ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

এইচআরডব্লিউ’র বিবৃতি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৩১:২২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৯
  • / ২৮০ বার পড়া হয়েছে

নুসরাত হত্যা প্রমাণ করে নারীদের রক্ষায় সরকার ব্যর্থ হয়েছে
সমীকরণ প্রতিবেদন:
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মীনাক্ষি গাঙ্গুলি বলেছেন, ‘যৌন নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুদের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার কতটা ব্যর্থ তা ফুটে উঠেছে নুসরাত জাহান রাফি হত্যার মাধ্যমে।’ তিনি বলেন, ‘এই হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে যৌন নির্যাতনের শিকার নারীদের বিষয়ে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে কথাটি জোরালো হয়ে উঠেছে। একইসঙ্গে নির্যাতিতরা নিরাপত্তার সঙ্গে যেন আইনগত সমাধান পান সে বিষয়টিও সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। তাদেরকে প্রতিশোধের শিকার হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।’ এইচআরডব্লিউ এর নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংগঠনটির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মীনাক্ষি গাঙ্গুলির এসব বিবৃতি দেয়া হয়েছে। ওই বিবৃতিতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার মূল আসামি অধ্যক্ষ সিরাজসহ জড়িতদের বিচার চেয়ে এ ঘটনায় দ্রুত পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছে সংস্থাটি। বিবৃতিতে মীনাক্ষি গাঙ্গুলি বলেন,‘ন্যায়বিচার চাওয়াতে সাহসী মেয়ে নুসরাতকে অত্যান্ত বর্বরোচিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।’
এ ঘটনায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এর দায়িত্বহীনতার বিষয়টিতেও নজর দিয়েছে সংস্থাটি। সংস্থাটি বলছে, গত ২৭ শে মার্চ নুসরাত যখন পুলিশে অভিযোগ করতে যান, তখনকার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তাকে বলছেন, ঘটনাটি তেমন বড় কিছু নয়। এর পরপরই অভিযুক্তের সমর্থকরা নুসরাতকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে দেয়া নুসরাতের ভাইয়ের বক্তব্য তুলে ধরেছে সংস্থাটি। নুসরাতের ভাই বলেছিলেন, ৬ই এপ্রিল হামলার পর নুসরাত তার পরিবারকে বলেছেন, হামলাকারীরা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নেয়ার দাবি জানিয়েছে। এতে রাজি না হওয়ায় নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে তারা। কেন হত্যা করা হয়েছে নুসরাত জাহান রাফিকে? আর হত্যার জন্য আগুনই বা কেন বেছে নেয়া হলো, এই প্রশ্নগুলো তুলে ধরা হয়েছে সংস্থাটি থেকে। এই হত্যার তদন্তকারী সংস্থা বলছে, দুটি কারণে নুসরাতকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রথমত, শ্লীলতাহানির মামলা করে অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করিয়ে নুসরাত আলেম সমাজকে ‘হেয়’ করেছেন। দুই. আসামি শাহাদাত নুসরাতকে বারবার প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু নুসরাত তা গ্রহণ না করায় শাহাদাতও হত্যার পরিকল্পনা করেন।
পিবিআইপ্রধান বনজ কুমার মজুমদারের তথ্য মতে, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাসহ আটজন গ্রেফতার রয়েছেন। বাকি আরও অনেকের নাম উঠে আসতে পারে। নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার পেছনের কারণ হিসাবে তিনি জানিয়েছেন, হত্যার পরিকল্পনাকারীরা ২০১৬ সালে নুসরাতের চোখে চুন মেরেছিল। তখন মেয়েটির হাসপাতালে চিকিৎসা হয়। এরপর ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ নুসরাতকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। সেসব ঘটনাই স্থানীয় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় তারা সামাল দিয়েছিল। এবারও নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার পর পরিস্থিতি মোকাবিলা করে পার পেয়ে যাবেন ভেবেছিলেন নুর উদ্দিন, শাহাদাত ও অধ্যক্ষ সিরাজ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

এইচআরডব্লিউ’র বিবৃতি

আপলোড টাইম : ১০:৩১:২২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৯

নুসরাত হত্যা প্রমাণ করে নারীদের রক্ষায় সরকার ব্যর্থ হয়েছে
সমীকরণ প্রতিবেদন:
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মীনাক্ষি গাঙ্গুলি বলেছেন, ‘যৌন নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুদের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার কতটা ব্যর্থ তা ফুটে উঠেছে নুসরাত জাহান রাফি হত্যার মাধ্যমে।’ তিনি বলেন, ‘এই হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে যৌন নির্যাতনের শিকার নারীদের বিষয়ে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে কথাটি জোরালো হয়ে উঠেছে। একইসঙ্গে নির্যাতিতরা নিরাপত্তার সঙ্গে যেন আইনগত সমাধান পান সে বিষয়টিও সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। তাদেরকে প্রতিশোধের শিকার হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।’ এইচআরডব্লিউ এর নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংগঠনটির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মীনাক্ষি গাঙ্গুলির এসব বিবৃতি দেয়া হয়েছে। ওই বিবৃতিতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার মূল আসামি অধ্যক্ষ সিরাজসহ জড়িতদের বিচার চেয়ে এ ঘটনায় দ্রুত পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছে সংস্থাটি। বিবৃতিতে মীনাক্ষি গাঙ্গুলি বলেন,‘ন্যায়বিচার চাওয়াতে সাহসী মেয়ে নুসরাতকে অত্যান্ত বর্বরোচিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।’
এ ঘটনায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এর দায়িত্বহীনতার বিষয়টিতেও নজর দিয়েছে সংস্থাটি। সংস্থাটি বলছে, গত ২৭ শে মার্চ নুসরাত যখন পুলিশে অভিযোগ করতে যান, তখনকার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তাকে বলছেন, ঘটনাটি তেমন বড় কিছু নয়। এর পরপরই অভিযুক্তের সমর্থকরা নুসরাতকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে দেয়া নুসরাতের ভাইয়ের বক্তব্য তুলে ধরেছে সংস্থাটি। নুসরাতের ভাই বলেছিলেন, ৬ই এপ্রিল হামলার পর নুসরাত তার পরিবারকে বলেছেন, হামলাকারীরা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নেয়ার দাবি জানিয়েছে। এতে রাজি না হওয়ায় নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে তারা। কেন হত্যা করা হয়েছে নুসরাত জাহান রাফিকে? আর হত্যার জন্য আগুনই বা কেন বেছে নেয়া হলো, এই প্রশ্নগুলো তুলে ধরা হয়েছে সংস্থাটি থেকে। এই হত্যার তদন্তকারী সংস্থা বলছে, দুটি কারণে নুসরাতকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রথমত, শ্লীলতাহানির মামলা করে অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করিয়ে নুসরাত আলেম সমাজকে ‘হেয়’ করেছেন। দুই. আসামি শাহাদাত নুসরাতকে বারবার প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু নুসরাত তা গ্রহণ না করায় শাহাদাতও হত্যার পরিকল্পনা করেন।
পিবিআইপ্রধান বনজ কুমার মজুমদারের তথ্য মতে, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাসহ আটজন গ্রেফতার রয়েছেন। বাকি আরও অনেকের নাম উঠে আসতে পারে। নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার পেছনের কারণ হিসাবে তিনি জানিয়েছেন, হত্যার পরিকল্পনাকারীরা ২০১৬ সালে নুসরাতের চোখে চুন মেরেছিল। তখন মেয়েটির হাসপাতালে চিকিৎসা হয়। এরপর ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ নুসরাতকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। সেসব ঘটনাই স্থানীয় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় তারা সামাল দিয়েছিল। এবারও নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার পর পরিস্থিতি মোকাবিলা করে পার পেয়ে যাবেন ভেবেছিলেন নুর উদ্দিন, শাহাদাত ও অধ্যক্ষ সিরাজ।