ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

এই ঈদেও ছিল না রাজনৈতিক তৎপরতা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৪২:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ অগাস্ট ২০২০
  • / ১৩৯ বার পড়া হয়েছে

আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ প্রায় সব দলের অধিকাংশ রাজনীতিবিদই ঢাকায় অবস্থান করেন। কম নেতাই গেছেন নিজের সংসদীয় এলাকায়
সমীকরণ প্রতিবেদন:
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে ঈদুল আজহায়ও ছিল না তেমন রাজনৈতিক তৎপরতা। প্রতিবার ঈদে কর্মী-সমর্থক-শুভাকাঙ্খীসহ সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে মিলিত হতেন রাজনীতিবিদরা। ব্যাপক শোডাউনে উৎসাহ-উদ্দীপনায় ঈদুল আজহা উদ্যাপন করতেন। কিন্তু এবার ছিল উচ্ছ্বাসহীন ব্যতিক্রমী ঈদ। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ প্রায় সব দলের অধিকাংশ রাজনীতিবিদই ঢাকায় অবস্থান করেন। কম নেতাই গেছেন নিজের সংসদীয় আসনে। সবাই নিজ নিজ বাসস্থানের কাছাকাছি থাকা মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন। কেউ কেউ এলাকায় গেলেও এবার কুশল বিনিময়, কোলাকুলিসহ দেখা-সাক্ষাতের সুযোগও ছিল না। তবে সব দলের নেতা-কর্মীই ভার্চুয়ালসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব ছিলেন। এবারের ঈদে করোনার পাশাপাশি দেশের প্রায় অর্ধেক জেলায় মানুষের চরম দুর্ভোগ হিসেবে দেখা দেয় বন্যা। এ দুই জাতীয় দুর্যোগে সাধারণ মানুষও ছিল দিশাহারা। তাই অন্য বারের তুলনায় কোরবানিও কম হয়।
করোনাভাইরাসের কারণে গত ঈদুল ফিতরের মতোই বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছাবিনিময় থেকে বিরত থেকেছেন। দুজনই ভিডিওবার্তায় দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান। মন্ত্রী-এমপি এমনকি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাজনৈতিক কর্মতৎপরতা থেকে বিরত থেকেছেন। কারাবন্দী হওয়ার কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গত দুই বছর ধরে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় বন্ধ রয়েছে। এবার করোনার কারণে বিএনপির পক্ষ থেকে সব ধরনের সাংগঠনিক তৎপরতাও বন্ধ রাখা হয়েছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সব সিনিয়র নেতা ঢাকায় অবস্থান করেন। জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশদ এরশাদ ঢাকায় অবস্থান করেন। তবে পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের নিজ নির্বাচনী এলাকা লালমনিরহাটে ঈদ উদ্যাপন করেন। এলডিপি, গণফোরাম, বিকল্পধারা, বামসহ অন্য দলের রাজনৈতিক নেতারাও ছিলেন ঢাকায়।
প্রবীণ রাজনীতিবিদ সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমার জীবনে এমন ঈদ দেখিনি। আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে হয়তো জেলে অথবা ভোলায় বাবা-মায়ের কবরের পাশে ঈদগাহ মাঠে নামাজ আদায় করেছি, নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করেছি। গত দুই ঈদে তার ব্যতিক্রম হলো। তবে এলাকায় যেতে না পারলেও করোনার শুরু থেকে নির্বাচনী এলাকার অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রেখেছি।’ তিনি বলেন, ‘আসলেই এবার অন্য রকম ঈদ উদ্যাপন করতে হচ্ছে। ঢাকায় বাসায় বসে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে সময় পার করছি, প্রয়োজনীয় সব দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছি।’ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘প্রাণঘাতী করোনার কারণে পরপর দুটো ঈদ আমাদের জন্য ছিল ব্যতিক্রম। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এবারও আমি ঠাকুরগাঁও যেতে পারিনি। এ ক্ষেত্রে করোনা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এলাকার মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে পারিনি। তবে এলাকার নেতা-কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত ছিল। এবারও মানুষের ঈদ ছিল নিরানন্দ।’
আওয়ামী লীগসূত্র জানান, দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতি বছরের মতো এবারও সরকারি বাসভবন গণভবনে ঈদ উদ্যাপন করেছেন। প্রতি বছর ঈদের দিন সকালে তিনি গণভবনে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এবার তা হয়নি। তিনি অডিও ও ভিডিও বার্তায় দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। টেলিফোনে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। পাশাপাশি চলমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মাথায় রেখে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলারও আহ্বান জানিয়েছেন। প্রতি বছর ঈদের দিন কিংবা আগে নির্বাচনী এলাকায় যেতেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কিন্তু করোনার শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি সংসদ ভবন এলাকায় সরকারি বাসভবনেই অবস্থান করছেন। সেখান থেকেই প্রতিদিন ভিডিও কনফারেন্সে দলের নির্দেশনা নেতা-কর্মীদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। এবারও ঈদের দিন তিনি জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় ঈদের নামাজ আদায় করেন। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে টেলিফোনে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। একই অবস্থা ছিল অনেক এমপি-মন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় নেতার ক্ষেত্রেও। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, প্রতি বছর ঈদের দিন গণভবনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করার সুযোগ পান সর্বস্তরের মানুষ। দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ ও সমাজের বিশিষ্টজনেরা এতে অংশ নিতেন। প্রধানমন্ত্রীও সাধারণ মানুষের এ সাক্ষাৎ খুব উপভোগ করেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সবাই সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
বিএনপিসূত্রে জানা যায়, শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পাওয়া বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গুলশানে নিজ বাসভবনেই ঈদ উদ্যাপন করেন। তিনি লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, দুই পুত্রবধূ ও তাদের সন্তানদের সঙ্গে টেলিফোনে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তবে ঈদের দিন রাতে বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। এর আগে ঈদের নামাজের পর তাঁরা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করেন। সেখানে অন্যবারের মতো মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের দেখা যায়নি। জানা যায়, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলুসহ নেতাদের একটি অংশ গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করেন। তাঁরা নিজ এলাকায় অবস্থান করলেও নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ ছিল সীমিত। তবে ঢাকায় অবস্থানরত ও এলাকায় থাকা নেতারা মোবাইলে বা ভার্চুয়ালে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বিএনপির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারাও ছিলেন ঢাকায়। এদিকে আগামী ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। ঈদের আগে দলটির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু বলেন, সর্বনাশা করোনায় শুধু রাজনীতি নয়, অর্থনীতি, মানুষের সামাজিক যোগাযোগসহ সবকিছুতেই আঘাত এনেছে। নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ বা বৈঠকেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

এই ঈদেও ছিল না রাজনৈতিক তৎপরতা

আপলোড টাইম : ০৮:৪২:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ অগাস্ট ২০২০

আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ প্রায় সব দলের অধিকাংশ রাজনীতিবিদই ঢাকায় অবস্থান করেন। কম নেতাই গেছেন নিজের সংসদীয় এলাকায়
সমীকরণ প্রতিবেদন:
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে ঈদুল আজহায়ও ছিল না তেমন রাজনৈতিক তৎপরতা। প্রতিবার ঈদে কর্মী-সমর্থক-শুভাকাঙ্খীসহ সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে মিলিত হতেন রাজনীতিবিদরা। ব্যাপক শোডাউনে উৎসাহ-উদ্দীপনায় ঈদুল আজহা উদ্যাপন করতেন। কিন্তু এবার ছিল উচ্ছ্বাসহীন ব্যতিক্রমী ঈদ। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ প্রায় সব দলের অধিকাংশ রাজনীতিবিদই ঢাকায় অবস্থান করেন। কম নেতাই গেছেন নিজের সংসদীয় আসনে। সবাই নিজ নিজ বাসস্থানের কাছাকাছি থাকা মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন। কেউ কেউ এলাকায় গেলেও এবার কুশল বিনিময়, কোলাকুলিসহ দেখা-সাক্ষাতের সুযোগও ছিল না। তবে সব দলের নেতা-কর্মীই ভার্চুয়ালসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব ছিলেন। এবারের ঈদে করোনার পাশাপাশি দেশের প্রায় অর্ধেক জেলায় মানুষের চরম দুর্ভোগ হিসেবে দেখা দেয় বন্যা। এ দুই জাতীয় দুর্যোগে সাধারণ মানুষও ছিল দিশাহারা। তাই অন্য বারের তুলনায় কোরবানিও কম হয়।
করোনাভাইরাসের কারণে গত ঈদুল ফিতরের মতোই বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছাবিনিময় থেকে বিরত থেকেছেন। দুজনই ভিডিওবার্তায় দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান। মন্ত্রী-এমপি এমনকি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাজনৈতিক কর্মতৎপরতা থেকে বিরত থেকেছেন। কারাবন্দী হওয়ার কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গত দুই বছর ধরে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় বন্ধ রয়েছে। এবার করোনার কারণে বিএনপির পক্ষ থেকে সব ধরনের সাংগঠনিক তৎপরতাও বন্ধ রাখা হয়েছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সব সিনিয়র নেতা ঢাকায় অবস্থান করেন। জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশদ এরশাদ ঢাকায় অবস্থান করেন। তবে পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের নিজ নির্বাচনী এলাকা লালমনিরহাটে ঈদ উদ্যাপন করেন। এলডিপি, গণফোরাম, বিকল্পধারা, বামসহ অন্য দলের রাজনৈতিক নেতারাও ছিলেন ঢাকায়।
প্রবীণ রাজনীতিবিদ সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমার জীবনে এমন ঈদ দেখিনি। আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে হয়তো জেলে অথবা ভোলায় বাবা-মায়ের কবরের পাশে ঈদগাহ মাঠে নামাজ আদায় করেছি, নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করেছি। গত দুই ঈদে তার ব্যতিক্রম হলো। তবে এলাকায় যেতে না পারলেও করোনার শুরু থেকে নির্বাচনী এলাকার অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রেখেছি।’ তিনি বলেন, ‘আসলেই এবার অন্য রকম ঈদ উদ্যাপন করতে হচ্ছে। ঢাকায় বাসায় বসে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে সময় পার করছি, প্রয়োজনীয় সব দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছি।’ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘প্রাণঘাতী করোনার কারণে পরপর দুটো ঈদ আমাদের জন্য ছিল ব্যতিক্রম। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এবারও আমি ঠাকুরগাঁও যেতে পারিনি। এ ক্ষেত্রে করোনা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এলাকার মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে পারিনি। তবে এলাকার নেতা-কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত ছিল। এবারও মানুষের ঈদ ছিল নিরানন্দ।’
আওয়ামী লীগসূত্র জানান, দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতি বছরের মতো এবারও সরকারি বাসভবন গণভবনে ঈদ উদ্যাপন করেছেন। প্রতি বছর ঈদের দিন সকালে তিনি গণভবনে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এবার তা হয়নি। তিনি অডিও ও ভিডিও বার্তায় দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। টেলিফোনে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। পাশাপাশি চলমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মাথায় রেখে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলারও আহ্বান জানিয়েছেন। প্রতি বছর ঈদের দিন কিংবা আগে নির্বাচনী এলাকায় যেতেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কিন্তু করোনার শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি সংসদ ভবন এলাকায় সরকারি বাসভবনেই অবস্থান করছেন। সেখান থেকেই প্রতিদিন ভিডিও কনফারেন্সে দলের নির্দেশনা নেতা-কর্মীদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। এবারও ঈদের দিন তিনি জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় ঈদের নামাজ আদায় করেন। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে টেলিফোনে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। একই অবস্থা ছিল অনেক এমপি-মন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় নেতার ক্ষেত্রেও। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, প্রতি বছর ঈদের দিন গণভবনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করার সুযোগ পান সর্বস্তরের মানুষ। দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ ও সমাজের বিশিষ্টজনেরা এতে অংশ নিতেন। প্রধানমন্ত্রীও সাধারণ মানুষের এ সাক্ষাৎ খুব উপভোগ করেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সবাই সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
বিএনপিসূত্রে জানা যায়, শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পাওয়া বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গুলশানে নিজ বাসভবনেই ঈদ উদ্যাপন করেন। তিনি লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, দুই পুত্রবধূ ও তাদের সন্তানদের সঙ্গে টেলিফোনে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তবে ঈদের দিন রাতে বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। এর আগে ঈদের নামাজের পর তাঁরা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করেন। সেখানে অন্যবারের মতো মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের দেখা যায়নি। জানা যায়, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলুসহ নেতাদের একটি অংশ গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করেন। তাঁরা নিজ এলাকায় অবস্থান করলেও নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ ছিল সীমিত। তবে ঢাকায় অবস্থানরত ও এলাকায় থাকা নেতারা মোবাইলে বা ভার্চুয়ালে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বিএনপির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারাও ছিলেন ঢাকায়। এদিকে আগামী ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। ঈদের আগে দলটির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু বলেন, সর্বনাশা করোনায় শুধু রাজনীতি নয়, অর্থনীতি, মানুষের সামাজিক যোগাযোগসহ সবকিছুতেই আঘাত এনেছে। নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ বা বৈঠকেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনা।