ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

করোনা মোকাবেলায় চতুর্মুখী উদ্যোগ নিন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:১৮:২১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ মার্চ ২০২০
  • / ১৯৮ বার পড়া হয়েছে

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর বিশেষ কোনো চিকিৎসা নেই। সাধারণ চিকিৎসাতেই রোগীরা সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে এটি মারাত্মক ছোঁয়াচে, তাই সাবধানতা খুব জরুরি; কিন্তু রাজধানী ঢাকা ছাড়া বিভাগীয় পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাকর্মীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাসামগ্রী খুবই অপ্রতুল। জেলা-উপজেলাপর্যায়ে পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। ফলে দেশে করোনা মোকাবেলায় প্রস্তুতিতে দৃশ্যমান অগ্রগতি কম। সব হাসপাতালে করোনা শনাক্তকরণের কিট এখনো সরবরাহ করা হয়নি। এই ভাইরাসে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও পরীক্ষার কিট খুব কম। ঢাকার বাইরে কেউ আক্রান্ত কি না, তা জানতে রক্তের নমুনা পাঠাতে হয় ঢাকায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর)। আপাতত এটাই এ রোগ নির্ণয়ে একমাত্র ভরসা। চীন থেকে প্রাদুর্ভাবের পর দেশে দেশে নতুন এই ভাইরাস যখন ছড়িয়ে পড়ে; তখনো বাংলাদেশে এর মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। উচ্চ আয়ের উন্নত প্রযুক্তির রাষ্ট্রগুলো সব সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও করোনার মহামারী ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে। এর মূল কারণ, ওই সব দেশের নীতিনির্ধারকরা প্রকৃত পরিস্থিতি সময়মতো অনুধাবন করতে পারেননি। এসব দেশের প্রতিটিতেই ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছিল আক্রান্ত দেশ থেকে আসা দু-একজনের মাধ্যমে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, গত দুই মাসে সমুদ্র, সড়ক ও আকাশপথে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন ছয় লাখ ৪৫ হাজার ৭৪২ জন। তাদের অনেকেই কোভিড-১৯-এর মহামারী চলছে, এমন দেশ থেকে এসেছেন। সতর্কতার জন্য দেশের প্রবেশপথগুলোতে এসব যাত্রীর স্ক্রিনিং করা হয়। তবে সংক্রমণের লক্ষণ প্রকাশ পেতে এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় লাগায় যাত্রীদের মধ্যে কেউ যে ভাইরাসটির বাহক স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। ফলে বাহকরা দেশে ফিরে অনেকের সংস্পর্শে এসে নিজের অজান্তেই ভাইরাসটি ছড়িয়ে দিচ্ছেন। ৮ মার্চ সর্বপ্রথম সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা করা হয়, দেশে করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাবে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। অবস্থা এমন, ৫৫টি জেলায় বেশির ভাগ হাসপাতালে সর্দি-কাশি-জ্বরের চিকিৎসা দেওয়া প্রায় বন্ধ। অনেক হাসপাতালে চিকিৎসক-নার্সদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম এখন পর্যন্ত না পৌঁছানোতে তারা আতঙ্কিত। আগামী দুই-তিন সপ্তাহ দেশের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক সময়। এ সময়ে দেশের অনেক স্থানে সামাজিকভাবে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। গত শুক্রবার পর্যন্ত যারা আক্রান্ত দেশ থেকে এসেছেন, তাদের মাধ্যমে ছড়ালেও সর্বোচ্চ আগামী ২১ দিনের মধ্যে তা প্রকাশ পাবে। ভাইরোলজির ভাষায় এটাকে ‘পিক টাইম’ বলা হয়। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেশের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যেসব দেশে ভাইরাসটি সামাজিকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে; সেই দেশগুলো থেকে আসা যাত্রীদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। যেসব সতর্কতা এখন নেওয়া হচ্ছে, এগুলো আরো আগেই নেয়া উচিত ছিল; তাহলে ভাইরাসটির ঝুঁকি থেকে অনেকাংশই নিরাপদে থাকা যেত। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রভাবশালীদের কারণে সেটি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। তবে এখনো যদি ছড়িয়ে পড়া দেশ থেকে আসা যাত্রীদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে আনা হয়; পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তা অনেকটাই সহায়ক হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য কোভিড-১৯-এর মহামারী প্রতিরোধের কাজটি দুরূহ হলেও অসম্ভব নয়। তবে এর দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। শুধু একটি অধিদফতর বা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এ ধরনের বৈশ্বিক মহামারী প্রতিরোধ সম্ভব নয়। এর জন্য চাই প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগ। পাশাপাশি, দরকার জনগণের সচেতনতা, বেসরকারি খাতের শীর্ষ পর্যায়ের সক্রিয় সহযোগিতা। চতুর্মুখী সমন্বয় না হলে এ ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব হয়ে পড়বে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

করোনা মোকাবেলায় চতুর্মুখী উদ্যোগ নিন

আপলোড টাইম : ০৯:১৮:২১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ মার্চ ২০২০

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর বিশেষ কোনো চিকিৎসা নেই। সাধারণ চিকিৎসাতেই রোগীরা সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে এটি মারাত্মক ছোঁয়াচে, তাই সাবধানতা খুব জরুরি; কিন্তু রাজধানী ঢাকা ছাড়া বিভাগীয় পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাকর্মীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাসামগ্রী খুবই অপ্রতুল। জেলা-উপজেলাপর্যায়ে পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। ফলে দেশে করোনা মোকাবেলায় প্রস্তুতিতে দৃশ্যমান অগ্রগতি কম। সব হাসপাতালে করোনা শনাক্তকরণের কিট এখনো সরবরাহ করা হয়নি। এই ভাইরাসে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও পরীক্ষার কিট খুব কম। ঢাকার বাইরে কেউ আক্রান্ত কি না, তা জানতে রক্তের নমুনা পাঠাতে হয় ঢাকায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর)। আপাতত এটাই এ রোগ নির্ণয়ে একমাত্র ভরসা। চীন থেকে প্রাদুর্ভাবের পর দেশে দেশে নতুন এই ভাইরাস যখন ছড়িয়ে পড়ে; তখনো বাংলাদেশে এর মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। উচ্চ আয়ের উন্নত প্রযুক্তির রাষ্ট্রগুলো সব সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও করোনার মহামারী ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে। এর মূল কারণ, ওই সব দেশের নীতিনির্ধারকরা প্রকৃত পরিস্থিতি সময়মতো অনুধাবন করতে পারেননি। এসব দেশের প্রতিটিতেই ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছিল আক্রান্ত দেশ থেকে আসা দু-একজনের মাধ্যমে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, গত দুই মাসে সমুদ্র, সড়ক ও আকাশপথে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন ছয় লাখ ৪৫ হাজার ৭৪২ জন। তাদের অনেকেই কোভিড-১৯-এর মহামারী চলছে, এমন দেশ থেকে এসেছেন। সতর্কতার জন্য দেশের প্রবেশপথগুলোতে এসব যাত্রীর স্ক্রিনিং করা হয়। তবে সংক্রমণের লক্ষণ প্রকাশ পেতে এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় লাগায় যাত্রীদের মধ্যে কেউ যে ভাইরাসটির বাহক স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। ফলে বাহকরা দেশে ফিরে অনেকের সংস্পর্শে এসে নিজের অজান্তেই ভাইরাসটি ছড়িয়ে দিচ্ছেন। ৮ মার্চ সর্বপ্রথম সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা করা হয়, দেশে করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাবে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। অবস্থা এমন, ৫৫টি জেলায় বেশির ভাগ হাসপাতালে সর্দি-কাশি-জ্বরের চিকিৎসা দেওয়া প্রায় বন্ধ। অনেক হাসপাতালে চিকিৎসক-নার্সদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম এখন পর্যন্ত না পৌঁছানোতে তারা আতঙ্কিত। আগামী দুই-তিন সপ্তাহ দেশের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক সময়। এ সময়ে দেশের অনেক স্থানে সামাজিকভাবে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। গত শুক্রবার পর্যন্ত যারা আক্রান্ত দেশ থেকে এসেছেন, তাদের মাধ্যমে ছড়ালেও সর্বোচ্চ আগামী ২১ দিনের মধ্যে তা প্রকাশ পাবে। ভাইরোলজির ভাষায় এটাকে ‘পিক টাইম’ বলা হয়। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেশের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যেসব দেশে ভাইরাসটি সামাজিকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে; সেই দেশগুলো থেকে আসা যাত্রীদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। যেসব সতর্কতা এখন নেওয়া হচ্ছে, এগুলো আরো আগেই নেয়া উচিত ছিল; তাহলে ভাইরাসটির ঝুঁকি থেকে অনেকাংশই নিরাপদে থাকা যেত। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রভাবশালীদের কারণে সেটি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। তবে এখনো যদি ছড়িয়ে পড়া দেশ থেকে আসা যাত্রীদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে আনা হয়; পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তা অনেকটাই সহায়ক হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য কোভিড-১৯-এর মহামারী প্রতিরোধের কাজটি দুরূহ হলেও অসম্ভব নয়। তবে এর দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। শুধু একটি অধিদফতর বা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এ ধরনের বৈশ্বিক মহামারী প্রতিরোধ সম্ভব নয়। এর জন্য চাই প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগ। পাশাপাশি, দরকার জনগণের সচেতনতা, বেসরকারি খাতের শীর্ষ পর্যায়ের সক্রিয় সহযোগিতা। চতুর্মুখী সমন্বয় না হলে এ ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব হয়ে পড়বে।