ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

খোঁজ মিলেছে পৃথিবীর প্রাচীনতম খনিজের

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:১১:৩২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ মে ২০১৮
  • / ৩৬৩ বার পড়া হয়েছে

প্রযুক্তি ডেস্ক: পৃথিবীর বয়স আনুমানিক ৪৬০ কোটি বছর। আর যে-আগ্নেয় শিলার মধ্যে পৃথিবীর প্রাচীনতম খনিজ ‘জারকন’-এর খোঁজ মিলেছে, তার বয়স ধরা হচ্ছে ৪২৪ কোটি বছর! ওই আগ্নেয় শিলা রয়েছে পূর্ব ভারতের ওডিশায়। প্রায় সাড়ে তিন দশক আগেই তার হদিস পেয়েছিলেন এক দল বাঙালি ভূতত্ত্ববিদ। কিন্তু বিলেতের বিজ্ঞানীদের বিরোধিতায় সেই তত্ত্ব জোরালো হয়নি। এবার সেই পুরনো তত্ত্বকেই আরও জোরালোভাবে তুলে ধরলেন দুই বাঙালি ভূবিজ্ঞানী। ‘নেচার’ পত্রিকার প্রবন্ধে তারা জানালেন, জারকন-সমৃদ্ধ ওডিশার ওই আগ্নেয় শিলার অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ বিশ্বে পানির আবির্ভাবের ইতিহাসে নতুন তথ্য তুলে ধরতে পারে। গবেষণার অন্যতম বিজ্ঞানী, মালয়েশিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্বের শিক্ষক রজত মজুমদার জানিয়েছেন, সব থেকে পুরনো জারকন মিলেছে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায়। কিন্তু সেটি আগ্নেয় শিলা নয়। ওডিশার চম্পুয়ায় পাওয়া জারকন রয়েছে গ্রানাইট আগ্নেয় শিলার মধ্যে। সে-দিক থেকে এই শিলাও প্রাচীনতম। এই খনিজ তৈরি হয়েছে লাভা থেকে। ১৯৮১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্সি কলেজের ভূতত্ত্বের দুই শিক্ষক আশিসরঞ্জন বসু ও অজিতকুমার সাহা পূর্ব ভারতের এই আগ্নেয় পাথরের বয়স ৩৮০ কোটি বছর বলে দাবি করে ‘সায়েন্স’ পত্রিকায় প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। কিন্তু অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল বিজ্ঞানী সেই দাবির বিরোধিতা করে জানান, বাঙালি গবেষকদের হিসেবে ভুল রয়েছে। ওই আগ্নেয় পাথর ৩৩০ কোটি বছরের পুরনো। সেই দাবিকে নস্যাৎ করতে পারেননি বাঙালিরা। ১৯৯৫ সালে ফের একটি আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্রে অজিতবাবু এবং আরও কিছু ভারতীয় বিজ্ঞানী দাবি করেন, পাথরটি ৩৫০ কোটি বছরের পুরনো। রজতবাবু বলছেন, কলেজে পড়ার সময় থেকেই এই পাথর নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। পরবর্তী কালে আশুতোষ কলেজ এবং ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে পড়ানোর সময়েও এই নিয়ে সবিস্তার গবেষণা চালানোর চেষ্টা করেছিলাম। সেই সময়েই আমার ছাত্রী ত্রিস্রোতা চৌধুরীর সঙ্গে পরিচয়। ত্রিস্রোতাই ‘নেচার’-এ প্রকাশিত প্রবন্ধের মূল লেখিকা। রয়েছেন এক চিনা বিজ্ঞানী, ইউশেং ওয়ান। রজতবাবু জানান, এই পাথর বিশ্লেষণ করার জন্য দরকার ‘সেন্সিটিভ হাই রেজলিউশন আয়ন মাইক্রোস্কোপ’। সেই যন্ত্র এ দেশে নেই। বেজিংয়ে ওই চিনা গবেষকের সঙ্গে তিনি এই বিষয়ে আলোচনা করেন এবং তাকে গবেষণায় যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দেন। চিনা প্রতিষ্ঠানের সাহায্যেই গবেষণা সম্পূর্ণ হয়েছে। এই বাঙালি গবেষকদের আক্ষেপ, ভূতত্ত্বের গবেষণায় খুব বেশি সরকারি সাহায্য মেলে না। সরকার তৎপর হলে অনেক নতুন তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে। প্রাচীনতম পাথর আবিষ্কারের পরে ছবিটা বদলাবে কি?

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

খোঁজ মিলেছে পৃথিবীর প্রাচীনতম খনিজের

আপলোড টাইম : ১১:১১:৩২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ মে ২০১৮

প্রযুক্তি ডেস্ক: পৃথিবীর বয়স আনুমানিক ৪৬০ কোটি বছর। আর যে-আগ্নেয় শিলার মধ্যে পৃথিবীর প্রাচীনতম খনিজ ‘জারকন’-এর খোঁজ মিলেছে, তার বয়স ধরা হচ্ছে ৪২৪ কোটি বছর! ওই আগ্নেয় শিলা রয়েছে পূর্ব ভারতের ওডিশায়। প্রায় সাড়ে তিন দশক আগেই তার হদিস পেয়েছিলেন এক দল বাঙালি ভূতত্ত্ববিদ। কিন্তু বিলেতের বিজ্ঞানীদের বিরোধিতায় সেই তত্ত্ব জোরালো হয়নি। এবার সেই পুরনো তত্ত্বকেই আরও জোরালোভাবে তুলে ধরলেন দুই বাঙালি ভূবিজ্ঞানী। ‘নেচার’ পত্রিকার প্রবন্ধে তারা জানালেন, জারকন-সমৃদ্ধ ওডিশার ওই আগ্নেয় শিলার অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ বিশ্বে পানির আবির্ভাবের ইতিহাসে নতুন তথ্য তুলে ধরতে পারে। গবেষণার অন্যতম বিজ্ঞানী, মালয়েশিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্বের শিক্ষক রজত মজুমদার জানিয়েছেন, সব থেকে পুরনো জারকন মিলেছে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায়। কিন্তু সেটি আগ্নেয় শিলা নয়। ওডিশার চম্পুয়ায় পাওয়া জারকন রয়েছে গ্রানাইট আগ্নেয় শিলার মধ্যে। সে-দিক থেকে এই শিলাও প্রাচীনতম। এই খনিজ তৈরি হয়েছে লাভা থেকে। ১৯৮১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্সি কলেজের ভূতত্ত্বের দুই শিক্ষক আশিসরঞ্জন বসু ও অজিতকুমার সাহা পূর্ব ভারতের এই আগ্নেয় পাথরের বয়স ৩৮০ কোটি বছর বলে দাবি করে ‘সায়েন্স’ পত্রিকায় প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। কিন্তু অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল বিজ্ঞানী সেই দাবির বিরোধিতা করে জানান, বাঙালি গবেষকদের হিসেবে ভুল রয়েছে। ওই আগ্নেয় পাথর ৩৩০ কোটি বছরের পুরনো। সেই দাবিকে নস্যাৎ করতে পারেননি বাঙালিরা। ১৯৯৫ সালে ফের একটি আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্রে অজিতবাবু এবং আরও কিছু ভারতীয় বিজ্ঞানী দাবি করেন, পাথরটি ৩৫০ কোটি বছরের পুরনো। রজতবাবু বলছেন, কলেজে পড়ার সময় থেকেই এই পাথর নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। পরবর্তী কালে আশুতোষ কলেজ এবং ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে পড়ানোর সময়েও এই নিয়ে সবিস্তার গবেষণা চালানোর চেষ্টা করেছিলাম। সেই সময়েই আমার ছাত্রী ত্রিস্রোতা চৌধুরীর সঙ্গে পরিচয়। ত্রিস্রোতাই ‘নেচার’-এ প্রকাশিত প্রবন্ধের মূল লেখিকা। রয়েছেন এক চিনা বিজ্ঞানী, ইউশেং ওয়ান। রজতবাবু জানান, এই পাথর বিশ্লেষণ করার জন্য দরকার ‘সেন্সিটিভ হাই রেজলিউশন আয়ন মাইক্রোস্কোপ’। সেই যন্ত্র এ দেশে নেই। বেজিংয়ে ওই চিনা গবেষকের সঙ্গে তিনি এই বিষয়ে আলোচনা করেন এবং তাকে গবেষণায় যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দেন। চিনা প্রতিষ্ঠানের সাহায্যেই গবেষণা সম্পূর্ণ হয়েছে। এই বাঙালি গবেষকদের আক্ষেপ, ভূতত্ত্বের গবেষণায় খুব বেশি সরকারি সাহায্য মেলে না। সরকার তৎপর হলে অনেক নতুন তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে। প্রাচীনতম পাথর আবিষ্কারের পরে ছবিটা বদলাবে কি?