ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

একটি ব্রিজ বদলে দেবে কয়েক হাজার মানুষের স্বপ্নযাত্রা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২৯:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২০
  • / ৭৫০ বার পড়া হয়েছে

দামুড়হুদার সাত গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা একটি বাঁশের সাঁকো
নিজস্ব প্রতিবেদক:
একটি বাঁশের সাঁকোতেই আটকে আছে দুই পাশের একাধিক গ্রামের হাজার হাজার মানুষের স্বপ্নযাত্রা। গত দুই দশকে দেশের অবকাঠামো, শিক্ষা, চিকিৎসা ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে ইতিবাচক পরিবর্তন পরিলক্ষিত। শহরগুলো মেগাসিটি আর গ্রামগুলো শহরে পরিবর্তিত হতে শুরু করেছে। প্রতিটি গ্রামে ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দিতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। ডিজিটাল দেশ গড়ার লক্ষ্যে যেখানে বাংলাদেশের রাস্তাঘাট আর পরিবহন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনা হচ্ছে, সেখানে একটি বাঁশের সাঁকোতেই ভরসা ভৈরব নদীর দুপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষের।
একটি ব্রিজের অভাবে চরম দুর্ভোগের শিকার চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দুলালনগরসহ পার্শ্ববর্তী চারুলিয়া, মহাজনপুর গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। দুলালনগর ও কালিয়াবকরির মধ্যবর্তী ভৈরব নদীতে একটি ব্রিজের অভাবে যুগ যুগ ধরে দুটি গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছে। এ ছাড়া যানবাহন চলাচলের নদীটি বাধা হওয়ায় ওই এলাকাটি গড়ে উঠেছে আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য। অসুস্থ রোগী এবং গর্ভবতীদের দুর্ভোগ চরমে। ব্রিজটি নির্মিত হলে বদলে যেতে পারে এ এলাকায় বসবাসরত জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান। হতে পারে নতুন দিগন্তের উন্মোচন। প্রসারিত হবে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ কৃষি, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতের। এ ছাড়া নদীর দুপাশে অবস্থিত শষ্য-শ্যামল এ অঞ্চলকে উন্নয়নের মডেল হিসেবে রূপ দিতে এই ব্রিজটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
দামুড়হুদা উপজেলার চারুলিয়া, মহাজনপুর, নতিপোতা, ভগিরতপুর, করিমপুর, দুলালনগর ও কালিয়াবকরি এই সাতটি গ্রামে কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। প্রতিদিন বাঁশের সাঁকো পার হয়ে এসব গ্রাম থেকে পায়ে হেঁটে আসতে হয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ জনসাধারণকে। এলাকাটি কৃষি প্রধান হওয়ায় যাতায়াতের বিকল্প কোনো মাধ্যম না থাকায় হাজার হাজার হেক্টর জমিতে উৎপাদিত কাঁচা সবজি বা কৃষিপণ্য নিজ জেলা চুয়াডাঙ্গার বাজারে আনতে না পেরে অধিক পরিবহন খরচে পাশের জেলা মেহেরপুরে নিতে হয় বাধ্য হয়েই। নদীর ওপারে নিজ জেলার মাঠের পর মাঠে উৎপাদিত ধান ও ভুট্টা কিনতে না পারায় হতাশ চুয়াডাঙ্গা জেলার স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও। শুকনো মৌসুমে উৎপাদিত কলা, মৌসুমী ফল, শাক-সবজি ইত্যাদি কৃষিপণ্যগুলো পায়ে হেঁটে কিংবা মোটরসাইকেলে করে বাজারজাত করতে পারলেও বর্ষাকালে সময় মতো বাজারজাত করা সম্ভব হয় না।
ফলে যেমনিভাবে শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের জনগণকে তাঁদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাতসহ এ পথে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, তেমনিভাবে বাঁশের সাঁকোর ওপর যান চলাচলের ব্যাবস্থা না থাকায় সন্ত্রাসীরা এ অঞ্চলটিকে তাঁদের নিরাপদ অভয়ারণ্য হিসেবে ব্যবহার করছে। বঞ্চিত হচ্ছে কৃষকরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কোনো আপদকালীন যথাসময়ে পৌঁছাতে না পারার কারণে অনেক সময় অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটছে এলাকাটিতে।
এলাকাবাসীরা উৎপাদিত কৃষিপণ্যগুলো সময় মতো বাজারে নিতে না পারায় তাঁদের কাঁচামাল নষ্ট হয়ে যায়। বিশেষ করে গর্ভবতী এবং মুর্মূষু রোগীকে চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। স্থানীয়দের দাবি, আধুনিক যুগে এসেও তাঁরা যেন দেশের বিচ্ছিন্ন কোনো এক গ্রামে বসবাস করছেন। কী কারণে সেতুটি নির্মাণ হয় না, তা না জানলেও তাঁরা নদীতে একটি ব্রিজ নির্মাণ দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছেন। বিভিন্ন সময় আশ্বাস পাওয়া গেলেও আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ব্রিজটি নির্মিত হলে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি হবে এবং এলাকাটির দ্রুত উন্নতি ঘটবে।
সচেতন সমাজের লোকজন বারবার দাবি করলেও কোনো এক অদৃশ্য কারণে ব্রিজটি নির্মাণের যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। যার কারণে পিছিয়ে আছে এই জনপদ। অবহেলিত এই জনপদবাসীর দাবি, দ্রুত এই ব্রিজটি নির্মাণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কর্তৃপক্ষ।
দামুড়হুদার নাটুদহ ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জানান, ‘আসলেই এ অঞ্চলের মানুষের জন্য এটা একটি চরম দুর্ভোগের বিষয়। তবে এর মধ্যে কিছুটা অংশ চুয়াডাঙ্গার মধ্যে আবার কিছুটা অংশ মেহেরেপুরে মধ্যে পড়েছে। যেমন মহাজনপুর মেহেরপুর জেলার একটি গ্রাম। সবমিলিয়ে আমরা চেষ্টা করছি অতিদ্রুতই একটি ব্রিজ নির্মাণের।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

একটি ব্রিজ বদলে দেবে কয়েক হাজার মানুষের স্বপ্নযাত্রা

আপলোড টাইম : ১০:২৯:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২০

দামুড়হুদার সাত গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা একটি বাঁশের সাঁকো
নিজস্ব প্রতিবেদক:
একটি বাঁশের সাঁকোতেই আটকে আছে দুই পাশের একাধিক গ্রামের হাজার হাজার মানুষের স্বপ্নযাত্রা। গত দুই দশকে দেশের অবকাঠামো, শিক্ষা, চিকিৎসা ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে ইতিবাচক পরিবর্তন পরিলক্ষিত। শহরগুলো মেগাসিটি আর গ্রামগুলো শহরে পরিবর্তিত হতে শুরু করেছে। প্রতিটি গ্রামে ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দিতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। ডিজিটাল দেশ গড়ার লক্ষ্যে যেখানে বাংলাদেশের রাস্তাঘাট আর পরিবহন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনা হচ্ছে, সেখানে একটি বাঁশের সাঁকোতেই ভরসা ভৈরব নদীর দুপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষের।
একটি ব্রিজের অভাবে চরম দুর্ভোগের শিকার চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দুলালনগরসহ পার্শ্ববর্তী চারুলিয়া, মহাজনপুর গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। দুলালনগর ও কালিয়াবকরির মধ্যবর্তী ভৈরব নদীতে একটি ব্রিজের অভাবে যুগ যুগ ধরে দুটি গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছে। এ ছাড়া যানবাহন চলাচলের নদীটি বাধা হওয়ায় ওই এলাকাটি গড়ে উঠেছে আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য। অসুস্থ রোগী এবং গর্ভবতীদের দুর্ভোগ চরমে। ব্রিজটি নির্মিত হলে বদলে যেতে পারে এ এলাকায় বসবাসরত জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান। হতে পারে নতুন দিগন্তের উন্মোচন। প্রসারিত হবে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ কৃষি, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতের। এ ছাড়া নদীর দুপাশে অবস্থিত শষ্য-শ্যামল এ অঞ্চলকে উন্নয়নের মডেল হিসেবে রূপ দিতে এই ব্রিজটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
দামুড়হুদা উপজেলার চারুলিয়া, মহাজনপুর, নতিপোতা, ভগিরতপুর, করিমপুর, দুলালনগর ও কালিয়াবকরি এই সাতটি গ্রামে কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। প্রতিদিন বাঁশের সাঁকো পার হয়ে এসব গ্রাম থেকে পায়ে হেঁটে আসতে হয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ জনসাধারণকে। এলাকাটি কৃষি প্রধান হওয়ায় যাতায়াতের বিকল্প কোনো মাধ্যম না থাকায় হাজার হাজার হেক্টর জমিতে উৎপাদিত কাঁচা সবজি বা কৃষিপণ্য নিজ জেলা চুয়াডাঙ্গার বাজারে আনতে না পেরে অধিক পরিবহন খরচে পাশের জেলা মেহেরপুরে নিতে হয় বাধ্য হয়েই। নদীর ওপারে নিজ জেলার মাঠের পর মাঠে উৎপাদিত ধান ও ভুট্টা কিনতে না পারায় হতাশ চুয়াডাঙ্গা জেলার স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও। শুকনো মৌসুমে উৎপাদিত কলা, মৌসুমী ফল, শাক-সবজি ইত্যাদি কৃষিপণ্যগুলো পায়ে হেঁটে কিংবা মোটরসাইকেলে করে বাজারজাত করতে পারলেও বর্ষাকালে সময় মতো বাজারজাত করা সম্ভব হয় না।
ফলে যেমনিভাবে শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের জনগণকে তাঁদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাতসহ এ পথে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, তেমনিভাবে বাঁশের সাঁকোর ওপর যান চলাচলের ব্যাবস্থা না থাকায় সন্ত্রাসীরা এ অঞ্চলটিকে তাঁদের নিরাপদ অভয়ারণ্য হিসেবে ব্যবহার করছে। বঞ্চিত হচ্ছে কৃষকরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কোনো আপদকালীন যথাসময়ে পৌঁছাতে না পারার কারণে অনেক সময় অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটছে এলাকাটিতে।
এলাকাবাসীরা উৎপাদিত কৃষিপণ্যগুলো সময় মতো বাজারে নিতে না পারায় তাঁদের কাঁচামাল নষ্ট হয়ে যায়। বিশেষ করে গর্ভবতী এবং মুর্মূষু রোগীকে চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। স্থানীয়দের দাবি, আধুনিক যুগে এসেও তাঁরা যেন দেশের বিচ্ছিন্ন কোনো এক গ্রামে বসবাস করছেন। কী কারণে সেতুটি নির্মাণ হয় না, তা না জানলেও তাঁরা নদীতে একটি ব্রিজ নির্মাণ দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছেন। বিভিন্ন সময় আশ্বাস পাওয়া গেলেও আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ব্রিজটি নির্মিত হলে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি হবে এবং এলাকাটির দ্রুত উন্নতি ঘটবে।
সচেতন সমাজের লোকজন বারবার দাবি করলেও কোনো এক অদৃশ্য কারণে ব্রিজটি নির্মাণের যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। যার কারণে পিছিয়ে আছে এই জনপদ। অবহেলিত এই জনপদবাসীর দাবি, দ্রুত এই ব্রিজটি নির্মাণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কর্তৃপক্ষ।
দামুড়হুদার নাটুদহ ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জানান, ‘আসলেই এ অঞ্চলের মানুষের জন্য এটা একটি চরম দুর্ভোগের বিষয়। তবে এর মধ্যে কিছুটা অংশ চুয়াডাঙ্গার মধ্যে আবার কিছুটা অংশ মেহেরেপুরে মধ্যে পড়েছে। যেমন মহাজনপুর মেহেরপুর জেলার একটি গ্রাম। সবমিলিয়ে আমরা চেষ্টা করছি অতিদ্রুতই একটি ব্রিজ নির্মাণের।’