ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

কেন সবাই এমপি হতে চায়?

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৪১:৫৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ অক্টোবর ২০১৮
  • / ৬৩৯ বার পড়া হয়েছে

-মোহা. হারুন-উর-রশিদ

একাদশ সংসদ নির্বাচন আসন্ন। রাজনীতির মাঠ এখন কিছুটা শান্ত। ঝড়ের পূর্বে যেমন প্রকৃতিতে নিরবতা নেমে আসে, অবস্থা ঠিক সেরকম। নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনী তফসিল ঘোষিত হবে। ক্ষমতাসীন সরকারের বিরোধিরা তফসিল ঘোষণার প্রহর গুনছেন। তফসিল ঘোষিত হলে তারা মাঠে নামবে। জাতীয় ঐক্যের কথা বলে, তারা আপাতত নির্বাচনী আলোচনায় আছে। অপরদিকে, সরকারি দলের বর্তমান সাংসদগণ ও গ্রীণ কিংবা হলুদ সিগনাল পাওয়া সম্ভাব্য প্রর্থীগণ তাদের নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর নির্বচনের মূল শক্তি ক্ষমতার উৎস ভোটারগণ পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করছেন। জাতীয় নির্বাচনে তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ভোট দিয়ে তারা তাদের প্রতিনিধি হিসেবে ৩০০ জন সাংসদ নির্বাচিত করবেন। এই নির্বাচিত ৩০০ জন আরও ৫০ জন সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত করবেন। সর্বমোট ৩৫০ জন সংসদ সদস্য নিয়ে জাতীয় সংসদ গঠিত হবে।
এখন দেশের সবখানে নির্বাচন ও রাজনীতি নিয়ে কথা হচ্ছে। সম্প্রতি আমাদের বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তনে বিভিন্ন পেশাজীবীদের রাজনৈতিক অভিলাষের কথা খোলামেলাভাবে বলেছেন। তিনি বলেছেন, “প্রত্যেকেই রিটায়ার কইরা বলে, ‘আমি রাজনীতি করিব’।” আমাদের বর্তমান রাষ্ট্রপতি যথার্থই বলেছেন। এদেশে সাধারণ প্রবনতা হলো, সবাই রাজনীতি করতে চাই। আর বর্তমান সময়ে সবাই এমপি হতে চাই, একথা বললে বোধ হয় বাড়িয়ে বলা হবে না।
এমপি-মেম্বার অব পার্লামেন্ট বা মেম্বার অব দ্য লেজিসলেটিভ এসেম্বলি( এমএলএ ) এর বাংলা প্রতিশব্দ হলো সংসদ সদস্য। সংসদ সদস্যদের সংক্ষেপে ‘সাংসদ’ আর ফরাসি ভাষায় ‘ডেপুটি’ নামে অভিহিত করা হয়। আমাদের দেশের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুসারে সবার উপরে এক নম্বরে আছেন রাষ্ট্রপতি এরপর দুই নম্বরে প্রধানমন্ত্রী। সাংসদ বা এমপিদের অবস্থান ১৩ নম্বরে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি সেনা প্রধান, পুলিশের আইজিসহ যেসব পেশাজীবীদের কথা তাঁর সমাবর্তন বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন, তারা সবাই তাদের চাকুরী জীবনে পদামর্যাদার ক্রমানুসরে ১৩ নম্বরের উপরে অবস্থান করেছেন। তাহলে অবসরের পর কেন তারা নিচে নামতে চান? কী সেই রহস্য? কেন এই প্রবণতা? শিল্পপতি-ভগ্নিপতি, আমলা থেকে কামলা, রাজনীতিবিদ থেকে পীর, মৌলভী থেকে মাদক ব্যবসায়ী সবাই কেন এমপি হতে চাই?
একজন সংসদ সদস্যের বিধিবদ্ধ দায়িত্ব যদি আপনি লক্ষ্য করেন। তাহলে দেখবেন, তাঁর দ্বায়িত্ব হলো- তিনি নিয়মিত জাতীয় সংসদের অধিবেশনে যোগ দিয়ে কার্যবিধি অনুসারে দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে সংসদে বিল উত্থাপন করতে পারবেন ও অন্যের আনিত বিলে ভোট দিতে পারবেন। ১৫ দিনের নোটিসসাপেক্ষে সংসদ অধিবেশনে প্রশ্ন উপস্থাপন করতে পারবেন। স্পিকারের অনুমোদন সাপেক্ষে সংসদে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণমূলক বক্তব্য দিতে পারবেন। তাহলে মূল বিষয়টি দাঁড়ালো, আইন প্রণয়নই একজন এমপির মূল কাজ। আইন সকলের জন্য সমান। তাহলে নিজের খেয়ে এতো টাকাপয়সা খরচ করে, কেন সবাই বনের মোষ তাড়াতে চাই?
এ ব্যাপারে আপনি সাধারণ মানুষের সাথে বলেন। সাধারণ মানুষ আপনাকে অসাধারণ ব্যাখ্যা দেবে। তাদের কথার সারমর্ম করলে যে মর্মার্থ দাঁড়াবে তাহলো, আমাদের দেশে নির্বাচন মানে অনেক টাকার ব্যাপার। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইলেকশন করতে এখন মোটামুটি অর্ধ কোটি টাকার কম নিয়ে নামলে হয় না। আর এমপি নির্বাচনের কথাতো বাদিই দেন। তাই দেখা যাচ্ছে, শিল্পপতি থেকে পীর, রাজনীতিবিদ থেকে আমলা সকলে টাকা কামানোর ধান্দায় লেগে আছে। টাকা কামাও, মাঠে বা মাঠের বাইরে রাজনীতি করো। এমপি হও। এরপর তোমাকে পাই কে! এমপি হলে নির্বাচনী এলাকার সব আপনার।
বালু মহল থেকে রঙ্গিন দুনিয়ার অন্দর মহল, হাট-বাজার-হাওড়-বাউড়-বিল-খাল, ফুটপাত থেকে রাজপথ, নদী থেকে সমুদ্র, টেন্ডার থেকে সরকারি সস্পত্তি, উড়ালপথ থেকে মহাকাশ সব আপনার আঙ্গুলের ইশারাই নাচবে। নিজের ও বউ-বাচ্চার নামে-বেনামে রাজধানী ঢাকাতে প্লট। সরকারি খরচে চিকিৎসা, বিদেশ ভ্রমণ, ভ্রমণ কর আর নাই কর সরকারি জাহাজ-গাড়ি-রেলগাড়ি-বিমানে সংরক্ষিত আসন। গণসংবর্ধনা থেকে নাগরিক সংবর্ধনা কী নেই! চাটুকারদের ট্রেডিশনাল পা ছুঁয়ে সালাম থেকে শুরু করে নিত্য নতুন পদ্ধতির সম্মান প্রদর্শন আপনাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখবে। কবরস্থান কমিটি থেকে চাঁদ দেখা কমিটি সব জায়গায় নিজে অথবা নিজের চাটুকার সভাপতি।
পুলিশ প্রহরায় উল্টো পথে উল্টো রথে চলাচলের অবাধ স্বাধীনতা। অন্ধকার জগত থেকে আলোকময় ভূবণে একই সাথে অবস্থানের সুযোগ। চারিদিকে চাটুকার, ভাই লোক হয়ে ওঠা! নির্বচনী মাঠে শিষ্যরা শ্লোগান দিবে-এমপি ভাই ছাড়া আর কোন ভাই নাই, ভাইয়ের কোন বিকল্প নাই। আপনি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গেলে কোমল মতি শিশুরা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে দাঁড়িয়ে থাকবে। বয়োবৃদ্ধ শিক্ষাগুরুটা পর্যন্ত আপনাকে স্যার স্যার বলে অস্থির হয়ে যাবে। পুলিশ-প্রশাসন সব যেন হুকুমের দাস। সবচেয়ে কার্যকর থানার ওসি আজ্ঞাবহ অনুগত অনুচর হিসেবে ছায়ার মতো লেগে থাকবে। যাকে তাকে যখন তখন ধমকান, কোন ব্যাপার না। আপনার ছেলেমেয়েরা প্রকাশ্যে রাজপথে পুলিশকে দু’টাকার চাকর বলে গালি দিতে পারবে, কিচ্ছু হবে না। রাস্তায় তাদের গাড়িকে পথ ছেড়ে দিতে দেরি হলে, রিক্সা চালককে প্রকাশ্যে দিবালোকে দিব্যি গুলি করে দিতে পারবে। আপনার ও আপনার সন্তানদের কাছে হরিণ শিকার আর মানুষ শিকারের মধ্যে পার্থক্য কী? এ নিয়ে কলমজীবীরা কলাম লিখবে। আপনার সন্তানরা ঘোষিত হবে ভবিষ্যতের অঘোষিত রাজপুত্র বা রাজকন্যা হিসেবে। হঠাৎ করে যদি মারা যান, আপনার স্ত্রী, সন্তান বা আপনার ভাই-বোন আপনার জায়গায় স্থলাভিসিক্ত হবেন।
শুল্ক সুবিধা নিয়ে পাঁচ কোটি টাকার গাড়ি ৫০ লাখ টাকায় কিনে রাজপথ দাপিয়ে বেড়াতে পারবেন। নামমাত্র বাসা ভাড়ায় এমপি হোস্টেলে বা মন্ত্রীপাড়ায় থাকার সুখ। বেতন-ভাতা, ব্যাংক-বীমা, রেডিও-টিভি, বৈধ-অবৈধ ব্যবসা, বিলাসিতা কী নেই এমপি জীবনে। মন্ত্রী বা অন্য উঁচু চেয়ার পেলেতো, পোয়া বার। কোনমতে, শুধু একবার হতে পারলেই হলো। ইহ জীবন ধন্য। আর জনগণ? পাঁচ বছর পর আবার দেখা হবে তার ভগ্ন কুঠরিতে। এরমধ্যে দেশে-বিদেশে আপনি বহু অট্টলিকার মালিক বনে যাবেন। লোকে বলে, এতো সুবিধা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ইন্সুরেন্স কোম্পানি তার সবচেয়ে আকর্ষণীয় অফারেও দিতে পারবে না। জনগণের নির্দিষ্ট দিনে দেওয়া ভোট আপনাকে এমন অসীম সুবিধা আর অবারিত সুযোগের দূয়ার খুলে দিবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

কেন সবাই এমপি হতে চায়?

আপলোড টাইম : ০৯:৪১:৫৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ অক্টোবর ২০১৮

-মোহা. হারুন-উর-রশিদ

একাদশ সংসদ নির্বাচন আসন্ন। রাজনীতির মাঠ এখন কিছুটা শান্ত। ঝড়ের পূর্বে যেমন প্রকৃতিতে নিরবতা নেমে আসে, অবস্থা ঠিক সেরকম। নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনী তফসিল ঘোষিত হবে। ক্ষমতাসীন সরকারের বিরোধিরা তফসিল ঘোষণার প্রহর গুনছেন। তফসিল ঘোষিত হলে তারা মাঠে নামবে। জাতীয় ঐক্যের কথা বলে, তারা আপাতত নির্বাচনী আলোচনায় আছে। অপরদিকে, সরকারি দলের বর্তমান সাংসদগণ ও গ্রীণ কিংবা হলুদ সিগনাল পাওয়া সম্ভাব্য প্রর্থীগণ তাদের নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর নির্বচনের মূল শক্তি ক্ষমতার উৎস ভোটারগণ পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করছেন। জাতীয় নির্বাচনে তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ভোট দিয়ে তারা তাদের প্রতিনিধি হিসেবে ৩০০ জন সাংসদ নির্বাচিত করবেন। এই নির্বাচিত ৩০০ জন আরও ৫০ জন সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত করবেন। সর্বমোট ৩৫০ জন সংসদ সদস্য নিয়ে জাতীয় সংসদ গঠিত হবে।
এখন দেশের সবখানে নির্বাচন ও রাজনীতি নিয়ে কথা হচ্ছে। সম্প্রতি আমাদের বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তনে বিভিন্ন পেশাজীবীদের রাজনৈতিক অভিলাষের কথা খোলামেলাভাবে বলেছেন। তিনি বলেছেন, “প্রত্যেকেই রিটায়ার কইরা বলে, ‘আমি রাজনীতি করিব’।” আমাদের বর্তমান রাষ্ট্রপতি যথার্থই বলেছেন। এদেশে সাধারণ প্রবনতা হলো, সবাই রাজনীতি করতে চাই। আর বর্তমান সময়ে সবাই এমপি হতে চাই, একথা বললে বোধ হয় বাড়িয়ে বলা হবে না।
এমপি-মেম্বার অব পার্লামেন্ট বা মেম্বার অব দ্য লেজিসলেটিভ এসেম্বলি( এমএলএ ) এর বাংলা প্রতিশব্দ হলো সংসদ সদস্য। সংসদ সদস্যদের সংক্ষেপে ‘সাংসদ’ আর ফরাসি ভাষায় ‘ডেপুটি’ নামে অভিহিত করা হয়। আমাদের দেশের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুসারে সবার উপরে এক নম্বরে আছেন রাষ্ট্রপতি এরপর দুই নম্বরে প্রধানমন্ত্রী। সাংসদ বা এমপিদের অবস্থান ১৩ নম্বরে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি সেনা প্রধান, পুলিশের আইজিসহ যেসব পেশাজীবীদের কথা তাঁর সমাবর্তন বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন, তারা সবাই তাদের চাকুরী জীবনে পদামর্যাদার ক্রমানুসরে ১৩ নম্বরের উপরে অবস্থান করেছেন। তাহলে অবসরের পর কেন তারা নিচে নামতে চান? কী সেই রহস্য? কেন এই প্রবণতা? শিল্পপতি-ভগ্নিপতি, আমলা থেকে কামলা, রাজনীতিবিদ থেকে পীর, মৌলভী থেকে মাদক ব্যবসায়ী সবাই কেন এমপি হতে চাই?
একজন সংসদ সদস্যের বিধিবদ্ধ দায়িত্ব যদি আপনি লক্ষ্য করেন। তাহলে দেখবেন, তাঁর দ্বায়িত্ব হলো- তিনি নিয়মিত জাতীয় সংসদের অধিবেশনে যোগ দিয়ে কার্যবিধি অনুসারে দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে সংসদে বিল উত্থাপন করতে পারবেন ও অন্যের আনিত বিলে ভোট দিতে পারবেন। ১৫ দিনের নোটিসসাপেক্ষে সংসদ অধিবেশনে প্রশ্ন উপস্থাপন করতে পারবেন। স্পিকারের অনুমোদন সাপেক্ষে সংসদে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণমূলক বক্তব্য দিতে পারবেন। তাহলে মূল বিষয়টি দাঁড়ালো, আইন প্রণয়নই একজন এমপির মূল কাজ। আইন সকলের জন্য সমান। তাহলে নিজের খেয়ে এতো টাকাপয়সা খরচ করে, কেন সবাই বনের মোষ তাড়াতে চাই?
এ ব্যাপারে আপনি সাধারণ মানুষের সাথে বলেন। সাধারণ মানুষ আপনাকে অসাধারণ ব্যাখ্যা দেবে। তাদের কথার সারমর্ম করলে যে মর্মার্থ দাঁড়াবে তাহলো, আমাদের দেশে নির্বাচন মানে অনেক টাকার ব্যাপার। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইলেকশন করতে এখন মোটামুটি অর্ধ কোটি টাকার কম নিয়ে নামলে হয় না। আর এমপি নির্বাচনের কথাতো বাদিই দেন। তাই দেখা যাচ্ছে, শিল্পপতি থেকে পীর, রাজনীতিবিদ থেকে আমলা সকলে টাকা কামানোর ধান্দায় লেগে আছে। টাকা কামাও, মাঠে বা মাঠের বাইরে রাজনীতি করো। এমপি হও। এরপর তোমাকে পাই কে! এমপি হলে নির্বাচনী এলাকার সব আপনার।
বালু মহল থেকে রঙ্গিন দুনিয়ার অন্দর মহল, হাট-বাজার-হাওড়-বাউড়-বিল-খাল, ফুটপাত থেকে রাজপথ, নদী থেকে সমুদ্র, টেন্ডার থেকে সরকারি সস্পত্তি, উড়ালপথ থেকে মহাকাশ সব আপনার আঙ্গুলের ইশারাই নাচবে। নিজের ও বউ-বাচ্চার নামে-বেনামে রাজধানী ঢাকাতে প্লট। সরকারি খরচে চিকিৎসা, বিদেশ ভ্রমণ, ভ্রমণ কর আর নাই কর সরকারি জাহাজ-গাড়ি-রেলগাড়ি-বিমানে সংরক্ষিত আসন। গণসংবর্ধনা থেকে নাগরিক সংবর্ধনা কী নেই! চাটুকারদের ট্রেডিশনাল পা ছুঁয়ে সালাম থেকে শুরু করে নিত্য নতুন পদ্ধতির সম্মান প্রদর্শন আপনাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখবে। কবরস্থান কমিটি থেকে চাঁদ দেখা কমিটি সব জায়গায় নিজে অথবা নিজের চাটুকার সভাপতি।
পুলিশ প্রহরায় উল্টো পথে উল্টো রথে চলাচলের অবাধ স্বাধীনতা। অন্ধকার জগত থেকে আলোকময় ভূবণে একই সাথে অবস্থানের সুযোগ। চারিদিকে চাটুকার, ভাই লোক হয়ে ওঠা! নির্বচনী মাঠে শিষ্যরা শ্লোগান দিবে-এমপি ভাই ছাড়া আর কোন ভাই নাই, ভাইয়ের কোন বিকল্প নাই। আপনি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গেলে কোমল মতি শিশুরা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে দাঁড়িয়ে থাকবে। বয়োবৃদ্ধ শিক্ষাগুরুটা পর্যন্ত আপনাকে স্যার স্যার বলে অস্থির হয়ে যাবে। পুলিশ-প্রশাসন সব যেন হুকুমের দাস। সবচেয়ে কার্যকর থানার ওসি আজ্ঞাবহ অনুগত অনুচর হিসেবে ছায়ার মতো লেগে থাকবে। যাকে তাকে যখন তখন ধমকান, কোন ব্যাপার না। আপনার ছেলেমেয়েরা প্রকাশ্যে রাজপথে পুলিশকে দু’টাকার চাকর বলে গালি দিতে পারবে, কিচ্ছু হবে না। রাস্তায় তাদের গাড়িকে পথ ছেড়ে দিতে দেরি হলে, রিক্সা চালককে প্রকাশ্যে দিবালোকে দিব্যি গুলি করে দিতে পারবে। আপনার ও আপনার সন্তানদের কাছে হরিণ শিকার আর মানুষ শিকারের মধ্যে পার্থক্য কী? এ নিয়ে কলমজীবীরা কলাম লিখবে। আপনার সন্তানরা ঘোষিত হবে ভবিষ্যতের অঘোষিত রাজপুত্র বা রাজকন্যা হিসেবে। হঠাৎ করে যদি মারা যান, আপনার স্ত্রী, সন্তান বা আপনার ভাই-বোন আপনার জায়গায় স্থলাভিসিক্ত হবেন।
শুল্ক সুবিধা নিয়ে পাঁচ কোটি টাকার গাড়ি ৫০ লাখ টাকায় কিনে রাজপথ দাপিয়ে বেড়াতে পারবেন। নামমাত্র বাসা ভাড়ায় এমপি হোস্টেলে বা মন্ত্রীপাড়ায় থাকার সুখ। বেতন-ভাতা, ব্যাংক-বীমা, রেডিও-টিভি, বৈধ-অবৈধ ব্যবসা, বিলাসিতা কী নেই এমপি জীবনে। মন্ত্রী বা অন্য উঁচু চেয়ার পেলেতো, পোয়া বার। কোনমতে, শুধু একবার হতে পারলেই হলো। ইহ জীবন ধন্য। আর জনগণ? পাঁচ বছর পর আবার দেখা হবে তার ভগ্ন কুঠরিতে। এরমধ্যে দেশে-বিদেশে আপনি বহু অট্টলিকার মালিক বনে যাবেন। লোকে বলে, এতো সুবিধা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ইন্সুরেন্স কোম্পানি তার সবচেয়ে আকর্ষণীয় অফারেও দিতে পারবে না। জনগণের নির্দিষ্ট দিনে দেওয়া ভোট আপনাকে এমন অসীম সুবিধা আর অবারিত সুযোগের দূয়ার খুলে দিবে।