ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

কাগজে কলমে ২৫০ শয্যা, জনবল ৫০ শয্যার আর কার্যক্রমে ১ শ শয্যা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০১৯
  • / ২৭৮ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল : উদ্বোধনের এক বছরেও শুরু হয়নি নতুন ভবনের কার্যক্রম
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নতুন ভবন এক বছর আগে উদ্বোধন করা হলেও আজও শুরু হয়নি কোনো প্রকার চিকিৎসা কার্যক্রম। ফলে ১ শ শয্যার পুরোনো ভবনেই চালানো হচ্ছে কার্যক্রম। ১ শ শয্যার জনবল পূরণ না হওয়া সত্ত্বেও ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম চুয়াডাঙ্গায় এসে নবনির্মিত ৬ তলাবিশিষ্ট ২৫০ শয্যা ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে যান।
গণপূর্ত বিভাগের তথ্যানুযায়ী নতুন ভবনের কাজ ৩০ কোটি ৫০ লাখ টাকার দরপত্রে ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে ঝিনাইদহ জেলার এমকেকেডি, এমএমআর ও এমএমআইটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভবনটি হস্তান্তরে রাজি হচ্ছে না। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের প্রধান সহকারী আব্দুস সবুর বলেন, ভবনের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালকে ৫০ শয্যা থেকে ২০০৩ সালে ১ শ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নীত করা হলেও গত ১৫ বছরেও ১ শ শয্যার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও লোকবল চাহিদা মতো পূরণ করা হয়নি। এর মধ্যে আবার ২৫০ শয্যার অনুমোদনসহ নতুন ভবন উদ্বোধন হয়েছে। সুতরাং কাগজে কলমে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হলেও পূর্বের ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের জনবল দিয়েই চালানো হচ্ছে ১ শ শয্যার কার্যক্রম।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শামীম কবির জানান, ‘৫০ শয্যার হাসপাতালে ডাক্তার থাকার কথা ২১ জন। দুঃখের বিষয় সেটাও নেই, আছেন মাত্র ১৫ জন চিকিৎসক। চিকিৎসক সংকট থাকার পরও প্রতিদিন হাসপাতালের বর্হিবিভাগে ৭০০ থেকে ৮৫০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। ১০০ শয্যা থাকলেও সবসময় ২৮০-২৯০ জন রোগী ভর্তি থাকে। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।’
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম মারুফ হাসান নতুন ভবনের দায়িত্বভার বুঝে নেওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘এ ভবনের প্রশাসনিক কোনো অনুমোদন নেই। তাহলে কীভাবে এ ভবনটি বুঝে নেব? এ ছাড়া ১ শ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের জনবলই এখনও আসেনি, ৫০ শয্যার জনবল দিয়েই এ বিশাল চাপ প্রতিনিয়ত সামলাতে হচ্ছে। এর মধ্যে ২৫০ শয্যার ভবন বুঝে নিয়ে তার কার্যক্রম কীভাবে পরিচালনা করব।’
এদিকে, চুয়াডাঙ্গা ছাড়াও মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিনই রোগীরা চিকিৎসাসেবা নিতে এ হাসপাতালে আসেন। এমনিতে জনবল ও শয্যা-সংকট, তার ওপর অতিরিক্ত রোগীর চাপে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক-নার্সেরা। মেঝে, বারান্দায় ও হাসপাতাল করিডরে প্রতিনিয়ত চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন শত শত রোগী। এ ছাড়া চিকিৎসাসেবার বিষয়ে রোগীদের অভিযোগের অন্ত নেই।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বাগানপাড়ার ছানোয়ার হোসেন নামের এক রোগী এ প্রতিবেদককে জানান, মেডিসিন ওয়ার্ডে গত চার দিন আগে ভর্তি হয়েছি, এখনো বেড পাইনি। রোগীর চাপে এ ওয়ার্ডে বেড পাওয়া খুবই কষ্টকর।
চুয়াডাঙ্গা শহরতলীর দৌলাতদিয়াড় দক্ষিণপাড়ার মিলন মিয়া জানান, ‘আমার মেয়ে মিমিয়ার বয়স ছয় মাস। নিউমোনিয়াজনিত কারণে গত বৃহস্পতিবার থেকেই হাসপাতালে আছি। এখনো কোনো বেড পাইনি। পাব কি না বলতে পারছি না, যে পরিমাণ রোগীর চাপ।’ সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে ভর্তি মেহেরপুরের দরবেশপুরের ইয়াছদ্দিন নামের এক রোগী জানান, বেড স্বল্পতার কারণে হাসপাতালের বারান্দায় শুয়েই চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন তিনি।
আবার স্থানীয় ব্যক্তিদের অনেকে অভিযোগ করে এ প্রতিবেদককে জানান, চিকিৎকদের হাসপাতালে সকাল সাড়ে আটটার মধ্যে আসার কথা থাকলেও বেশিরভাগ চিকিৎসকই ১০টার পরে হাসপাতালে আসেন। এ সংকটে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকেরাও যদি নির্ধারিত সময়ে হাসপাতালে আসতেন, তাহলে কিছুটা হলেও রোগীরা মানসম্মত সেবা পেতেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

কাগজে কলমে ২৫০ শয্যা, জনবল ৫০ শয্যার আর কার্যক্রমে ১ শ শয্যা

আপলোড টাইম : ১০:২৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০১৯

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল : উদ্বোধনের এক বছরেও শুরু হয়নি নতুন ভবনের কার্যক্রম
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নতুন ভবন এক বছর আগে উদ্বোধন করা হলেও আজও শুরু হয়নি কোনো প্রকার চিকিৎসা কার্যক্রম। ফলে ১ শ শয্যার পুরোনো ভবনেই চালানো হচ্ছে কার্যক্রম। ১ শ শয্যার জনবল পূরণ না হওয়া সত্ত্বেও ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম চুয়াডাঙ্গায় এসে নবনির্মিত ৬ তলাবিশিষ্ট ২৫০ শয্যা ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে যান।
গণপূর্ত বিভাগের তথ্যানুযায়ী নতুন ভবনের কাজ ৩০ কোটি ৫০ লাখ টাকার দরপত্রে ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে ঝিনাইদহ জেলার এমকেকেডি, এমএমআর ও এমএমআইটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভবনটি হস্তান্তরে রাজি হচ্ছে না। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের প্রধান সহকারী আব্দুস সবুর বলেন, ভবনের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালকে ৫০ শয্যা থেকে ২০০৩ সালে ১ শ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নীত করা হলেও গত ১৫ বছরেও ১ শ শয্যার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও লোকবল চাহিদা মতো পূরণ করা হয়নি। এর মধ্যে আবার ২৫০ শয্যার অনুমোদনসহ নতুন ভবন উদ্বোধন হয়েছে। সুতরাং কাগজে কলমে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হলেও পূর্বের ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের জনবল দিয়েই চালানো হচ্ছে ১ শ শয্যার কার্যক্রম।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শামীম কবির জানান, ‘৫০ শয্যার হাসপাতালে ডাক্তার থাকার কথা ২১ জন। দুঃখের বিষয় সেটাও নেই, আছেন মাত্র ১৫ জন চিকিৎসক। চিকিৎসক সংকট থাকার পরও প্রতিদিন হাসপাতালের বর্হিবিভাগে ৭০০ থেকে ৮৫০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। ১০০ শয্যা থাকলেও সবসময় ২৮০-২৯০ জন রোগী ভর্তি থাকে। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।’
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম মারুফ হাসান নতুন ভবনের দায়িত্বভার বুঝে নেওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘এ ভবনের প্রশাসনিক কোনো অনুমোদন নেই। তাহলে কীভাবে এ ভবনটি বুঝে নেব? এ ছাড়া ১ শ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের জনবলই এখনও আসেনি, ৫০ শয্যার জনবল দিয়েই এ বিশাল চাপ প্রতিনিয়ত সামলাতে হচ্ছে। এর মধ্যে ২৫০ শয্যার ভবন বুঝে নিয়ে তার কার্যক্রম কীভাবে পরিচালনা করব।’
এদিকে, চুয়াডাঙ্গা ছাড়াও মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিনই রোগীরা চিকিৎসাসেবা নিতে এ হাসপাতালে আসেন। এমনিতে জনবল ও শয্যা-সংকট, তার ওপর অতিরিক্ত রোগীর চাপে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক-নার্সেরা। মেঝে, বারান্দায় ও হাসপাতাল করিডরে প্রতিনিয়ত চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন শত শত রোগী। এ ছাড়া চিকিৎসাসেবার বিষয়ে রোগীদের অভিযোগের অন্ত নেই।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বাগানপাড়ার ছানোয়ার হোসেন নামের এক রোগী এ প্রতিবেদককে জানান, মেডিসিন ওয়ার্ডে গত চার দিন আগে ভর্তি হয়েছি, এখনো বেড পাইনি। রোগীর চাপে এ ওয়ার্ডে বেড পাওয়া খুবই কষ্টকর।
চুয়াডাঙ্গা শহরতলীর দৌলাতদিয়াড় দক্ষিণপাড়ার মিলন মিয়া জানান, ‘আমার মেয়ে মিমিয়ার বয়স ছয় মাস। নিউমোনিয়াজনিত কারণে গত বৃহস্পতিবার থেকেই হাসপাতালে আছি। এখনো কোনো বেড পাইনি। পাব কি না বলতে পারছি না, যে পরিমাণ রোগীর চাপ।’ সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে ভর্তি মেহেরপুরের দরবেশপুরের ইয়াছদ্দিন নামের এক রোগী জানান, বেড স্বল্পতার কারণে হাসপাতালের বারান্দায় শুয়েই চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন তিনি।
আবার স্থানীয় ব্যক্তিদের অনেকে অভিযোগ করে এ প্রতিবেদককে জানান, চিকিৎকদের হাসপাতালে সকাল সাড়ে আটটার মধ্যে আসার কথা থাকলেও বেশিরভাগ চিকিৎসকই ১০টার পরে হাসপাতালে আসেন। এ সংকটে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকেরাও যদি নির্ধারিত সময়ে হাসপাতালে আসতেন, তাহলে কিছুটা হলেও রোগীরা মানসম্মত সেবা পেতেন।