ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

উপজেলা নির্বাচন এখন প্রহসন!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৩৪:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ মার্চ ২০১৯
  • / ৩৬৫ বার পড়া হয়েছে

ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে প্রশাসন ও ভোটারদের হাই-কমান্ডের নির্দেশনা মানছে না নেতা-কর্মীরা
সমীকরণ প্রতিবেদন:
দেশের স্থানীয় প্রশাসনের গুরুত্বপুর্ণ-উপজেলা নির্বাচন কার্যত: প্রহসনে পরিণত হয়েছে। এই নির্বাচনে ভোটার শূন্যতা, প্রশাসন ও ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ এবং ভোট ঘিরে আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যেকার সহিংসতার কারনে নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্ট হয়ে গেছে। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও নিরপেক্ষ করার জন্য আওয়ামী লীগের হাইকমা-ের কোন নিদের্শনা মানছেন না মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। বহু নির্বাচনী এলাকায় জোর-জবরদস্তি, সন্ত্রাস ও ভীতির পরিবেশ বিরাজ করছে। ভোটার ও সাধারণ মানুষ ভয়ে আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। প্রভাবশালীদের দাপটে প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীদের পাশাপাশি প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও অসহায় হয়ে পড়েছেন। কোন কোন স্থানে প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় শিকার হয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও। মূলত: জোর করে জনপ্রতিনিধি হওয়ার প্রতিযোগিতার কারণে নির্বাচনী ব্যবস্থায় সৃষ্টি হয়েছে এই নৈরাজ্যকর দশা। স্থানীয় প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপের কারণে সহিংস হয়ে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ।
কেবল আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডই নয়, নির্বাচন কমিশন (ইসি) মাঠ প্রশাসনকে সুষ্ঠু ভোটের জন্য কঠোর বার্তা দিলেও তা বিফলে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম নির্বাচনী সহিংসতা ও প্রভাব বিস্তার রোধে ‘ওপেন ফায়ারের’ নির্দেশ দিলেও কোন কাজে আসছে না। ইতোমধ্যে সহিংসতায় প্রাণ ঝরেছে বেশ কয়েকজনের। আগামীকাল রবিবার চতুর্থ দফার নির্বাচনে প্রভাবশালী প্রার্থীরা বিজয়ী হওয়ার জন্য রীতিমত মরিয়া হয়ে উঠেছেন। সাতক্ষীরা সদর উপজেলাসহ দেশের কয়েকটি স্থানে রীতিমত মাইকিং করে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। এমনকি ভোট কেন্দ্রে এজেন্টরা গেলে তাদের ’শায়েস্তা’ করা হবে বলেও হুমকী দেয়া হয়েছে। কোন কোন জায়গায় প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীরা বাসা-বাড়িতে থাকতে পারছেন না। এনিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করে কোন প্রতিকার না পেয়ে কয়েকটি জায়গায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীরা। প্রভাব বিস্তারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে বাধ্য হয়ে আগামীকালের নির্বাচনে মঠবাড়িয়া ও কবিরহাট উপজেলার ভোট স্থগিত করেছে ইসি।
আগামীকাল চতুর্থ ধাপে ১২৭ উপজেলায় ভোটগ্রহণ করার কথা ছিল। তবে ১০৬টিতে ভোট হবে। বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় ১৫টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা চেয়ারম্যান হয়েছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে বিএনপিসহ সরকার বিরোধী অংশ এবারের উপজেলা নির্বাচন বর্জন করে। ফলে বেশিরভাগ উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগই। আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মারমুখী অবস্থানের কারণে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দিতাকারী ১৪ দলের শরীকরাও কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন।
ইসির তথ্যমতে, প্রভাবশালীরা বদলি, লাঞ্ছিত ও ভয়ভীতি এবং আর্থিক প্রলোভন দেখাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনকে। প্রভাবশালীদের চাপের কারণে সহিংসতার আশঙ্কা এবং ভোটে কে নির্বাচিত হবে তা নির্ধারিত রয়েছে মনে করে ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছেন না ভোটাররা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদাসহ একাধিক কমিশনার বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় উপজেলা নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়নি। প্রশাসনকে সব ধরণের চাপমুক্ত থাকার জন্য ইসি নির্দেশ দিলেও স্থানীয়ভাবে তা মানা হচ্ছে না। ভোটে প্রভাব বিস্তারের কারণে এ পর্যন্ত প্রায় চার ডজন এমপিকে এলাকা ছাড়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে সকলেই সেটা তারা আমলে নেননি।
এদিকে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, উপজেলা নির্বাচন তামাশায় পরিণত হয়েছে। কেবল রাষ্ট্রের অর্থ ব্যয় আর স্থানীয় জনগনকে হয়রানী করা হচ্ছে। এই প্রহসনের কি দরকার। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, তারা নিজেরা নিজেরাই মারামারি করছে। জনগনকে কষ্ট দিচ্ছে। ভোট কেন্দ্রেতো কেউ যায় না। তারপরও ৪০-৫০ পার্সেন্ট ভোট কাস্ট দেখায়। তিনি বলেন, ৯০০ কোটি টাকা খরচ করে উপজেলা নির্বাচনের নামে নতুন প্রহসনের প্রয়োজন আর বাংলাদেশের নেই। জনগণের টাকা এভাবে অপচয় করা সমীচীন হচ্ছে না। আমি সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে এই অর্থ অপচয় থেকে বিরত থাকার আহ্বান করব।
উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত তিন পর্বে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, ৩১৬টি উপজেলা নির্বাচনে ৭৮টিতে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় পেয়েছে, ১৬ টিতে অন্যান্য দলের প্রার্থীরা জিতেছে, ৩ টিতে জিতেছে বিএনপির বহিস্কৃত স্বতন্ত্ররা। বাকি সব উপজেলায় জিতেছে আওয়ামী লীগ। ১১২টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি। এরইমধ্যে প্রথম ধাপে ১০ মার্চ ৭৮ উপজেলায়, দ্বিতীয় ধাপে ১৮ মার্চ ১১৬ উপজেলায় এবং ২৪ মার্চ ১১৬ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আগামী ৩১ মার্চ চতুর্থ ধাপে এবং আগামী ১৮ জুন পঞ্চম ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

উপজেলা নির্বাচন এখন প্রহসন!

আপলোড টাইম : ১০:৩৪:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ মার্চ ২০১৯

ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে প্রশাসন ও ভোটারদের হাই-কমান্ডের নির্দেশনা মানছে না নেতা-কর্মীরা
সমীকরণ প্রতিবেদন:
দেশের স্থানীয় প্রশাসনের গুরুত্বপুর্ণ-উপজেলা নির্বাচন কার্যত: প্রহসনে পরিণত হয়েছে। এই নির্বাচনে ভোটার শূন্যতা, প্রশাসন ও ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ এবং ভোট ঘিরে আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যেকার সহিংসতার কারনে নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্ট হয়ে গেছে। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও নিরপেক্ষ করার জন্য আওয়ামী লীগের হাইকমা-ের কোন নিদের্শনা মানছেন না মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। বহু নির্বাচনী এলাকায় জোর-জবরদস্তি, সন্ত্রাস ও ভীতির পরিবেশ বিরাজ করছে। ভোটার ও সাধারণ মানুষ ভয়ে আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। প্রভাবশালীদের দাপটে প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীদের পাশাপাশি প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও অসহায় হয়ে পড়েছেন। কোন কোন স্থানে প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় শিকার হয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও। মূলত: জোর করে জনপ্রতিনিধি হওয়ার প্রতিযোগিতার কারণে নির্বাচনী ব্যবস্থায় সৃষ্টি হয়েছে এই নৈরাজ্যকর দশা। স্থানীয় প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপের কারণে সহিংস হয়ে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ।
কেবল আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডই নয়, নির্বাচন কমিশন (ইসি) মাঠ প্রশাসনকে সুষ্ঠু ভোটের জন্য কঠোর বার্তা দিলেও তা বিফলে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম নির্বাচনী সহিংসতা ও প্রভাব বিস্তার রোধে ‘ওপেন ফায়ারের’ নির্দেশ দিলেও কোন কাজে আসছে না। ইতোমধ্যে সহিংসতায় প্রাণ ঝরেছে বেশ কয়েকজনের। আগামীকাল রবিবার চতুর্থ দফার নির্বাচনে প্রভাবশালী প্রার্থীরা বিজয়ী হওয়ার জন্য রীতিমত মরিয়া হয়ে উঠেছেন। সাতক্ষীরা সদর উপজেলাসহ দেশের কয়েকটি স্থানে রীতিমত মাইকিং করে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। এমনকি ভোট কেন্দ্রে এজেন্টরা গেলে তাদের ’শায়েস্তা’ করা হবে বলেও হুমকী দেয়া হয়েছে। কোন কোন জায়গায় প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীরা বাসা-বাড়িতে থাকতে পারছেন না। এনিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করে কোন প্রতিকার না পেয়ে কয়েকটি জায়গায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীরা। প্রভাব বিস্তারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে বাধ্য হয়ে আগামীকালের নির্বাচনে মঠবাড়িয়া ও কবিরহাট উপজেলার ভোট স্থগিত করেছে ইসি।
আগামীকাল চতুর্থ ধাপে ১২৭ উপজেলায় ভোটগ্রহণ করার কথা ছিল। তবে ১০৬টিতে ভোট হবে। বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় ১৫টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা চেয়ারম্যান হয়েছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে বিএনপিসহ সরকার বিরোধী অংশ এবারের উপজেলা নির্বাচন বর্জন করে। ফলে বেশিরভাগ উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগই। আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মারমুখী অবস্থানের কারণে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দিতাকারী ১৪ দলের শরীকরাও কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন।
ইসির তথ্যমতে, প্রভাবশালীরা বদলি, লাঞ্ছিত ও ভয়ভীতি এবং আর্থিক প্রলোভন দেখাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনকে। প্রভাবশালীদের চাপের কারণে সহিংসতার আশঙ্কা এবং ভোটে কে নির্বাচিত হবে তা নির্ধারিত রয়েছে মনে করে ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছেন না ভোটাররা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদাসহ একাধিক কমিশনার বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় উপজেলা নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়নি। প্রশাসনকে সব ধরণের চাপমুক্ত থাকার জন্য ইসি নির্দেশ দিলেও স্থানীয়ভাবে তা মানা হচ্ছে না। ভোটে প্রভাব বিস্তারের কারণে এ পর্যন্ত প্রায় চার ডজন এমপিকে এলাকা ছাড়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে সকলেই সেটা তারা আমলে নেননি।
এদিকে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, উপজেলা নির্বাচন তামাশায় পরিণত হয়েছে। কেবল রাষ্ট্রের অর্থ ব্যয় আর স্থানীয় জনগনকে হয়রানী করা হচ্ছে। এই প্রহসনের কি দরকার। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, তারা নিজেরা নিজেরাই মারামারি করছে। জনগনকে কষ্ট দিচ্ছে। ভোট কেন্দ্রেতো কেউ যায় না। তারপরও ৪০-৫০ পার্সেন্ট ভোট কাস্ট দেখায়। তিনি বলেন, ৯০০ কোটি টাকা খরচ করে উপজেলা নির্বাচনের নামে নতুন প্রহসনের প্রয়োজন আর বাংলাদেশের নেই। জনগণের টাকা এভাবে অপচয় করা সমীচীন হচ্ছে না। আমি সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে এই অর্থ অপচয় থেকে বিরত থাকার আহ্বান করব।
উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত তিন পর্বে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, ৩১৬টি উপজেলা নির্বাচনে ৭৮টিতে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় পেয়েছে, ১৬ টিতে অন্যান্য দলের প্রার্থীরা জিতেছে, ৩ টিতে জিতেছে বিএনপির বহিস্কৃত স্বতন্ত্ররা। বাকি সব উপজেলায় জিতেছে আওয়ামী লীগ। ১১২টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি। এরইমধ্যে প্রথম ধাপে ১০ মার্চ ৭৮ উপজেলায়, দ্বিতীয় ধাপে ১৮ মার্চ ১১৬ উপজেলায় এবং ২৪ মার্চ ১১৬ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আগামী ৩১ মার্চ চতুর্থ ধাপে এবং আগামী ১৮ জুন পঞ্চম ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।