ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

খাদ্যে ভেজালের ব্যাপকতা কমেনি : ল্যাবের মান নিয়ে প্রশ্ন?

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:০৮:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ এপ্রিল ২০১৮
  • / ৩৬২ বার পড়া হয়েছে

নিত্যপণ্যের প্রায় ৭০ শতাংশ নমুনায় শতভাগ ভেজাল পেয়েছে পিএইচএল
ডেস্ক রিপোর্ট: নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তির নিশ্চয়তায় আইন হয়েছে আগেই। ২০১৫ সালে গঠন করা হয়েছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। ভেজালবিরোধী সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি তারা কাজ করছে নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভেজালবিরোধী অভিযান তো আছেই। তারপরও কমছে না ভেজালের ব্যাপকতা। গত বছরও জ্যাম-জেলি, দই, মিষ্টি ও ডালডা পরীক্ষা করে শতভাগেই ভেজাল পেয়েছে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরি (পিএইচএল)। ভেজাল শনাক্ত হয়েছে সেমাই, সয়াবিন তেলের মতো নিত্যপণ্যের প্রায় ৭০ শতাংশ নমুনায়ও।
বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহের পর তা নিয়মিত পরীক্ষা করে আসছে সরকারি প্রতিষ্ঠান জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট। ২০১৭ সালের পুরো সময়জুড়ে ৬ হাজার ৪৭টি নমুনা সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে ৫ হাজার ১৪৬টি নমুনা জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের নিজস্ব ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৩৫টি নমুনায়ই ভেজাল পাওয়া গেছে। কিছু পণ্যের আবার শতভাগই ভেজাল।
গত বছর মিষ্টির ২৭৭টি নমুনা সংগ্রহের পর ২২৪টি পরীক্ষা করে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট। এর মধ্যে ২২৩টি নমুনাই ভেজাল শনাক্ত হয়। অর্থাৎ মিষ্টির ৯৯ দশমিক ৬ শতাংশই ভেজাল। তবে শতভাগ ভেজাল পাওয়া গেছে জ্যাম-জেলিতে। এছাড়া ডালডার আটটি নমুনার সবই ভেজাল প্রমাণ হয়েছে পরীক্ষায়। শতভাগ ভেজাল পাওয়া গেছে দই-লাচ্ছি, সন্দেশ, পাউরুটি, খেজুর ও ছানায়ও।
যদিও জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরীক্ষার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের সদস্য অধ্যাপক ইকবাল রউফ মামুন সাংবাদিকদেরকে বলেন, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট যে ল্যাবে পরীক্ষা করছে, তা অ্যাক্রেডিটেশনপ্রাপ্ত নয়। এ কারণে ওই ল্যাবের পরীক্ষার ফলাফলও গ্রহণযোগ্য হবে না। তাছাড়া সেখানে দক্ষ লোকবলও নেই। পুরনো আইন দিয়ে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে বিডিএস অনুযায়ী পরীক্ষা করতে তাদের চিঠি দেয়া হয়েছে।
ল্যাবের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. ইসমাইল ফারুক। তিনি বলেন, তাদের ল্যাবটি ১৯৫৩ সাল থেকে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আসছে। এরই মধ্যে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) অর্থায়নে ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরামর্শে ভবিষ্যতে অন্যান্য ল্যাবও আধুনিক করা হবে। তাদের ল্যাব অ্যাক্রেডিটেশন পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
সারা দেশের স্যানিটারি ইন্সপেক্টরদের মাধ্যমে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের নমুনা সংগ্রহ করে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী নিজস্ব ল্যাবে তা পরীক্ষা করে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট। ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সয়াবিন তেলের মোট ১০৬টি নমুনা পরীক্ষা করে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে খাঁটি পাওয়া যায় মাত্র ৩২ শতাংশ নমুনা। বাকি ৬৮ শতাংশেই ভেজাল শনাক্ত হয়েছে। পাম অয়েলেরও ৪৪ শতাংশে ভেজাল শনাক্ত হয়। এছাড়া গুড়ের ৭২, ঘির ৫০, চকোলেটের ৬৩ ও সেমাইয়ের ৬৮ শতাংশই ভেজাল প্রমাণ হয় পরীক্ষায়।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ল্যাবের দায়িত্বপ্রাপ্ত পাবলিক অ্যানালিস্টরা জানান, ১৯৫৯ সালের বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ সংশোধিত ১৯৬৭ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী খাদ্যদ্রব্যগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। চকোলেটে ন্যাচারাল কোকোয়া পাউডার, চিনি, সলিড দুধ, লবণ, কোকোয়া বাটার, সুগন্ধি, প্রিজারভেটিভস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস ব্যবহার করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কোকোয়া পাউডারের পরিমাণ কম পাওয়া গেছে। এ কারণে বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ অনুযায়ী এটিকে ভেজাল বলে গণ্য করা হয়েছে। একইভাবে জ্যাম-জেলি পরীক্ষায় নির্দিষ্ট মাত্রার উপাদান শনাক্ত করা যায়নি। ফলে তা ভেজাল বলে গণ্য হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ল্যাবে চকোলেট-লজেন্স ও জ্যাম-জেলিতে ভেজাল শনাক্ত হলেও জাতীয় মান সংস্থা বিএসটিআইয়ের ল্যাবে তা কখনো শনাক্ত হয়নি। বিএসটিআইয়ের পরিচালক (সিএম) প্রকৌশলী এসএম ইছহাক আলী বলেন, বিএসটিআইয়ের ল্যাবটি অ্যাক্রেডিটেশন সনদ লাভ করলেও জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ল্যাবটি এখনো পায়নি। এছাড়া তাদের পরীক্ষার পদ্ধতি ও বিএসটিআইয়ের এক নয়। এ কারণে তাদের ল্যাবে ভেজাল শনাক্ত হতে পারে।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরীক্ষায় মসলাপণ্যেও ব্যাপক মাত্রায় ভেজাল পাওয়া গেছে। এসব পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভেজাল পাওয়া গেছে ধনিয়ায়। পণ্যটির মোট সংগৃহীত নমুনার ৪৭ শতাংশই ভেজাল প্রমাণ হয়েছে। এছাড়া মরিচের ৪৪ ও হলুদের ২৭ শতাংশ ভেজাল বলে শনাক্ত করেছে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট। নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য পণ্যের মধ্যে লবণের ২৫ ও তরল দুধের ২০ শতাংশ ভেজাল পাওয়া গেছে।
আগের বছরগুলোর পরীক্ষায়ও বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যে ব্যাপক মাত্রায় ভেজালের উপস্থিতি পায় জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট। ২০১৪ সালে ৩ হাজার ২৪৯টি নমুনা পরীক্ষা করে ২ হাজার ১৪৭টিতেই ভেজাল পায় প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৫ সালে তারা পরীক্ষা করে ৪ হাজার ৩৭৬টি নমুনা। সেবার ভেজাল পাওয়া যায় ২ হাজার ৩৭০টি নমুনায়। পরের বছরের পরীক্ষায়ও খাদ্যে ব্যপক মাত্রায় ভেজালের বিষয়টি উঠে আসে।
এসব ভেজাল খাদ্যদ্রব্য জনস্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ভেজাল খাবার গ্রহণের ফলে অ্যালার্জি থেকে শুরু করে ক্যান্সারের ব্যাপকতা বাড়ছে। গ্যাস্ট্রিক আলসারের পাশাপাশি কিডনি রোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খাদ্যে ভেজাল রোধে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে আরো দায়িত্বশীল হতে বলে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীন। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, কে রেগুলেটরির দায়িত্ব পালন করবে, সেটি আগে নির্বাচন করতে হবে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ যে উদ্দেশ্যে গঠন করা হয়েছিল, তারা সেটি সঠিকভাবে করতে পারছে না। তারা শুধু সচেতনতা নিয়ে কাজ করছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

খাদ্যে ভেজালের ব্যাপকতা কমেনি : ল্যাবের মান নিয়ে প্রশ্ন?

আপলোড টাইম : ১০:০৮:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ এপ্রিল ২০১৮

নিত্যপণ্যের প্রায় ৭০ শতাংশ নমুনায় শতভাগ ভেজাল পেয়েছে পিএইচএল
ডেস্ক রিপোর্ট: নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তির নিশ্চয়তায় আইন হয়েছে আগেই। ২০১৫ সালে গঠন করা হয়েছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। ভেজালবিরোধী সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি তারা কাজ করছে নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভেজালবিরোধী অভিযান তো আছেই। তারপরও কমছে না ভেজালের ব্যাপকতা। গত বছরও জ্যাম-জেলি, দই, মিষ্টি ও ডালডা পরীক্ষা করে শতভাগেই ভেজাল পেয়েছে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরি (পিএইচএল)। ভেজাল শনাক্ত হয়েছে সেমাই, সয়াবিন তেলের মতো নিত্যপণ্যের প্রায় ৭০ শতাংশ নমুনায়ও।
বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহের পর তা নিয়মিত পরীক্ষা করে আসছে সরকারি প্রতিষ্ঠান জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট। ২০১৭ সালের পুরো সময়জুড়ে ৬ হাজার ৪৭টি নমুনা সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে ৫ হাজার ১৪৬টি নমুনা জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের নিজস্ব ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৩৫টি নমুনায়ই ভেজাল পাওয়া গেছে। কিছু পণ্যের আবার শতভাগই ভেজাল।
গত বছর মিষ্টির ২৭৭টি নমুনা সংগ্রহের পর ২২৪টি পরীক্ষা করে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট। এর মধ্যে ২২৩টি নমুনাই ভেজাল শনাক্ত হয়। অর্থাৎ মিষ্টির ৯৯ দশমিক ৬ শতাংশই ভেজাল। তবে শতভাগ ভেজাল পাওয়া গেছে জ্যাম-জেলিতে। এছাড়া ডালডার আটটি নমুনার সবই ভেজাল প্রমাণ হয়েছে পরীক্ষায়। শতভাগ ভেজাল পাওয়া গেছে দই-লাচ্ছি, সন্দেশ, পাউরুটি, খেজুর ও ছানায়ও।
যদিও জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরীক্ষার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের সদস্য অধ্যাপক ইকবাল রউফ মামুন সাংবাদিকদেরকে বলেন, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট যে ল্যাবে পরীক্ষা করছে, তা অ্যাক্রেডিটেশনপ্রাপ্ত নয়। এ কারণে ওই ল্যাবের পরীক্ষার ফলাফলও গ্রহণযোগ্য হবে না। তাছাড়া সেখানে দক্ষ লোকবলও নেই। পুরনো আইন দিয়ে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে বিডিএস অনুযায়ী পরীক্ষা করতে তাদের চিঠি দেয়া হয়েছে।
ল্যাবের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. ইসমাইল ফারুক। তিনি বলেন, তাদের ল্যাবটি ১৯৫৩ সাল থেকে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আসছে। এরই মধ্যে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) অর্থায়নে ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরামর্শে ভবিষ্যতে অন্যান্য ল্যাবও আধুনিক করা হবে। তাদের ল্যাব অ্যাক্রেডিটেশন পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
সারা দেশের স্যানিটারি ইন্সপেক্টরদের মাধ্যমে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের নমুনা সংগ্রহ করে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী নিজস্ব ল্যাবে তা পরীক্ষা করে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট। ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সয়াবিন তেলের মোট ১০৬টি নমুনা পরীক্ষা করে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে খাঁটি পাওয়া যায় মাত্র ৩২ শতাংশ নমুনা। বাকি ৬৮ শতাংশেই ভেজাল শনাক্ত হয়েছে। পাম অয়েলেরও ৪৪ শতাংশে ভেজাল শনাক্ত হয়। এছাড়া গুড়ের ৭২, ঘির ৫০, চকোলেটের ৬৩ ও সেমাইয়ের ৬৮ শতাংশই ভেজাল প্রমাণ হয় পরীক্ষায়।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ল্যাবের দায়িত্বপ্রাপ্ত পাবলিক অ্যানালিস্টরা জানান, ১৯৫৯ সালের বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ সংশোধিত ১৯৬৭ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী খাদ্যদ্রব্যগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। চকোলেটে ন্যাচারাল কোকোয়া পাউডার, চিনি, সলিড দুধ, লবণ, কোকোয়া বাটার, সুগন্ধি, প্রিজারভেটিভস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস ব্যবহার করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কোকোয়া পাউডারের পরিমাণ কম পাওয়া গেছে। এ কারণে বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ অনুযায়ী এটিকে ভেজাল বলে গণ্য করা হয়েছে। একইভাবে জ্যাম-জেলি পরীক্ষায় নির্দিষ্ট মাত্রার উপাদান শনাক্ত করা যায়নি। ফলে তা ভেজাল বলে গণ্য হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ল্যাবে চকোলেট-লজেন্স ও জ্যাম-জেলিতে ভেজাল শনাক্ত হলেও জাতীয় মান সংস্থা বিএসটিআইয়ের ল্যাবে তা কখনো শনাক্ত হয়নি। বিএসটিআইয়ের পরিচালক (সিএম) প্রকৌশলী এসএম ইছহাক আলী বলেন, বিএসটিআইয়ের ল্যাবটি অ্যাক্রেডিটেশন সনদ লাভ করলেও জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ল্যাবটি এখনো পায়নি। এছাড়া তাদের পরীক্ষার পদ্ধতি ও বিএসটিআইয়ের এক নয়। এ কারণে তাদের ল্যাবে ভেজাল শনাক্ত হতে পারে।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরীক্ষায় মসলাপণ্যেও ব্যাপক মাত্রায় ভেজাল পাওয়া গেছে। এসব পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভেজাল পাওয়া গেছে ধনিয়ায়। পণ্যটির মোট সংগৃহীত নমুনার ৪৭ শতাংশই ভেজাল প্রমাণ হয়েছে। এছাড়া মরিচের ৪৪ ও হলুদের ২৭ শতাংশ ভেজাল বলে শনাক্ত করেছে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট। নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য পণ্যের মধ্যে লবণের ২৫ ও তরল দুধের ২০ শতাংশ ভেজাল পাওয়া গেছে।
আগের বছরগুলোর পরীক্ষায়ও বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যে ব্যাপক মাত্রায় ভেজালের উপস্থিতি পায় জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট। ২০১৪ সালে ৩ হাজার ২৪৯টি নমুনা পরীক্ষা করে ২ হাজার ১৪৭টিতেই ভেজাল পায় প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৫ সালে তারা পরীক্ষা করে ৪ হাজার ৩৭৬টি নমুনা। সেবার ভেজাল পাওয়া যায় ২ হাজার ৩৭০টি নমুনায়। পরের বছরের পরীক্ষায়ও খাদ্যে ব্যপক মাত্রায় ভেজালের বিষয়টি উঠে আসে।
এসব ভেজাল খাদ্যদ্রব্য জনস্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ভেজাল খাবার গ্রহণের ফলে অ্যালার্জি থেকে শুরু করে ক্যান্সারের ব্যাপকতা বাড়ছে। গ্যাস্ট্রিক আলসারের পাশাপাশি কিডনি রোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খাদ্যে ভেজাল রোধে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে আরো দায়িত্বশীল হতে বলে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীন। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, কে রেগুলেটরির দায়িত্ব পালন করবে, সেটি আগে নির্বাচন করতে হবে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ যে উদ্দেশ্যে গঠন করা হয়েছিল, তারা সেটি সঠিকভাবে করতে পারছে না। তারা শুধু সচেতনতা নিয়ে কাজ করছে।