ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

করোনায় প্রকট হয়েছে আয় বৈষম্য

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৩৪:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ জুলাই ২০২১
  • / ৩৩ বার পড়া হয়েছে

মহামারির আঘাতে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ
সমীকরণ প্রতিবেদন:
করোনায় বেড়েছে আয় বৈষম্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে গেল এক বছরে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে সাড়ে ১১ হাজার। অপর দিকে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জরিপে উঠে এসেছে নতুন করে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ দরিদ্র হওয়ার চিত্র। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আয় বৈষম্য মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এর কারণ হচ্ছে দুর্নীতির মাধ্যমে কালোটাকা অর্জন, হন্ডির মাধ্যমে দেশ থেকে টাকা পাচারে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা, প্রণোদনা প্যাকেজেরে টাকা ভিন্ন খাতে স্থানান্তর, করনীতিতে অসামঞ্জস্য, ধনীদের কাছ থেকে কম হারে কর আদায় ও বিনিয়োগ বন্ধ থাকা। এসব কারণে এক শ্রেণির মানুষের বৈধ ও অবৈধ উপায়ে আয় বাড়ছে। তবে আয় কমেছে এমন মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। যা একটি দেশ ও সমাজের জন্য কাম্য নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর আগে গত বছরের মার্চ পর্যন্ত দেশে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক কোটিপতি আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৬২৫ জন। চলতি বছরের মার্চ শেষে তা বেড়ে হয়েছে ৯৪ হাজার ২৭২ জন। ফলে করোনার এক বছরে দেশে নতুন কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছে ১১ হাজার ৬৪৭ জন। এর মধ্যে চলতি মাসের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) বেড়েছে ৩৮২ জন। অপর দিকে মহামারির আঘাতে দেশে নতুন করে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়েছে। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত নতুন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা হয়েছে ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। যা আগের বছরের জুন পর্যন্ত ছিল ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) জরিপে এসব কথা বলা হয়েছে।
জরিপে আরও বলা হয়েছে, মহামারি শুরু হওয়ার পর দেশের অর্থনীতিতে কোভিড-১৯ এর প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর প্রভাবটা অনেক বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, অতি ধনীদের তাদের হাতে এখন দেশের মোট আয়ের ৩৭.৮০ শতাংশ, যা লকডাউনের আগে ছিল ২৭.৮২ শতাংশ। এই কোভিড-১৯-এর লকডাউন আয় বৈষম্যও বাড়িয়েছে। যা মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। আয় বৈষম্য মারাত্মক তখন বলা হয়, যখন বৈষম্য নির্দেশক ‘গিনি সহগ’-এর মান শূন্য দশমিক ৫ অতিক্রম করে। গিনি সহগ বাড়তে থাকা মানে আয় বৈষম্য বাড়ছে। আর তা যত বাড়বে তত খারাপ হবে। মারাত্মক বিপজ্জনক বলা হয় যখন পালমা বা পামা অনুপাত সংখ্যাটি ৩-এর কাছাকাছি বা ৩ অতিক্রম করে। লকডাউনের আগে আমাদের গিনি সহগ ছিল ০.৪৮২, যা লকডাউনের ৬৬ দিন পরে হয়েছে ০.৬৩৫; আর লকডাউনের আগে পালমা অনুপাত ছিল ২.৯২, যা লকডাউনের পরে এখন ৭.৫৩ (বিপদসীমার দ্বিগুণেরও বেশি)। ফলে কোভিড-১৯ বাংলাদেশকে উচ্চ আয় বৈষম্যের দেশে নিয়ে গেছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

করোনায় প্রকট হয়েছে আয় বৈষম্য

আপলোড টাইম : ০৮:৩৪:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ জুলাই ২০২১

মহামারির আঘাতে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ
সমীকরণ প্রতিবেদন:
করোনায় বেড়েছে আয় বৈষম্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে গেল এক বছরে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে সাড়ে ১১ হাজার। অপর দিকে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জরিপে উঠে এসেছে নতুন করে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ দরিদ্র হওয়ার চিত্র। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আয় বৈষম্য মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এর কারণ হচ্ছে দুর্নীতির মাধ্যমে কালোটাকা অর্জন, হন্ডির মাধ্যমে দেশ থেকে টাকা পাচারে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা, প্রণোদনা প্যাকেজেরে টাকা ভিন্ন খাতে স্থানান্তর, করনীতিতে অসামঞ্জস্য, ধনীদের কাছ থেকে কম হারে কর আদায় ও বিনিয়োগ বন্ধ থাকা। এসব কারণে এক শ্রেণির মানুষের বৈধ ও অবৈধ উপায়ে আয় বাড়ছে। তবে আয় কমেছে এমন মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। যা একটি দেশ ও সমাজের জন্য কাম্য নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর আগে গত বছরের মার্চ পর্যন্ত দেশে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক কোটিপতি আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৬২৫ জন। চলতি বছরের মার্চ শেষে তা বেড়ে হয়েছে ৯৪ হাজার ২৭২ জন। ফলে করোনার এক বছরে দেশে নতুন কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছে ১১ হাজার ৬৪৭ জন। এর মধ্যে চলতি মাসের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) বেড়েছে ৩৮২ জন। অপর দিকে মহামারির আঘাতে দেশে নতুন করে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়েছে। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত নতুন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা হয়েছে ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। যা আগের বছরের জুন পর্যন্ত ছিল ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) জরিপে এসব কথা বলা হয়েছে।
জরিপে আরও বলা হয়েছে, মহামারি শুরু হওয়ার পর দেশের অর্থনীতিতে কোভিড-১৯ এর প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর প্রভাবটা অনেক বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, অতি ধনীদের তাদের হাতে এখন দেশের মোট আয়ের ৩৭.৮০ শতাংশ, যা লকডাউনের আগে ছিল ২৭.৮২ শতাংশ। এই কোভিড-১৯-এর লকডাউন আয় বৈষম্যও বাড়িয়েছে। যা মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। আয় বৈষম্য মারাত্মক তখন বলা হয়, যখন বৈষম্য নির্দেশক ‘গিনি সহগ’-এর মান শূন্য দশমিক ৫ অতিক্রম করে। গিনি সহগ বাড়তে থাকা মানে আয় বৈষম্য বাড়ছে। আর তা যত বাড়বে তত খারাপ হবে। মারাত্মক বিপজ্জনক বলা হয় যখন পালমা বা পামা অনুপাত সংখ্যাটি ৩-এর কাছাকাছি বা ৩ অতিক্রম করে। লকডাউনের আগে আমাদের গিনি সহগ ছিল ০.৪৮২, যা লকডাউনের ৬৬ দিন পরে হয়েছে ০.৬৩৫; আর লকডাউনের আগে পালমা অনুপাত ছিল ২.৯২, যা লকডাউনের পরে এখন ৭.৫৩ (বিপদসীমার দ্বিগুণেরও বেশি)। ফলে কোভিড-১৯ বাংলাদেশকে উচ্চ আয় বৈষম্যের দেশে নিয়ে গেছে।