ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

কুরআন শরীফ কম ছাপিয়ে ২ কোটি টাকা লোপাট

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৫২:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৯
  • / ২১৯ বার পড়া হয়েছে

ইসলামিক ফাউন্ডেশনে দুর্নীতি (এই লাইনটা রিভার্স হবে)
সমীকরণ প্রতিবেদন:
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি সামীম মো.আফজালের আমলে এবার পবিত্র কুরআন শরীফ কম ছাপিয়ে ২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের শিশুদের মাঝে পুরস্কার হিসেবে বিতরনের জন্য ৬ লাখ কপি কুরআনুল করিমের বিল পরিশোধ করে ৫ লাখ কপি গ্রহণ করা হয়েছে। বাকী ১ লাখ কপির মূল্য বাবদ ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আর এ অভিযোগ এসেছে দেশের একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের সিভিল অডিট অধিদপ্তরের এক নিরীক্ষা পরিদর্শন প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যাদেশে উল্লিখিত পরিমানের চেয়ে কম পরিমান কুরআনুল করিম সরবরাহ নেওয়ায় সরকারের ১,৯৪,৩৭,৬০০/ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এতে বলা হয় ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৫,৯৯,৬৮০ কপি কুরআনুল করিম সরবরাহের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রিন্টিং প্রেসকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। কিন্তু প্রেস থেকে ৫ লাখ কপি কুরআনুল করিম সরবরাহ করা হয়। বাকি ৯৯,৬৮০ কপি কুরআনুল করিম সরবরাহ করা হয়নি। অথচ ৫,৯৯,৬৮০ কপি কুরআনুল করিম মুদ্রণের বিল বাবদ পুরো ১১ কোটি ৬৯ লাখ ৩৭ হাজার ৬০০ টাকাই পরিশোধ করা হয়েছে।
জানা গেছে, কুরআনুল করিম ছাপানো বাবদ অর্থ আত্মসাতের জন্য নানামুখী চাতুর্যের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের সারা দেশে ৮০ হাজার কেন্দ্রে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণের জন্য ২ যুগের ও বেশি সময় ধরে স্কুল ব্যাগ, ছাতা অথবা অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ দেওয়া হতো। এ পুরস্কারের অর্থ প্রতিটি জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হত। জেলা পর্যায় থেকে তা ক্রয় করে শিশুদের দেয়া হতো। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে হঠাৎ করে ডিজি সামীম মো. আফজাল জেলায় টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেন। তিনি প্রধান কার্যালয় থেকে পুরষ্কার হিসেবে কুরআন শরীফ প্রদান করবেন বলে জানান। এর পর তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রিন্টিং প্রেসে ম্যানেজার হিসেবে তার এক নিকট আত্মীয়কে বদলি করে নিয়ে আসেন।
প্রথমে মহাপরিচালক কুরআন শরীফ ছাপানোর জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রিন্টিং প্রেসকে কার্যাদেশ প্রদান করেন। এর পর প্রকল্প দলিলে পুরস্কার হিসেবে রাখা ১১ কোটি ৬৯ লাখ ৩৭ হাজার ৬০০ টাকা প্রেসে স্থানান্তর করা হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রিন্টিং প্রেস কুরআন শরীফ ছাপানোর উদ্যোগ নিলে ডিজি সামীম মো. আফজাল তা বন্ধ করে দেন। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রেসের পরিবর্তে বাইরের প্রতিষ্ঠানে তা ছাপানোর জন্য প্রেসের পক্ষ থেকে টেন্ডার আহবান করেন। টেন্ডারের মাধ্যমে কৌশলে তার বন্ধুর প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হয়। ঐ প্রতিষ্ঠানে ১ লাখ কপি কম ছাপানো হয় এবং প্রায় ২ কোটি টাকা এ ভাবে লোপাট করা হয়।
বিষয়টি ধরা পড়ে যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রিন্টিং প্রেসের স্টক রেজিষ্ট্রারের কারণে। সরকারি ছুটির দিন মহাপরিচালকের বন্ধুর প্রতিষ্ঠানটি কুরআন শরীফ সরবরাহ করতে আসে এবং সরলমনা ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্মচারী যা সরবরাহ পেয়েছেন স্টক রেজিষ্ট্রারে তাই লিখেছেন। স্টক রেজিষ্ট্রারে দেখা যায় কুরআন শরীফ সরবরাহ করা হয়েছে ৫ লাখ। আর কার্যাদেশে রয়েছে ৫,৯৯,৬৮০ কপি। অর্থাৎ প্রায় ১ লাখ কপি কম ছাপানো হয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একজন পরিচালক ও সাবেক জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল আনোয়ার গতকাল রাতে এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রকল্পের পক্ষ থেকে সরাসরি টেন্ডার করা অথবা টেন্ডার ছাড়া সরাসরি ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রেসকে কাজ দেয়া যায়। কিন্তু ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রেসকে কার্যাদেশ দিলে তারা আবার টেন্ডার করবে এবং বাইরের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেবে এ বিধান নেই। তিনি বলেন, ইফার প্রেসের দক্ষ জনবল এবং সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। কিন্তু এ জনবলকে বসিয়ে রেখে এবং সরকারি মেশিন অকেজো করে বেসরকারী প্রেসে কেন কাজ দেয়া হয় তা বোধগম্য নয়।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে সিভিল অডিট অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ২০০৯-২০১৮ সময়কালের বিশেষ নিরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রথমে ১৩২টি অনুচ্ছেদে অডিট আপত্তি এবং পরে প্রাথমিক জবাবের পর ৯৬টি অনুচ্ছেদে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। নিরীক্ষা পরিদর্শন প্রতিবেদনের ১৩ নম্বর অনুচ্ছেদে কুরআনুল করিম কম ছাপিয়ে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি উঠে আসে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

কুরআন শরীফ কম ছাপিয়ে ২ কোটি টাকা লোপাট

আপলোড টাইম : ১০:৫২:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৯

ইসলামিক ফাউন্ডেশনে দুর্নীতি (এই লাইনটা রিভার্স হবে)
সমীকরণ প্রতিবেদন:
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি সামীম মো.আফজালের আমলে এবার পবিত্র কুরআন শরীফ কম ছাপিয়ে ২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের শিশুদের মাঝে পুরস্কার হিসেবে বিতরনের জন্য ৬ লাখ কপি কুরআনুল করিমের বিল পরিশোধ করে ৫ লাখ কপি গ্রহণ করা হয়েছে। বাকী ১ লাখ কপির মূল্য বাবদ ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আর এ অভিযোগ এসেছে দেশের একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের সিভিল অডিট অধিদপ্তরের এক নিরীক্ষা পরিদর্শন প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যাদেশে উল্লিখিত পরিমানের চেয়ে কম পরিমান কুরআনুল করিম সরবরাহ নেওয়ায় সরকারের ১,৯৪,৩৭,৬০০/ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এতে বলা হয় ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৫,৯৯,৬৮০ কপি কুরআনুল করিম সরবরাহের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রিন্টিং প্রেসকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। কিন্তু প্রেস থেকে ৫ লাখ কপি কুরআনুল করিম সরবরাহ করা হয়। বাকি ৯৯,৬৮০ কপি কুরআনুল করিম সরবরাহ করা হয়নি। অথচ ৫,৯৯,৬৮০ কপি কুরআনুল করিম মুদ্রণের বিল বাবদ পুরো ১১ কোটি ৬৯ লাখ ৩৭ হাজার ৬০০ টাকাই পরিশোধ করা হয়েছে।
জানা গেছে, কুরআনুল করিম ছাপানো বাবদ অর্থ আত্মসাতের জন্য নানামুখী চাতুর্যের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের সারা দেশে ৮০ হাজার কেন্দ্রে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণের জন্য ২ যুগের ও বেশি সময় ধরে স্কুল ব্যাগ, ছাতা অথবা অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ দেওয়া হতো। এ পুরস্কারের অর্থ প্রতিটি জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হত। জেলা পর্যায় থেকে তা ক্রয় করে শিশুদের দেয়া হতো। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে হঠাৎ করে ডিজি সামীম মো. আফজাল জেলায় টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেন। তিনি প্রধান কার্যালয় থেকে পুরষ্কার হিসেবে কুরআন শরীফ প্রদান করবেন বলে জানান। এর পর তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রিন্টিং প্রেসে ম্যানেজার হিসেবে তার এক নিকট আত্মীয়কে বদলি করে নিয়ে আসেন।
প্রথমে মহাপরিচালক কুরআন শরীফ ছাপানোর জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রিন্টিং প্রেসকে কার্যাদেশ প্রদান করেন। এর পর প্রকল্প দলিলে পুরস্কার হিসেবে রাখা ১১ কোটি ৬৯ লাখ ৩৭ হাজার ৬০০ টাকা প্রেসে স্থানান্তর করা হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রিন্টিং প্রেস কুরআন শরীফ ছাপানোর উদ্যোগ নিলে ডিজি সামীম মো. আফজাল তা বন্ধ করে দেন। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রেসের পরিবর্তে বাইরের প্রতিষ্ঠানে তা ছাপানোর জন্য প্রেসের পক্ষ থেকে টেন্ডার আহবান করেন। টেন্ডারের মাধ্যমে কৌশলে তার বন্ধুর প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হয়। ঐ প্রতিষ্ঠানে ১ লাখ কপি কম ছাপানো হয় এবং প্রায় ২ কোটি টাকা এ ভাবে লোপাট করা হয়।
বিষয়টি ধরা পড়ে যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রিন্টিং প্রেসের স্টক রেজিষ্ট্রারের কারণে। সরকারি ছুটির দিন মহাপরিচালকের বন্ধুর প্রতিষ্ঠানটি কুরআন শরীফ সরবরাহ করতে আসে এবং সরলমনা ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্মচারী যা সরবরাহ পেয়েছেন স্টক রেজিষ্ট্রারে তাই লিখেছেন। স্টক রেজিষ্ট্রারে দেখা যায় কুরআন শরীফ সরবরাহ করা হয়েছে ৫ লাখ। আর কার্যাদেশে রয়েছে ৫,৯৯,৬৮০ কপি। অর্থাৎ প্রায় ১ লাখ কপি কম ছাপানো হয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একজন পরিচালক ও সাবেক জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল আনোয়ার গতকাল রাতে এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রকল্পের পক্ষ থেকে সরাসরি টেন্ডার করা অথবা টেন্ডার ছাড়া সরাসরি ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রেসকে কাজ দেয়া যায়। কিন্তু ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রেসকে কার্যাদেশ দিলে তারা আবার টেন্ডার করবে এবং বাইরের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেবে এ বিধান নেই। তিনি বলেন, ইফার প্রেসের দক্ষ জনবল এবং সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। কিন্তু এ জনবলকে বসিয়ে রেখে এবং সরকারি মেশিন অকেজো করে বেসরকারী প্রেসে কেন কাজ দেয়া হয় তা বোধগম্য নয়।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে সিভিল অডিট অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ২০০৯-২০১৮ সময়কালের বিশেষ নিরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রথমে ১৩২টি অনুচ্ছেদে অডিট আপত্তি এবং পরে প্রাথমিক জবাবের পর ৯৬টি অনুচ্ছেদে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। নিরীক্ষা পরিদর্শন প্রতিবেদনের ১৩ নম্বর অনুচ্ছেদে কুরআনুল করিম কম ছাপিয়ে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি উঠে আসে।