ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

কোটচাঁদপুরে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট কালোবাজারির দখলে!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২২:০৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ অক্টোবর ২০১৮
  • / ৩৪৭ বার পড়া হয়েছে

কোটচাঁদপুর (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর রেল স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট বেপরোয়াভাবে কালোবাজারি হচ্ছে। অতিরিক্ত টাকা না দিলে পাওয়া যাচ্ছে না কোন টিকিট। ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন এলাকার সচেতন মহল। জানা যায়, স্টেশনের রেল কর্মচারী ও তাদের সহযোগীরা বেপরোয়াভাবেই নানা কৌশলে অতিরিক্ত টাকায় ট্রেনের টিকেটের কালোবাজারীর ব্যবসা করে যাচ্ছে। র্দীঘদিন যাবত এ অবস্থা চললেও অজ্ঞাত কারণে রেলওয়ের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যার ফলে দিন দিন যাত্রী হয়রানি ও অবৈধ টিকেট বানিজ্য মারাত্মক রুপ নিয়েছে। এই অবৈধ ব্যবসা ও যাত্রী হয়রানী নিয়ে যাত্রীরা খুলনা বিভাগীয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্মকর্তার কাছেও অভিযোগ পেশ করেছেন। তাতেও কোন লাভ হয়নি বলে আলতাফ হোসেন নামে একজন যাত্রী অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে জানা যায়, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর রেলস্টেশনে খুলনা-ঢাকা রেল পথে চলাচলকারি আন্তঃনগর চিত্রা ও সুন্দরবন ট্রেনের টিকেট অবৈধভাবে বেশি টাকায় এবং নানা কৌশলে যাত্রীদের কছে বিক্রি করা হচ্ছে। স্টেশনে কর্মরত টিকেট বিক্রেতা (বুকিং ক্লার্ক) ও স্টেশন মাষ্টারসহ কর্মকর্তারা স্থানীয় এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় তারা দাপটের সাথে ট্রেনের টিকেট ছলচাতুরী করে নানা কৌশলে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে বিক্রি করছে। তারা কোন যাত্রীর অভিযোগ পাত্তাই দিচ্ছে না। ঢাকার প্রতিটি টিকেট ২’শ টাকা থেকে কোন কোন সময় ৪/৫ শ’টাকা অতিরিক্ত নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। গত ঈদুল আযহার সময়ে কোটচঁদপুর রেল স্টেশনে ৮৩৫/- টাকার একটি এসি টিকেট বিক্রি হয়েছে ডবল দামে। অর্থাৎ ১৬০০ টাকায়। ওয়ায়েজ নামের এক যাত্রী দু’টি টিকেট কিনেছেন ৩২০০ টাকায়। তিনি একজন শিক্ষক। কোন বাক বিতন্ডায় না গেলেও মনের কষ্টে বিষয়টি অকপটে প্রকাশ করেছেন পরে।
গত ১৬ আগষ্ট টাঙ্গাইল রেল স্টেশনে অবৈধভাবে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে টিকেট বিক্রির সময় গোয়েন্দা সংস্থার হাতে ধরা পড়েন টিকেট বিক্রেতা হান্নান সরকার ও পয়েন্টস ম্যান জিল¬ুর রহমান। পরে স্থানীয়দের অনুরোধ ও ক্ষমা প্রার্থনার এক পর্যায়ে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পায় ওই দুই রেল কর্মচারী।
স্থানীয় রেল কর্মচারিরা এলাকার কথিত রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙ্গানো নেতাদের যোগসাজে কালোবাজারি সিন্ডিকেট গড়ে তুলে টিকেট অতিরিক্ত টাকা নিয়ে বিক্রি করছে নির্দ্বিধায় এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্টেশনের পাশে পান দোকানে অতিরিক্ত বেশী টাকায় বিক্রি হয় এসব টিকেট। কোটচাঁদপুর রেল স্টেশনে কয়েকটি উপজেলার লোকজন ট্রেনে চলাফেরা করেন। এবারের ঈদের সময় প্রতিটি টিকেট গোপনে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শোভন চেয়ার এর টিকেট বিক্রি হয়েছে ২’শ থেকে ৪’শত টাকা অতিরিক্ত বেশী দামে। দালালের মাধ্যমে কিনতে হয়েছে কোটচাঁদপুর রেল স্টেশনের অধিকাংশ আসনযুক্ত টিকেট। এসব টিকেট সংগ্রহের সময় রেল কর্মচারিদের অভিনব কৌশলের শিকার হয়েছেন যাত্রীরা।
যাত্রীদের অভিযোগ, স্থানীয় রেল কর্মচারী (স্টেশন মাস্টার ও সহকারীরা) যাত্রীদের বলেন টিকেট দেয়া যাবে কিন্তু কোন সিট নেই। এবার যাত্রীর অনুরোধ কোন ভাবে তাকে সিট ব্যবস্থা করে দেয়ার। শেষ পর্যন্ত বলা হয় খুলনা বা যশোর রেল স্টেশন থেকে আনা যায় তার জন্যে অতিরিক্ত টাকা লাগবে। অতিরিক্ত টাকা নিয়ে শেষ পর্যন্ত তাকে সিট সংগ্রহ করতে হচ্ছে। অন্য আরও একটি কৌশল হচ্ছে টিকেট কালোবাজারি চক্র ও রেল কর্মচারীদের যোগসাজে ঈদ বা উৎসবের সময় এলেই আগে থেকেই সব সিট বুকিং দিয়ে দিচ্ছে ভূয়া নামে নিজেরা। পরে বেশী দামে বিক্রি করছে যাত্রীদের সাথে দরকষাকষির মাধ্যমে। কোটচাঁদপুরসহ আরও অনেক রেলস্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট বেপরোয়া ভাবে কালোবাজারি হচ্ছে বলে অভিযোগে জানা গেছে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে।
কয়েক জন ভুক্তভোগ যাত্রীরা জানান, রেলের টিকেট এখন যেন সোনার হরিণে পরিনত হয়েছে। যে কারনে রেল কর্মচারীরা নির্দ্বিধায় টিকেট কালোবাজারি করে যাচ্ছে। কিন্তু রেলওয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা সব কিছু জেনেও কোন প্রতিকারের ব্যবস্থা নিচ্ছেনা বলে অভিযোগ যাত্রীদের। তাই ভুক্তভোগি যাত্রীরা রেলওয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রীর ও খুলনা বিভাগীয় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
কোটচাঁদপুর রেল স্টেশন মাস্টার গোলাম মেস্তাফার সাথে কথা বলে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার কাউন্টারে যে যাত্রীই টিকিট ক্রয় করতে আসে আমি তার কাছেই টিকিট বিক্রয় করি। আর টিকিট কালোবাজারীর সাথে আমার কোন কর্মচারী জড়িত নয় বলেও জানান তিনি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

কোটচাঁদপুরে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট কালোবাজারির দখলে!

আপলোড টাইম : ০৯:২২:০৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ অক্টোবর ২০১৮

কোটচাঁদপুর (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর রেল স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট বেপরোয়াভাবে কালোবাজারি হচ্ছে। অতিরিক্ত টাকা না দিলে পাওয়া যাচ্ছে না কোন টিকিট। ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন এলাকার সচেতন মহল। জানা যায়, স্টেশনের রেল কর্মচারী ও তাদের সহযোগীরা বেপরোয়াভাবেই নানা কৌশলে অতিরিক্ত টাকায় ট্রেনের টিকেটের কালোবাজারীর ব্যবসা করে যাচ্ছে। র্দীঘদিন যাবত এ অবস্থা চললেও অজ্ঞাত কারণে রেলওয়ের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যার ফলে দিন দিন যাত্রী হয়রানি ও অবৈধ টিকেট বানিজ্য মারাত্মক রুপ নিয়েছে। এই অবৈধ ব্যবসা ও যাত্রী হয়রানী নিয়ে যাত্রীরা খুলনা বিভাগীয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্মকর্তার কাছেও অভিযোগ পেশ করেছেন। তাতেও কোন লাভ হয়নি বলে আলতাফ হোসেন নামে একজন যাত্রী অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে জানা যায়, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর রেলস্টেশনে খুলনা-ঢাকা রেল পথে চলাচলকারি আন্তঃনগর চিত্রা ও সুন্দরবন ট্রেনের টিকেট অবৈধভাবে বেশি টাকায় এবং নানা কৌশলে যাত্রীদের কছে বিক্রি করা হচ্ছে। স্টেশনে কর্মরত টিকেট বিক্রেতা (বুকিং ক্লার্ক) ও স্টেশন মাষ্টারসহ কর্মকর্তারা স্থানীয় এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় তারা দাপটের সাথে ট্রেনের টিকেট ছলচাতুরী করে নানা কৌশলে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে বিক্রি করছে। তারা কোন যাত্রীর অভিযোগ পাত্তাই দিচ্ছে না। ঢাকার প্রতিটি টিকেট ২’শ টাকা থেকে কোন কোন সময় ৪/৫ শ’টাকা অতিরিক্ত নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। গত ঈদুল আযহার সময়ে কোটচঁদপুর রেল স্টেশনে ৮৩৫/- টাকার একটি এসি টিকেট বিক্রি হয়েছে ডবল দামে। অর্থাৎ ১৬০০ টাকায়। ওয়ায়েজ নামের এক যাত্রী দু’টি টিকেট কিনেছেন ৩২০০ টাকায়। তিনি একজন শিক্ষক। কোন বাক বিতন্ডায় না গেলেও মনের কষ্টে বিষয়টি অকপটে প্রকাশ করেছেন পরে।
গত ১৬ আগষ্ট টাঙ্গাইল রেল স্টেশনে অবৈধভাবে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে টিকেট বিক্রির সময় গোয়েন্দা সংস্থার হাতে ধরা পড়েন টিকেট বিক্রেতা হান্নান সরকার ও পয়েন্টস ম্যান জিল¬ুর রহমান। পরে স্থানীয়দের অনুরোধ ও ক্ষমা প্রার্থনার এক পর্যায়ে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পায় ওই দুই রেল কর্মচারী।
স্থানীয় রেল কর্মচারিরা এলাকার কথিত রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙ্গানো নেতাদের যোগসাজে কালোবাজারি সিন্ডিকেট গড়ে তুলে টিকেট অতিরিক্ত টাকা নিয়ে বিক্রি করছে নির্দ্বিধায় এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্টেশনের পাশে পান দোকানে অতিরিক্ত বেশী টাকায় বিক্রি হয় এসব টিকেট। কোটচাঁদপুর রেল স্টেশনে কয়েকটি উপজেলার লোকজন ট্রেনে চলাফেরা করেন। এবারের ঈদের সময় প্রতিটি টিকেট গোপনে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শোভন চেয়ার এর টিকেট বিক্রি হয়েছে ২’শ থেকে ৪’শত টাকা অতিরিক্ত বেশী দামে। দালালের মাধ্যমে কিনতে হয়েছে কোটচাঁদপুর রেল স্টেশনের অধিকাংশ আসনযুক্ত টিকেট। এসব টিকেট সংগ্রহের সময় রেল কর্মচারিদের অভিনব কৌশলের শিকার হয়েছেন যাত্রীরা।
যাত্রীদের অভিযোগ, স্থানীয় রেল কর্মচারী (স্টেশন মাস্টার ও সহকারীরা) যাত্রীদের বলেন টিকেট দেয়া যাবে কিন্তু কোন সিট নেই। এবার যাত্রীর অনুরোধ কোন ভাবে তাকে সিট ব্যবস্থা করে দেয়ার। শেষ পর্যন্ত বলা হয় খুলনা বা যশোর রেল স্টেশন থেকে আনা যায় তার জন্যে অতিরিক্ত টাকা লাগবে। অতিরিক্ত টাকা নিয়ে শেষ পর্যন্ত তাকে সিট সংগ্রহ করতে হচ্ছে। অন্য আরও একটি কৌশল হচ্ছে টিকেট কালোবাজারি চক্র ও রেল কর্মচারীদের যোগসাজে ঈদ বা উৎসবের সময় এলেই আগে থেকেই সব সিট বুকিং দিয়ে দিচ্ছে ভূয়া নামে নিজেরা। পরে বেশী দামে বিক্রি করছে যাত্রীদের সাথে দরকষাকষির মাধ্যমে। কোটচাঁদপুরসহ আরও অনেক রেলস্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট বেপরোয়া ভাবে কালোবাজারি হচ্ছে বলে অভিযোগে জানা গেছে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে।
কয়েক জন ভুক্তভোগ যাত্রীরা জানান, রেলের টিকেট এখন যেন সোনার হরিণে পরিনত হয়েছে। যে কারনে রেল কর্মচারীরা নির্দ্বিধায় টিকেট কালোবাজারি করে যাচ্ছে। কিন্তু রেলওয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা সব কিছু জেনেও কোন প্রতিকারের ব্যবস্থা নিচ্ছেনা বলে অভিযোগ যাত্রীদের। তাই ভুক্তভোগি যাত্রীরা রেলওয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রীর ও খুলনা বিভাগীয় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
কোটচাঁদপুর রেল স্টেশন মাস্টার গোলাম মেস্তাফার সাথে কথা বলে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার কাউন্টারে যে যাত্রীই টিকিট ক্রয় করতে আসে আমি তার কাছেই টিকিট বিক্রয় করি। আর টিকিট কালোবাজারীর সাথে আমার কোন কর্মচারী জড়িত নয় বলেও জানান তিনি।