ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

করোনার মধ্যেই অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার রেকর্ড

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:১৭:২১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ জানুয়ারী ২০২১
  • / ১০২ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত অর্থনীতি। এখনো ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি রফতানি খাত। এর মধ্যেও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে দেশের পুঁজিবাজার। ঘুরে দাঁড়াচ্ছে আবাসন খাত। এ দুটি খাতেই অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ মিলেছে চলতি অর্থবছরে। এ সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি বিনিয়োগকারীরা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বলছে, অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১০ হাজার ২২০ কোটি টাকা অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ নিয়েছেন ৭ হাজার ৬৫০ জন করদাতা। এতে ৯৬২ কোটি ৬০ লাখ টাকা কর পেয়েছে এনবিআর।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের ইতিহাসে এটাই সর্বোচ্চ পরিমাণ অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার ঘটনা। স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময়ে সরকারগুলো অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দিলেও এতে সাড়া মিলেছে খুব কম। অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ প্রথম দেয়া হয়েছিল ১৯৭৫ সালে, সামরিক আইনের আওতায়। এরপর ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছরে মাত্র ৭০ কোটি টাকা, ১৯৮৭-৮৮ অর্থবছরে ২০০ কোটি, ১৯৮৮-৮৯ অর্থবছরে ২৫০ কোটি, ১৯৮৯-৯০ অর্থবছরে ৪০০ কোটি এবং ২০০০-০১ অর্থবছরে ১ হাজার কোটি টাকা অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করা হয়। ২০০৫-০৬ অর্থবছরের বাজেটে সাড়ে ৭ শতাংশ হারে কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দেয়া হলে এ সুযোগ নিয়েছিলেন ৭ হাজার ২৫২ জন। ওই সময় ৪ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা বৈধ হয়। এরপর সবচেয়ে বেশি অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ হয় ২০০৭ ও ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। ওই সময় ৩২ হাজার ৫৫৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এ সুযোগ নিয়ে ৯ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা বৈধ করে। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার নানাভাবে এ সুযোগ দিয়ে এলেও এবারের মতো আগে কখনই এত সাড়া মেলেনি। বিগত বছরগুলোর বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দেয়া হলেও সেটি হাতেগোনা কয়েকটি খাতে বিনিয়োগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে এ সুযোগ আরো বাড়ানো হয়। ১০ শতাংশ কর দিয়ে জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট, ব্যাংক আমানত, সঞ্চয়পত্র, বন্ড ও পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয় এ বাজেটে। বলা হয়, এক্ষেত্রেও আয়কর কর্তৃপক্ষসহ সরকারের অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না। পুরো অর্থবছর এ সুযোগ পাবেন ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতারা।
সরকারের দেয়া এমন সুযোগেরই সদ্ব্যবহার করেছেন করদাতারা। এনবিআরের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আয়কর অধ্যাদেশ ১৯-এর এএএএ ধারা অনুযায়ী, ২০৫ জন করদাতা ২২৮ কোটি টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছেন। যাতে ১০ শতাংশ হারে কর হিসেবে এনবিআর পেয়েছে ২২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। অন্যদিকে আয়কর ১৯এএএএএ ধারা অনুযায়ী, নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, ফ্ল্যাট ও জমিতে বিনিয়োগ করে ৭ হাজার ৪৪৫ জন করদাতা প্রায় ৯ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করেছেন। এতে সরকার কর পেয়েছে ৯৩৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে গত ছয় মাসে মোট ৭ হাজার ৬৫০ জন করদাতা ৯ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ নিয়েছেন। এতে সরকার কর পেয়েছে ৯৬২ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এবার অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার বিষয়ে যে সাড়া মিলেছে এটা ইতিবাচক হিসেবে দেখতে হবে। কিন্তু এ ধরনের সুযোগ প্রত্যেক বছর দেয়া উচিত নয়। তাহলে সবাই অবৈধ টাকা উপার্জন করবে, তারপর ভাববে ১০ শতাংশ ট্যাক্স দিয়েই তো বৈধ করা যায়। অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার, বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও পুঁজিবাজারের উন্নয়নে চলতি অর্থবছর সরকার অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগে বিশেষ সুযোগ দেয়, তা গ্রহণে করদাতারা ‘অভূতপূর্ব সাড়া দিয়েছেন’ বলে জানিয়েছে এনবিআর। সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, সুযোগ নিতে বহু করদাতা কর অঞ্চলে যোগাযোগ করছেন। তবে করদাতাদের মধ্যে ভয় কাজ করছে। আমরা সর্বোচ্চ নিশ্চয়তা দিচ্ছি, যাতে করদাতাদের ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা না হয়। আশা করি অর্থবছর শেষে কয়েক হাজার কোটি টাকা অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, কেউ যদি অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করতে চায় সে ক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠান প্রশ্ন করতে পারবে না। যেসব প্রতিষ্ঠান এসব নিয়ে প্রশ্ন করে আমরা সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছি। সবার সঙ্গে কথা বলেছি, তারা এ বিষয়ে প্রশ্ন করবে না। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান এ ধরনের প্রশ্ন তোলে তবে তাদের সেটা অন্যায় হবে, অনুচিত হবে। তবে এক্ষেত্রে কেউ চাইলে আইনের আশ্রয় নিতে পারবে। সরকার আইন করে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করতে বলেছে। এখানে কেউ প্রশ্ন রাখতে পারে না। তবে আমার মনে হয় কাউকেই আইনের আশ্রয় নিতে হবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
চলতি অর্থবছর করবর্ষের জন্য ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতাদের আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এনবিআরের তথ্য বলছে, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৪ লাখ ৯ হাজার ৩৫৭ জন করদাতা আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন, যা গত অর্থবছর একই সময়ের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি। আয়কর আহরণ হয়েছে ৩৪ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ হাজার ৫৪৫ কোটি ৯ লাখ টাকা বেশি। করোনা মহামারির মধ্যেও স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে রিটার্ন দাখিল, আয়কর প্রদান করায় করদাতাদের অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। তবে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার পরিমাণ হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনবিআরের চেয়ারম্যানের পক্ষে জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈয়দ এ মু’মেন তিনি বলেন, দেশের প্রচলিত আইনে যা-ই থাকুক না কেন, ব্যক্তি ১০ শতাংশ কর দিয়ে আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত অর্থ প্রদর্শন করলে কর্তৃপক্ষসহ কেউ প্রশ্ন করতে পারবে না, এমন অভয় দেয়ার কারণেই এবার এক্ষেত্রে ভালো সাড়া পাওয়া গেছে।
এ প্রসঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, আমাদের দেশের আইনে এ সুযোগ রাখা হয়েছে। এ সুযোগ গ্রহণ করে কেউ যদি টাকা সাদা করে তাহলে এ টাকা মূলধারার অর্থনীতিতে যুক্ত হয়। যা অর্থনীতির জন্য ভালো। অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার পরিমাণ বাড়াকে আমি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

করোনার মধ্যেই অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার রেকর্ড

আপলোড টাইম : ১১:১৭:২১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ জানুয়ারী ২০২১

সমীকরণ প্রতিবেদন:
করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত অর্থনীতি। এখনো ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি রফতানি খাত। এর মধ্যেও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে দেশের পুঁজিবাজার। ঘুরে দাঁড়াচ্ছে আবাসন খাত। এ দুটি খাতেই অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ মিলেছে চলতি অর্থবছরে। এ সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি বিনিয়োগকারীরা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বলছে, অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১০ হাজার ২২০ কোটি টাকা অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ নিয়েছেন ৭ হাজার ৬৫০ জন করদাতা। এতে ৯৬২ কোটি ৬০ লাখ টাকা কর পেয়েছে এনবিআর।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের ইতিহাসে এটাই সর্বোচ্চ পরিমাণ অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার ঘটনা। স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময়ে সরকারগুলো অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দিলেও এতে সাড়া মিলেছে খুব কম। অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ প্রথম দেয়া হয়েছিল ১৯৭৫ সালে, সামরিক আইনের আওতায়। এরপর ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছরে মাত্র ৭০ কোটি টাকা, ১৯৮৭-৮৮ অর্থবছরে ২০০ কোটি, ১৯৮৮-৮৯ অর্থবছরে ২৫০ কোটি, ১৯৮৯-৯০ অর্থবছরে ৪০০ কোটি এবং ২০০০-০১ অর্থবছরে ১ হাজার কোটি টাকা অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করা হয়। ২০০৫-০৬ অর্থবছরের বাজেটে সাড়ে ৭ শতাংশ হারে কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দেয়া হলে এ সুযোগ নিয়েছিলেন ৭ হাজার ২৫২ জন। ওই সময় ৪ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা বৈধ হয়। এরপর সবচেয়ে বেশি অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ হয় ২০০৭ ও ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। ওই সময় ৩২ হাজার ৫৫৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এ সুযোগ নিয়ে ৯ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা বৈধ করে। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার নানাভাবে এ সুযোগ দিয়ে এলেও এবারের মতো আগে কখনই এত সাড়া মেলেনি। বিগত বছরগুলোর বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দেয়া হলেও সেটি হাতেগোনা কয়েকটি খাতে বিনিয়োগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে এ সুযোগ আরো বাড়ানো হয়। ১০ শতাংশ কর দিয়ে জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট, ব্যাংক আমানত, সঞ্চয়পত্র, বন্ড ও পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয় এ বাজেটে। বলা হয়, এক্ষেত্রেও আয়কর কর্তৃপক্ষসহ সরকারের অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না। পুরো অর্থবছর এ সুযোগ পাবেন ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতারা।
সরকারের দেয়া এমন সুযোগেরই সদ্ব্যবহার করেছেন করদাতারা। এনবিআরের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আয়কর অধ্যাদেশ ১৯-এর এএএএ ধারা অনুযায়ী, ২০৫ জন করদাতা ২২৮ কোটি টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছেন। যাতে ১০ শতাংশ হারে কর হিসেবে এনবিআর পেয়েছে ২২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। অন্যদিকে আয়কর ১৯এএএএএ ধারা অনুযায়ী, নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, ফ্ল্যাট ও জমিতে বিনিয়োগ করে ৭ হাজার ৪৪৫ জন করদাতা প্রায় ৯ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করেছেন। এতে সরকার কর পেয়েছে ৯৩৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে গত ছয় মাসে মোট ৭ হাজার ৬৫০ জন করদাতা ৯ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ নিয়েছেন। এতে সরকার কর পেয়েছে ৯৬২ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এবার অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার বিষয়ে যে সাড়া মিলেছে এটা ইতিবাচক হিসেবে দেখতে হবে। কিন্তু এ ধরনের সুযোগ প্রত্যেক বছর দেয়া উচিত নয়। তাহলে সবাই অবৈধ টাকা উপার্জন করবে, তারপর ভাববে ১০ শতাংশ ট্যাক্স দিয়েই তো বৈধ করা যায়। অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার, বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও পুঁজিবাজারের উন্নয়নে চলতি অর্থবছর সরকার অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগে বিশেষ সুযোগ দেয়, তা গ্রহণে করদাতারা ‘অভূতপূর্ব সাড়া দিয়েছেন’ বলে জানিয়েছে এনবিআর। সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, সুযোগ নিতে বহু করদাতা কর অঞ্চলে যোগাযোগ করছেন। তবে করদাতাদের মধ্যে ভয় কাজ করছে। আমরা সর্বোচ্চ নিশ্চয়তা দিচ্ছি, যাতে করদাতাদের ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা না হয়। আশা করি অর্থবছর শেষে কয়েক হাজার কোটি টাকা অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, কেউ যদি অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করতে চায় সে ক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠান প্রশ্ন করতে পারবে না। যেসব প্রতিষ্ঠান এসব নিয়ে প্রশ্ন করে আমরা সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছি। সবার সঙ্গে কথা বলেছি, তারা এ বিষয়ে প্রশ্ন করবে না। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান এ ধরনের প্রশ্ন তোলে তবে তাদের সেটা অন্যায় হবে, অনুচিত হবে। তবে এক্ষেত্রে কেউ চাইলে আইনের আশ্রয় নিতে পারবে। সরকার আইন করে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করতে বলেছে। এখানে কেউ প্রশ্ন রাখতে পারে না। তবে আমার মনে হয় কাউকেই আইনের আশ্রয় নিতে হবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
চলতি অর্থবছর করবর্ষের জন্য ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতাদের আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এনবিআরের তথ্য বলছে, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৪ লাখ ৯ হাজার ৩৫৭ জন করদাতা আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন, যা গত অর্থবছর একই সময়ের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি। আয়কর আহরণ হয়েছে ৩৪ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ হাজার ৫৪৫ কোটি ৯ লাখ টাকা বেশি। করোনা মহামারির মধ্যেও স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে রিটার্ন দাখিল, আয়কর প্রদান করায় করদাতাদের অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। তবে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার পরিমাণ হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনবিআরের চেয়ারম্যানের পক্ষে জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈয়দ এ মু’মেন তিনি বলেন, দেশের প্রচলিত আইনে যা-ই থাকুক না কেন, ব্যক্তি ১০ শতাংশ কর দিয়ে আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত অর্থ প্রদর্শন করলে কর্তৃপক্ষসহ কেউ প্রশ্ন করতে পারবে না, এমন অভয় দেয়ার কারণেই এবার এক্ষেত্রে ভালো সাড়া পাওয়া গেছে।
এ প্রসঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, আমাদের দেশের আইনে এ সুযোগ রাখা হয়েছে। এ সুযোগ গ্রহণ করে কেউ যদি টাকা সাদা করে তাহলে এ টাকা মূলধারার অর্থনীতিতে যুক্ত হয়। যা অর্থনীতির জন্য ভালো। অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার পরিমাণ বাড়াকে আমি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি।