দকৃত ঘরে বসবাস না করে অন্য কাউকে বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছে। এমন অভিযোগ উঠেছে জোড়পুকুরিয়া বাজারের অদূরে নির্মিত আশ্রয়ন প্রকল্পে। ৭টি ঘর নির্মিত হলেও বসবাস করছে মাত্র ৩টি পরিবার। বাকি ৪টি পরিবারের লোকজন কেউ থাকে না।

বসবাসকারীদের নিকট থেকে জানা গেছে, প্রকল্পের ৭ নম্বর ঘরটি বরাদ্দ দেওয়া হয় ভরাট গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী (আধাপাগল) অসহায় শামীম রেজার পরিবারকে। শামীম রেজা বরাদ্দকৃত ঘরে বসবাস করতে চাইলেও তার স্ত্রী সেখানে থাকবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। সে কারণে শামীম রেজা ঘরে না থেকে আনোয়ার হোসেন নামে একজন রাজমিস্ত্রীকে তার পরিবারকে নিয়ে থাকার অনুমতি দিয়েছে। একইভাবে ৬ নম্বর ঘরটি তেরাইল গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন নামের একজনকে বরাদ্দ দেওয়া হলেও তিনি তার গ্রামে বাড়ি ঘর থাকায় তিনি তার নিকটাত্মীয় লাভলু নামের একজন হোটেল ব্যবসায়ীকে থাকার অনুমতি দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে লাভলু জানান, ‘জাহাঙ্গীর আমার চাচাতো ভাই। সে তার ছোট শিশুকে নিয়ে এখানে থাকবে না বলে আমাকে থাকতে বলেছে।’ বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বসবাসকারীরা স্বীকার না করলেও তারা নাকি ভাড়া দিয়ে সেখানে বসবাস করেন। এমনিভাবে তেরাইল গ্রামের সাবিনা খাতুন (৫ নম্বর ঘর) ও বালিয়াঘাট গ্রামের ফরিদা খাতুন (৪ নম্বর ঘর) নির্মিত ঘরে না থেকে নিজ নিজ গ্রামে অবস্থান করেন। ওই ঘর দুটি তালাবদ্ধ পড়ে থাকে। এমনিভাবে উপজেলার সবকয়টি ইউনিয়নে এরকম ঘর নির্মিত হয়েছে। যেখানে উপকারভোগীরা আজও সেখানে বসবাস করে না। অথচ প্রকৃত গৃহহীনরা ঘর না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ওবাইদুর রহমান কমলের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, ‘অভিযোগটি আমি শুনেছি। আমার মেয়াদের আগের চেয়ারম্যান এইভাবে যাচাই-বাছাই না করে গৃহ বরাদ্দ দিয়েছে। আমি আমার মেম্বারদের সাথে নিয়ে আশ্রয়ন প্রকল্পটি পরিদর্শন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

এনিয়ে উপজেলা ভূমি অফিস ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, এমন অনিয়ম করার কোনো সুযোগ নেই। ঘটনা প্রমাণিত হলে বরাদ্দকৃতদের নাম কর্তন করে প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে বরাদ্দ দেওয়া হবে।

এবিষয়ে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মৌসুমী খানম জানান, ‘এরকম অভিযোগ আমি স্থানীয়দের নিকট থেকে পাইনি। এই প্রকল্পগুলো আগে নেওয়া হয়েছিল। হয়ত যাচাই-বাছাইয়ে কিছুটা অনিয়ম হয়েছিল। তাই প্রকৃত গৃহহীনদের ঘর দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানের সাথে আলাপ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

গাংনীতে গৃহহীনদের জন্য নির্মিত ঘরে বাস করছেন অন্যরা

আপলোড টাইম : ০৮:৩৩:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২

সমীকরণ প্রতিবেদন: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় হতদরিদ্র, অসহায়, ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য সরকারিভাবে আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহনির্মাণ করে তাদের বসবাসের জন্য একটা ঠিকানা করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে উপকারভোগী গরীব অসহায় পরিবার বসবাস করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দেখা গেছে নির্মিত আশ্রয়ন প্রকল্পের গৃহে উপকারভোগীরা বসবাস না করে বাস করছেন অন্যরা। তাহলে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর আসলে কাদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে! এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর মিলছে না।

স্থানীয়দের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বামন্দী ইউনিয়নের আওতাধীন জোড়পুকুরিয়া-ষোলটাকা সড়কের পার্শ্বে আশ্রয়ন প্রকল্পের ৭টি ঘর পাশাপাশি নির্মিত হয়েছে। উপজেলা ভূমি অফিস কর্তৃক বন্দোবস্তকৃত খাসজমির ওপর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের বাস্তবায়নে ঘরগুলি নির্মাণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় মেম্বার কর্তৃক যাচাই-বাছাই শেষে প্রকৃত গরীব অসহায় গৃহহীনদের জন্য ঘরগুলি নির্মাণ করা হলেও উপকারভোগীরা তাদের জন্য বরাদ্দকৃত ঘরে বসবাস না করে অন্য কাউকে বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছে। এমন অভিযোগ উঠেছে জোড়পুকুরিয়া বাজারের অদূরে নির্মিত আশ্রয়ন প্রকল্পে। ৭টি ঘর নির্মিত হলেও বসবাস করছে মাত্র ৩টি পরিবার। বাকি ৪টি পরিবারের লোকজন কেউ থাকে না।

বসবাসকারীদের নিকট থেকে জানা গেছে, প্রকল্পের ৭ নম্বর ঘরটি বরাদ্দ দেওয়া হয় ভরাট গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী (আধাপাগল) অসহায় শামীম রেজার পরিবারকে। শামীম রেজা বরাদ্দকৃত ঘরে বসবাস করতে চাইলেও তার স্ত্রী সেখানে থাকবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। সে কারণে শামীম রেজা ঘরে না থেকে আনোয়ার হোসেন নামে একজন রাজমিস্ত্রীকে তার পরিবারকে নিয়ে থাকার অনুমতি দিয়েছে। একইভাবে ৬ নম্বর ঘরটি তেরাইল গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন নামের একজনকে বরাদ্দ দেওয়া হলেও তিনি তার গ্রামে বাড়ি ঘর থাকায় তিনি তার নিকটাত্মীয় লাভলু নামের একজন হোটেল ব্যবসায়ীকে থাকার অনুমতি দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে লাভলু জানান, ‘জাহাঙ্গীর আমার চাচাতো ভাই। সে তার ছোট শিশুকে নিয়ে এখানে থাকবে না বলে আমাকে থাকতে বলেছে।’ বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বসবাসকারীরা স্বীকার না করলেও তারা নাকি ভাড়া দিয়ে সেখানে বসবাস করেন। এমনিভাবে তেরাইল গ্রামের সাবিনা খাতুন (৫ নম্বর ঘর) ও বালিয়াঘাট গ্রামের ফরিদা খাতুন (৪ নম্বর ঘর) নির্মিত ঘরে না থেকে নিজ নিজ গ্রামে অবস্থান করেন। ওই ঘর দুটি তালাবদ্ধ পড়ে থাকে। এমনিভাবে উপজেলার সবকয়টি ইউনিয়নে এরকম ঘর নির্মিত হয়েছে। যেখানে উপকারভোগীরা আজও সেখানে বসবাস করে না। অথচ প্রকৃত গৃহহীনরা ঘর না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ওবাইদুর রহমান কমলের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, ‘অভিযোগটি আমি শুনেছি। আমার মেয়াদের আগের চেয়ারম্যান এইভাবে যাচাই-বাছাই না করে গৃহ বরাদ্দ দিয়েছে। আমি আমার মেম্বারদের সাথে নিয়ে আশ্রয়ন প্রকল্পটি পরিদর্শন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

এনিয়ে উপজেলা ভূমি অফিস ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, এমন অনিয়ম করার কোনো সুযোগ নেই। ঘটনা প্রমাণিত হলে বরাদ্দকৃতদের নাম কর্তন করে প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে বরাদ্দ দেওয়া হবে।

এবিষয়ে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মৌসুমী খানম জানান, ‘এরকম অভিযোগ আমি স্থানীয়দের নিকট থেকে পাইনি। এই প্রকল্পগুলো আগে নেওয়া হয়েছিল। হয়ত যাচাই-বাছাইয়ে কিছুটা অনিয়ম হয়েছিল। তাই প্রকৃত গৃহহীনদের ঘর দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানের সাথে আলাপ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’