ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ওয়েবসাইটেই সীমাবদ্ধ মাধ্যমিকের পড়াশোনা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:০০:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর ২০২০
  • / ১৬০ বার পড়া হয়েছে

অ্যাসাইনমেন্ট দিচ্ছেন না শিক্ষকরা অনিশ্চয়তায় এক কোটি শিক্ষার্থী
সমীকরণ প্রতিবেদন:
এক মাসের পাঠ পরিক্রমা নিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট-ভিত্তিক রুটিন প্রকাশ করা হলেও শিক্ষার্থীদের কাছে এখনো তা পৌঁছেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের উদাসীনতায় অ্যাসাইনমেন্টের পাঠ ঠিকমতো বুঝে নিতেও পারছে না করোনায় ঘরবন্দী শিক্ষার্থীরা। ফলে মাধ্যমিক পর্যায়ের অর্থাৎ ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর এক কোটি তিন লাখ শিক্ষার্থী এখন চরমভাবে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। তাদের পড়াশোনাও এখন অনেকটাই ওয়েবসাইট আর রুটিনে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। করোনার কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা রয়েছে পড়াশোনার বাইরে। যদিও অনলাইনে কিংবা টিভি ও রেডিওতে বিকল্প পন্থায় পড়াশোনা চালু রাখতে উদ্যোগ নিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। এর পরেও অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনার মূল ¯্রােত থেকে সরে এসেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পুরো শিক্ষাবর্ষের পাঠকে সংক্ষিপ্ত করে বিষয়ভিত্তিক কয়েকটি চ্যাপ্টারকে একত্রিত করে সংক্ষিপ্ত একটি সিলেবাস তৈরি করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। কম সময়ে শিক্ষার্থীদের জন্য এনসিটিবি’র প্রস্তুতকৃত এই সিলেবাস গত ৩১ অক্টোবর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে মাউশি। তাতে বলে হয়েছেÑ এই সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের আলোকে ক্লাস অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহে একটি করে পুরো নভেম্বর মাসে চারটি অ্যাসাইমেন্ট শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেবেন। শিক্ষার্থীদের কাছে সম্ভব না হলে তাদের অভিভাবকদের কাছে এই অ্যাসাইমেন্ট পৌঁছে দিয়ে সেটি আবার শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে সম্পন্ন করে স্কুলে জমা নিতে হবে ।
এ দিকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত দু-চারটি ছাড়া কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষার্থীদের হাতে এই অ্যাসাইমেন্ট পৌঁছে দেয়া শুরুই করেনি। এতে চলতি মাসের মধ্যে মোট চারটি অ্যাসাইমেন্ট করার কথা থাকলেও আাদৌ এটি সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে শুরুতেই সন্দেহের তৈরি হয়েছে। অভিভাবক ও শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারা দেশের মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থীর কাছে অ্যাসাইনমেন্ট পৌঁছে দেয়াটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শিক্ষকদের অনেকে বলছেন, সব শিক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবকদের স্কুলে ডেকে এনে অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া প্রায় অসম্ভব। মফস্বলের সব শিক্ষার্থীর অভিভাবকের ফোন নম্বরও শিক্ষকদের কাছে নেই। আবার অনেক নম্বর সচলও নেই। স্কুল বন্ধ থাকায় অসচ্ছল পরিবারের অনেক শিক্ষার্থী নানা কাজে যোগ দিয়েছে, তাদের পাওয়া যাচ্ছে না।
ঢাকার অদূরে সাভারের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক মোক্তাদির হোসেন জানান, প্রথম দিন সব শিক্ষার্থীর কাছে চলতি সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট তারা পৌঁঁছে দিতে পারেননি। রাজধানীসহ সারা দেশের অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন, তারা মাউশি অধিদফতরের ওয়েবসাইটে ঠিকমতো ঢুকতে পারেননি। আর ঢুকতে পারলেও অ্যাসাইনমেন্ট ডাউনলোড করতে পারছেন না। ফলে তারা শিক্ষার্থীদের কাছে অ্যাসাইমেন্টও ঠিকমতো পৌঁছাতে পারেননি।
যদিও মাউশি’র নির্দেশনায় বলা হয়েছেÑ অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অর্জিত শিখনফল মূল্যায়ন করা হবে। অভিভাবক বা অন্য কারো মাধ্যমে অথবা অনলাইনে এই অ্যাসাইনমেন্ট গ্রহণ ও জমা দেয়া যাবে। অভিভাবকদের অভিযোগ, ওয়েবসাইটে ঢুকে যদি অ্যাসাইমেন্ট ডাউনলোড না করা যায় তাহলে শিক্ষার্থীরা কিভাবে তা সম্পন্ন করে স্কুলে জমা দেবে।
শিক্ষার্থীদের কাছে কিভাবে অ্যাসাইমেন্ট পৌঁছে দিয়ে এবং তা যথাযথভাবে আদায় করা যায় সে প্রসঙ্গে মাউশি’ র মহাপরিচালক (ডিজি) প্রফেসর ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক জানিয়েছেন, সব শিক্ষার্থীদের কাছে অনলাইন-সুবিধা থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। তাই আমরা বলেছি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ওয়েবসাইট থেকে সিলেবাস অর্থাৎ অ্যাসাইমেন্ট ডাউনলোড করে তা শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিতে হবে। আবার সব শিক্ষার্থীকে একই সময়ে পাওয়াও যাবে না। এ ক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হলোÑ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান সব শিক্ষককে নিয়ে প্রথমে টিচার্স মিটিং করে কাজের বিস্তারিত পরিকল্পনা করে নিতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করে হলেও অ্যাসাইমেন্ট পৌঁছে দিয়ে আবার তা আদায়ও করতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ওয়েবসাইটেই সীমাবদ্ধ মাধ্যমিকের পড়াশোনা

আপলোড টাইম : ১১:০০:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর ২০২০

অ্যাসাইনমেন্ট দিচ্ছেন না শিক্ষকরা অনিশ্চয়তায় এক কোটি শিক্ষার্থী
সমীকরণ প্রতিবেদন:
এক মাসের পাঠ পরিক্রমা নিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট-ভিত্তিক রুটিন প্রকাশ করা হলেও শিক্ষার্থীদের কাছে এখনো তা পৌঁছেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের উদাসীনতায় অ্যাসাইনমেন্টের পাঠ ঠিকমতো বুঝে নিতেও পারছে না করোনায় ঘরবন্দী শিক্ষার্থীরা। ফলে মাধ্যমিক পর্যায়ের অর্থাৎ ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর এক কোটি তিন লাখ শিক্ষার্থী এখন চরমভাবে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। তাদের পড়াশোনাও এখন অনেকটাই ওয়েবসাইট আর রুটিনে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। করোনার কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা রয়েছে পড়াশোনার বাইরে। যদিও অনলাইনে কিংবা টিভি ও রেডিওতে বিকল্প পন্থায় পড়াশোনা চালু রাখতে উদ্যোগ নিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। এর পরেও অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনার মূল ¯্রােত থেকে সরে এসেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পুরো শিক্ষাবর্ষের পাঠকে সংক্ষিপ্ত করে বিষয়ভিত্তিক কয়েকটি চ্যাপ্টারকে একত্রিত করে সংক্ষিপ্ত একটি সিলেবাস তৈরি করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। কম সময়ে শিক্ষার্থীদের জন্য এনসিটিবি’র প্রস্তুতকৃত এই সিলেবাস গত ৩১ অক্টোবর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে মাউশি। তাতে বলে হয়েছেÑ এই সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের আলোকে ক্লাস অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহে একটি করে পুরো নভেম্বর মাসে চারটি অ্যাসাইমেন্ট শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেবেন। শিক্ষার্থীদের কাছে সম্ভব না হলে তাদের অভিভাবকদের কাছে এই অ্যাসাইমেন্ট পৌঁছে দিয়ে সেটি আবার শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে সম্পন্ন করে স্কুলে জমা নিতে হবে ।
এ দিকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত দু-চারটি ছাড়া কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষার্থীদের হাতে এই অ্যাসাইমেন্ট পৌঁছে দেয়া শুরুই করেনি। এতে চলতি মাসের মধ্যে মোট চারটি অ্যাসাইমেন্ট করার কথা থাকলেও আাদৌ এটি সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে শুরুতেই সন্দেহের তৈরি হয়েছে। অভিভাবক ও শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারা দেশের মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থীর কাছে অ্যাসাইনমেন্ট পৌঁছে দেয়াটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শিক্ষকদের অনেকে বলছেন, সব শিক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবকদের স্কুলে ডেকে এনে অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া প্রায় অসম্ভব। মফস্বলের সব শিক্ষার্থীর অভিভাবকের ফোন নম্বরও শিক্ষকদের কাছে নেই। আবার অনেক নম্বর সচলও নেই। স্কুল বন্ধ থাকায় অসচ্ছল পরিবারের অনেক শিক্ষার্থী নানা কাজে যোগ দিয়েছে, তাদের পাওয়া যাচ্ছে না।
ঢাকার অদূরে সাভারের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক মোক্তাদির হোসেন জানান, প্রথম দিন সব শিক্ষার্থীর কাছে চলতি সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট তারা পৌঁঁছে দিতে পারেননি। রাজধানীসহ সারা দেশের অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন, তারা মাউশি অধিদফতরের ওয়েবসাইটে ঠিকমতো ঢুকতে পারেননি। আর ঢুকতে পারলেও অ্যাসাইনমেন্ট ডাউনলোড করতে পারছেন না। ফলে তারা শিক্ষার্থীদের কাছে অ্যাসাইমেন্টও ঠিকমতো পৌঁছাতে পারেননি।
যদিও মাউশি’র নির্দেশনায় বলা হয়েছেÑ অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অর্জিত শিখনফল মূল্যায়ন করা হবে। অভিভাবক বা অন্য কারো মাধ্যমে অথবা অনলাইনে এই অ্যাসাইনমেন্ট গ্রহণ ও জমা দেয়া যাবে। অভিভাবকদের অভিযোগ, ওয়েবসাইটে ঢুকে যদি অ্যাসাইমেন্ট ডাউনলোড না করা যায় তাহলে শিক্ষার্থীরা কিভাবে তা সম্পন্ন করে স্কুলে জমা দেবে।
শিক্ষার্থীদের কাছে কিভাবে অ্যাসাইমেন্ট পৌঁছে দিয়ে এবং তা যথাযথভাবে আদায় করা যায় সে প্রসঙ্গে মাউশি’ র মহাপরিচালক (ডিজি) প্রফেসর ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক জানিয়েছেন, সব শিক্ষার্থীদের কাছে অনলাইন-সুবিধা থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। তাই আমরা বলেছি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ওয়েবসাইট থেকে সিলেবাস অর্থাৎ অ্যাসাইমেন্ট ডাউনলোড করে তা শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিতে হবে। আবার সব শিক্ষার্থীকে একই সময়ে পাওয়াও যাবে না। এ ক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হলোÑ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান সব শিক্ষককে নিয়ে প্রথমে টিচার্স মিটিং করে কাজের বিস্তারিত পরিকল্পনা করে নিতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করে হলেও অ্যাসাইমেন্ট পৌঁছে দিয়ে আবার তা আদায়ও করতে হবে।