ইপেপার । আজমঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

এ.আর হাসপাতালের পরিচালক ডা. রফিউদ্দীন রফিকের বিরুদ্ধে মামলা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৪৬:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ নভেম্বর ২০১৭
  • / ৪৯৯ বার পড়া হয়েছে

সার্জারি বিশেষজ্ঞ না হয়েও প্রতারণামূলক প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশন : নবজাতকের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক: সার্জারি বিশেষজ্ঞ না হয়েও প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশন ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় চুয়াডাঙ্গার এআর হাসপাতালের পরিচালক ডা. রফিউদ্দিন রফিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু হয়েছে। ডা. রফিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ না হয়েও গত ১ আগস্ট এক প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশন করেন। প্রসূতি অপারেশনের মাধ্যমে পূত্র সন্তান প্রসব করেন। চিকিৎসকের অদক্ষতার কারণে অপারেশনের মাধ্যমে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। তার চারদিন পরেই মারা যায় নবজাতক। সার্জারি চিকিৎসক সেজে প্রতারণামূলক অপারেশন ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় এআর হাসপাতালের পরিচালক ডা. রফিককে আসামী করে গত ৩ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গা সদর থানার বিজ্ঞ আমলি আদালতে (১) একটি মামলা দায়ের করেন আলমডাঙ্গার পারলক্ষ্মীপুরের মৃত পটল ম-লের ছেলে আব্দুল লতিফ। পরে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসিকে এফআইআর হিসেবে গ্রহন করার নির্দেশ দেন বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট। গত ১১ অক্টোবর আদেশটি সদর থানায় পৌছায়। তবে দীর্ঘ একমাস পর গতকাল শনিবার রাতে কোর্ট পিটিশনটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে সদর থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু হয়েছে। মামলায় আসামী করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গার থানা কাউন্সিলপাড়ার হাবিবুর রহমান মালিতার ছেলে এ.আর হাসপাতালের পরিচালক ডা. রফিউদ্দিন রফিক। মামলা নং-১৩, তারিখ- ৪ নভেম্বর ২০১৭ ইং। মামলার ধারা: ৪১৭/৪১৮/৪১৯/৩৮৫/৪২৭/৩৪ দ-বিধি।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১ আগস্ট প্রসব বেদনা নিয়ে চুয়াডাঙ্গা হাসপাতাল সড়কের এআর হাসপাতালে যান আলমডাঙ্গার পল্লি পারলক্ষ্মীপুর গ্রামের আব্দুল লতিফের স্ত্রী মহিমা খাতুন। সেখানে গেলে রোগীর পরিক্ষা নিরিক্ষা শেষে ডা. রাফিউদ্দিন রফিক বলেন, দ্রুত সিজার করাতে হবে, নইলে বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে যাবে। এ সময় মহিমা খাতুনের স্বামী লতিফ সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. তারিক হাসান শাহীনের দিয়ে সিজার করাতে চাইলে, ডা. রফিক নিজেকে সার্জিক্যাল বিশেষজ্ঞ বলে পরিচয় দেন। নিজে সার্জিক্যাল বিশেষজ্ঞ সেজে রোগী মহিমার সিজার করাতে ৬ হাজার টাকা দাবি করেন তিনি। তার কথা বিশ্বাস করে সেখানেই স্ত্রীর অপারেশন করাতে রাজি হন লতিফ। পরে সেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পূত্র সন্তান প্রসব করেন মহিমা। চিকিৎসকের অদক্ষতার কারণে প্রসুতির নাভির সাথে সন্তানের পা জড়িয়ে যাওয়ায় গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ভূমিষ্ট হয় পুত্র সন্তান। এর চার দিন পর মারা যায় নবজাতক। পরে রোগীকে ছাড়পত্র দিয়ে বাড়ি ফিরতে বলেন ডা. রফিক। যন্ত্রণা নিয়েই বাড়ি ফিরতে হয়। বাড়ি ফিরেও যন্ত্রণা যায়নি, উপরন্ত অপারেশনের ক্ষতস্থান থেকে পুঁজ বের হতে শুরু করে। এরপর গত ৭ আগস্ট আবারও এআর হাসপাতালে যান রোগী। ওই সময় ডা. রফিক বিভিন্ন পরিক্ষার জন্য রোগীর স্বজনের নিকট ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। এতে প্রতিবাদ করলে তিনি বলেন, টাকা না দিলে রোগীর কোন পরিক্ষা করা হবেনা, ফলে সে মারা যেতে পারে। একথা শুনে একপ্রকার বাধ্য হয়েই ১০ হাজার টাকা প্রদান করেন লতিফ। পরে রোগীর পরিক্ষা নিরিক্ষা করে ভালোমন্দ খাওয়ানোর পরামর্শ দেন ডা. রফিক।
এদিকে, ডা. রফিকের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে রোগীর স্বজনরা জানতে পারে, ডা. রাফিউদ্দিন রফিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ নন। তিনি সার্জারি বিশেষজ্ঞের রুপ ধারণ করে প্রতারণামূলক রোগীর সিজার করেন। তিনি শুধুমাত্র এমবিবিএস ডিগ্রীধারী জেনারেল প্রাকটিশনার। এ বিষয়ে সন্দেহ হলে গত ৯ আগস্ট, ২৪ আগস্ট ও ১৯ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জারি কনসালটেন্ট ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়নের নিকট এবং ১৬ সেপ্টেম্বর ডা. জিন্নাতুল আরার নিকট চিকিৎসা নেন রোগী মহিমা। এসময় ডা. নয়নের কাছে বিস্তারিত বলেন রোগী মহিমা। চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে বলেন, আবারও অস্ত্রোপচার করতে হতে পারে। ভুল অপারেশনের কারণে রোগীর সন্তানের নাড়িতে ইনফেকশন হয়েছে। পরে ডা. নয়ন একপর্যায়ে রোগীর সেলাই কেটে ক্ষত স্থান থেকে পুঁজ বের করে দেন এবং নিয়মিত ড্রেসিং করার পরামর্শ দেন।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, রোগী মহিমার প্রাণহানী ঘটতে পারে তা জানা সত্বেও ডা. রফিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ সেজে প্রতারণামূলক ভুল অপারেশন করেন। একইসাথে জীবনহানীর ভয় দেখিয়ে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে জোরপূর্বক টাকা আদায় করেন। ডা. রফিকের এরুপ কর্মকান্ডের ফলে রোগীর জীবন বাঁচানোর তাগিদে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিয়ে তাদের আনুমানিক দেড় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। এ ঘটনায় গত ৩ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গা সদর থানার বিজ্ঞ আমলি আদালতে (১) একটি মামলা দায়ের করেন রোগী মহিমা খাতুনের স্বামী আব্দুল লতিফ।
এ বিষয়ে এআর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রাফিউদ্দিন রফিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সিজার আমি করিনি। করেছেন ডা. তারিক হাসান শাহিন। এ সময় তিনি ডা. শাহিনের স্বাক্ষর করা প্রেসক্রিপশনও দেখান। এদিকে, ডা. তারিক হাসান শাহিনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ওই ধরনের কোনো রোগীর সিজার করেছি কি-না তা মনে নেই। তাছাড়া আমি এআর হাসপাতালে কোন অপারেশন করি না।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

এ.আর হাসপাতালের পরিচালক ডা. রফিউদ্দীন রফিকের বিরুদ্ধে মামলা

আপলোড টাইম : ১১:৪৬:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ নভেম্বর ২০১৭

সার্জারি বিশেষজ্ঞ না হয়েও প্রতারণামূলক প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশন : নবজাতকের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক: সার্জারি বিশেষজ্ঞ না হয়েও প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশন ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় চুয়াডাঙ্গার এআর হাসপাতালের পরিচালক ডা. রফিউদ্দিন রফিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু হয়েছে। ডা. রফিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ না হয়েও গত ১ আগস্ট এক প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশন করেন। প্রসূতি অপারেশনের মাধ্যমে পূত্র সন্তান প্রসব করেন। চিকিৎসকের অদক্ষতার কারণে অপারেশনের মাধ্যমে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। তার চারদিন পরেই মারা যায় নবজাতক। সার্জারি চিকিৎসক সেজে প্রতারণামূলক অপারেশন ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় এআর হাসপাতালের পরিচালক ডা. রফিককে আসামী করে গত ৩ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গা সদর থানার বিজ্ঞ আমলি আদালতে (১) একটি মামলা দায়ের করেন আলমডাঙ্গার পারলক্ষ্মীপুরের মৃত পটল ম-লের ছেলে আব্দুল লতিফ। পরে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসিকে এফআইআর হিসেবে গ্রহন করার নির্দেশ দেন বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট। গত ১১ অক্টোবর আদেশটি সদর থানায় পৌছায়। তবে দীর্ঘ একমাস পর গতকাল শনিবার রাতে কোর্ট পিটিশনটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে সদর থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু হয়েছে। মামলায় আসামী করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গার থানা কাউন্সিলপাড়ার হাবিবুর রহমান মালিতার ছেলে এ.আর হাসপাতালের পরিচালক ডা. রফিউদ্দিন রফিক। মামলা নং-১৩, তারিখ- ৪ নভেম্বর ২০১৭ ইং। মামলার ধারা: ৪১৭/৪১৮/৪১৯/৩৮৫/৪২৭/৩৪ দ-বিধি।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১ আগস্ট প্রসব বেদনা নিয়ে চুয়াডাঙ্গা হাসপাতাল সড়কের এআর হাসপাতালে যান আলমডাঙ্গার পল্লি পারলক্ষ্মীপুর গ্রামের আব্দুল লতিফের স্ত্রী মহিমা খাতুন। সেখানে গেলে রোগীর পরিক্ষা নিরিক্ষা শেষে ডা. রাফিউদ্দিন রফিক বলেন, দ্রুত সিজার করাতে হবে, নইলে বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে যাবে। এ সময় মহিমা খাতুনের স্বামী লতিফ সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. তারিক হাসান শাহীনের দিয়ে সিজার করাতে চাইলে, ডা. রফিক নিজেকে সার্জিক্যাল বিশেষজ্ঞ বলে পরিচয় দেন। নিজে সার্জিক্যাল বিশেষজ্ঞ সেজে রোগী মহিমার সিজার করাতে ৬ হাজার টাকা দাবি করেন তিনি। তার কথা বিশ্বাস করে সেখানেই স্ত্রীর অপারেশন করাতে রাজি হন লতিফ। পরে সেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পূত্র সন্তান প্রসব করেন মহিমা। চিকিৎসকের অদক্ষতার কারণে প্রসুতির নাভির সাথে সন্তানের পা জড়িয়ে যাওয়ায় গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ভূমিষ্ট হয় পুত্র সন্তান। এর চার দিন পর মারা যায় নবজাতক। পরে রোগীকে ছাড়পত্র দিয়ে বাড়ি ফিরতে বলেন ডা. রফিক। যন্ত্রণা নিয়েই বাড়ি ফিরতে হয়। বাড়ি ফিরেও যন্ত্রণা যায়নি, উপরন্ত অপারেশনের ক্ষতস্থান থেকে পুঁজ বের হতে শুরু করে। এরপর গত ৭ আগস্ট আবারও এআর হাসপাতালে যান রোগী। ওই সময় ডা. রফিক বিভিন্ন পরিক্ষার জন্য রোগীর স্বজনের নিকট ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। এতে প্রতিবাদ করলে তিনি বলেন, টাকা না দিলে রোগীর কোন পরিক্ষা করা হবেনা, ফলে সে মারা যেতে পারে। একথা শুনে একপ্রকার বাধ্য হয়েই ১০ হাজার টাকা প্রদান করেন লতিফ। পরে রোগীর পরিক্ষা নিরিক্ষা করে ভালোমন্দ খাওয়ানোর পরামর্শ দেন ডা. রফিক।
এদিকে, ডা. রফিকের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে রোগীর স্বজনরা জানতে পারে, ডা. রাফিউদ্দিন রফিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ নন। তিনি সার্জারি বিশেষজ্ঞের রুপ ধারণ করে প্রতারণামূলক রোগীর সিজার করেন। তিনি শুধুমাত্র এমবিবিএস ডিগ্রীধারী জেনারেল প্রাকটিশনার। এ বিষয়ে সন্দেহ হলে গত ৯ আগস্ট, ২৪ আগস্ট ও ১৯ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জারি কনসালটেন্ট ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়নের নিকট এবং ১৬ সেপ্টেম্বর ডা. জিন্নাতুল আরার নিকট চিকিৎসা নেন রোগী মহিমা। এসময় ডা. নয়নের কাছে বিস্তারিত বলেন রোগী মহিমা। চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে বলেন, আবারও অস্ত্রোপচার করতে হতে পারে। ভুল অপারেশনের কারণে রোগীর সন্তানের নাড়িতে ইনফেকশন হয়েছে। পরে ডা. নয়ন একপর্যায়ে রোগীর সেলাই কেটে ক্ষত স্থান থেকে পুঁজ বের করে দেন এবং নিয়মিত ড্রেসিং করার পরামর্শ দেন।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, রোগী মহিমার প্রাণহানী ঘটতে পারে তা জানা সত্বেও ডা. রফিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ সেজে প্রতারণামূলক ভুল অপারেশন করেন। একইসাথে জীবনহানীর ভয় দেখিয়ে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে জোরপূর্বক টাকা আদায় করেন। ডা. রফিকের এরুপ কর্মকান্ডের ফলে রোগীর জীবন বাঁচানোর তাগিদে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিয়ে তাদের আনুমানিক দেড় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। এ ঘটনায় গত ৩ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গা সদর থানার বিজ্ঞ আমলি আদালতে (১) একটি মামলা দায়ের করেন রোগী মহিমা খাতুনের স্বামী আব্দুল লতিফ।
এ বিষয়ে এআর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রাফিউদ্দিন রফিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সিজার আমি করিনি। করেছেন ডা. তারিক হাসান শাহিন। এ সময় তিনি ডা. শাহিনের স্বাক্ষর করা প্রেসক্রিপশনও দেখান। এদিকে, ডা. তারিক হাসান শাহিনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ওই ধরনের কোনো রোগীর সিজার করেছি কি-না তা মনে নেই। তাছাড়া আমি এআর হাসপাতালে কোন অপারেশন করি না।