ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন : নবীন-প্রবীণে দূরত্ব বাড়ছে আওয়ামী লীগে মেহেরপুরে প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা : আসতে পারে নতুন মুখ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:০৮:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ অগাস্ট ২০১৭
  • / ৬৩৩ বার পড়া হয়েছে

ুুুুসমীকরণ ডেস্ক: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগে নবীন ও প্রবীণ নেতাদের মধ্যে এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। কিছু এলাকায় সংঘর্ষ ও মামলার ঘটনাও ঘটেছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, নির্বাচনের আগেই নবীন ও প্রবীণ নেতাদের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনা হবে। এজন্য একাধিক কমিটি কাজও শুরু করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান একঝাঁক তরুণ মুখ। এ লক্ষ্যে মাঠে নেমেছেন শতাধিক সম্ভাব্য তরুণ প্রার্থী। রুটিন করে এরা নিজ আসনে সময় দিচ্ছেন যে যার মতো করে। অনেকে স্থানীয় সংসদ সদস্যের দুর্বলতা কাজে লাগাতে ব্যস্ত। এতে দলের মধ্যে নবীন প্রতিদ্বন্দ্বিতার সঙ্গে রীতিমতো মনস্তাত্ত্বিক লড়াই চলছে স্থানীয় এমপিদের। কখনো কখনো তা সংঘর্ষেও রূপ নিচ্ছে। কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সংসদ সদস্য আব্দুর রউফ পুনরায় নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে জোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। ওই আসনে তার ভাগিনা ও কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের প্রযুক্তি-বিষয়ক সম্পাদক সুফী ফারুক ইবনে আবু বকরও মনোনয়ন পেতে চাইছেন। গত ৬ ফেব্রুয়ারি সুফী ফারুকের সমর্থকরা সংসদ সদস্যের সমর্থকদের হাতে আক্রান্ত হন। এ ঘটনায় কুমারখালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়েছে। সুফী ফারুক ইবনে আবু বকর বলেন, নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর কিছুটা প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছিলাম। পরবর্তীতে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে সেই সমস্যার সমাধান করা হয়েছে।
তরুণ প্রার্থীর সম্ভাবনা রয়েছে এমন আরেকটি আসন রাজবাড়ী-২ (পাংশা-কালুখালী-বালিয়াকান্দি)। অভিযোগ রয়েছে, এ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী শেখ সোহেল রানা টিপুর পক্ষে প্রচারণা চালাতে গিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যের রোষানলে পড়েছেন ঢাকার তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য জাহিদুল ইসলাম সবুজ। বর্তমান এমপির অনুসারীরা সবুজকে বেধড়ক পিটিয়ে পুলিশে দেয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। সবুজের বাবা সোহরাব হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলে সবুজ টিপুর সমর্থক হওয়ায় গত ৩০ জুলাই ছাত্রলীগের ছেলেরা তাকে মারধর করে এমপির বাড়িতে আটকে রাখে। পরে সেখানে গিয়ে এমপিকে আমার ছেলের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেছিলেন, দেখি কী করা যায়! এর কিছুক্ষণ পর ওসিকে ডেকে ছেলেকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেন। আমার সামনে দিয়ে ছেলেকে পুলিশ বিনা কারণে ধরে নিয়ে গেল।’ এ প্রসঙ্গে শেখ সোহেল রানা টিপু বলেন, সমর্থক ও নেতা-কর্মী বিবেচনায় আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। সুতরাং মনোনয়ন লাভের জন্য প্রতিযোগিতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একজন মনোনয়নপ্রত্যাশীকে প্রতিপক্ষ ভেবে মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানির মতো ঘটনা ঘটেছে। নবীন হিসেবে প্রবীণদের কাছে এটি অনাকাঙ্খিত। কুষ্টিয়া-৪ ও রাজবাড়ী-২ আসনের মতো আরো কিছু আসনেও নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে প্রবীণ নেতাদের প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন নবীনরা।
চট্টগ্রাম-৬ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন বলেন, রাজনীতি করতে গিয়ে বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র অথবা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হলে সেটি স্বাভাবিক। কিন্তু নিজ দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হলে সেটি দুঃখজনক। জ্যেষ্ঠ নেতাদের এ ধরনের অসহযোগিতামূলক কর্মকা- নতুনদের হতাশার দিকে ঠেলে দেয়। আমরা ষড়যন্ত্র নয়, সবার ঐক্যবদ্ধ চেষ্টায় দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। এখন প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দেন— আমরা সেটিই মেনে নেব।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি আসছে ধরে নিয়েই নির্বাচনী ছক কষছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে দলীয় ফোরামে তা উল্লেখ করেছেন। সংসদ সদস্য ও দলীয় নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে এবং তা তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। এমপিদের নিজ যোগ্যতা দিয়ে উঠে আসতে হবে। যাদের ইমেজ খারাপ, তাদের মনোনয়ন দেয়া হবে না। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের এমন বক্তব্যের পর বিতর্কিত এমপিরা আতঙ্কে রয়েছেন। এসব এমপির আসনে ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতাসহ পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির তরুণ নেতারা মাঠে নেমে পড়েছেন। মনোনয়ন পেতে লবিংসহ নানা ধরনের কৌশল নিয়ে কাজ করছেন তারা।
আওয়ামী লীগের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ একাধিক জরিপ পরিচালনা করেছে। এসব জরিপে দেখা যাচ্ছে, দলীয় শতাধিক সংসদ সদস্য এলাকায় জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহল এসব বিতর্কিত সংসদ সদস্যকে বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত তরুণ এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মনোনয়ন দেয়ার চিন্তা করছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বেশকিছু জেলার একাধিক আসনে এবার প্রার্থিতায় পরিবর্তন আসতে পারে। এসব আসনে প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত তরুণ সাবেক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগ নেতা ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত পেশাজীবীরা ভালো অবস্থায় রয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা এবং আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন (চট্টগ্রাম-১৪), বিশ্বনাথ সরকার বিটু (রংপুর-২), অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম (রংপুর-৩), ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন (গাইবান্ধা-৫), সাখাওয়াত হোসেন শফিক (বগুড়া-৭), ইঞ্জিনিয়ার আকতারুল আলম (নওগাঁ-২), মাহমুদ রেজা (নওগাঁ-২), ইমন আহমেদ (মেহেরপুর-১), রতন কুমার সাহা (নাটোর-১), কোহেলি কুদ্দুস মুক্তি (নাটোর-৪), নড়াইল-১ আসনে আওয়ামী লীগের নারী সংসদ সদস্য ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী, অ্যাডভোকেট রবিউল আলম বুদু (পাবনা-৩), রফিকুল ইসলাম লিটন (পাবনা-৩), অ্যাডভোকেট এবিএম আহসানুল হক আহসান (যশোর-৩), কামরুল হাসান বারী (যশোর-৫), সাইফুজ্জামান শিখর (মাগুরা-১), পংকজ সাহা (মাগুরা-১), ড. ওয়াহিদুর রহমান টিপু (মাগুরা-২), বদিউজ্জামান সোহাগ (বাগেরহাট-৪), সাংবাদিক নেতা এনায়েত ফেরদৌস (খুলনা-৪), আকতারুজ্জামান বাবু (খুলনা-৬), আব্দুল মালেক (পটুয়াখালী-২), জিয়াউল হক জুয়েল (পটুয়াখালী-২), শাহে আলম (বরিশাল-২), এসএম মশিউর রহমান শিহাব (বরগুনা-১), মারুফা আক্তার পপি (জামালপুর), অসীম কুমার উকিল (নেত্রকোনা-৩), শফি আহমেদ (নেত্রকোনা-৪), আলমগীর হাসান (নেত্রকোনা-৩), অজয় কর খোকন (কিশোরগঞ্জ-৫), গোলাম সরোয়ার কবীর (মুন্সীগঞ্জ-১), ইঞ্জিনিয়ার কাজী আবদুল ওয়াহিদ (মুন্সীগঞ্জ-২), ফয়সাল বিপ্লব (মুন্সীগঞ্জ-৩), পনিরুজ্জামান তরুণ (ঢাকা-১), ড. আওলাদ হোসেন (ঢাকা-৪), অ্যাডভোকেট মোল্লা আবু কাউসার (ঢাকা-৮), গোলাম রব্বানী চিনু (ঢাকা-১৩), ইকবাল হোসেন সবুজ (গাজীপুর-৩), এএইচ মাসুদ দুলাল (নারায়ণগঞ্জ-৩), অ্যাডভোকেট রিয়াজুল কবীর কাউসার (নরসিংদী-৫), শেখ সোহেল রানা টিপু (রাজবাড়ী-১), ড. আবদুস সোবহান গোলাপ (মাদারীপুর-৩), আনোয়ার হোসেন (মাদারীপুর-৩), দেলোয়ার হোসেন (মাদারীপুর-৩), ইকবাল হোসেন অপু (শরীয়তপুর-১), একেএম আজম খান (পিরোজপুর-১), এনামুল হক শামীম (শরীয়তপুর-২), বাহাদুর বেপারী (শরীয়তপুর-৩), মঈনউদ্দিন মঈন (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২), আলামিনুল হক আলামিন (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫), সুজিত রায় নন্দী (চাঁদপুর-৩), নারী সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নূরজাহান বেগম মুক্তা (চাঁদপুর-৫), মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন (চট্টগ্রাম-৬), মাইনুদ্দিন হাসান চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১৪), মঞ্জুরুল আলম শাহীন ও জহিরউদ্দীন মাহমুদ লিপটন (ফেনী-৩), সাইফুদ্দীন নাসির (ফেনী-২), এমএ মমিন পাটোয়ারী (লক্ষ্মীপুর-১), আরিফুর রহমান দোলন (ফরিদপুর-১), নাফিউল ইসলাম নাফা (নীলফামারী-৪), রবিউল ইসলাম রবি (ঠাকুরগাঁও-৩), যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক ছাত্রনেতা আনোয়ারুল ইসলাম আনোয়ার (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২) প্রমুখ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন : নবীন-প্রবীণে দূরত্ব বাড়ছে আওয়ামী লীগে মেহেরপুরে প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা : আসতে পারে নতুন মুখ

আপলোড টাইম : ০৫:০৮:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ অগাস্ট ২০১৭

ুুুুসমীকরণ ডেস্ক: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগে নবীন ও প্রবীণ নেতাদের মধ্যে এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। কিছু এলাকায় সংঘর্ষ ও মামলার ঘটনাও ঘটেছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, নির্বাচনের আগেই নবীন ও প্রবীণ নেতাদের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনা হবে। এজন্য একাধিক কমিটি কাজও শুরু করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান একঝাঁক তরুণ মুখ। এ লক্ষ্যে মাঠে নেমেছেন শতাধিক সম্ভাব্য তরুণ প্রার্থী। রুটিন করে এরা নিজ আসনে সময় দিচ্ছেন যে যার মতো করে। অনেকে স্থানীয় সংসদ সদস্যের দুর্বলতা কাজে লাগাতে ব্যস্ত। এতে দলের মধ্যে নবীন প্রতিদ্বন্দ্বিতার সঙ্গে রীতিমতো মনস্তাত্ত্বিক লড়াই চলছে স্থানীয় এমপিদের। কখনো কখনো তা সংঘর্ষেও রূপ নিচ্ছে। কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সংসদ সদস্য আব্দুর রউফ পুনরায় নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে জোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। ওই আসনে তার ভাগিনা ও কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের প্রযুক্তি-বিষয়ক সম্পাদক সুফী ফারুক ইবনে আবু বকরও মনোনয়ন পেতে চাইছেন। গত ৬ ফেব্রুয়ারি সুফী ফারুকের সমর্থকরা সংসদ সদস্যের সমর্থকদের হাতে আক্রান্ত হন। এ ঘটনায় কুমারখালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়েছে। সুফী ফারুক ইবনে আবু বকর বলেন, নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর কিছুটা প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছিলাম। পরবর্তীতে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে সেই সমস্যার সমাধান করা হয়েছে।
তরুণ প্রার্থীর সম্ভাবনা রয়েছে এমন আরেকটি আসন রাজবাড়ী-২ (পাংশা-কালুখালী-বালিয়াকান্দি)। অভিযোগ রয়েছে, এ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী শেখ সোহেল রানা টিপুর পক্ষে প্রচারণা চালাতে গিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যের রোষানলে পড়েছেন ঢাকার তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য জাহিদুল ইসলাম সবুজ। বর্তমান এমপির অনুসারীরা সবুজকে বেধড়ক পিটিয়ে পুলিশে দেয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। সবুজের বাবা সোহরাব হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলে সবুজ টিপুর সমর্থক হওয়ায় গত ৩০ জুলাই ছাত্রলীগের ছেলেরা তাকে মারধর করে এমপির বাড়িতে আটকে রাখে। পরে সেখানে গিয়ে এমপিকে আমার ছেলের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেছিলেন, দেখি কী করা যায়! এর কিছুক্ষণ পর ওসিকে ডেকে ছেলেকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেন। আমার সামনে দিয়ে ছেলেকে পুলিশ বিনা কারণে ধরে নিয়ে গেল।’ এ প্রসঙ্গে শেখ সোহেল রানা টিপু বলেন, সমর্থক ও নেতা-কর্মী বিবেচনায় আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। সুতরাং মনোনয়ন লাভের জন্য প্রতিযোগিতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একজন মনোনয়নপ্রত্যাশীকে প্রতিপক্ষ ভেবে মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানির মতো ঘটনা ঘটেছে। নবীন হিসেবে প্রবীণদের কাছে এটি অনাকাঙ্খিত। কুষ্টিয়া-৪ ও রাজবাড়ী-২ আসনের মতো আরো কিছু আসনেও নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে প্রবীণ নেতাদের প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন নবীনরা।
চট্টগ্রাম-৬ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন বলেন, রাজনীতি করতে গিয়ে বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র অথবা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হলে সেটি স্বাভাবিক। কিন্তু নিজ দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হলে সেটি দুঃখজনক। জ্যেষ্ঠ নেতাদের এ ধরনের অসহযোগিতামূলক কর্মকা- নতুনদের হতাশার দিকে ঠেলে দেয়। আমরা ষড়যন্ত্র নয়, সবার ঐক্যবদ্ধ চেষ্টায় দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। এখন প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দেন— আমরা সেটিই মেনে নেব।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি আসছে ধরে নিয়েই নির্বাচনী ছক কষছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে দলীয় ফোরামে তা উল্লেখ করেছেন। সংসদ সদস্য ও দলীয় নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে এবং তা তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। এমপিদের নিজ যোগ্যতা দিয়ে উঠে আসতে হবে। যাদের ইমেজ খারাপ, তাদের মনোনয়ন দেয়া হবে না। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের এমন বক্তব্যের পর বিতর্কিত এমপিরা আতঙ্কে রয়েছেন। এসব এমপির আসনে ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতাসহ পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির তরুণ নেতারা মাঠে নেমে পড়েছেন। মনোনয়ন পেতে লবিংসহ নানা ধরনের কৌশল নিয়ে কাজ করছেন তারা।
আওয়ামী লীগের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ একাধিক জরিপ পরিচালনা করেছে। এসব জরিপে দেখা যাচ্ছে, দলীয় শতাধিক সংসদ সদস্য এলাকায় জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহল এসব বিতর্কিত সংসদ সদস্যকে বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত তরুণ এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মনোনয়ন দেয়ার চিন্তা করছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বেশকিছু জেলার একাধিক আসনে এবার প্রার্থিতায় পরিবর্তন আসতে পারে। এসব আসনে প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত তরুণ সাবেক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগ নেতা ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত পেশাজীবীরা ভালো অবস্থায় রয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা এবং আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন (চট্টগ্রাম-১৪), বিশ্বনাথ সরকার বিটু (রংপুর-২), অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম (রংপুর-৩), ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন (গাইবান্ধা-৫), সাখাওয়াত হোসেন শফিক (বগুড়া-৭), ইঞ্জিনিয়ার আকতারুল আলম (নওগাঁ-২), মাহমুদ রেজা (নওগাঁ-২), ইমন আহমেদ (মেহেরপুর-১), রতন কুমার সাহা (নাটোর-১), কোহেলি কুদ্দুস মুক্তি (নাটোর-৪), নড়াইল-১ আসনে আওয়ামী লীগের নারী সংসদ সদস্য ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী, অ্যাডভোকেট রবিউল আলম বুদু (পাবনা-৩), রফিকুল ইসলাম লিটন (পাবনা-৩), অ্যাডভোকেট এবিএম আহসানুল হক আহসান (যশোর-৩), কামরুল হাসান বারী (যশোর-৫), সাইফুজ্জামান শিখর (মাগুরা-১), পংকজ সাহা (মাগুরা-১), ড. ওয়াহিদুর রহমান টিপু (মাগুরা-২), বদিউজ্জামান সোহাগ (বাগেরহাট-৪), সাংবাদিক নেতা এনায়েত ফেরদৌস (খুলনা-৪), আকতারুজ্জামান বাবু (খুলনা-৬), আব্দুল মালেক (পটুয়াখালী-২), জিয়াউল হক জুয়েল (পটুয়াখালী-২), শাহে আলম (বরিশাল-২), এসএম মশিউর রহমান শিহাব (বরগুনা-১), মারুফা আক্তার পপি (জামালপুর), অসীম কুমার উকিল (নেত্রকোনা-৩), শফি আহমেদ (নেত্রকোনা-৪), আলমগীর হাসান (নেত্রকোনা-৩), অজয় কর খোকন (কিশোরগঞ্জ-৫), গোলাম সরোয়ার কবীর (মুন্সীগঞ্জ-১), ইঞ্জিনিয়ার কাজী আবদুল ওয়াহিদ (মুন্সীগঞ্জ-২), ফয়সাল বিপ্লব (মুন্সীগঞ্জ-৩), পনিরুজ্জামান তরুণ (ঢাকা-১), ড. আওলাদ হোসেন (ঢাকা-৪), অ্যাডভোকেট মোল্লা আবু কাউসার (ঢাকা-৮), গোলাম রব্বানী চিনু (ঢাকা-১৩), ইকবাল হোসেন সবুজ (গাজীপুর-৩), এএইচ মাসুদ দুলাল (নারায়ণগঞ্জ-৩), অ্যাডভোকেট রিয়াজুল কবীর কাউসার (নরসিংদী-৫), শেখ সোহেল রানা টিপু (রাজবাড়ী-১), ড. আবদুস সোবহান গোলাপ (মাদারীপুর-৩), আনোয়ার হোসেন (মাদারীপুর-৩), দেলোয়ার হোসেন (মাদারীপুর-৩), ইকবাল হোসেন অপু (শরীয়তপুর-১), একেএম আজম খান (পিরোজপুর-১), এনামুল হক শামীম (শরীয়তপুর-২), বাহাদুর বেপারী (শরীয়তপুর-৩), মঈনউদ্দিন মঈন (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২), আলামিনুল হক আলামিন (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫), সুজিত রায় নন্দী (চাঁদপুর-৩), নারী সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নূরজাহান বেগম মুক্তা (চাঁদপুর-৫), মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন (চট্টগ্রাম-৬), মাইনুদ্দিন হাসান চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১৪), মঞ্জুরুল আলম শাহীন ও জহিরউদ্দীন মাহমুদ লিপটন (ফেনী-৩), সাইফুদ্দীন নাসির (ফেনী-২), এমএ মমিন পাটোয়ারী (লক্ষ্মীপুর-১), আরিফুর রহমান দোলন (ফরিদপুর-১), নাফিউল ইসলাম নাফা (নীলফামারী-৪), রবিউল ইসলাম রবি (ঠাকুরগাঁও-৩), যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক ছাত্রনেতা আনোয়ারুল ইসলাম আনোয়ার (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২) প্রমুখ।