ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

কর্মসংস্থানে ভাটা, বাড়ছে বেকারত্ব

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:০০:৪৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ অগাস্ট ২০২০
  • / ২১১ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
মহামারি রূপ নেওয়া কোভিড-১৯-এর প্রভাবে বিশ্বব্যাপী সংকুচিত হয়ে আসছে কর্মবাজার। ভাটা পড়েছে কর্মসংস্থানে। বাড়ছে বেকারত্ব। আবার নতুন করে চাকরিচ্যুত হচ্ছেন অনেকেই। রীতিমতো ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সংকটে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে নতুন কর্মসংস্থান। বাংলাদেশেও পড়ছে এর প্রভাব। দেশের কর্মবাজারে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা বাড়লেও বাড়ছে না কাজের সুযোগ। ফলে বেকারত্বের বোঝা আরও বাড়ছে। বিদেশ থেকে ফিরে আসা প্রবাসীদেরও প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কর্মসংস্থান না বাড়ায় বেকারত্বের ঝুঁকি বাড়ছে। এমন অবস্থায় দেশে ফিরে আসা প্রবাসীদের কর্মসংস্থানের জন্য ১ হাজার কোটি টাকা ছাড় করেছে অর্থ বিভাগ, যা রাষ্ট্রায়ত্ত তিনটি ব্যাংক ও একটি সংস্থার মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফিরে আসা প্রবাসীদের তালিকা তৈরিসহ আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষ করে ঋণ হিসেবে এই অর্থ বিতরণ করতে আরও অন্তত ছয় মাস বিলম্ব হতে পারে। সরকারি তথ্যমতে, কভিডকে কেন্দ্র করে চলতি বছরই অন্তত ১০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি ফিরে এসেছেন। এদের বেশির ভাগেরই ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
সূত্র জানায়, কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য ৩০ জুন ১ হাজার কোটি টাকা ছাড় করেছে অর্থ বিভাগ, যা কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক এবং পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান আড়াইশ কোটি টাকা করে বিতরণ করবে। এ অর্থ বিদেশ থেকে ফিরে আসা যুবক ও অন্য বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানে ঋণ হিসেবে দেওয়া হবে। এর সুদের হার হবে খুব অল্প। এর মাধ্যমে দেশের বেকারত্ব সমস্যা অনেকটাই কাটবে বলে মনে করে সরকার। চলতি অর্থবছরের বাজেটে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘ফিরে আসা প্রবাসীদের যারা ক্ষুদ্র ব্যবসা করতে আগ্রহী তাদের মধ্যে বিতরণের জন্য আমরা ইতিমধ্যে তিনটি বিশেষায়িত ব্যাংক এবং পিকেএসএফের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। এ ক্ষেত্রে শূন্য সুদের (সুদমুক্ত) হারে তাদের ঋণ দেওয়ার ব্যাপারেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, সরকারের এ উদ্যোগ বেকারত্ব ঘোচাতে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখবে।’ পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আকবর হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এ তহবিলের বিষয়ে আমরা অর্থ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তবে আমরা এখনো আনুষ্ঠানিক চিঠি পাইনি। আমরা হয়তো শিগগিরই ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারব।’ এদিকে অর্থ বিভাগের একটি সূত্র জানায়, নতুন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে ১ বিলিয়ন ডলার সহায়তা চাওয়া হয়েছে। সংস্থাটি ইতিমধ্যে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে। আশা করা হচ্ছে, শিগগিরই এডিবির ওই তহবিলও পাওয়া যাবে। এরই মধ্যে করোনাভাইরাস মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণসুবিধা অনুমোদন হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জসীম উদ্দিন বলেন, অর্থ ছাড় হয়েছে। কিন্তু প্রক্রিয়াগত ব্যাপার রয়েছে। এ জন্য সেটি এখনো আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি। আমরা সব সময় প্রস্তুত আছি সরকারের এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য। শুধু প্রকৃত বিদেশফেরত যারা ক্ষতিগ্রস্ত এবং নিঃস্ব তাদের কর্মসংস্থানের জন্যই এ অর্থ ব্যয় করা হবে। এর সুদের হার হবে খুবই সামান্য। আমরা অবশ্যই চাইব সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সঙ্গে যেন এই অর্থ বিতরণ করা যায়। সরকারের এ উদ্যোগের ফলে করোনাভাইরাসের কারণে কর্মসংস্থানের ওপর যে নেতিবাচক প্রভাবে পড়েছে, তা মোকাবিলায় এবং দেশের বেকারত্ব সমস্যার সংকটও অনেকটা সমাধান হবে বলে তিনি মনে করেন। এদিকে পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নতুন বাজেটে বিদেশফেরত শ্রমিক, প্রশিক্ষিত তরুণ ও বেকার যুবকদের ব্যবসা এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক ও পিকেএসএফের মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করা হবে। এ লক্ষ্যে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ৫০০ কোটি টাকার মূলধন সরকার বিতরণ করবে, যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দিষ্ট কর্মসূচির আওতায় উপযুক্ত উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণ করবে। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। আইএলওর তথ্যমতে, এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৭০ শতাংশ কর্মীই কর্মহীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। বাংলাদেশের পরিস্থিতিও মোটেই সুখকর নয়। নতুন করে কতসংখ্যক মানুষ বেকার হবেন তার সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান এখনই বলা যাবে না। তবে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশও উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশের অন্তত ২ কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হবেন। আর এ পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে বেকারত্বের সঙ্গে বাড়বে সামাজিক সংকটও। এরই মধ্যে কয়েক লাখ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। আর জীবন-জীবিকার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে লক্ষাধিক পরিবার ঢাকা ছেড়েছে বলে জানা গেছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

কর্মসংস্থানে ভাটা, বাড়ছে বেকারত্ব

আপলোড টাইম : ১১:০০:৪৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ অগাস্ট ২০২০

সমীকরণ প্রতিবেদন:
মহামারি রূপ নেওয়া কোভিড-১৯-এর প্রভাবে বিশ্বব্যাপী সংকুচিত হয়ে আসছে কর্মবাজার। ভাটা পড়েছে কর্মসংস্থানে। বাড়ছে বেকারত্ব। আবার নতুন করে চাকরিচ্যুত হচ্ছেন অনেকেই। রীতিমতো ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সংকটে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে নতুন কর্মসংস্থান। বাংলাদেশেও পড়ছে এর প্রভাব। দেশের কর্মবাজারে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা বাড়লেও বাড়ছে না কাজের সুযোগ। ফলে বেকারত্বের বোঝা আরও বাড়ছে। বিদেশ থেকে ফিরে আসা প্রবাসীদেরও প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কর্মসংস্থান না বাড়ায় বেকারত্বের ঝুঁকি বাড়ছে। এমন অবস্থায় দেশে ফিরে আসা প্রবাসীদের কর্মসংস্থানের জন্য ১ হাজার কোটি টাকা ছাড় করেছে অর্থ বিভাগ, যা রাষ্ট্রায়ত্ত তিনটি ব্যাংক ও একটি সংস্থার মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফিরে আসা প্রবাসীদের তালিকা তৈরিসহ আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষ করে ঋণ হিসেবে এই অর্থ বিতরণ করতে আরও অন্তত ছয় মাস বিলম্ব হতে পারে। সরকারি তথ্যমতে, কভিডকে কেন্দ্র করে চলতি বছরই অন্তত ১০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি ফিরে এসেছেন। এদের বেশির ভাগেরই ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
সূত্র জানায়, কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য ৩০ জুন ১ হাজার কোটি টাকা ছাড় করেছে অর্থ বিভাগ, যা কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক এবং পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান আড়াইশ কোটি টাকা করে বিতরণ করবে। এ অর্থ বিদেশ থেকে ফিরে আসা যুবক ও অন্য বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানে ঋণ হিসেবে দেওয়া হবে। এর সুদের হার হবে খুব অল্প। এর মাধ্যমে দেশের বেকারত্ব সমস্যা অনেকটাই কাটবে বলে মনে করে সরকার। চলতি অর্থবছরের বাজেটে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘ফিরে আসা প্রবাসীদের যারা ক্ষুদ্র ব্যবসা করতে আগ্রহী তাদের মধ্যে বিতরণের জন্য আমরা ইতিমধ্যে তিনটি বিশেষায়িত ব্যাংক এবং পিকেএসএফের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। এ ক্ষেত্রে শূন্য সুদের (সুদমুক্ত) হারে তাদের ঋণ দেওয়ার ব্যাপারেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, সরকারের এ উদ্যোগ বেকারত্ব ঘোচাতে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখবে।’ পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আকবর হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এ তহবিলের বিষয়ে আমরা অর্থ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তবে আমরা এখনো আনুষ্ঠানিক চিঠি পাইনি। আমরা হয়তো শিগগিরই ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারব।’ এদিকে অর্থ বিভাগের একটি সূত্র জানায়, নতুন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে ১ বিলিয়ন ডলার সহায়তা চাওয়া হয়েছে। সংস্থাটি ইতিমধ্যে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে। আশা করা হচ্ছে, শিগগিরই এডিবির ওই তহবিলও পাওয়া যাবে। এরই মধ্যে করোনাভাইরাস মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণসুবিধা অনুমোদন হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জসীম উদ্দিন বলেন, অর্থ ছাড় হয়েছে। কিন্তু প্রক্রিয়াগত ব্যাপার রয়েছে। এ জন্য সেটি এখনো আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি। আমরা সব সময় প্রস্তুত আছি সরকারের এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য। শুধু প্রকৃত বিদেশফেরত যারা ক্ষতিগ্রস্ত এবং নিঃস্ব তাদের কর্মসংস্থানের জন্যই এ অর্থ ব্যয় করা হবে। এর সুদের হার হবে খুবই সামান্য। আমরা অবশ্যই চাইব সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সঙ্গে যেন এই অর্থ বিতরণ করা যায়। সরকারের এ উদ্যোগের ফলে করোনাভাইরাসের কারণে কর্মসংস্থানের ওপর যে নেতিবাচক প্রভাবে পড়েছে, তা মোকাবিলায় এবং দেশের বেকারত্ব সমস্যার সংকটও অনেকটা সমাধান হবে বলে তিনি মনে করেন। এদিকে পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নতুন বাজেটে বিদেশফেরত শ্রমিক, প্রশিক্ষিত তরুণ ও বেকার যুবকদের ব্যবসা এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক ও পিকেএসএফের মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করা হবে। এ লক্ষ্যে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ৫০০ কোটি টাকার মূলধন সরকার বিতরণ করবে, যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দিষ্ট কর্মসূচির আওতায় উপযুক্ত উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণ করবে। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। আইএলওর তথ্যমতে, এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৭০ শতাংশ কর্মীই কর্মহীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। বাংলাদেশের পরিস্থিতিও মোটেই সুখকর নয়। নতুন করে কতসংখ্যক মানুষ বেকার হবেন তার সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান এখনই বলা যাবে না। তবে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশও উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশের অন্তত ২ কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হবেন। আর এ পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে বেকারত্বের সঙ্গে বাড়বে সামাজিক সংকটও। এরই মধ্যে কয়েক লাখ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। আর জীবন-জীবিকার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে লক্ষাধিক পরিবার ঢাকা ছেড়েছে বলে জানা গেছে।