উন্নয়নের মহাসড়কে সাংস্কৃতিক ভাবনা রনক হোসেন
- আপলোড টাইম : ১০:৪৭:২৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ জানুয়ারী ২০১৭
- / ৭২৯ বার পড়া হয়েছে
উন্নয়নের মহাসড়কে সাংস্কৃতিক ভাবনা
রনক হোসেন
বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে সুনাম অর্জন করেছে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতায়, শিশুমৃত্যুহার কমিয়ে, নি¤œ থেকে নি¤œ-মধ্যবিত্ত আয়ের দেশ গড়ার মাধ্যমে। বর্তমানে সরকার অবকাঠামোগত উন্নয়নে বেশ সচেষ্ট এবং দেশের প্রতিটি প্রান্তরে চড়িয়ে পড়েছে উন্নয়নের ঢেউ। স্বপ্নের পদ্মাসেতু আজ বাস্তবায়নের পথে, মেট্রোরেলের কাজ চলছে, ঢাকা-ময়মনসিংহসহ দেশের সকল যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বাস্তবায়নের পথে এ কাজগুলো সম্পন্ন হলে পাল্টে যাবে বাংলাদেশ, পাল্টে যাবে মানুষের জীবনযাত্রার মান। সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে যেমন ঢেলে সাজাচ্ছে তার মধ্যে গুরুত্ব পেয়েছে শিক্ষক্ষেত্রের উন্নয়ন। বেসরকারী রেজিঃ স্কুলগুলো আজ সরকারি, নতুন করে তৈরি হচ্ছে আরও ১৫০০ এর মত স্কুল, নিয়োগ দেয়া হয়েছে হাজার হাজার শিক্ষক, প্রতিটি উপজেলায় সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। দেশে শত শত অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি হবে, দেশের বাজেট দ্বিগুণ থেকে তিনগুন হবে সে আশা আমরা করতেই পারি। উন্নয়নে মহাসড়কে আমাদের সাংস্কৃতিক উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক শিক্ষার অগ্রগতি কতটুকু ও কিভাবে উন্নয়ন সম্ভব তা আলোচনার উপযুক্ত সময় আজ। বাংলাদেশকে যদি আমরা একটি নবনির্মিত বাড়ির সাথে তুলনা করি তাহলে বলতে হয়, বাড়িটির কাঠামো তেরি হয়েছে, রং দেয়ার কাজও শেষের দিকে এখন যে কাজটি অতিগুরুত্বের সাথে করতেহবে তা হল রুচিশীল কারুকাজ (বাড়িঃঅবকাঠামোগত উন্নয়ন, রংঃ মৌলিক অধিকার সমূহ, কারুকাজ ঃ উন্নত রুচিশীল, দেশপ্রেমিক মানুষগঠনে সাংস্কৃতিক উন্নয়ন)।
আমাদের যে নতুন প্রজন্মের হাতে পরিচালিত হবে পরবর্তী রাষ্ট্রব্যবস্থাপনা তাদের জানতে হবে দেশ কি? দেশের মানুষ কি? দেশের নিজস্বতা কি? দেশের সার্বিক উন্নয়ন কি? শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নের পরিচয় বহন করেনা এর পাশাপাশি সাংস্কৃতিক প্রবৃদ্ধি অতিব জরুরী। যদি দেশীয় সাংস্কৃতিকে অর্থনৈতিক মানদ-ে বিচার করা যায় তাহলেও তা একটি শক্তিশালী অর্থনীতি গড়তে সক্ষম। যেমন এককজন বাঙ্গালী নারী কিরণমালা পোশাকের পরিবর্তে যদি একটি জামদানী শাড়ী ক্রয় করে তাহলে জামদানী শিল্প যেমন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা পাবে তেমনি দেশের টাকা দেশেই থাকবে। ইন্টারনেটের বদৌলতে পৃথিবীর সমস্ত কৃষ্টি-কালচার আজ আমাদের হাতের মুঠোয়। খুব সহজেই আমরা পরিচিত হতে পারছি সব দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে। এই পরিচিত হওয়াটাও দেশের কল্যাণের কাজে লাগবে যখন নিজের পরিচয়টা বিশ্ব দরবারে আমরা তুলে ধরব। অন্যের সংস্কৃতির সঙ্গে মিলাব, মিলব তবে নিজে বিলীন হয়ে নয়।
অতএব উপরোক্ত বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করে আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারি প্রতিটি উপজেলাতে একটি করে সাংস্কৃতিক ভবন। যে ভবনটি নির্মিত হতে পারে পেন্টাগন আকৃতিতে। ভবনটির চারপাশে থাকবে প্রবেশ-মুখ যা ভিন্ন ভিন্ন সেবা প্রদোন করবে। যেমন, ক্রীড়া, প্রতিষ্ঠান, শিল্পকলা একাডেমী, শিশূ একাডেমী, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর, রোভার স্কাউট, গার্লস গাইড, উন্নত লাইব্রেরী, বিতর্ক ক্লাব, ক্যারিয়ার ক্লাব, যুব প্রশিক্ষণ ইউুনট, আঞ্চলিক প্রজন্ম যেমন নানা ধরণের সুবিধা পাবে, তেমনি সরকারের সহজ হবে উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারণ। অনেক উন্নত দেশের জনসংখ্যার চেয়ে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশি, যা একই সাথে দেশের জন্য সম্ভাবনার আবার চ্যালেঞ্জেরও বটে। এই লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীদেরকে যদি স্বদেশী সংস্কৃতির চর্চা করানো যায়, প্রশিক্ষণ দেয়া যায় উপযুক্ত বিষয়ের তাহলে বিশ্বে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ একটি অনন্য মডেল হয়ে থাকবে। প্রতিটি উপজেলাতে শিল্পকলা একাডেমী প্রতিষ্ঠিত হলে যেমন সংস্কৃতির বিকাশের ধারা ছড়িয়ে পড়বে দেশের নানা প্রান্তে তেমনি দেশ পাবে উন্নত রুচিশীল ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলো মুধু রাজধানীতে তাদের কর্মসূচী পালন করে থাকে। যা প্রান্তিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করে আসছে এ সকল সুযোগ সুবিধা থেকে।
বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে মানুষটি অনুষ্ঠানে শিল্পীদের সোথে সমন্বয় গেয়ে ওঠেন “ধন্য ধন্য পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা” সেই নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল মানুষটির ওপর উপজেলা সাংস্কৃতিক ভবনের বাস্তবায়নের আশা আমরা রাখতেই পারি।