ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

কোটা সংস্কার আন্দোলন ; প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়িত হোক

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৪০:৪৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ জুলাই ২০১৮
  • / ৩৫৯ বার পড়া হয়েছে

চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে সারা দেশে গড়ে ওঠা আন্দোলন শক্তি প্রয়োগ করে বন্ধ করা যাবে না। ঢাকার পরে রাজশাহীতেও আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। আশা করা হয়েছিল, নির্বাচনী বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক এক অভাবনীয় আন্দোলন গড়ে ওঠা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে দেওয়া প্রতিশ্রুতির পরে এই বিষয়ে বিহিত হবে। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে সমাধান দ্রুত হওয়া সম্ভব। এর আগে মন্ত্রিপরিষদ সচিবও সাংবাদিকদের বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার আলোকে শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। কিন্তু ইতিমধ্যে বেশ কালক্ষেপণ ঘটেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ওয়াদার বাস্তবায়ন ঘটেনি। এমনকি সরকারের তরফে কোনো নির্দিষ্ট বক্তব্যও দেওয়া হচ্ছে না। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির উচিত হবে তাদের কাজে অগ্রগতির বিষয়ে দেশবাসীকে অবহিত করা।
উপরন্তু এই প্রেক্ষাপটে হামলা, হয়রানি ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সংবাদ সম্মেলন আয়োজনে বাধা দেওয়া হয় ও ক্ষমতাসীন দলের ছত্রচ্ছায়ায় ছাত্রলীগের কতিপয় হঠকারী কর্মী নেতা-কর্মীদের খুঁজে খুঁজে নির্যাতন চালান। এমনকি প্রহৃত ছাত্রদের হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পথেও বাধা দেওয়া হয়েছে। আমরা এই হামলার নিন্দা জানাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতারা হামলার দায়িত্ব অস্বীকার করেছেন। কিন্তু এক দিন পরেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা হামলা চালানোর পরে বলেছেন, ‘যারা প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে আস্থা রাখে না, তাদের আর ছাড় দেওয়া হবে না।’ ছাত্রলীগের কোনো নেতার এ ধরনের মন্তব্যের পরে যদি সরকারি দলের উচ্চপর্যায় থেকে নীরবতা অবলম্বন করা হয়, তাহলে এটাই প্রতীয়মান হবে যে এর পেছনে পর্দার আড়ালের মুরব্বিদের আশীর্বাদ আছে।
কোটা সংস্কার বা কোটাব্যবস্থা যৌক্তিকীকরণ একটি ন্যায্য আন্দোলন। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৫৫ শতাংশ নিয়োগ অগ্রাধিকারে এবং বাকি ৪৫ শতাংশ মেধা কোটায় নিয়োগের যে ব্যবস্থা তা অবশ্যই পাল্টানোর দাবি রাখে। এ ব্যবস্থা কোনোভাবেই অপরিবর্তিত থাকতে পারে না। কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরাও কোটাব্যবস্থার বিলোপ চাইছেন না। কিন্তু তাঁরা যুক্তিসংগত কারণেই এবং দেশের বৃহত্তর স্বার্থে মেধার শ্রেষ্ঠত্ব কায়েম করার আওয়াজ তুলেছেন।
শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা শুধু ছাত্রলীগের নির্যাতনেরই শিকারই হচ্ছেন না, একই সঙ্গে তাঁরা গ্রেপ্তার ও লাঞ্ছনারও শিকার হচ্ছেন। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানকে ছাত্রলীগের এক নেতার করা মামলায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই পদক্ষেপ আন্দোলনকামীদের আরও ক্ষুব্ধ করে তুলবে। কোটা সংস্কারে গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটির নিষ্ক্রিয়তা কাম্য নয়। সরকারি মহল এটা আশা করতে পারে না যে প্রধানমন্ত্রী একটি কমিটি করে দিয়েছেন বলেই ছাত্র ও চাকরি প্রার্থীদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বা আন্দোলন করার অধিকার থাকবে না। আন্দোলনকারীরা সংবাদ সম্মেলন করে তাঁদের বক্তব্য বা আরজি সরকার তথা দেশবাসীকে জানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সরকার-সমর্থক ছাত্র সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা তাঁদের ওপর চড়াও হয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করেছেন। এরপর শিক্ষাঙ্গনে কোনো অঘটন ঘটলে কিংবা শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়, এমন কিছু ঘটলে তার দায়ও তাঁরা এড়াতে পারবেন না।
আমরা আশা করব, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস বাস্তবে রূপ দিয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর সব ধরনের নির্যাতন-হয়রানি বন্ধ করা হবে। সেই সঙ্গে রাশেদ চৌধুরীকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া হোক। যাঁরা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন, তাঁদের বিষয়ে প্রশাসন নীরব থেকে আক্রান্তদের ওপর পুলিশের গ্রেপ্তার-হয়রানি জনমনে ভুল বার্তাই দেবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

কোটা সংস্কার আন্দোলন ; প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়িত হোক

আপলোড টাইম : ১০:৪০:৪৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ জুলাই ২০১৮

চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে সারা দেশে গড়ে ওঠা আন্দোলন শক্তি প্রয়োগ করে বন্ধ করা যাবে না। ঢাকার পরে রাজশাহীতেও আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। আশা করা হয়েছিল, নির্বাচনী বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক এক অভাবনীয় আন্দোলন গড়ে ওঠা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে দেওয়া প্রতিশ্রুতির পরে এই বিষয়ে বিহিত হবে। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে সমাধান দ্রুত হওয়া সম্ভব। এর আগে মন্ত্রিপরিষদ সচিবও সাংবাদিকদের বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার আলোকে শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। কিন্তু ইতিমধ্যে বেশ কালক্ষেপণ ঘটেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ওয়াদার বাস্তবায়ন ঘটেনি। এমনকি সরকারের তরফে কোনো নির্দিষ্ট বক্তব্যও দেওয়া হচ্ছে না। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির উচিত হবে তাদের কাজে অগ্রগতির বিষয়ে দেশবাসীকে অবহিত করা।
উপরন্তু এই প্রেক্ষাপটে হামলা, হয়রানি ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সংবাদ সম্মেলন আয়োজনে বাধা দেওয়া হয় ও ক্ষমতাসীন দলের ছত্রচ্ছায়ায় ছাত্রলীগের কতিপয় হঠকারী কর্মী নেতা-কর্মীদের খুঁজে খুঁজে নির্যাতন চালান। এমনকি প্রহৃত ছাত্রদের হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পথেও বাধা দেওয়া হয়েছে। আমরা এই হামলার নিন্দা জানাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতারা হামলার দায়িত্ব অস্বীকার করেছেন। কিন্তু এক দিন পরেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা হামলা চালানোর পরে বলেছেন, ‘যারা প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে আস্থা রাখে না, তাদের আর ছাড় দেওয়া হবে না।’ ছাত্রলীগের কোনো নেতার এ ধরনের মন্তব্যের পরে যদি সরকারি দলের উচ্চপর্যায় থেকে নীরবতা অবলম্বন করা হয়, তাহলে এটাই প্রতীয়মান হবে যে এর পেছনে পর্দার আড়ালের মুরব্বিদের আশীর্বাদ আছে।
কোটা সংস্কার বা কোটাব্যবস্থা যৌক্তিকীকরণ একটি ন্যায্য আন্দোলন। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৫৫ শতাংশ নিয়োগ অগ্রাধিকারে এবং বাকি ৪৫ শতাংশ মেধা কোটায় নিয়োগের যে ব্যবস্থা তা অবশ্যই পাল্টানোর দাবি রাখে। এ ব্যবস্থা কোনোভাবেই অপরিবর্তিত থাকতে পারে না। কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরাও কোটাব্যবস্থার বিলোপ চাইছেন না। কিন্তু তাঁরা যুক্তিসংগত কারণেই এবং দেশের বৃহত্তর স্বার্থে মেধার শ্রেষ্ঠত্ব কায়েম করার আওয়াজ তুলেছেন।
শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা শুধু ছাত্রলীগের নির্যাতনেরই শিকারই হচ্ছেন না, একই সঙ্গে তাঁরা গ্রেপ্তার ও লাঞ্ছনারও শিকার হচ্ছেন। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানকে ছাত্রলীগের এক নেতার করা মামলায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই পদক্ষেপ আন্দোলনকামীদের আরও ক্ষুব্ধ করে তুলবে। কোটা সংস্কারে গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটির নিষ্ক্রিয়তা কাম্য নয়। সরকারি মহল এটা আশা করতে পারে না যে প্রধানমন্ত্রী একটি কমিটি করে দিয়েছেন বলেই ছাত্র ও চাকরি প্রার্থীদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বা আন্দোলন করার অধিকার থাকবে না। আন্দোলনকারীরা সংবাদ সম্মেলন করে তাঁদের বক্তব্য বা আরজি সরকার তথা দেশবাসীকে জানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সরকার-সমর্থক ছাত্র সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা তাঁদের ওপর চড়াও হয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করেছেন। এরপর শিক্ষাঙ্গনে কোনো অঘটন ঘটলে কিংবা শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়, এমন কিছু ঘটলে তার দায়ও তাঁরা এড়াতে পারবেন না।
আমরা আশা করব, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস বাস্তবে রূপ দিয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর সব ধরনের নির্যাতন-হয়রানি বন্ধ করা হবে। সেই সঙ্গে রাশেদ চৌধুরীকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া হোক। যাঁরা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন, তাঁদের বিষয়ে প্রশাসন নীরব থেকে আক্রান্তদের ওপর পুলিশের গ্রেপ্তার-হয়রানি জনমনে ভুল বার্তাই দেবে।