ইপেপার । আজমঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

কঠোর স্বাস্থ্যবিধিতে পবিত্র হজ পালিত

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২৬:৩৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ জুলাই ২০২১
  • / ৫৭ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
মহান প্রতিপালক আল্লাহর দরবারে মানবজাতির ওপর থেকে করোনা মহামারী তুলে নেওয়ার আকুতি জানিয়ে গতকাল (সৌদি আরবে ৯ জিলহজ) পালিত হয়েছে পবিত্র হজ। পাপমুক্তি ও আত্মশুদ্ধির আকুল বাসনা নিয়ে করোনাকালের কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবারও সীমিত পরিসরে পালিত হয় মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তম ধর্মীয় জমায়েত পবিত্র হজ। সৌদি নাগরিকসহ সে দেশে অবস্থানরত বিশে^র ১৫০টি রাষ্ট্রের ৬০ সহস্রাধিক মুসলমান পবিত্র হজব্রত পালন করেন। মহামারী করোনার কারণে গত বছরের মতো এবারও সৌদি আরবে হজ করতে যাওয়ার অনুমতি পাননি বাংলাদেশসহ বিশে^র ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।
প্রায় দেড় হাজার বছর আগে হিজরি ১০ সালে (৬৩২ খ্রিস্টাব্দ) এই হজের দিনে মক্কার অদূরে আরাফার ময়দানে জাবালে রহমতে দাঁড়িয়ে প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ঐতিহাসিক এক ভাষণ দিয়েছিলেন। ইতিহাসে যা বিদায় হজের ভাষণ হিসেবে উল্লেখ আছে। এই ভাষণে মুসলমানদের করণীয় সম্পর্কে বিশেষ করে ইসলামে মানুষের মর্যাদা, নারীর অধিকার, পারস্পরিক সম্পর্ক ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পর্কে চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন নবিজী। সেই থেকে প্রতিবার আরাফার ময়দানে মসজিদে নামিরা হতে হজের খুতবা দেওয়া হয়। গতকাল মসজিদে নামিরায় হজের খুতবা দেন মক্কার পবিত্র মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শাইখ বান্দার বিন আবদুল আজিজ বালিলা। পরে তাঁর ইমামতিতে হাজী সাহেবরা জোহর ও আসরের নামাজ এক আজান ও দুই ইকামাতে কসর করে আদায় করেন। এ নামাজ শেষে মানবজাতির ওপর থেকে করোনা মহামারী তুলে নেওয়ার আকুতি ও জীবনের সব গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহ তায়ালার দরবারে কায়মনোবাক্যে দোয়া করা হয়। এ ছাড়া মুনাজাতে বিশ্বের নির্যাতিত মুসলমানদের মুক্তি এবং মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও কল্যাণ কামনা করা হয়। হজ খুতবায় শাইখ বান্দার বিন আবদুল আজিজ বালিলা মহামারী সম্পর্কে মুহাম্মদ (সা.)-এর শিক্ষা অনুসরণ করার জন্য সমবেত হাজী ও বিশ্ব মুসলিমের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, মহামারী যে অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে সেখানকার লোকদের বাইরে যাওয়া উচিত নয় এবং অন্যান্য অঞ্চলের লোকদের উপদ্রুত এলাকায় যাওয়া উচিত নয়। খতিব বলেন, ‘আজ আমি আপনার (মুহাম্মদ) জন্য আপনার ধর্মকে (ইসলাম) পরিপূর্ণ করে দিয়েছি এবং আপনার প্রতি আমার অনুগ্রহ পূর্ণ করেছি এবং আপনার জন্য ইসলামকে ধর্ম হিসেবে অনুমোদন করেছি।’- পবিত্র কোরআনের চূড়ান্ত এই আয়াতটি ১৪৩৩ বছর আগে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে প্রকাশিত হয়েছিল। তাই তিনি মুসলমানদের পরস্পরের মধ্যে ইনসাফ ও সমতা প্রতিষ্ঠা, একে অপরের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ দূর করার আহ্বান জানান। তিনি আল্লাহর দোহাই দিয়ে সবাইকে একে অপরকে ক্ষমা করারও আহ্বান জানান। এর আগে গতকাল সকালে হাজীরা মিনা থেকে আরাফার ময়দানে পৌঁছে রোদনভরা কণ্ঠে অনবরত জিকির করতে থাকেন, ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা, লাকা ওয়ালমুলক; লা শারিকা লাক।’ অর্থাৎ ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।’ জোহর ও আসরের নামাজ আদায়ের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করেন হাজীরা। এরপর মাগরিবের নামাজ না পড়ে রওনা হন মুজদালিফার উদ্দেশে। সেখানে পৌঁছে একসঙ্গে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করেন এবং খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করেন। শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচার জন্য হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর নির্দেশে ইসমাইল (আ.) যেভাবে পাথর ছুড়ে মেরেছিলেন, তা পালন করার জন্য হাজীরা রাতেই মুজদালিফা থেকে ৪৯টি ছোট আকারের কঙ্কর সংগ্রহ করেন।
আজ ১০ জিলহজ মঙ্গলবার ফজরের নামাজ আদায়ের পর হাজীরা ফিরবেন মিনার তাঁবুতে। এরপর জামারাতে আক্কাবায় (বড় শয়তানকে) সাতটি কঙ্কর মারবেন। পরে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে পশু কোরবানি করবেন। এরপর পুরুষরা মাথা মুন্ডন করবেন। পরে হাজীরা মক্কায় ফিরে আল্লাহর ঘর বায়তুল্লাহ শরিফ তাওয়াফ করবেন এবং ‘সাফা ও মারওয়া’ দুই পাহাড়ের মাঝে সাত বার সায়ি শেষে আবার মিনায় নিজ নিজ তাঁবুতে ফিরে আসবেন। এরপর ১১ ও ১২ জিলহজ হাজী সাহেবরা জামারাতে গিয়ে প্রতিদিন ২১টি করে কঙ্কর মারবেন তিন শয়তানের উদ্দেশে। প্রথমে ছোট, তারপর মাঝারি ও সবশেষে বড় জামারাতে শয়তানের প্রতি পর্যায়ক্রমে কঙ্কর ছোড়ার মাধ্যমে হাজীদের একদিকে সুন্নাত পালন করা হয়, অপরদিকে শয়তানের প্ররোচনা থেকে বেঁচে থাকার শপথ নেওয়া হয়। হজব্রত পালনের আগে-পরে উম্মতে মোহাম্মদি হাজীরা আল্লাহর প্রিয় হাবিব রসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা মোবারক জেয়ারত করার জন্য মদিনা শরিফ সফর করে থাকেন।
আজ সৌদি আরবে পবিত্র ঈদুল আজহা : আজ সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হচ্ছে। সৌদি আরবের যেসব নাগরিক এবার হজ করার সুযোগ পাননি, তারা আজ পবিত্র ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় ও সামর্থ্যমতো পশু কোরবানি করবেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

কঠোর স্বাস্থ্যবিধিতে পবিত্র হজ পালিত

আপলোড টাইম : ০৯:২৬:৩৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ জুলাই ২০২১

সমীকরণ প্রতিবেদন:
মহান প্রতিপালক আল্লাহর দরবারে মানবজাতির ওপর থেকে করোনা মহামারী তুলে নেওয়ার আকুতি জানিয়ে গতকাল (সৌদি আরবে ৯ জিলহজ) পালিত হয়েছে পবিত্র হজ। পাপমুক্তি ও আত্মশুদ্ধির আকুল বাসনা নিয়ে করোনাকালের কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবারও সীমিত পরিসরে পালিত হয় মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তম ধর্মীয় জমায়েত পবিত্র হজ। সৌদি নাগরিকসহ সে দেশে অবস্থানরত বিশে^র ১৫০টি রাষ্ট্রের ৬০ সহস্রাধিক মুসলমান পবিত্র হজব্রত পালন করেন। মহামারী করোনার কারণে গত বছরের মতো এবারও সৌদি আরবে হজ করতে যাওয়ার অনুমতি পাননি বাংলাদেশসহ বিশে^র ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।
প্রায় দেড় হাজার বছর আগে হিজরি ১০ সালে (৬৩২ খ্রিস্টাব্দ) এই হজের দিনে মক্কার অদূরে আরাফার ময়দানে জাবালে রহমতে দাঁড়িয়ে প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ঐতিহাসিক এক ভাষণ দিয়েছিলেন। ইতিহাসে যা বিদায় হজের ভাষণ হিসেবে উল্লেখ আছে। এই ভাষণে মুসলমানদের করণীয় সম্পর্কে বিশেষ করে ইসলামে মানুষের মর্যাদা, নারীর অধিকার, পারস্পরিক সম্পর্ক ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পর্কে চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন নবিজী। সেই থেকে প্রতিবার আরাফার ময়দানে মসজিদে নামিরা হতে হজের খুতবা দেওয়া হয়। গতকাল মসজিদে নামিরায় হজের খুতবা দেন মক্কার পবিত্র মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শাইখ বান্দার বিন আবদুল আজিজ বালিলা। পরে তাঁর ইমামতিতে হাজী সাহেবরা জোহর ও আসরের নামাজ এক আজান ও দুই ইকামাতে কসর করে আদায় করেন। এ নামাজ শেষে মানবজাতির ওপর থেকে করোনা মহামারী তুলে নেওয়ার আকুতি ও জীবনের সব গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহ তায়ালার দরবারে কায়মনোবাক্যে দোয়া করা হয়। এ ছাড়া মুনাজাতে বিশ্বের নির্যাতিত মুসলমানদের মুক্তি এবং মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও কল্যাণ কামনা করা হয়। হজ খুতবায় শাইখ বান্দার বিন আবদুল আজিজ বালিলা মহামারী সম্পর্কে মুহাম্মদ (সা.)-এর শিক্ষা অনুসরণ করার জন্য সমবেত হাজী ও বিশ্ব মুসলিমের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, মহামারী যে অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে সেখানকার লোকদের বাইরে যাওয়া উচিত নয় এবং অন্যান্য অঞ্চলের লোকদের উপদ্রুত এলাকায় যাওয়া উচিত নয়। খতিব বলেন, ‘আজ আমি আপনার (মুহাম্মদ) জন্য আপনার ধর্মকে (ইসলাম) পরিপূর্ণ করে দিয়েছি এবং আপনার প্রতি আমার অনুগ্রহ পূর্ণ করেছি এবং আপনার জন্য ইসলামকে ধর্ম হিসেবে অনুমোদন করেছি।’- পবিত্র কোরআনের চূড়ান্ত এই আয়াতটি ১৪৩৩ বছর আগে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে প্রকাশিত হয়েছিল। তাই তিনি মুসলমানদের পরস্পরের মধ্যে ইনসাফ ও সমতা প্রতিষ্ঠা, একে অপরের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ দূর করার আহ্বান জানান। তিনি আল্লাহর দোহাই দিয়ে সবাইকে একে অপরকে ক্ষমা করারও আহ্বান জানান। এর আগে গতকাল সকালে হাজীরা মিনা থেকে আরাফার ময়দানে পৌঁছে রোদনভরা কণ্ঠে অনবরত জিকির করতে থাকেন, ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা, লাকা ওয়ালমুলক; লা শারিকা লাক।’ অর্থাৎ ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।’ জোহর ও আসরের নামাজ আদায়ের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করেন হাজীরা। এরপর মাগরিবের নামাজ না পড়ে রওনা হন মুজদালিফার উদ্দেশে। সেখানে পৌঁছে একসঙ্গে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করেন এবং খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করেন। শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচার জন্য হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর নির্দেশে ইসমাইল (আ.) যেভাবে পাথর ছুড়ে মেরেছিলেন, তা পালন করার জন্য হাজীরা রাতেই মুজদালিফা থেকে ৪৯টি ছোট আকারের কঙ্কর সংগ্রহ করেন।
আজ ১০ জিলহজ মঙ্গলবার ফজরের নামাজ আদায়ের পর হাজীরা ফিরবেন মিনার তাঁবুতে। এরপর জামারাতে আক্কাবায় (বড় শয়তানকে) সাতটি কঙ্কর মারবেন। পরে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে পশু কোরবানি করবেন। এরপর পুরুষরা মাথা মুন্ডন করবেন। পরে হাজীরা মক্কায় ফিরে আল্লাহর ঘর বায়তুল্লাহ শরিফ তাওয়াফ করবেন এবং ‘সাফা ও মারওয়া’ দুই পাহাড়ের মাঝে সাত বার সায়ি শেষে আবার মিনায় নিজ নিজ তাঁবুতে ফিরে আসবেন। এরপর ১১ ও ১২ জিলহজ হাজী সাহেবরা জামারাতে গিয়ে প্রতিদিন ২১টি করে কঙ্কর মারবেন তিন শয়তানের উদ্দেশে। প্রথমে ছোট, তারপর মাঝারি ও সবশেষে বড় জামারাতে শয়তানের প্রতি পর্যায়ক্রমে কঙ্কর ছোড়ার মাধ্যমে হাজীদের একদিকে সুন্নাত পালন করা হয়, অপরদিকে শয়তানের প্ররোচনা থেকে বেঁচে থাকার শপথ নেওয়া হয়। হজব্রত পালনের আগে-পরে উম্মতে মোহাম্মদি হাজীরা আল্লাহর প্রিয় হাবিব রসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা মোবারক জেয়ারত করার জন্য মদিনা শরিফ সফর করে থাকেন।
আজ সৌদি আরবে পবিত্র ঈদুল আজহা : আজ সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হচ্ছে। সৌদি আরবের যেসব নাগরিক এবার হজ করার সুযোগ পাননি, তারা আজ পবিত্র ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় ও সামর্থ্যমতো পশু কোরবানি করবেন।