ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন: এখনই ব্যবস্থা নেয়া দরকার

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৩:১৫:০৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ নভেম্বর ২০২১
  • / ১২ বার পড়া হয়েছে

কোভিড-১৯ মহামারীর প্রকোপ সারা বিশ্বেই কমে আসতে শুরু করেছে এবং বিশ্বজুড়ে মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসছে। ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার দু’টি বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর মানুষ অনেকটাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে। আমাদের দেশেও সব ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠে এখন নতুন করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়াসে উদ্যোগী হয়েছে মানুষ। কিন্তু এখনো সবকিছু পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে গেছে এমন নয়। বরং বলা যায়, জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই কোভিডের প্রভাব এখনো রয়ে গেছে। আমরা এখনো মাস্ক পরে বাইরে বেরুচ্ছি। বড় ধরনের সভা-সমাবেশ এড়িয়ে চলছি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক কার্যক্রম বা পাঠদান শুরু হয়নি। বিদেশ গমনেও করোনা পরীক্ষার বাধ্যবাধকতার অবসান ঘটেনি।

এমনই পরিস্থিতিতে নতুন করে চোখ রাঙাচ্ছে করোনাভাইরাসের নতুন এক রূপান্তর বা ভ্যারিয়েন্ট। সর্বশেষ ডেল্টা ও ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়েন্ট আমাদের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক হয়ে দেখা দিয়েছিল। দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা আড়াই শ’ ছাড়িয়ে গিয়েছিল বেশ কিছু দিন ধরে। সেই বিপদ কাটিয়ে ওঠার পর এখন যে নতুন আতঙ্ক সামনে এসেছে সেটিকে বলা হচ্ছে ওমিক্রন। করোনার এই নতুন রূপ সারা বিশ্বেই উদ্বেগ ছড়িয়ে দিয়েছে। গত ২৪ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম এটি শনাক্ত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এরপর বতসোয়ানা, বেলজিয়াম, হংকং ও ইসরাইলে শনাক্ত হয়। এরই মধ্যে এটি আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত শুক্রবার বলেছে, এই ভ্যারিয়েন্ট দক্ষিণ আফ্রিকার প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। সংস্থাটি জানায়, এই ভ্যারিয়েন্টের অসংখ্য রূপান্তর আছে। তার মধ্যে বেশ কিছু আছে ‘উদ্বেগজনক’। আর এটিকে করোনার ভয়াবহতম ভ্যারিয়েন্ট বলছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত বেশির ভাগ টিকা ওমিক্রনের ক্ষেত্রে কার্যকর নয়। তবে এটা কতটা সংক্রামক তা নির্ণয়ের কাজ করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওমিক্রনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও তড়িঘড়ি কোনো ব্যবস্থা না নিতে বিশ্বের সব দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সেই আহ্বানে প্রায় কোনো দেশই কান দিচ্ছে না। কারণ নিজ দেশের জনগণের জীবন নিয়ে কেউ ঝুঁকি নিতে রাজি নয়। নতুন আতঙ্ক ও উদ্বেগের মধ্যে অনেক দেশের সাথে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সুইজারল্যান্ডসহ অনেক দেশ। নতুন বিধিনিষেধ দিয়েছে ইরান, ভারতসহ বেশ কিছু দেশ। বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ। ভ্যারিয়েন্টটি যাতে দেশে ঢুকতে না পারে সে জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে যোগাযোগ স্থগিত করেছে সরকার। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই স্থল, বিমান এবং নৌ-বন্দরে সতর্কতা জারি করা দরকার। না হলে ডেল্টার মতো এই ভ্যারিয়েন্টও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের ক্ষেত্রে এমনিতেই শৈথিল্য আছে। রাস্তাঘাটে চলাচলের সময় খেয়াল করলেই দেখা যায়, বেশির ভাগ মানুষ মাস্ক পরেনি। অনেকের মাস্ক থাকলেও তা গলায় ঝুলছে। এর বাইরে যেসব বিধি পালনীয় সেগুলো প্রতিপালনের তো প্রশ্নই ওঠে না। শৈথিল্য আছে স্বাস্থ্য খাতের পরিষেবা নিয়েও। টিকাদানে যে বাংলাদেশ একেবারে পেছনের সারিতে রয়েছে সে সত্য অস্বীকার করা যায় না। এমন সময়ে কোভিডের নতুন আরেকটি তরঙ্গ আমাদের জন্য কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে তা ভাবতেও গা শিউরে ওঠে। তাই এ বিষয়ে কোনো রকম শৈথিল্য কাম্য নয়। সরকারি পর্যায়ে যেমন, তেমনি জনগণেরও সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা এখনই নেয়া উচিত।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন: এখনই ব্যবস্থা নেয়া দরকার

আপলোড টাইম : ০৩:১৫:০৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ নভেম্বর ২০২১

কোভিড-১৯ মহামারীর প্রকোপ সারা বিশ্বেই কমে আসতে শুরু করেছে এবং বিশ্বজুড়ে মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসছে। ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার দু’টি বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর মানুষ অনেকটাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে। আমাদের দেশেও সব ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠে এখন নতুন করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়াসে উদ্যোগী হয়েছে মানুষ। কিন্তু এখনো সবকিছু পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে গেছে এমন নয়। বরং বলা যায়, জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই কোভিডের প্রভাব এখনো রয়ে গেছে। আমরা এখনো মাস্ক পরে বাইরে বেরুচ্ছি। বড় ধরনের সভা-সমাবেশ এড়িয়ে চলছি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক কার্যক্রম বা পাঠদান শুরু হয়নি। বিদেশ গমনেও করোনা পরীক্ষার বাধ্যবাধকতার অবসান ঘটেনি।

এমনই পরিস্থিতিতে নতুন করে চোখ রাঙাচ্ছে করোনাভাইরাসের নতুন এক রূপান্তর বা ভ্যারিয়েন্ট। সর্বশেষ ডেল্টা ও ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়েন্ট আমাদের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক হয়ে দেখা দিয়েছিল। দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা আড়াই শ’ ছাড়িয়ে গিয়েছিল বেশ কিছু দিন ধরে। সেই বিপদ কাটিয়ে ওঠার পর এখন যে নতুন আতঙ্ক সামনে এসেছে সেটিকে বলা হচ্ছে ওমিক্রন। করোনার এই নতুন রূপ সারা বিশ্বেই উদ্বেগ ছড়িয়ে দিয়েছে। গত ২৪ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম এটি শনাক্ত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এরপর বতসোয়ানা, বেলজিয়াম, হংকং ও ইসরাইলে শনাক্ত হয়। এরই মধ্যে এটি আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত শুক্রবার বলেছে, এই ভ্যারিয়েন্ট দক্ষিণ আফ্রিকার প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। সংস্থাটি জানায়, এই ভ্যারিয়েন্টের অসংখ্য রূপান্তর আছে। তার মধ্যে বেশ কিছু আছে ‘উদ্বেগজনক’। আর এটিকে করোনার ভয়াবহতম ভ্যারিয়েন্ট বলছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত বেশির ভাগ টিকা ওমিক্রনের ক্ষেত্রে কার্যকর নয়। তবে এটা কতটা সংক্রামক তা নির্ণয়ের কাজ করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওমিক্রনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও তড়িঘড়ি কোনো ব্যবস্থা না নিতে বিশ্বের সব দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সেই আহ্বানে প্রায় কোনো দেশই কান দিচ্ছে না। কারণ নিজ দেশের জনগণের জীবন নিয়ে কেউ ঝুঁকি নিতে রাজি নয়। নতুন আতঙ্ক ও উদ্বেগের মধ্যে অনেক দেশের সাথে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সুইজারল্যান্ডসহ অনেক দেশ। নতুন বিধিনিষেধ দিয়েছে ইরান, ভারতসহ বেশ কিছু দেশ। বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ। ভ্যারিয়েন্টটি যাতে দেশে ঢুকতে না পারে সে জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে যোগাযোগ স্থগিত করেছে সরকার। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই স্থল, বিমান এবং নৌ-বন্দরে সতর্কতা জারি করা দরকার। না হলে ডেল্টার মতো এই ভ্যারিয়েন্টও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের ক্ষেত্রে এমনিতেই শৈথিল্য আছে। রাস্তাঘাটে চলাচলের সময় খেয়াল করলেই দেখা যায়, বেশির ভাগ মানুষ মাস্ক পরেনি। অনেকের মাস্ক থাকলেও তা গলায় ঝুলছে। এর বাইরে যেসব বিধি পালনীয় সেগুলো প্রতিপালনের তো প্রশ্নই ওঠে না। শৈথিল্য আছে স্বাস্থ্য খাতের পরিষেবা নিয়েও। টিকাদানে যে বাংলাদেশ একেবারে পেছনের সারিতে রয়েছে সে সত্য অস্বীকার করা যায় না। এমন সময়ে কোভিডের নতুন আরেকটি তরঙ্গ আমাদের জন্য কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে তা ভাবতেও গা শিউরে ওঠে। তাই এ বিষয়ে কোনো রকম শৈথিল্য কাম্য নয়। সরকারি পর্যায়ে যেমন, তেমনি জনগণেরও সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা এখনই নেয়া উচিত।