ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

কালীগঞ্জে পরিত্যক্ত ঘোষনার তিন বছর পরও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের নিচে বসেই ব্যবসা হুশ ফেরেনি কর্তৃপক্ষের : জীবনের ঝুঁকিতে শতাধিক ব্যবসায়ী

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০১:৩৮:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর ২০১৬
  • / ৩৪১ বার পড়া হয়েছে

Market-Shade-Photo-Kaligang

ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ বাজার হাটচাঁদনীটি এখন চরম ঝুকিপূর্ণ। ইতিমধ্যে ভবন ধ্বসে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুও হয়েছে। কিন্তু হুশ ফেরেনি কর্তৃপক্ষের। পরিত্যক্ত ঘোষনার তিন বছর পরও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের নিচে বসেই ব্যবসা করছেন দেড় শতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। আর সেখানে সব সময় খরিদ্দার থাকেন আরো কমপক্ষে তিন শতাধিক। যারা সকলেই থাকেন মারাত্মক জীবনের ঝুঁকিতে। যে কোনো সময় সম্পূর্ণ ভবনটি ধসে ব্যাপক প্রানহানীর ঘটনা ঘটতে পারে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা সবাই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এখানে ব্যবসা করেই তাদের সংসার চলে। এখান থেকে সরে গেলে তাদের না খেয়ে মরতে হবে। কালীগঞ্জ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বলছেন বাজেট না থাকায় তারা কিছুই করতে পারছেন না। তবে একটি বড় ধরনের চারতলা চাঁদনী ভবন নির্মানের প্রশাসনিক অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রনালয় থেকে অনুমোদন পেলে তারা নকশা তৈরী করে অর্থ বরাদ্ধের জন্য প্রেরন করবেন। কালীগঞ্জ উপজেলা শহরের সবচেয়ে বড় এবং প্রধান কাঁচা বাজারটি ১৯৮৭-৮৮ অর্থ বছরে ভবন নির্মান করা হয়। হাট-চাঁদনী বলে পরিচিত এই চাঁদনীতে দেড় শতাধিক দোকান রয়েছে। যার বেশির ভাগ কাঁচা সবজী, চাল ও ক্ষুদ্র মুদি দোকান রয়েছে। এই চাঁদনীর দুই পাশে রয়েছে আরো দুইটি টিনসেড চাঁদনী। যার একটিতে আটা-ময়দা আর অপরটিতে মাছ ও মাংশ বিক্রি হয়ে থাকে। তৎকালীন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মরহুম আলহাজ রফি উদ্দিনের প্রচেষ্টায় প্রায় ৪৫ লাখ টাকা ব্যায়ে এই চাঁদনী নির্মান করা হয়েছিল। যা বর্তমানে ব্যবহারের সম্পূর্ণ অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। ছাদের পলেষ্টারা খুলে খুলে পড়ছে। ব্যবসায়ীরা মাথা বাঁচাতে বাঁশের খুটি লাগিয়ে চাটাই দিয়ে আড়াল করে রেখেছেন। পলেষ্টারাগুলো চাটাই এর উপর পড়ছে। চাঁদনীর দোকানদার সুভাষ দত্ত জানান, তিনি ১৫ বছর এখানে ব্যবসা করছেন। এতো ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা করা যায় না। ব্যবসায়িরা জানান, ২০১০ সালের ২৫ অক্টোবর দোকানে বসে ছিলেন চাল ব্যবসায়ী অজয় কুমার। হঠাৎ ছাদের একটি অংশ ধ্বসে তার মাথার উপর পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। এ সময় আরো দুইজন গুরুতর আহত হন। এছাড়া মাঝে মধ্যেই ছোট বড় দূর্ঘটনা ঘটছে ব্যবসায়ীদের।
বাজার চাঁদনী ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম জানান, ভবনটি যে সময় নির্মান করা হয়েছিল তখন নির্মান কাজেও অনেক ত্রুটি ছিল। এছাড়া ছাদের পাশ দিয়ে রেলিং করায় বৃষ্টি সময় পানি জমে থাকতো। যে কারনে অল্প সময়ে ভবনটি নষ্ট হয়ে গেছে। সমিতির সভাপতি আফজাল হোসেন জানান, এই চাঁদনীটি ভেঙ্গে নতুন করে নির্মানের জন্য তারা পৌরসভায় একাধিক বার ধর্ণা দিয়েছেন। কিন্তু কোনো ফল হচ্ছে না। এ ব্যাপারে স্থানীয় কালীগঞ্জ পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল ওহাব এর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ২০১৩ সালের ২ মে তারা একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষনা করেন। ওই সময় কমিটি যাচাই-বাছাই শেষে এই সিদ্ধান্ত দেন। এরপর ব্যবসায়ীদের ওই জায়গা থেকে সরে যেতে বলা হয়েছে, কিন্তু তারা যাননি। তিনি আরো জানান, এ ব্যাপারে প্রশাসনিক অনুমোদন চেয়ে চলতি বছরের ৪ অক্টোবর স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে তারা নকশা তৈরী করে অর্থ বরাদ্ধের আবেদন জানাবেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

কালীগঞ্জে পরিত্যক্ত ঘোষনার তিন বছর পরও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের নিচে বসেই ব্যবসা হুশ ফেরেনি কর্তৃপক্ষের : জীবনের ঝুঁকিতে শতাধিক ব্যবসায়ী

আপলোড টাইম : ০১:৩৮:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর ২০১৬

Market-Shade-Photo-Kaligang

ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ বাজার হাটচাঁদনীটি এখন চরম ঝুকিপূর্ণ। ইতিমধ্যে ভবন ধ্বসে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুও হয়েছে। কিন্তু হুশ ফেরেনি কর্তৃপক্ষের। পরিত্যক্ত ঘোষনার তিন বছর পরও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের নিচে বসেই ব্যবসা করছেন দেড় শতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। আর সেখানে সব সময় খরিদ্দার থাকেন আরো কমপক্ষে তিন শতাধিক। যারা সকলেই থাকেন মারাত্মক জীবনের ঝুঁকিতে। যে কোনো সময় সম্পূর্ণ ভবনটি ধসে ব্যাপক প্রানহানীর ঘটনা ঘটতে পারে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা সবাই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এখানে ব্যবসা করেই তাদের সংসার চলে। এখান থেকে সরে গেলে তাদের না খেয়ে মরতে হবে। কালীগঞ্জ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বলছেন বাজেট না থাকায় তারা কিছুই করতে পারছেন না। তবে একটি বড় ধরনের চারতলা চাঁদনী ভবন নির্মানের প্রশাসনিক অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রনালয় থেকে অনুমোদন পেলে তারা নকশা তৈরী করে অর্থ বরাদ্ধের জন্য প্রেরন করবেন। কালীগঞ্জ উপজেলা শহরের সবচেয়ে বড় এবং প্রধান কাঁচা বাজারটি ১৯৮৭-৮৮ অর্থ বছরে ভবন নির্মান করা হয়। হাট-চাঁদনী বলে পরিচিত এই চাঁদনীতে দেড় শতাধিক দোকান রয়েছে। যার বেশির ভাগ কাঁচা সবজী, চাল ও ক্ষুদ্র মুদি দোকান রয়েছে। এই চাঁদনীর দুই পাশে রয়েছে আরো দুইটি টিনসেড চাঁদনী। যার একটিতে আটা-ময়দা আর অপরটিতে মাছ ও মাংশ বিক্রি হয়ে থাকে। তৎকালীন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মরহুম আলহাজ রফি উদ্দিনের প্রচেষ্টায় প্রায় ৪৫ লাখ টাকা ব্যায়ে এই চাঁদনী নির্মান করা হয়েছিল। যা বর্তমানে ব্যবহারের সম্পূর্ণ অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। ছাদের পলেষ্টারা খুলে খুলে পড়ছে। ব্যবসায়ীরা মাথা বাঁচাতে বাঁশের খুটি লাগিয়ে চাটাই দিয়ে আড়াল করে রেখেছেন। পলেষ্টারাগুলো চাটাই এর উপর পড়ছে। চাঁদনীর দোকানদার সুভাষ দত্ত জানান, তিনি ১৫ বছর এখানে ব্যবসা করছেন। এতো ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা করা যায় না। ব্যবসায়িরা জানান, ২০১০ সালের ২৫ অক্টোবর দোকানে বসে ছিলেন চাল ব্যবসায়ী অজয় কুমার। হঠাৎ ছাদের একটি অংশ ধ্বসে তার মাথার উপর পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। এ সময় আরো দুইজন গুরুতর আহত হন। এছাড়া মাঝে মধ্যেই ছোট বড় দূর্ঘটনা ঘটছে ব্যবসায়ীদের।
বাজার চাঁদনী ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম জানান, ভবনটি যে সময় নির্মান করা হয়েছিল তখন নির্মান কাজেও অনেক ত্রুটি ছিল। এছাড়া ছাদের পাশ দিয়ে রেলিং করায় বৃষ্টি সময় পানি জমে থাকতো। যে কারনে অল্প সময়ে ভবনটি নষ্ট হয়ে গেছে। সমিতির সভাপতি আফজাল হোসেন জানান, এই চাঁদনীটি ভেঙ্গে নতুন করে নির্মানের জন্য তারা পৌরসভায় একাধিক বার ধর্ণা দিয়েছেন। কিন্তু কোনো ফল হচ্ছে না। এ ব্যাপারে স্থানীয় কালীগঞ্জ পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল ওহাব এর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ২০১৩ সালের ২ মে তারা একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষনা করেন। ওই সময় কমিটি যাচাই-বাছাই শেষে এই সিদ্ধান্ত দেন। এরপর ব্যবসায়ীদের ওই জায়গা থেকে সরে যেতে বলা হয়েছে, কিন্তু তারা যাননি। তিনি আরো জানান, এ ব্যাপারে প্রশাসনিক অনুমোদন চেয়ে চলতি বছরের ৪ অক্টোবর স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে তারা নকশা তৈরী করে অর্থ বরাদ্ধের আবেদন জানাবেন।