ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

খেলাপি ঋণ এখন ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৩:৫৪:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ নভেম্বর ২০২২
  • / ৭ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন: নানা ছাড় দেয়ার পরও খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বসীমা ঠেকানো যাচ্ছে না। বরং দিন দিন খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে গত সেপ্টেম্বর শেষে দেশে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। এ ঋণ মোট ঋণের ৯.৩৪ শতাংশ। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে আদায় অযোগ্য কুঋণ বা মন্দ ঋণের পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে। সেপ্টেম্বর শেষে মন্দ ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে এক লাখ ১৮ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের ৮৮ শতাংশের ওপরে। মন্দ মানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এক দিকে ব্যাংকের প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হচ্ছে বেশি হারে, পাশাপাশি ঋণ ঝুঁকির পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, গত প্রায় তিন বছর ধরে এক টানা খেলাপি ঋণের ছাড় দিয়ে আসছে। এক টানা দুই বছর ঋণ পরিশোধ ছাড়াই ঋণ নিয়মিত রাখা হয়। এরপর কখনো নামে মাত্র এককালীন অর্থ পরিশোধ করে, কখনো মাত্র দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ নবায়ন করা হয়। এভাবে প্রকৃত খেলাপি ঋণ আড়াল হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, প্রতি তিন মাস অন্তর গড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা করে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। গত তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এর পরিমাণ বেড়েছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। গত মার্চে যা ছিল এক লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। জুন প্রান্তিকে তা বেড়ে হয়েছিল এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। আর সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে তা বেড়ে হয়েছে এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। আর গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত কয়েক বছর ধরে প্রতি প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। অথচ এ সময়ে ঋণ পুনঃতফসিল, পুনর্গঠনসহ সব ধরনের সুবিধার দরজা উন্মুক্ত করা হয়েছে। কোনো সুবিধাই খেলাপি ঋণ কমাতে পারেনি। ব্যাংকগুলোর হাতে ঋণ পুনঃতফসিল করার ক্ষমতা দেয়ার ফলে দুর্বল ব্যাংগুলোতে এখন বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো দফায় দফায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা শিথিল করা। এর ফলে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির পরিমাণ বেড়ে গেছে। এ কারণে যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করতেন তারাও ঋণ পরিশোধ করছেন না। এর ফলে সামগ্রিকভাবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর বেশি হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয় ব্যাংকগুলোর আয় থেকে। এর ফলে ব্যাংকগুলোর নিট আয় কমে যাচ্ছে। এতে বেকায়দায় পড়ে যাচ্ছে ব্যাংকগুলো। একদিকে বাড়তি প্রভিশনের চাপ, অপরদিকে ঋণ আদায় কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতা যেমন কমছে, তেমনি ব্যাংকগুলোর ঝুঁকির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলোর কুঋণ বেড়ে যাওয়ায় এ ঝুঁকির মাত্রা আরো বেড়ে চলেছে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এ থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করা। ঋণ পরিশোধে কঠোর নীতিমালা দেয়া। এতে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ যেমন কমে যাবে, তেমনি ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতা বেড়ে যাবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

খেলাপি ঋণ এখন ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা

আপলোড টাইম : ০৩:৫৪:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ নভেম্বর ২০২২

সমীকরণ প্রতিবেদন: নানা ছাড় দেয়ার পরও খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বসীমা ঠেকানো যাচ্ছে না। বরং দিন দিন খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে গত সেপ্টেম্বর শেষে দেশে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। এ ঋণ মোট ঋণের ৯.৩৪ শতাংশ। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে আদায় অযোগ্য কুঋণ বা মন্দ ঋণের পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে। সেপ্টেম্বর শেষে মন্দ ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে এক লাখ ১৮ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের ৮৮ শতাংশের ওপরে। মন্দ মানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এক দিকে ব্যাংকের প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হচ্ছে বেশি হারে, পাশাপাশি ঋণ ঝুঁকির পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, গত প্রায় তিন বছর ধরে এক টানা খেলাপি ঋণের ছাড় দিয়ে আসছে। এক টানা দুই বছর ঋণ পরিশোধ ছাড়াই ঋণ নিয়মিত রাখা হয়। এরপর কখনো নামে মাত্র এককালীন অর্থ পরিশোধ করে, কখনো মাত্র দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ নবায়ন করা হয়। এভাবে প্রকৃত খেলাপি ঋণ আড়াল হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, প্রতি তিন মাস অন্তর গড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা করে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। গত তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এর পরিমাণ বেড়েছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। গত মার্চে যা ছিল এক লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। জুন প্রান্তিকে তা বেড়ে হয়েছিল এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। আর সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে তা বেড়ে হয়েছে এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। আর গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত কয়েক বছর ধরে প্রতি প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। অথচ এ সময়ে ঋণ পুনঃতফসিল, পুনর্গঠনসহ সব ধরনের সুবিধার দরজা উন্মুক্ত করা হয়েছে। কোনো সুবিধাই খেলাপি ঋণ কমাতে পারেনি। ব্যাংকগুলোর হাতে ঋণ পুনঃতফসিল করার ক্ষমতা দেয়ার ফলে দুর্বল ব্যাংগুলোতে এখন বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো দফায় দফায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা শিথিল করা। এর ফলে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির পরিমাণ বেড়ে গেছে। এ কারণে যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করতেন তারাও ঋণ পরিশোধ করছেন না। এর ফলে সামগ্রিকভাবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর বেশি হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয় ব্যাংকগুলোর আয় থেকে। এর ফলে ব্যাংকগুলোর নিট আয় কমে যাচ্ছে। এতে বেকায়দায় পড়ে যাচ্ছে ব্যাংকগুলো। একদিকে বাড়তি প্রভিশনের চাপ, অপরদিকে ঋণ আদায় কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতা যেমন কমছে, তেমনি ব্যাংকগুলোর ঝুঁকির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলোর কুঋণ বেড়ে যাওয়ায় এ ঝুঁকির মাত্রা আরো বেড়ে চলেছে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এ থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করা। ঋণ পরিশোধে কঠোর নীতিমালা দেয়া। এতে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ যেমন কমে যাবে, তেমনি ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতা বেড়ে যাবে।