ইপেপার । আজমঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

খালেদা জিয়ার সম্মতি : জামায়াত ত্যাগের প্রক্রিয়া শুরু বিএনপির

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:১০:৩১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ মার্চ ২০২১
  • / ১১৭ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
দুই দশকের বেশি সময় ধরে বিএনপি’র জোট সঙ্গী জামায়াত। তাদের এ জোট নিয়ে কথা হয়েছে বিস্তর। আলোচনা-সমালোচনারও শেষ নেই। যদিও অনেকদিন হলো দুই দলের সম্পর্কটা নামকাওয়াস্তে। সাম্প্রতিক সময়ে সে দূরত্ব বেড়েছে আরো। সম্প্রতি স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে বিএনপি’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রায় সব প্রধান রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু সেখানে জামায়াতকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। জামায়াত ত্যাগের প্রশ্নে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা চলে আসছে অনেকদিন ধরে। সে আলোচনা জোরদার হয়েছে। জামায়াত ত্যাগের এক ধরনের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও এতে সম্মতি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।
গত বছরের শুরু থেকে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে ধারাবাহিকভাবে ভার্চুয়ালি বৈঠক করে আসছে দলটির স্থায়ী কমিটি। স্থায়ী কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগের বিষয়ে মতামত দেন। সম্প্রতি বিএনপি’র চেয়ারপারসনের সঙ্গে তার গুলশানের বাসা ফিরোজায় দেখা করেছেন দলটির শীর্ষস্থানীয় এক নেতা। এ সময় বেগম জিয়ার সঙ্গে জামায়াত ইস্যু নিয়েও কথা বলেন তিনি। এ ব্যাপারে দলের শীর্ষ নেতার নির্দেশনা চান তিনি। খালেদা জিয়া বিএনপি’র ওই নেতাকে বলেন, আমার কিছু বলার নেই। দলের মধ্যে যদি জামায়াতকে ছেড়ে দেয়ার মতামত এসে থাকে, তাহলে যা ভালো মনে করেন, করতে পারেন। জামায়াতের বিষয়ে নেয়া যেকোনো সিদ্ধান্তেই তার আপত্তি নেই বলেও জানান তিনি। এর আগে গত পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছাবিনিময় করতে ফিরোজায় গিয়েছিলেন বিএনপি’র সিনিয়র নেতারা। ওই সময়ও কয়েকজন সিনিয়র নেতা জামায়াত প্রসঙ্গে কথা বলেন। সে সময়ও জামায়াতের বিষয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বলেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
সূত্র জানায়, জামায়াতের বিষয়ে নিজের অভিমত লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও জানিয়ে দিয়েছেন খালেদা জিয়া। এদিকে জামায়াতকে ছাড়ার বিষয়ে বিএনপি’র মধ্যে ইতিমধ্যে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। গত ১লা মার্চ রাজধানীর গুলশানস্থ হোটেল লেকশোরে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করে বিএনপি। এই অনুষ্ঠানে বিএনপি ছাড়াও ২০ দল এবং ঐক্যফ্রন্টের অধিকাংশ নেতা উপস্থিত থাকলেও ছিলেন না জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতা। সূত্রে জানা গেছে, সুবর্ণ জয়ন্তীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বিতর্কমুক্ত রেখে একে সর্বজনীন রূপ দিতে জামায়াতকে দাওয়াত দেয়া হয়নি। তাদের দাওয়াত না দেয়ার সিদ্ধান্ত ছিল বিএনপি’র হাইকমান্ডের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি’র স্বাধীনতা উদযাপন কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। জামায়াতের বিষয় নিয়ে বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, চাইলেই জামায়াতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছে না। তবে এ বছর জামায়াতকে ছাড়ার বিষয়ে ফাইনাল ডিসিশন নেয়া হবে। এতোদিন খালেদা জিয়ার মতামত নেয়াই ছিল বড় বিষয়। এখন যেহেতু ওনার মতামত পাওয়া গেছে, ফলে সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ এবং সময় কম লাগবে।
বিএনপি’র এক ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, জামায়াতকে ছাড়ার বিষয়ে বিএনপি’র ওপর দীর্ঘদিনের দেশি ও আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে জামায়াতকে স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি এবং উগ্রবাদী হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়। আর যে আশা নিয়ে বিএনপি জামায়াতকে জোটে নিয়েছিল এখন আর সেটার ফল পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে যে কোনো আন্দোলন- সংগ্রামে বিএনপিকেই অংশ নিতে হচ্ছে। ২০১৪’র নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি’র সঙ্গে জামায়াতের তেমন কোনো সম্পর্ক নেই বললেই চলে। তাই সবদিক বিবেচনায় জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগের বিএনপি’র সময় এখনই।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জাময়াতকে ছাড়া না ছাড়ার বিষয়ে কোনো কিছুই ভাবছে না বিএনপি। এখন পর্যন্ত আমাদের ২০ দলীয় জোট (জামায়াতসহ) অক্ষুণ্ন আছে। সুতরাং এ বিষয় নিয়ে আলোচনার কিছুই নেই। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জামায়াতকে নিমন্ত্রণ না করার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বিএনপি মহাসচিব।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

খালেদা জিয়ার সম্মতি : জামায়াত ত্যাগের প্রক্রিয়া শুরু বিএনপির

আপলোড টাইম : ১০:১০:৩১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ মার্চ ২০২১

সমীকরণ প্রতিবেদন:
দুই দশকের বেশি সময় ধরে বিএনপি’র জোট সঙ্গী জামায়াত। তাদের এ জোট নিয়ে কথা হয়েছে বিস্তর। আলোচনা-সমালোচনারও শেষ নেই। যদিও অনেকদিন হলো দুই দলের সম্পর্কটা নামকাওয়াস্তে। সাম্প্রতিক সময়ে সে দূরত্ব বেড়েছে আরো। সম্প্রতি স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে বিএনপি’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রায় সব প্রধান রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু সেখানে জামায়াতকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। জামায়াত ত্যাগের প্রশ্নে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা চলে আসছে অনেকদিন ধরে। সে আলোচনা জোরদার হয়েছে। জামায়াত ত্যাগের এক ধরনের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও এতে সম্মতি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।
গত বছরের শুরু থেকে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে ধারাবাহিকভাবে ভার্চুয়ালি বৈঠক করে আসছে দলটির স্থায়ী কমিটি। স্থায়ী কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগের বিষয়ে মতামত দেন। সম্প্রতি বিএনপি’র চেয়ারপারসনের সঙ্গে তার গুলশানের বাসা ফিরোজায় দেখা করেছেন দলটির শীর্ষস্থানীয় এক নেতা। এ সময় বেগম জিয়ার সঙ্গে জামায়াত ইস্যু নিয়েও কথা বলেন তিনি। এ ব্যাপারে দলের শীর্ষ নেতার নির্দেশনা চান তিনি। খালেদা জিয়া বিএনপি’র ওই নেতাকে বলেন, আমার কিছু বলার নেই। দলের মধ্যে যদি জামায়াতকে ছেড়ে দেয়ার মতামত এসে থাকে, তাহলে যা ভালো মনে করেন, করতে পারেন। জামায়াতের বিষয়ে নেয়া যেকোনো সিদ্ধান্তেই তার আপত্তি নেই বলেও জানান তিনি। এর আগে গত পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছাবিনিময় করতে ফিরোজায় গিয়েছিলেন বিএনপি’র সিনিয়র নেতারা। ওই সময়ও কয়েকজন সিনিয়র নেতা জামায়াত প্রসঙ্গে কথা বলেন। সে সময়ও জামায়াতের বিষয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বলেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
সূত্র জানায়, জামায়াতের বিষয়ে নিজের অভিমত লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও জানিয়ে দিয়েছেন খালেদা জিয়া। এদিকে জামায়াতকে ছাড়ার বিষয়ে বিএনপি’র মধ্যে ইতিমধ্যে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। গত ১লা মার্চ রাজধানীর গুলশানস্থ হোটেল লেকশোরে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করে বিএনপি। এই অনুষ্ঠানে বিএনপি ছাড়াও ২০ দল এবং ঐক্যফ্রন্টের অধিকাংশ নেতা উপস্থিত থাকলেও ছিলেন না জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতা। সূত্রে জানা গেছে, সুবর্ণ জয়ন্তীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বিতর্কমুক্ত রেখে একে সর্বজনীন রূপ দিতে জামায়াতকে দাওয়াত দেয়া হয়নি। তাদের দাওয়াত না দেয়ার সিদ্ধান্ত ছিল বিএনপি’র হাইকমান্ডের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি’র স্বাধীনতা উদযাপন কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। জামায়াতের বিষয় নিয়ে বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, চাইলেই জামায়াতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছে না। তবে এ বছর জামায়াতকে ছাড়ার বিষয়ে ফাইনাল ডিসিশন নেয়া হবে। এতোদিন খালেদা জিয়ার মতামত নেয়াই ছিল বড় বিষয়। এখন যেহেতু ওনার মতামত পাওয়া গেছে, ফলে সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ এবং সময় কম লাগবে।
বিএনপি’র এক ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, জামায়াতকে ছাড়ার বিষয়ে বিএনপি’র ওপর দীর্ঘদিনের দেশি ও আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে জামায়াতকে স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি এবং উগ্রবাদী হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়। আর যে আশা নিয়ে বিএনপি জামায়াতকে জোটে নিয়েছিল এখন আর সেটার ফল পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে যে কোনো আন্দোলন- সংগ্রামে বিএনপিকেই অংশ নিতে হচ্ছে। ২০১৪’র নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি’র সঙ্গে জামায়াতের তেমন কোনো সম্পর্ক নেই বললেই চলে। তাই সবদিক বিবেচনায় জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগের বিএনপি’র সময় এখনই।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জাময়াতকে ছাড়া না ছাড়ার বিষয়ে কোনো কিছুই ভাবছে না বিএনপি। এখন পর্যন্ত আমাদের ২০ দলীয় জোট (জামায়াতসহ) অক্ষুণ্ন আছে। সুতরাং এ বিষয় নিয়ে আলোচনার কিছুই নেই। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জামায়াতকে নিমন্ত্রণ না করার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বিএনপি মহাসচিব।