ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

উত্ত্যক্তে অতিষ্ঠ হয়ে প্রবাসীর স্ত্রীর আত্মহত্যা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৪২:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • / ২৮২ বার পড়া হয়েছে

টাকার বিনিময়ে মীমাংসার চেষ্টা, উত্ত্যক্তকারী সেণ্টুর বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার গোপালপুর গ্রামের চিহ্নিত নারী উত্ত্যক্তকারী সেণ্টুর কুপ্রস্তাব ও হুমকি-ধামকিতে শারমিন আক্তার জলি (২৮) নামের এক প্রবাসীর স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার আনুমানিক সকাল ৮টার দিকে গোপালপুর গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। প্রথমে আত্মহত্যার ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও দামুড়হুদা মডেল থানার পুলিশ খবর পেয়ে গোপালপুর উত্তরপাড়ার নিহত জলির পিতার বাড়ি থেকে মরদেহ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। আত্মহত্যাকারী শারমিন আক্তার জলি দামুড়হুদা উপজেলার গোপালপুর গ্রামের মুচিপাড়ার মালয়েশিয়া প্রবাসী ইউসুফের স্ত্রী এবং গোপালপুর উত্তরপাড়ার হযরত আলীর মেয়ে।
স্থানীয়রাসহ নিহত জলির পরিবারের সদস্যরা জানান, স্বামী ইউসুফ মালয়েশিয়া থাকার সুবাদে জলি তাঁর একমাত্র কন্যাসন্তান উম্মে হাবীবাকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন। আর এ সুযোগে গোপালপুর গ্রামের জিহালাপাড়ার সাত্তার মল্লিকের ছেলে প্রভাবশালী সেণ্টু মল্লিক দীর্ঘদিন যাবৎ জলিকে উত্ত্যক্তসহ কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। প্রথমে সম্মানের কথা ভেবে কিছু দিন চুপ থাকলেও পরে জলি ঘটনাটি তাঁর শ্বশুরবাড়িসহ নিজ বাড়িতে জানান। এদিকে, সেণ্টুর উৎপাত আরও বেড়ে যায়। গত কয়েকদিন আগে নিহত জলির ছোট দেবর বিদেশ থেকে দেশে ফিরলে গত সোমবার রাতে জলির পিতাসহ তাঁর পরিবার উত্ত্যক্তকারী সেণ্টুকে জলিকে উত্ত্যক্ত করতে নিষেধ করেন। স্থানীয়রা জানান, এ ঘটনার পর ওই রাতেও নাকি সেণ্টু আবার হুমকি-ধামকি দেন জলিকে। পরদিন গতকাল মঙ্গলবার সকালে মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে দোতলার রান্নাঘরে ফ্যানের হুকের সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন জলি। পরিবারের লোকজন টের পেয়ে নিহত জলির লাশ হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলেও দূর থেকে কৌশলে লাশবাহী ভ্যান ঘুরিয়ে আনে সেণ্টুর লোকজন। অভিযোগ উঠেছে, ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টাও করা হয়। পরে নিহত জলির লাশ তাঁর পিতা হযরত আলী নিজ বাড়িতে নিয়ে যান। এরপর খবর পেয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার পুলিশ পিতার বাড়ি থেকে নিহত জলির লাশ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।
একালাবাসী অভিযোগ করেন, সেণ্টু প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ কিছু বলার সাহস পান না। এর আগেও সেণ্টু বেশ কয়েকটি নারীঘটিত ঘটনা ঘটিয়েছেন। লোকলজ্জার ভয়ে অনেকে প্রকাশ না করলেও সেণ্টুর জন্য একটি পরিবারের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ছাড়াছাড়ি পর্যন্ত গড়িয়েছে। সব মিলিয়ে সেণ্টুর বিরুদ্ধে এ ধরনের তিনটি ঘটনার উল্লেখ করেন এলাকাবাসী। তাঁরা আরও বলেন, নিহত জলির শ্বশুরবাড়ির পাশেই সেণ্টুর ভুসি মালের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। ফলে সারা দিন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বসেই তিনি উত্ত্যক্ত করতেন জলিকে। আর এসব কারণেই জলি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বলে মনে করছেন তাঁরা। তবে প্রশাসন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে সেণ্টুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবে, এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।
পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া নিহত জলির মেয়ে উম্মে হাবীবা বলে, ‘বিভিন্ন সময় আম্মুর ফোনে কল দিতে সে। উপায় না পেয়ে আম্মু তার নিজের ফোন ব্যবহার কারাও বাদ দিয়ে দেয়। এরপর আম্মু মাঝেমধ্যে দাদির ফোন দিয়ে বিদেশে আব্বুর সঙ্গে কথা বলত। গত কয়েক দিন ধরে বাড়ির ওই ফোনটাতেও কল দেওয়া শুরু করে সেণ্টু।’
এদিকে, গতকাল বিকেলেই জলির মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। ময়নাতদন্তকারী চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার শাকিল আরসালান বলেন, প্রাথমিকভাবে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার বিষয়টি পরিষ্কার। তবে পুরো রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত করা যাবে।
এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকুমার বিশ্বাস নিহত শারমিন আক্তার জলির পরিবারের বরাত দিয়ে বলেন, এলাকার সেণ্টু নামের এক ব্যক্তি নিহত জলিকে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্তসহ কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। এ কারণে জলি নাকি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বলে শুনেছি।’ তিনি আরও বলেন, তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। একই সঙ্গে এ ঘটনায় দামুড়হুদা থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

উত্ত্যক্তে অতিষ্ঠ হয়ে প্রবাসীর স্ত্রীর আত্মহত্যা

আপলোড টাইম : ১০:৪২:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২০

টাকার বিনিময়ে মীমাংসার চেষ্টা, উত্ত্যক্তকারী সেণ্টুর বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার গোপালপুর গ্রামের চিহ্নিত নারী উত্ত্যক্তকারী সেণ্টুর কুপ্রস্তাব ও হুমকি-ধামকিতে শারমিন আক্তার জলি (২৮) নামের এক প্রবাসীর স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার আনুমানিক সকাল ৮টার দিকে গোপালপুর গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। প্রথমে আত্মহত্যার ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও দামুড়হুদা মডেল থানার পুলিশ খবর পেয়ে গোপালপুর উত্তরপাড়ার নিহত জলির পিতার বাড়ি থেকে মরদেহ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। আত্মহত্যাকারী শারমিন আক্তার জলি দামুড়হুদা উপজেলার গোপালপুর গ্রামের মুচিপাড়ার মালয়েশিয়া প্রবাসী ইউসুফের স্ত্রী এবং গোপালপুর উত্তরপাড়ার হযরত আলীর মেয়ে।
স্থানীয়রাসহ নিহত জলির পরিবারের সদস্যরা জানান, স্বামী ইউসুফ মালয়েশিয়া থাকার সুবাদে জলি তাঁর একমাত্র কন্যাসন্তান উম্মে হাবীবাকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন। আর এ সুযোগে গোপালপুর গ্রামের জিহালাপাড়ার সাত্তার মল্লিকের ছেলে প্রভাবশালী সেণ্টু মল্লিক দীর্ঘদিন যাবৎ জলিকে উত্ত্যক্তসহ কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। প্রথমে সম্মানের কথা ভেবে কিছু দিন চুপ থাকলেও পরে জলি ঘটনাটি তাঁর শ্বশুরবাড়িসহ নিজ বাড়িতে জানান। এদিকে, সেণ্টুর উৎপাত আরও বেড়ে যায়। গত কয়েকদিন আগে নিহত জলির ছোট দেবর বিদেশ থেকে দেশে ফিরলে গত সোমবার রাতে জলির পিতাসহ তাঁর পরিবার উত্ত্যক্তকারী সেণ্টুকে জলিকে উত্ত্যক্ত করতে নিষেধ করেন। স্থানীয়রা জানান, এ ঘটনার পর ওই রাতেও নাকি সেণ্টু আবার হুমকি-ধামকি দেন জলিকে। পরদিন গতকাল মঙ্গলবার সকালে মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে দোতলার রান্নাঘরে ফ্যানের হুকের সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন জলি। পরিবারের লোকজন টের পেয়ে নিহত জলির লাশ হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলেও দূর থেকে কৌশলে লাশবাহী ভ্যান ঘুরিয়ে আনে সেণ্টুর লোকজন। অভিযোগ উঠেছে, ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টাও করা হয়। পরে নিহত জলির লাশ তাঁর পিতা হযরত আলী নিজ বাড়িতে নিয়ে যান। এরপর খবর পেয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার পুলিশ পিতার বাড়ি থেকে নিহত জলির লাশ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।
একালাবাসী অভিযোগ করেন, সেণ্টু প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ কিছু বলার সাহস পান না। এর আগেও সেণ্টু বেশ কয়েকটি নারীঘটিত ঘটনা ঘটিয়েছেন। লোকলজ্জার ভয়ে অনেকে প্রকাশ না করলেও সেণ্টুর জন্য একটি পরিবারের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ছাড়াছাড়ি পর্যন্ত গড়িয়েছে। সব মিলিয়ে সেণ্টুর বিরুদ্ধে এ ধরনের তিনটি ঘটনার উল্লেখ করেন এলাকাবাসী। তাঁরা আরও বলেন, নিহত জলির শ্বশুরবাড়ির পাশেই সেণ্টুর ভুসি মালের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। ফলে সারা দিন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বসেই তিনি উত্ত্যক্ত করতেন জলিকে। আর এসব কারণেই জলি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বলে মনে করছেন তাঁরা। তবে প্রশাসন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে সেণ্টুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবে, এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।
পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া নিহত জলির মেয়ে উম্মে হাবীবা বলে, ‘বিভিন্ন সময় আম্মুর ফোনে কল দিতে সে। উপায় না পেয়ে আম্মু তার নিজের ফোন ব্যবহার কারাও বাদ দিয়ে দেয়। এরপর আম্মু মাঝেমধ্যে দাদির ফোন দিয়ে বিদেশে আব্বুর সঙ্গে কথা বলত। গত কয়েক দিন ধরে বাড়ির ওই ফোনটাতেও কল দেওয়া শুরু করে সেণ্টু।’
এদিকে, গতকাল বিকেলেই জলির মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। ময়নাতদন্তকারী চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার শাকিল আরসালান বলেন, প্রাথমিকভাবে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার বিষয়টি পরিষ্কার। তবে পুরো রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত করা যাবে।
এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকুমার বিশ্বাস নিহত শারমিন আক্তার জলির পরিবারের বরাত দিয়ে বলেন, এলাকার সেণ্টু নামের এক ব্যক্তি নিহত জলিকে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্তসহ কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। এ কারণে জলি নাকি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বলে শুনেছি।’ তিনি আরও বলেন, তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। একই সঙ্গে এ ঘটনায় দামুড়হুদা থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে তিনি উল্লেখ করেন।