ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

এবার ফ্যানের উৎপাদন-বিক্রয় বন্ধ হচ্ছে পাকিস্তানে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৫৪:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ ২০২৩
  • / ৪৫ বার পড়া হয়েছে

বিশ্ব প্রতিবেদন:

ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে টালমাটাল পাকিস্তানে এবার বন্ধ হতে যাচ্ছে গতানুগতিক বৈদ্যুতিক সিলিং ফ্যানের উৎপাদন ও বিক্রয়। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।

জাতীয় বিদ্যুৎ সংরক্ষণ নীতির অংশ হিসেবে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। আগামী ১ জুন থেকে কার্যকর করা হবে এই সিদ্ধান্ত।

বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে পাকিস্তানের দৈনিক দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কিছুদিন আগে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে গতানুগতিক ফ্যানের পরিবর্তে এনার্জিসেভিং ফ্যানের উৎপাদন ও বিক্রির সুপারিশ করেছিল। সুপারিশে বলা হয়েছিল, গতানুগতিক একটি সিলিং ফ্যানগুলো ২৫০ ওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ কনজিউম করে, অন্যদিকে একটি অ্যানার্জিসেভিং ফ্যান চালাতে ব্যয় হয় মাত্র ৮০ ওয়াট বিদ্যুৎ।

সুপারিশটি যাচাই-বাছাই শেষে মঙ্গলবার সেটির অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। সেই সঙ্গে দেশজুড়ে বিদ্যুৎসাশ্রীয় ফ্যানের উৎপাদন ও বিক্রয়ের ব্যাপারটি তদারকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পাকিস্তানের বিদ্যুৎ সরবরাহ সংক্রান্ত সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা ন্যাশনাল এনার্জি এফিসিয়েন্সি অ্যান্ড কনভঅরশন অথরিটি (এনইইসিএ)। মন্ত্রিপরিষদসূত্রে জানা গেছে, শিগগিরই এ সম্পর্কিত লিখিত নির্দেশপত্র ইস্যু করবে সরকার।

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, স্টার রেটিং ক্যাটাগরির প্রথম স্তরে থাকা ফ্যান এবং ৮০ ওয়াটের কম বিদ্যুৎ খরচ করে এমন ফ্যান দেশে উৎপাদন ও বিক্রির অনুমতি দেওয়া হবে। এসির ইনভার্টারসহ ফ্যানগুলো এই ক্যাগাটরির, এগুলো প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ ওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে।

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্যান উৎপাদনের জন্য পাকিস্তানের ফ্যান উৎপাদন শিল্পের প্রতিনিধিত্বকারী সমিতির সঙ্গে পরামর্শ করা হবে, যেন বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাল্বের মতোই এই শিল্পকেও উন্নত করা যায়। ক্রয়ক্ষমতার ব্যাপারটি বিবেচনায় রেখে প্রতিটি পরিবারকে কিস্তিতে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্যান দেওয়ার প্রস্তাবও বিবেচনা করা হচ্ছে।

পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত প্রতিদিন কমছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের ৩ ফেব্রুয়ারি দেওয়া হিসাব অনুসারে, চলতি ২০২৩ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ১৭ কোটি ডলার কমে গেছে। এখন এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯০ কোটি ডলার।

পাকিস্তান আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ঋণ সহায়তা চায়। এ নিয়ে কথাবার্তাও শুরু হয়েছিল। তবে বর্তমানে সেই আলোচনা ‘ঝুলে যাওয়ায়’ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এ অর্থের ছাড় এখনো হয়নি।

পাকিস্তানের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারের সঙ্গে আলোচনায় অগ্রাধিকার পরিবর্তন করেছে আইএমএফ। ফলে, দু’পক্ষের ঐকমত্য আবারও পিছিয়ে যাচ্ছে। এই খবর ছড়িয়ে পড়ায় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দেশটির শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। সেদিন সকালে দেশটির প্রধান শেয়ার সূচক কেএসই-১০০ সূচক ৪৩৫ দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্ট বা ১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ কমেছে।

এসব কারণে পাকিস্তান ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। পাকিস্তানি রুপির দাম পড়তে পড়তে এখন ডলারপ্রতি ২৬৫ রুপিতে পৌঁছেছে । বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ তলানিতে ঠেকেছে। ১৯৯৮ সালের পর থেকে এখন সর্বনিম্ন স্তরে নেমে এসেছে রিজার্ভ।

রিজার্ভ নেমে যাওয়ায় পাকিস্তানে এখন নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে খাদ্য-জ্বালানি-বিদ্যুৎসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম। আটা, ডাল, চাল, দুধ—সবকিছুরই দাম এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। ফলে সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে আছেন দেশটির সাধারণ মানুষ।

গত মাসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ জানিয়েছেন, কৃচ্ছ্রসাধনের অংশ হিসেবে পাকিস্তানের মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের ভাতা ও ভ্রমণ ব্যয় কাটছাঁট করছে দেশটির সরকার। তাঁর সরকার কৃচ্ছ্রসাধন অভিযানের মাধ্যমে বার্ষিক ২০০ বিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি সাশ্রয় করতে চায়।

এমন পরিস্থিতিতে এবার গতানুগতিক ফ্যান উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিল পাকিস্তান।

 

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

এবার ফ্যানের উৎপাদন-বিক্রয় বন্ধ হচ্ছে পাকিস্তানে

আপলোড টাইম : ১১:৫৪:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ ২০২৩

বিশ্ব প্রতিবেদন:

ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে টালমাটাল পাকিস্তানে এবার বন্ধ হতে যাচ্ছে গতানুগতিক বৈদ্যুতিক সিলিং ফ্যানের উৎপাদন ও বিক্রয়। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।

জাতীয় বিদ্যুৎ সংরক্ষণ নীতির অংশ হিসেবে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। আগামী ১ জুন থেকে কার্যকর করা হবে এই সিদ্ধান্ত।

বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে পাকিস্তানের দৈনিক দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কিছুদিন আগে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে গতানুগতিক ফ্যানের পরিবর্তে এনার্জিসেভিং ফ্যানের উৎপাদন ও বিক্রির সুপারিশ করেছিল। সুপারিশে বলা হয়েছিল, গতানুগতিক একটি সিলিং ফ্যানগুলো ২৫০ ওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ কনজিউম করে, অন্যদিকে একটি অ্যানার্জিসেভিং ফ্যান চালাতে ব্যয় হয় মাত্র ৮০ ওয়াট বিদ্যুৎ।

সুপারিশটি যাচাই-বাছাই শেষে মঙ্গলবার সেটির অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। সেই সঙ্গে দেশজুড়ে বিদ্যুৎসাশ্রীয় ফ্যানের উৎপাদন ও বিক্রয়ের ব্যাপারটি তদারকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পাকিস্তানের বিদ্যুৎ সরবরাহ সংক্রান্ত সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা ন্যাশনাল এনার্জি এফিসিয়েন্সি অ্যান্ড কনভঅরশন অথরিটি (এনইইসিএ)। মন্ত্রিপরিষদসূত্রে জানা গেছে, শিগগিরই এ সম্পর্কিত লিখিত নির্দেশপত্র ইস্যু করবে সরকার।

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, স্টার রেটিং ক্যাটাগরির প্রথম স্তরে থাকা ফ্যান এবং ৮০ ওয়াটের কম বিদ্যুৎ খরচ করে এমন ফ্যান দেশে উৎপাদন ও বিক্রির অনুমতি দেওয়া হবে। এসির ইনভার্টারসহ ফ্যানগুলো এই ক্যাগাটরির, এগুলো প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ ওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে।

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্যান উৎপাদনের জন্য পাকিস্তানের ফ্যান উৎপাদন শিল্পের প্রতিনিধিত্বকারী সমিতির সঙ্গে পরামর্শ করা হবে, যেন বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাল্বের মতোই এই শিল্পকেও উন্নত করা যায়। ক্রয়ক্ষমতার ব্যাপারটি বিবেচনায় রেখে প্রতিটি পরিবারকে কিস্তিতে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্যান দেওয়ার প্রস্তাবও বিবেচনা করা হচ্ছে।

পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত প্রতিদিন কমছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের ৩ ফেব্রুয়ারি দেওয়া হিসাব অনুসারে, চলতি ২০২৩ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ১৭ কোটি ডলার কমে গেছে। এখন এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯০ কোটি ডলার।

পাকিস্তান আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ঋণ সহায়তা চায়। এ নিয়ে কথাবার্তাও শুরু হয়েছিল। তবে বর্তমানে সেই আলোচনা ‘ঝুলে যাওয়ায়’ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এ অর্থের ছাড় এখনো হয়নি।

পাকিস্তানের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারের সঙ্গে আলোচনায় অগ্রাধিকার পরিবর্তন করেছে আইএমএফ। ফলে, দু’পক্ষের ঐকমত্য আবারও পিছিয়ে যাচ্ছে। এই খবর ছড়িয়ে পড়ায় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দেশটির শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। সেদিন সকালে দেশটির প্রধান শেয়ার সূচক কেএসই-১০০ সূচক ৪৩৫ দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্ট বা ১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ কমেছে।

এসব কারণে পাকিস্তান ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। পাকিস্তানি রুপির দাম পড়তে পড়তে এখন ডলারপ্রতি ২৬৫ রুপিতে পৌঁছেছে । বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ তলানিতে ঠেকেছে। ১৯৯৮ সালের পর থেকে এখন সর্বনিম্ন স্তরে নেমে এসেছে রিজার্ভ।

রিজার্ভ নেমে যাওয়ায় পাকিস্তানে এখন নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে খাদ্য-জ্বালানি-বিদ্যুৎসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম। আটা, ডাল, চাল, দুধ—সবকিছুরই দাম এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। ফলে সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে আছেন দেশটির সাধারণ মানুষ।

গত মাসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ জানিয়েছেন, কৃচ্ছ্রসাধনের অংশ হিসেবে পাকিস্তানের মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের ভাতা ও ভ্রমণ ব্যয় কাটছাঁট করছে দেশটির সরকার। তাঁর সরকার কৃচ্ছ্রসাধন অভিযানের মাধ্যমে বার্ষিক ২০০ বিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি সাশ্রয় করতে চায়।

এমন পরিস্থিতিতে এবার গতানুগতিক ফ্যান উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিল পাকিস্তান।