ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ঋতুচক্রের পরিবর্তনজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:৪৬:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ অক্টোবর ২০১৮
  • / ৩৫৪ বার পড়া হয়েছে

ঋতুচক্রের পরিবর্তনজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে
৩ দিনে নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে ৫৮ শিশু ভর্তি : সেবা দিতে হিমশিম চিকিৎসক
আফজালুল হক/রুদ্র রাসেল: ঋতুচক্রের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চুয়াডাঙ্গায় বাড়ছে রোগের প্রকোপ। আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিশু ও বয়স্ক হলেও আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে সামনের দিনগুলোতে সব বয়সের মানুষেরই আক্রান্তের ঝুঁকি রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটু সচেতন হলেই ঋতু পরিবর্তনজনিত এসব রোগ থেকে বাঁচা যায়। বিশেষ করে শিশুদের সুস্থ রাখতে মায়েদের বেশি সতর্ক থাকার পরামর্শ তাদের। গত তিনদিনে ঋতু পরিবর্তনজনিত রোগে ও নিউমোনিয়ায় ৫৮ শিশু চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতলে ভর্তি হয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন গড়ে শাতাধিক রোগী বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা এসব শিশুর অধিকাংশই রোটা ভাইরাস ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত। বিপুলসংখ্যক রোগীর সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের। হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে গত কয়েকদিনে চুয়াডাঙ্গায় রোটা ভাইরাস, নিউমোনিয়া, সর্দিকাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছে শতশত শিশু। গতকাল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে দেখা যায় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে মায়েরা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত তিনদিনে আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫৮শিশু। এর মধ্যে গতকালই ১১শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। ফলে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক এবং নার্সদের। এদিকে, হাসপাতালের নির্ধারিত শয্যার কয়েকগুন বেশি রোগী থাকায় অসুস্থ শিশুদের নিয়ে হাসপাতালের মেঝেতে থেকে সেবা নিতে হচ্ছে। শিশু রোগীর স্বজনরা জানান, হাসপাতালে এসে বেড না পাওয়ায় ঠান্ডায় ছোট ছেলে-মেয়েকে নিয়ে মেঝেতেই শুয়ে আছেন তারা। ঠাসাঠাসিতে অনেক কষ্টও হচ্ছে তাদের। এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) শামিম কবির জানান, গত তিনদিনে ঋতু পরিবর্তনজনিত রোগ রোটা ভাইরাস ও নিউমোনিয়া ৫৮ শিশু সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। শুধু গতকালই ভর্তি হয়েছে ১১ জনেরও বেশি শিশু। তাদের মধ্যে রোটা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন শিশু ও তাদের মায়েদেরকে সর্তক করে বলেন, হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে রোটা ভাইরাস, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। শিশুদের ঠিকমতো টিকা প্রদান ও ৬ মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ পানে নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের সম্ভবনা খুবই কম থাকে। তাছাড়া ভোরের দিকে ঠান্ডা অনুভূত হওয়ায় এ থেকে শিশুকে রক্ষার্থে হালকা গরম কাপড় পরিধান করানো অত্যন্ত জরুরি। একই সাথে শিশুর যেন ঘেমে ঠান্ডা না লাগে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আবার ডায়রিয়া এক ধরনের পানিবাহিত রোগ। রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া হয়ে থাকে। ৬-১৬ মাস বয়সী আক্রান্ত শিশুকে ঘনঘন স্যালাইন ও মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এছাড়া শিশুদের মায়ের বুকের দুধ ও রোটারিং টিকা দিলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। তিনি আরও বলেন, এসব রোগ থেকে রক্ষা পেতে শিশুদের ছয় মাস বয়স পর্যন্ত নিয়মিত বুকের দুধ পান করাতে হবে। সব শিশুর প্রতি যতœশীল হতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। শিশুদের জ্বর, অস্বাভাবিক কাশি ও পাতলা পায়খানা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। মুখে খাবার স্যালাইন দেয়া যেতে পারে। শিশু যদি বুকের দুধ পান করে তা চালিয়ে যেতে পারে। চিকিৎসকের নির্দেশনা ব্যতিত বাচ্চাকে ডায়রিয়ার জন্য “এন্টি-ডায়রিয়াল” কোন ওষুধ দেয়া যাবে না। কারণ এর ফলে সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া বাচ্চার যদি প্রচুর সংক্রমন থাকে ও পানিশূন্যতা থাকে, বাচ্চাকে হাসপাতালে ভর্তি করা লাগতে পারে। হাসপাতালে চিকিৎসক বাচ্চাকে শিরার মাধ্যমে ফ্লুইড দিতে পারেন পানিশুন্যতা দূর করতে। আপনার হাত ভালভাবে সাবান দিয়ে পরিস্কার করুন বাচ্চার ডায়পার পরিবর্তনের পর। খাবার রান্না করার পাশে বাচ্চার ডায়পার পরিবর্তন করবেন না। বাচ্চার ডায়পার ভালভাবে পলিথিন ব্যাগে প্যাক করে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলবেন। ডায়পার পরিবর্তনকৃত স্থান ভাল ভাবে পরিস্কার করতে হবে। ডায়াপার, খেলনা, যেসব জায়গায় ডায়াপার বদল করা হয় (বাসায় বা ডেকেয়ার সেন্টারে), হাত পরিস্কার করার স্থানে, এমনকি খাবার তৈরি করার স্থানেও এই ভাইরাস থাকতে পারে। এটি অনেক দিন বেঁচে থাকে। এ কারণে এমন সব স্থান ও খেলনা প্রতিদিন অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে পরিস্কার করতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ঋতুচক্রের পরিবর্তনজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে

আপলোড টাইম : ০৪:৪৬:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ অক্টোবর ২০১৮

ঋতুচক্রের পরিবর্তনজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে
৩ দিনে নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে ৫৮ শিশু ভর্তি : সেবা দিতে হিমশিম চিকিৎসক
আফজালুল হক/রুদ্র রাসেল: ঋতুচক্রের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চুয়াডাঙ্গায় বাড়ছে রোগের প্রকোপ। আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিশু ও বয়স্ক হলেও আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে সামনের দিনগুলোতে সব বয়সের মানুষেরই আক্রান্তের ঝুঁকি রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটু সচেতন হলেই ঋতু পরিবর্তনজনিত এসব রোগ থেকে বাঁচা যায়। বিশেষ করে শিশুদের সুস্থ রাখতে মায়েদের বেশি সতর্ক থাকার পরামর্শ তাদের। গত তিনদিনে ঋতু পরিবর্তনজনিত রোগে ও নিউমোনিয়ায় ৫৮ শিশু চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতলে ভর্তি হয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন গড়ে শাতাধিক রোগী বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা এসব শিশুর অধিকাংশই রোটা ভাইরাস ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত। বিপুলসংখ্যক রোগীর সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের। হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে গত কয়েকদিনে চুয়াডাঙ্গায় রোটা ভাইরাস, নিউমোনিয়া, সর্দিকাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছে শতশত শিশু। গতকাল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে দেখা যায় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে মায়েরা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত তিনদিনে আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫৮শিশু। এর মধ্যে গতকালই ১১শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। ফলে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক এবং নার্সদের। এদিকে, হাসপাতালের নির্ধারিত শয্যার কয়েকগুন বেশি রোগী থাকায় অসুস্থ শিশুদের নিয়ে হাসপাতালের মেঝেতে থেকে সেবা নিতে হচ্ছে। শিশু রোগীর স্বজনরা জানান, হাসপাতালে এসে বেড না পাওয়ায় ঠান্ডায় ছোট ছেলে-মেয়েকে নিয়ে মেঝেতেই শুয়ে আছেন তারা। ঠাসাঠাসিতে অনেক কষ্টও হচ্ছে তাদের। এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) শামিম কবির জানান, গত তিনদিনে ঋতু পরিবর্তনজনিত রোগ রোটা ভাইরাস ও নিউমোনিয়া ৫৮ শিশু সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। শুধু গতকালই ভর্তি হয়েছে ১১ জনেরও বেশি শিশু। তাদের মধ্যে রোটা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন শিশু ও তাদের মায়েদেরকে সর্তক করে বলেন, হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে রোটা ভাইরাস, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। শিশুদের ঠিকমতো টিকা প্রদান ও ৬ মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ পানে নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের সম্ভবনা খুবই কম থাকে। তাছাড়া ভোরের দিকে ঠান্ডা অনুভূত হওয়ায় এ থেকে শিশুকে রক্ষার্থে হালকা গরম কাপড় পরিধান করানো অত্যন্ত জরুরি। একই সাথে শিশুর যেন ঘেমে ঠান্ডা না লাগে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আবার ডায়রিয়া এক ধরনের পানিবাহিত রোগ। রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া হয়ে থাকে। ৬-১৬ মাস বয়সী আক্রান্ত শিশুকে ঘনঘন স্যালাইন ও মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এছাড়া শিশুদের মায়ের বুকের দুধ ও রোটারিং টিকা দিলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। তিনি আরও বলেন, এসব রোগ থেকে রক্ষা পেতে শিশুদের ছয় মাস বয়স পর্যন্ত নিয়মিত বুকের দুধ পান করাতে হবে। সব শিশুর প্রতি যতœশীল হতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। শিশুদের জ্বর, অস্বাভাবিক কাশি ও পাতলা পায়খানা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। মুখে খাবার স্যালাইন দেয়া যেতে পারে। শিশু যদি বুকের দুধ পান করে তা চালিয়ে যেতে পারে। চিকিৎসকের নির্দেশনা ব্যতিত বাচ্চাকে ডায়রিয়ার জন্য “এন্টি-ডায়রিয়াল” কোন ওষুধ দেয়া যাবে না। কারণ এর ফলে সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া বাচ্চার যদি প্রচুর সংক্রমন থাকে ও পানিশূন্যতা থাকে, বাচ্চাকে হাসপাতালে ভর্তি করা লাগতে পারে। হাসপাতালে চিকিৎসক বাচ্চাকে শিরার মাধ্যমে ফ্লুইড দিতে পারেন পানিশুন্যতা দূর করতে। আপনার হাত ভালভাবে সাবান দিয়ে পরিস্কার করুন বাচ্চার ডায়পার পরিবর্তনের পর। খাবার রান্না করার পাশে বাচ্চার ডায়পার পরিবর্তন করবেন না। বাচ্চার ডায়পার ভালভাবে পলিথিন ব্যাগে প্যাক করে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলবেন। ডায়পার পরিবর্তনকৃত স্থান ভাল ভাবে পরিস্কার করতে হবে। ডায়াপার, খেলনা, যেসব জায়গায় ডায়াপার বদল করা হয় (বাসায় বা ডেকেয়ার সেন্টারে), হাত পরিস্কার করার স্থানে, এমনকি খাবার তৈরি করার স্থানেও এই ভাইরাস থাকতে পারে। এটি অনেক দিন বেঁচে থাকে। এ কারণে এমন সব স্থান ও খেলনা প্রতিদিন অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে পরিস্কার করতে হবে।