ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

করোনাকালে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে গর্ভবতী নারী

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২৯:২৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জুলাই ২০২০
  • / ১৯৩ বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নেওয়া কমেছে, বেড়েছে মৃত্যুঝুঁকি
সমীকরণ প্রতিবেদন:
করোনা মহামারীতে দেশের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোয় গিয়ে গর্ভবতী নারীর চিকিৎসা নেওয়ার হার কমে গেছে। শুধু করোনাভীতির জন্য নয়, আর্থিক সংকটের কারণেও হাসপাতালে গিয়ে গর্ভবতীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন না। আবার জনবল ঘাটতির কারণে অনেক জায়গায় পর্যাপ্ত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু স্থানে করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় আইসোলেশনে আছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। নিয়মিত সেবা না পাওয়ায় হাসপাতালগুলোয় শেষ মুহূর্তে ক্রিটিক্যাল অবস্থায় গর্ভবতীদের নিয়ে আসা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনাকালে গর্ভবতীদের চিকিৎসাসেবা নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যানও উদ্বেগজনক। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মতে, করোনায় আক্রান্ত নারীর দুই-তৃতীয়াংশ গর্ভবতী। এমনকি ২০১৯ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরের তুলনায় ২০২০ সালের জানুয়ারি-মার্চে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে মায়েদের গর্ভকালীন স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার প্রবণতা কমেছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে গিয়ে সন্তান জন্মদানের হার ওই একই সময়ে কমেছে ২১ দশমিক ২ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, করোনা মহামারীতে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব কমে যাওয়ায় মাতৃমৃত্যু হার বেড়ে যেতে পারে। কারণ প্রসূতি নারীর অধিকাংশই প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা কর্মীর সেবা বাড়িতে পাচ্ছেন না। একই সঙ্গে প্রসব-পরবর্তী পরিবার পরিকল্পনা সেবাও দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আবার স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির ব্যবহার কমায় বেড়েছে অনাকাক্সিক্ষত গর্ভধারণ ও অনিরাপদ গর্ভপাত।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, গর্ভবতী মায়েরা খুবই সংবেদনশীল গ্রুপ। এজন্য পরিবারের সদস্যদের তাদের ওপর খেয়াল রাখতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোকেও গর্ভবতী মায়েদের সঠিক সেবা নিশ্চিত করতে হবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনাভাইরাসের কারণে নারীরা গর্ভকালীন সেবা, নিরাপদ প্রসব ও প্রসব-পরবর্তী সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরসহ বিভিন্ন সংস্থা প্রসূতি নারীদের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করলেও বর্তমানে এ ধরনের কর্মকা- অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে যাতায়াতসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে নারীরা প্রসবকালীন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। করোনা সংক্রমণের ভয়ে অনেক নারী ও তার পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসকের কাছে গিয়ে সেবা নিতে ভয় পাচ্ছেন। কেউ কেউ টেলিমেডিসিন সেবা নিলেও এটি মা ও সন্তানের জন্য পর্যাপ্ত নয়। এর ফলে মা ও সন্তান উভয়েরই চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে।
একাধিক গাইনি রোগ বিশেষজ্ঞ বলেছেন, সরকারি সেবাদান কেন্দ্রগুলোতেও করোনাভীতি আছে। আবার সব কেন্দ্রে জনবলও পর্যাপ্ত নয়। অনেক চিকিৎসক ব্যক্তিগত চেম্বারে না গিয়ে অনলাইনে চিকিৎসা দিচ্ছেন। কিন্তু প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পক্ষে অনলাইনে সব সময় সেবা গ্রহণ করা সম্ভব নয়। আবার টেলিমেডিসিন সেবারও কিছু অসুবিধা আছে। কারও মোবাইল না থাকলে কিংবা চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলার জন্য পর্যাপ্ত ব্যালান্স মোবাইলে না থাকলেও সমস্যা। করোনা সংক্রমণের ভয়ে কিছু ক্ষেত্রে গর্ভবতীকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে পরিবারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে না। আবার করোনাকালে ঘরে নারীদের কাজের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় গর্ভবতীরা নিজের শরীরের যত্নও ঠিকভাবে নিতে পারছেন না। তবে করোনা পরিস্থিতিতে গর্ভবতী মা ও নবজাতকের অত্যাবশকীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সংস্থাটি গর্ভবতী মায়েদের জনসমাগম এড়িয়ে চলতে বলেছে। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীরা বাইরে গেলে তাদের অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে, কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করতে হবে।
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নওশিন শারমিন পূরবী বলেন, একজন গর্ভবতীকে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে বা টেলিমেডিসিন পদ্ধতিতে, যেভাবেই হোক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু নিয়মিত সেবা না হওয়ায় এখন হাসপাতালগুলোয় শেষ মুহূর্তে ক্রিটিক্যাল অবস্থায় গর্ভবতীদের নিয়ে আসা হচ্ছে। বিশেষ করে বাড়িতে প্রসব করার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে এ সমস্যা তৈরি হচ্ছে। প্রসবপথে দীর্ঘ সময় আটকে থাকলে জন্ম নেওয়া নবজাতক সেরিব্রাল পালসি (মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া) রোগে আক্রান্ত হয়। গর্ভবতীদের কারও কারও জরায়ু ফেটে যাচ্ছে। এ ছাড়া এ সময় জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর সরবরাহ না থাকায় অনেক অনাকাক্সিক্ষত গর্ভধারণের ঘটনাও ঘটছে। এতে অনেকে ঘরেই গর্ভপাত করাতে গিয়ে জটিল স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়ছেন। এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। এতে মাতৃমৃত্যু হারও বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

করোনাকালে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে গর্ভবতী নারী

আপলোড টাইম : ১০:২৯:২৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জুলাই ২০২০

স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নেওয়া কমেছে, বেড়েছে মৃত্যুঝুঁকি
সমীকরণ প্রতিবেদন:
করোনা মহামারীতে দেশের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোয় গিয়ে গর্ভবতী নারীর চিকিৎসা নেওয়ার হার কমে গেছে। শুধু করোনাভীতির জন্য নয়, আর্থিক সংকটের কারণেও হাসপাতালে গিয়ে গর্ভবতীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন না। আবার জনবল ঘাটতির কারণে অনেক জায়গায় পর্যাপ্ত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু স্থানে করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় আইসোলেশনে আছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। নিয়মিত সেবা না পাওয়ায় হাসপাতালগুলোয় শেষ মুহূর্তে ক্রিটিক্যাল অবস্থায় গর্ভবতীদের নিয়ে আসা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনাকালে গর্ভবতীদের চিকিৎসাসেবা নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যানও উদ্বেগজনক। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মতে, করোনায় আক্রান্ত নারীর দুই-তৃতীয়াংশ গর্ভবতী। এমনকি ২০১৯ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরের তুলনায় ২০২০ সালের জানুয়ারি-মার্চে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে মায়েদের গর্ভকালীন স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার প্রবণতা কমেছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে গিয়ে সন্তান জন্মদানের হার ওই একই সময়ে কমেছে ২১ দশমিক ২ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, করোনা মহামারীতে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব কমে যাওয়ায় মাতৃমৃত্যু হার বেড়ে যেতে পারে। কারণ প্রসূতি নারীর অধিকাংশই প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা কর্মীর সেবা বাড়িতে পাচ্ছেন না। একই সঙ্গে প্রসব-পরবর্তী পরিবার পরিকল্পনা সেবাও দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আবার স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির ব্যবহার কমায় বেড়েছে অনাকাক্সিক্ষত গর্ভধারণ ও অনিরাপদ গর্ভপাত।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, গর্ভবতী মায়েরা খুবই সংবেদনশীল গ্রুপ। এজন্য পরিবারের সদস্যদের তাদের ওপর খেয়াল রাখতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোকেও গর্ভবতী মায়েদের সঠিক সেবা নিশ্চিত করতে হবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনাভাইরাসের কারণে নারীরা গর্ভকালীন সেবা, নিরাপদ প্রসব ও প্রসব-পরবর্তী সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরসহ বিভিন্ন সংস্থা প্রসূতি নারীদের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করলেও বর্তমানে এ ধরনের কর্মকা- অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে যাতায়াতসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে নারীরা প্রসবকালীন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। করোনা সংক্রমণের ভয়ে অনেক নারী ও তার পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসকের কাছে গিয়ে সেবা নিতে ভয় পাচ্ছেন। কেউ কেউ টেলিমেডিসিন সেবা নিলেও এটি মা ও সন্তানের জন্য পর্যাপ্ত নয়। এর ফলে মা ও সন্তান উভয়েরই চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে।
একাধিক গাইনি রোগ বিশেষজ্ঞ বলেছেন, সরকারি সেবাদান কেন্দ্রগুলোতেও করোনাভীতি আছে। আবার সব কেন্দ্রে জনবলও পর্যাপ্ত নয়। অনেক চিকিৎসক ব্যক্তিগত চেম্বারে না গিয়ে অনলাইনে চিকিৎসা দিচ্ছেন। কিন্তু প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পক্ষে অনলাইনে সব সময় সেবা গ্রহণ করা সম্ভব নয়। আবার টেলিমেডিসিন সেবারও কিছু অসুবিধা আছে। কারও মোবাইল না থাকলে কিংবা চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলার জন্য পর্যাপ্ত ব্যালান্স মোবাইলে না থাকলেও সমস্যা। করোনা সংক্রমণের ভয়ে কিছু ক্ষেত্রে গর্ভবতীকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে পরিবারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে না। আবার করোনাকালে ঘরে নারীদের কাজের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় গর্ভবতীরা নিজের শরীরের যত্নও ঠিকভাবে নিতে পারছেন না। তবে করোনা পরিস্থিতিতে গর্ভবতী মা ও নবজাতকের অত্যাবশকীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সংস্থাটি গর্ভবতী মায়েদের জনসমাগম এড়িয়ে চলতে বলেছে। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীরা বাইরে গেলে তাদের অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে, কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করতে হবে।
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নওশিন শারমিন পূরবী বলেন, একজন গর্ভবতীকে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে বা টেলিমেডিসিন পদ্ধতিতে, যেভাবেই হোক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু নিয়মিত সেবা না হওয়ায় এখন হাসপাতালগুলোয় শেষ মুহূর্তে ক্রিটিক্যাল অবস্থায় গর্ভবতীদের নিয়ে আসা হচ্ছে। বিশেষ করে বাড়িতে প্রসব করার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে এ সমস্যা তৈরি হচ্ছে। প্রসবপথে দীর্ঘ সময় আটকে থাকলে জন্ম নেওয়া নবজাতক সেরিব্রাল পালসি (মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া) রোগে আক্রান্ত হয়। গর্ভবতীদের কারও কারও জরায়ু ফেটে যাচ্ছে। এ ছাড়া এ সময় জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর সরবরাহ না থাকায় অনেক অনাকাক্সিক্ষত গর্ভধারণের ঘটনাও ঘটছে। এতে অনেকে ঘরেই গর্ভপাত করাতে গিয়ে জটিল স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়ছেন। এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। এতে মাতৃমৃত্যু হারও বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।