ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ওজুর আমল খুবই জরুরি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:০৩:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ জুন ২০২০
  • / ১৬৯ বার পড়া হয়েছে

ধর্ম প্রতিবেদন:
মহামারি করোনা থেকে মুক্ত থাকতে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, পিপিই কত কিছুই না পরছে মানুষ। এ সব কিছুই কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সবার জন্য প্রাথমিকভাবে ঘোষণা করেনি। যে জিনিসটি সবার আগে এ সংস্থাটি ঘোষণা করেছে তা হলো- ‘নিয়মিত ভালোভাবে হাত ধোয়া।’ তাদের ঘোষণা অনুযায়ী সবচেয়ে ভালো হয় অ্যালকোহলসমৃদ্ধ তরল ব্যবহার করা, যাতে হাত জীবাণুমুক্ত করা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনার সঙ্গে ইসলামের একটি আমল কার্যকরীভাবেই মিলে যায়। তাহলো ভালোভাবে ওজু করা। একজন মুমিন মুসলমান ইচ্ছায় হোক কিংবা অনিচ্ছায় প্রতিদিন ৫ বার নামাজের জন্য ওজু করেন। এটি ইসলামের নির্দেশ ও বিধান। তাই এ কথা নিশ্চিত করেই বলা যায়, কেউ যদি ন্যূনতম ৫ বার ওজু করে তবে সে করোনার ঝুঁকি থেকে অনেকাংশেই মুক্ত থাকবে। মহামারি করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার বিকল্প নেই। বর্তমান সময়ে যেসব অঙ্গের মাধ্যমে মহামারি করোনাভাইরাস বেশি ছড়ায় তা ওজু করার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব ও সহজসাধ্য কাজ। ওজুর যেমন দুনিয়াবি উপকারিতা রয়েছে তেমনি ওজুর পরকালীন উপকারিতায় হাদিসের উপদেশও রয়েছে অনেক। পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার জন্য ওজু করার নির্দেশ এসেছে কুরআনে। আর ৪টি অঙ্গ ভালোভাবে ধোয়ার মাধ্যমে এ ওজু সম্পন্ন করতে হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা নামাজের জন্য দাঁড়াবে তখন তোমরা তোমাদের পুরো মুখ, উভয় হাত কনুইসহ ধুয়ে নাও এবং তোমাদের মাথা মসেহ কর এবং দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধোও।’ (সুরা মায়িদাহ : আয়াত ৬) মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বেঁচে থাকতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও ভালোভাবে হাত ধোয়ার কথাই ঘোষণা করেছে। এটি হচ্ছে করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার প্রধান উপলক্ষ।
আর ইসলামি শরিয়তে ওজু খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল ও নির্দেশ। যার দুনিয়ার উপকারিতা ও পরকালীন জীবনের অনেক ফজিলত ও মর্যাদা ঘোষিত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মানবদেহের যেসব অঙ্গগুলো পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য তাগিদ দিয়েছেন, আল্লাহ তাআলা মুমিন মুসলমানের জন্য তা অনেক আগেই ওজুকে ফরজ ইবাদত হিসেবে সাব্যস্ত করে দিয়েছেন। ওজুর অন্যান্য উপকারিতা বর্ণনায় হাদিসে কিছু বর্ণনা তুলে ধরা হলো- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন কোনো মুমিন বান্দা ওজু করে এবং মুখ ধোয়, তার মুখের গোনাহ পানির সঙ্গে ধুয়ে যায়। যখন কোনো বান্দা হাত ধোয়, তার হাতের গোনাহ পানির সঙ্গে ধুয়ে যায়। এমনিভাবে যখন ওজু শেষ করেন তখন ওই ব্যক্তি বেগোনাহ মাসুম হয়ে যায়।’ (তিরমিজি) অন্য হাদিসে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন, ‘কেয়ামতের দিন যখন আমার উম্মতকে ডাকা হবে, তখন ওজুর কারণে তাদের হাত, পা ও মুখ নূরের আলোতে চমকাতে থাকবে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যার সামর্থ্য আছে সে যেন তার নুর বাড়িয়ে নেয়।’ (বুখারি) হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা জানতে চাইলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এত উম্মতের মধ্যে হাশরের দিন আপনার উম্মতকে কীভাবে চিনতে পারবেন? উত্তরে তিনি বললেন, ‘ওজুর কারণে আমার উম্মতের হাত, পা, মুখ, মাথা নুরের আলোয় চমকাতে থাকবে। অন্য কোনো নবির উম্মতের এমনটি হবে না।’ (মুসনাদে আহমাদ)
সুতরাং মহামারি করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে নিয়মিত ওজু করার মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা জরুরি। এতে একদিকে যেমন মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাব ও জীবাণু থেকে বেঁচে থাকা যাবে, অন্যদিকে তা হবে ইবাদত-বন্দেগির একটি অংশ। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মহামারি করোনার ভয়াবহ সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে বেশি বেশি ওজু করার মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার তাওফিক দান করুন। ওজুর ওসিলায় মহামারি করোনা থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ওজুর আমল খুবই জরুরি

আপলোড টাইম : ০৯:০৩:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ জুন ২০২০

ধর্ম প্রতিবেদন:
মহামারি করোনা থেকে মুক্ত থাকতে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, পিপিই কত কিছুই না পরছে মানুষ। এ সব কিছুই কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সবার জন্য প্রাথমিকভাবে ঘোষণা করেনি। যে জিনিসটি সবার আগে এ সংস্থাটি ঘোষণা করেছে তা হলো- ‘নিয়মিত ভালোভাবে হাত ধোয়া।’ তাদের ঘোষণা অনুযায়ী সবচেয়ে ভালো হয় অ্যালকোহলসমৃদ্ধ তরল ব্যবহার করা, যাতে হাত জীবাণুমুক্ত করা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনার সঙ্গে ইসলামের একটি আমল কার্যকরীভাবেই মিলে যায়। তাহলো ভালোভাবে ওজু করা। একজন মুমিন মুসলমান ইচ্ছায় হোক কিংবা অনিচ্ছায় প্রতিদিন ৫ বার নামাজের জন্য ওজু করেন। এটি ইসলামের নির্দেশ ও বিধান। তাই এ কথা নিশ্চিত করেই বলা যায়, কেউ যদি ন্যূনতম ৫ বার ওজু করে তবে সে করোনার ঝুঁকি থেকে অনেকাংশেই মুক্ত থাকবে। মহামারি করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার বিকল্প নেই। বর্তমান সময়ে যেসব অঙ্গের মাধ্যমে মহামারি করোনাভাইরাস বেশি ছড়ায় তা ওজু করার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব ও সহজসাধ্য কাজ। ওজুর যেমন দুনিয়াবি উপকারিতা রয়েছে তেমনি ওজুর পরকালীন উপকারিতায় হাদিসের উপদেশও রয়েছে অনেক। পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার জন্য ওজু করার নির্দেশ এসেছে কুরআনে। আর ৪টি অঙ্গ ভালোভাবে ধোয়ার মাধ্যমে এ ওজু সম্পন্ন করতে হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা নামাজের জন্য দাঁড়াবে তখন তোমরা তোমাদের পুরো মুখ, উভয় হাত কনুইসহ ধুয়ে নাও এবং তোমাদের মাথা মসেহ কর এবং দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধোও।’ (সুরা মায়িদাহ : আয়াত ৬) মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বেঁচে থাকতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও ভালোভাবে হাত ধোয়ার কথাই ঘোষণা করেছে। এটি হচ্ছে করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার প্রধান উপলক্ষ।
আর ইসলামি শরিয়তে ওজু খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল ও নির্দেশ। যার দুনিয়ার উপকারিতা ও পরকালীন জীবনের অনেক ফজিলত ও মর্যাদা ঘোষিত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মানবদেহের যেসব অঙ্গগুলো পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য তাগিদ দিয়েছেন, আল্লাহ তাআলা মুমিন মুসলমানের জন্য তা অনেক আগেই ওজুকে ফরজ ইবাদত হিসেবে সাব্যস্ত করে দিয়েছেন। ওজুর অন্যান্য উপকারিতা বর্ণনায় হাদিসে কিছু বর্ণনা তুলে ধরা হলো- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন কোনো মুমিন বান্দা ওজু করে এবং মুখ ধোয়, তার মুখের গোনাহ পানির সঙ্গে ধুয়ে যায়। যখন কোনো বান্দা হাত ধোয়, তার হাতের গোনাহ পানির সঙ্গে ধুয়ে যায়। এমনিভাবে যখন ওজু শেষ করেন তখন ওই ব্যক্তি বেগোনাহ মাসুম হয়ে যায়।’ (তিরমিজি) অন্য হাদিসে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন, ‘কেয়ামতের দিন যখন আমার উম্মতকে ডাকা হবে, তখন ওজুর কারণে তাদের হাত, পা ও মুখ নূরের আলোতে চমকাতে থাকবে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যার সামর্থ্য আছে সে যেন তার নুর বাড়িয়ে নেয়।’ (বুখারি) হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা জানতে চাইলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এত উম্মতের মধ্যে হাশরের দিন আপনার উম্মতকে কীভাবে চিনতে পারবেন? উত্তরে তিনি বললেন, ‘ওজুর কারণে আমার উম্মতের হাত, পা, মুখ, মাথা নুরের আলোয় চমকাতে থাকবে। অন্য কোনো নবির উম্মতের এমনটি হবে না।’ (মুসনাদে আহমাদ)
সুতরাং মহামারি করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে নিয়মিত ওজু করার মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা জরুরি। এতে একদিকে যেমন মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাব ও জীবাণু থেকে বেঁচে থাকা যাবে, অন্যদিকে তা হবে ইবাদত-বন্দেগির একটি অংশ। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মহামারি করোনার ভয়াবহ সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে বেশি বেশি ওজু করার মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার তাওফিক দান করুন। ওজুর ওসিলায় মহামারি করোনা থেকে হেফাজত করুন। আমিন।