ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

গলায় অস্ত্রপচারের স্থান দিয়ে রক্তক্ষরণে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৫৪:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২১
  • / ১০৫ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গায় শিশুর টনসিল অপারেশনের পরবর্তী পরিচর্যার অভাবে বিপত্তি

সেকেন্ডারি হ্যামারেজের কারণে রক্তক্ষরণ হচ্ছে : ডা. শাফিউল কবির
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গায় ইম্প্যাক্ট ফাউন্ডেশনে টনসিল অপারেশনের ১০ দিন পর সিফাত (৯) নামের এক শিশুর অস্ত্রপচারের স্থান দিয়ে রক্তক্ষরণের ঘটনা ঘটেছে। শিশু সিফাত বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে ডা. আল ইমরান জুয়েলের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। টনসিল অপারেশনের পর পরবর্তী পরিচর্যার অভাবে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ডা. আল ইমরান জুয়েল। শিশু সিফাত চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হাটকালুগঞ্জ ঘাটপাড়ার রাজমিস্ত্রি জাকির হোসেনের ছেলে ও হাটকালুগঞ্জ মার্কাজুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসার হেফজখানার ছাত্র।
শিশু সিফাতের মা কবিতা বেগম জানান, দেড় মাস পূর্বে সিফাতের নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হলে পরিবারের সদস্যরা তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার (নাক, কান, গলা) ডা. আল ইমরান জুয়েলের কাছে নেয়। এসময় ডা. আল ইমরান জুয়েল রোগীর গলায় টনসিল অপারেশন করতে হবে বলে জানান। ওইদিন সিফাতকে বাড়িতে নিয়ে চলে যান পরিবারের সদস্যরা। পরে প্রতিবশীদের পরামর্শে সিফাতকে চুয়াডাঙ্গা ইম্প্যাক্ট ফাউন্ডেশনের চিকিৎসক ডা. পারভিন ইয়াসমিনের কাছে নেয়। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসক সিফাতের অপারেশন করতে হবে বলে জানান এবং ৪ এপ্রিল অপারেশনের তারিখ নির্ধারণ করেন। ৪ এপ্রিল দুপুর ১২টার দিকে সিফাতকে ইম্প্যাক্ট ফাউন্ডেশনে নিলে রাত ১১টার দিকে সিফাতের টনসিল অপারেশন করেন বসুন্ধরা আদ্-দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রফেসর ডা. আশরাফুল আবেদিন। তিন দিন সেখানে ভর্তি থাকার পর সিফাতকে ছুটি দেওয়া হয় এবং এক সপ্তাহ পর আবার হাসপাতালে নিয়ে আসতে বলে ইম্প্যাক্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ডাক্তারের কথামতো ১৩ এপ্রিল হাসপাতালে নিলে ডাক্তার সিফাতকে দেখে বলে এখন আগের থেকে ভালো আছে ভাত খাওয়ানো যাবে। পরদিন (গত বৃহস্পতিবার) রাতের খাবার খাওয়ার পর সিফাতের মুখ থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তথন সিফাতকে আবার ইম্প্যাক্ট হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু হাসপাতাল বন্ধ থাকায় তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন পরিবারের সদস্যরা।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার (নাক, কান, গলা) ডা. আল ইমরান জুয়েল বলেন, ‘১৫ তারিখ রাতে সিফাত নামের একটি শিশুকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শিশুটি বর্তমানে আমার তত্বাবধানে হাসপাতালে মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। চলতি মাসের ৪ তারিখে তার টনসিল অপারেশন করা হয়। অপারেশনের স্থানে সেকেন্ডারি হেমারেজের কারণে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। অস্ত্রপচারের পর রোগীর সঠিক পরিচর্যা না হলে বা অস্ত্রপচারের স্থানে যেকোনো আঘাত লাগলে এ ধরণের ঘটনা ঘটতে পারে। শিশুটির অবস্থা এখন উন্নতির দিকে, আশা করছি দুই-তিন দিনের মধ্যে শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠলে তাকে ছুটি দিতে পারব।’
ইম্প্যাক্ট ফাউন্ডেশন চুয়াডাঙ্গার প্রশাসক ডা. শাফিউল কবির জিপু বলেন, চলতি মাসের ৪ তারিখে চুয়াডাঙ্গা ইম্প্যাক্ট ফাউন্ডেশনের অপারেশন থিয়েটারে সিফাতের সফল টনসিল অপারেশন করেন বসুন্ধরা আদ্-দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রফেসর ডা. আশরাফুল আবেদিন। এখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভুল ম্যানেজমেন্ট বা ভুল অস্ত্রপচারের কোনো ঘটনা ঘটেনি। টনসিলিক্টমির ৫ থেকে ১২ দিনে পরেও অস্ত্রপচারের স্থান থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে। স্ক্যাবস থেকে রক্তপাত এক ধরণের গৌণ পোস্ট-টনসিলিক্টমি হেমোরেজ। কারণ এটি অস্ত্রোপচারের ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় পরে ঘটে। সঠিক নিয়মে ওষুধের সকল ডোজ না দেওয়া, ভুলভাবে পানি দিয়ে গড়গড়া করা বা শক্ত খাবার খাওয়ার কারণে অস্ত্রপচারের স্থান থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

গলায় অস্ত্রপচারের স্থান দিয়ে রক্তক্ষরণে

আপলোড টাইম : ০৮:৫৪:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২১

চুয়াডাঙ্গায় শিশুর টনসিল অপারেশনের পরবর্তী পরিচর্যার অভাবে বিপত্তি

সেকেন্ডারি হ্যামারেজের কারণে রক্তক্ষরণ হচ্ছে : ডা. শাফিউল কবির
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গায় ইম্প্যাক্ট ফাউন্ডেশনে টনসিল অপারেশনের ১০ দিন পর সিফাত (৯) নামের এক শিশুর অস্ত্রপচারের স্থান দিয়ে রক্তক্ষরণের ঘটনা ঘটেছে। শিশু সিফাত বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে ডা. আল ইমরান জুয়েলের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। টনসিল অপারেশনের পর পরবর্তী পরিচর্যার অভাবে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ডা. আল ইমরান জুয়েল। শিশু সিফাত চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হাটকালুগঞ্জ ঘাটপাড়ার রাজমিস্ত্রি জাকির হোসেনের ছেলে ও হাটকালুগঞ্জ মার্কাজুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসার হেফজখানার ছাত্র।
শিশু সিফাতের মা কবিতা বেগম জানান, দেড় মাস পূর্বে সিফাতের নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হলে পরিবারের সদস্যরা তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার (নাক, কান, গলা) ডা. আল ইমরান জুয়েলের কাছে নেয়। এসময় ডা. আল ইমরান জুয়েল রোগীর গলায় টনসিল অপারেশন করতে হবে বলে জানান। ওইদিন সিফাতকে বাড়িতে নিয়ে চলে যান পরিবারের সদস্যরা। পরে প্রতিবশীদের পরামর্শে সিফাতকে চুয়াডাঙ্গা ইম্প্যাক্ট ফাউন্ডেশনের চিকিৎসক ডা. পারভিন ইয়াসমিনের কাছে নেয়। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসক সিফাতের অপারেশন করতে হবে বলে জানান এবং ৪ এপ্রিল অপারেশনের তারিখ নির্ধারণ করেন। ৪ এপ্রিল দুপুর ১২টার দিকে সিফাতকে ইম্প্যাক্ট ফাউন্ডেশনে নিলে রাত ১১টার দিকে সিফাতের টনসিল অপারেশন করেন বসুন্ধরা আদ্-দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রফেসর ডা. আশরাফুল আবেদিন। তিন দিন সেখানে ভর্তি থাকার পর সিফাতকে ছুটি দেওয়া হয় এবং এক সপ্তাহ পর আবার হাসপাতালে নিয়ে আসতে বলে ইম্প্যাক্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ডাক্তারের কথামতো ১৩ এপ্রিল হাসপাতালে নিলে ডাক্তার সিফাতকে দেখে বলে এখন আগের থেকে ভালো আছে ভাত খাওয়ানো যাবে। পরদিন (গত বৃহস্পতিবার) রাতের খাবার খাওয়ার পর সিফাতের মুখ থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তথন সিফাতকে আবার ইম্প্যাক্ট হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু হাসপাতাল বন্ধ থাকায় তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন পরিবারের সদস্যরা।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার (নাক, কান, গলা) ডা. আল ইমরান জুয়েল বলেন, ‘১৫ তারিখ রাতে সিফাত নামের একটি শিশুকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শিশুটি বর্তমানে আমার তত্বাবধানে হাসপাতালে মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। চলতি মাসের ৪ তারিখে তার টনসিল অপারেশন করা হয়। অপারেশনের স্থানে সেকেন্ডারি হেমারেজের কারণে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। অস্ত্রপচারের পর রোগীর সঠিক পরিচর্যা না হলে বা অস্ত্রপচারের স্থানে যেকোনো আঘাত লাগলে এ ধরণের ঘটনা ঘটতে পারে। শিশুটির অবস্থা এখন উন্নতির দিকে, আশা করছি দুই-তিন দিনের মধ্যে শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠলে তাকে ছুটি দিতে পারব।’
ইম্প্যাক্ট ফাউন্ডেশন চুয়াডাঙ্গার প্রশাসক ডা. শাফিউল কবির জিপু বলেন, চলতি মাসের ৪ তারিখে চুয়াডাঙ্গা ইম্প্যাক্ট ফাউন্ডেশনের অপারেশন থিয়েটারে সিফাতের সফল টনসিল অপারেশন করেন বসুন্ধরা আদ্-দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রফেসর ডা. আশরাফুল আবেদিন। এখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভুল ম্যানেজমেন্ট বা ভুল অস্ত্রপচারের কোনো ঘটনা ঘটেনি। টনসিলিক্টমির ৫ থেকে ১২ দিনে পরেও অস্ত্রপচারের স্থান থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে। স্ক্যাবস থেকে রক্তপাত এক ধরণের গৌণ পোস্ট-টনসিলিক্টমি হেমোরেজ। কারণ এটি অস্ত্রোপচারের ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় পরে ঘটে। সঠিক নিয়মে ওষুধের সকল ডোজ না দেওয়া, ভুলভাবে পানি দিয়ে গড়গড়া করা বা শক্ত খাবার খাওয়ার কারণে অস্ত্রপচারের স্থান থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে।