ইপেপার । আজমঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ঈদের আগে দেশে করোনায় মৃত্যুর রেকর্ড

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২৪:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ জুলাই ২০২১
  • / ৭৯ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরে করোনা ও উপসর্গে আরও ৯ জনের প্রাণহানি
সারা দেশে করোনায় আরও ২৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ১৩ হাজার ৩২১
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঈদের আগে দেশে করোনায় মৃত্যুর রেকর্ড। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ২৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে গত রোববার ২২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, শনিবার ২০৪ জন, শুক্রবার ১৮৭ জন, বৃহস্পতিবার ২২৬ জন, বুধবার ২১০ জন, মঙ্গলবার ২০৩ জন এবং সোমবার ২২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত এক আটদিনে ১ হাজার ৭০৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দেশে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ১২৫ জনে। গতকাল সারাদেশে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে আরও ১৩ হাজার ৩২১ জনের শরীরে। এদিকে, গতকাল চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৭৯ জনের শরীরে। গতকাল মেহেরপুরে করোনা আক্রান্ত হয়ে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬৪ জন।
চুয়াডাঙ্গা:
চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত হয়ে নতুন তিনজন ও উপসর্গ নিয়ে আরও একজনসহ মোট চারজনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে আরও ৭৯ জনের শরীরে। গতকাল জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ চুয়াডাঙ্গার ৩৫৭টি নমুনার ফলাফল প্রকাশ করে। এর মধ্যে ৭৯টি নমুনার ফলাফল পজিটিভ ও ২৭৮ টি নমুনার ফলাফল নেগেটিভ এসেছে। জেলায় নতুন আক্রান্ত ৭৯ জনের মধ্যে সদর উপজেলার ৩৫ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ১২ জন, দামুড়হুদা উপজেলার ১৮ জন ও জীবননগরের ১৪ জন রয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২২.১২ শতাংশ। এনিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছে ৫ হাজার ৫১৪ জন। আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলার ২ হাজার ৩৭৮ জন, আলমডাঙ্গার ৯৫০ জন, দামুড়হুদায় ১ হাজার ১৩৭ জন ও জীবননগরে এক হাজার ৫৪ জন। গতকাল জেলায় নতুন ১৩৮ জন সুস্থ হয়েছে। এনিয়ে জেলায় মোট সুস্থ হয়েছে ৩ হাজার ২৯৫ জন।
গতকাল জেলায় করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে আরও চাঁরজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যে গত রোববারের একটি মৃত্যু গতকাল যোগ করেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে এ নিয়ে জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ১৬৩ জনের। এর মধ্যে ১৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে জেলায় ও করোনা আক্রান্ত হয়ে আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে জেলার বাইরে। এদিকে, এখন পর্যন্ত জেলায় চিকিৎসা সেবা কাজে নিয়জিত ৮৪ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭১ জন সুস্থ হয়ে তাঁদের কর্মস্থলে পুনঃরায় যোগদান করেছেন। অন্য ১৩ জন প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
গতকাল সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায়, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার নতিপোতা গ্রামের মৃত মতিউর রহমানের ছেলে মাসুদ হোসেন (৭২) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও জেলার জীবননগর ও আলমডাঙ্গায় মৃত্যু হয়েছে আরও দুজনের।
গতকাল করোনা উপসর্গ নিয়ে সদর হাসপাতালের ইয়োলো জোনে মৃত্যু হয়েছে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার রুসতম আলীর ছেলে জয়নাল আলী (৫৪)।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. এ এস এম ফাতেহ্ আকরাম জানান, গতকাল জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতাল আইসোলেশন একজনের মৃত্যু হয়েছে। করোনা উপসর্গ নিয়ে ইয়োলো জোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে আরও একজনের। এছাড়াও করোনা আক্রান্ত হয়ে জেলায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর পর করোনা প্রটোকলে নিহতের লাশ পরিবারের সদস্যদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে জেলায় আক্রান্ত হয়ে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে মৃত্যু হয়েছে মোট ১৪৬ জনের ও জেলার বাইরে মৃত্যু হয়েছে আরও ১৭ জনের।
জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ করোনা পরীক্ষার জন্য গত শুক্রবার ৫৪টি, শনিবার ৩৮৬টি ও রোববার ৩৭০টি নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষার জন্য কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করে। গতকাল উক্ত নমুনা ও পূর্বের পেন্ডিং নমুনার মধ্যে ৩৫৭টি নমুনার ফলাফল প্রকাশ করে জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ। গতকাল জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ আরও ২৯৬টি নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করেছে।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী জেলা থেকে এ পর্যন্ত মোট নমুনা সংগ্রহ ২০ হাজার ৮৭টি, প্রাপ্ত ফলাফল ১৯ হাজার ৮৮২টি, পজিটিভ ৫ হাজার ৫১৪ জন। জেলায় বর্তমানে ২ হাজার ৫৬ জন হোম আইসোলেশন ও হাসপাতাল আইসোলেশনে রয়েছে। এর মধ্যে হোম আইসোলেশনে আছে ১ হাজার ৯৩৮ জন ও হাসপাতাল আইসোলেশনে ১১৮ জন। জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ১৬৩ জনের। এর মধ্যে জেলায় আক্রান্ত হয়ে জেলার হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে মৃত্যু হয়েছে ১৪৬ জনের। এছাড়া চুয়াডাঙ্গায় আক্রান্ত অন্য ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে জেলার বাইরে।
মেহেরপুর:
মেহেরপুরে করোনা আক্রান্ত হয়ে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রাত নয়টায় মেহেরপুর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জিন এক্সপার্ট ল্যাবে পরীক্ষিত ৪৯৫টি নমুনার ফলাফল প্রকাশ করে এর মধ্যে ১৬৪টি নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে। নতুন আক্রান্ত ১৬৪ জনের মধ্যে সদর উপজেলার ৬৩ জন, গাংনী উপজেলার ৬৮ জন ও মুজিবনগর উপজেলার ৩৩ জন রয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩৩.১৩ শতাংশ। মেহেরপুর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে মেহেরপুর জেলায় মোট পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ৯০৩ জন। এর মধ্যে সদরে ২৬৪ জন, গাংনীতে ৫২০ ও মুজিবনগরে ১৯৯ জন। এ পর্যন্ত মেহেরপুরে মারা গেছেন মোট ১০১ জন। এর মধ্যে সদর উপজেলার ৪৪ জন, গাংনী ৩৬ জন ও মুজিবনগরে ২১ জন।
সারাদেশ:
দেশে দৈনিক মৃত্যু দুইশ’র নিচে নামছেই না। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে আরও ২৩১ জনের। এ নিয়ে দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১৮ হাজার ১২৫ জনে। এটাই দেশে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। এর আগে ১১ জুলাই দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২৩০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১৩ হাজার ৩২১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে । এ নিয়ে দেশে শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১১ লাখ ১৭ হাজার ৩১০ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৬ হাজার ৪৫১ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হলেও ৪৫ হাজার ১২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। যেখানে শনাক্তের হার ২৯.৫৯ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্তের মোট হার ১৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, একদিনে নতুন করে সুস্থ হয়েছেন ৯ হাজার ৩৩৫ জন। এ নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা ৯ লাখ ৪১ হাজার ৩৪৩ জন। বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মারা যাওয়া ২৩১ জনের ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে চারজন, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ১৭ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৪৪ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৭৪ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৪৩ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৩৩ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৯ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছয়জন, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে একজন রয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে পুরুষ ১৩৬ জন ও মহিলা ৯৫ জন। যাদের মধ্যে বাসায় ১৮ জন ছাড়া বাকিরা হাসপাতালে মারা গেছেন। একই সময়ে বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ ৭৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৩ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৬ জন, খুলনা বিভাগে ৫৭ জন, বরিশাল বিভাগে ছয়জন, সিলেট বিভাগে আটজন, রংপুর বিভাগে ১৭ জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে ১১ জন মারা গেছেন। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ঈদের আগে দেশে করোনায় মৃত্যুর রেকর্ড

আপলোড টাইম : ০৯:২৪:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ জুলাই ২০২১

চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরে করোনা ও উপসর্গে আরও ৯ জনের প্রাণহানি
সারা দেশে করোনায় আরও ২৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ১৩ হাজার ৩২১
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঈদের আগে দেশে করোনায় মৃত্যুর রেকর্ড। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ২৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে গত রোববার ২২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, শনিবার ২০৪ জন, শুক্রবার ১৮৭ জন, বৃহস্পতিবার ২২৬ জন, বুধবার ২১০ জন, মঙ্গলবার ২০৩ জন এবং সোমবার ২২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত এক আটদিনে ১ হাজার ৭০৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দেশে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ১২৫ জনে। গতকাল সারাদেশে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে আরও ১৩ হাজার ৩২১ জনের শরীরে। এদিকে, গতকাল চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৭৯ জনের শরীরে। গতকাল মেহেরপুরে করোনা আক্রান্ত হয়ে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬৪ জন।
চুয়াডাঙ্গা:
চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত হয়ে নতুন তিনজন ও উপসর্গ নিয়ে আরও একজনসহ মোট চারজনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে আরও ৭৯ জনের শরীরে। গতকাল জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ চুয়াডাঙ্গার ৩৫৭টি নমুনার ফলাফল প্রকাশ করে। এর মধ্যে ৭৯টি নমুনার ফলাফল পজিটিভ ও ২৭৮ টি নমুনার ফলাফল নেগেটিভ এসেছে। জেলায় নতুন আক্রান্ত ৭৯ জনের মধ্যে সদর উপজেলার ৩৫ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ১২ জন, দামুড়হুদা উপজেলার ১৮ জন ও জীবননগরের ১৪ জন রয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২২.১২ শতাংশ। এনিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছে ৫ হাজার ৫১৪ জন। আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলার ২ হাজার ৩৭৮ জন, আলমডাঙ্গার ৯৫০ জন, দামুড়হুদায় ১ হাজার ১৩৭ জন ও জীবননগরে এক হাজার ৫৪ জন। গতকাল জেলায় নতুন ১৩৮ জন সুস্থ হয়েছে। এনিয়ে জেলায় মোট সুস্থ হয়েছে ৩ হাজার ২৯৫ জন।
গতকাল জেলায় করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে আরও চাঁরজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যে গত রোববারের একটি মৃত্যু গতকাল যোগ করেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে এ নিয়ে জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ১৬৩ জনের। এর মধ্যে ১৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে জেলায় ও করোনা আক্রান্ত হয়ে আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে জেলার বাইরে। এদিকে, এখন পর্যন্ত জেলায় চিকিৎসা সেবা কাজে নিয়জিত ৮৪ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭১ জন সুস্থ হয়ে তাঁদের কর্মস্থলে পুনঃরায় যোগদান করেছেন। অন্য ১৩ জন প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
গতকাল সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায়, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার নতিপোতা গ্রামের মৃত মতিউর রহমানের ছেলে মাসুদ হোসেন (৭২) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও জেলার জীবননগর ও আলমডাঙ্গায় মৃত্যু হয়েছে আরও দুজনের।
গতকাল করোনা উপসর্গ নিয়ে সদর হাসপাতালের ইয়োলো জোনে মৃত্যু হয়েছে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার রুসতম আলীর ছেলে জয়নাল আলী (৫৪)।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. এ এস এম ফাতেহ্ আকরাম জানান, গতকাল জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতাল আইসোলেশন একজনের মৃত্যু হয়েছে। করোনা উপসর্গ নিয়ে ইয়োলো জোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে আরও একজনের। এছাড়াও করোনা আক্রান্ত হয়ে জেলায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর পর করোনা প্রটোকলে নিহতের লাশ পরিবারের সদস্যদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে জেলায় আক্রান্ত হয়ে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে মৃত্যু হয়েছে মোট ১৪৬ জনের ও জেলার বাইরে মৃত্যু হয়েছে আরও ১৭ জনের।
জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ করোনা পরীক্ষার জন্য গত শুক্রবার ৫৪টি, শনিবার ৩৮৬টি ও রোববার ৩৭০টি নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষার জন্য কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করে। গতকাল উক্ত নমুনা ও পূর্বের পেন্ডিং নমুনার মধ্যে ৩৫৭টি নমুনার ফলাফল প্রকাশ করে জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ। গতকাল জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ আরও ২৯৬টি নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করেছে।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী জেলা থেকে এ পর্যন্ত মোট নমুনা সংগ্রহ ২০ হাজার ৮৭টি, প্রাপ্ত ফলাফল ১৯ হাজার ৮৮২টি, পজিটিভ ৫ হাজার ৫১৪ জন। জেলায় বর্তমানে ২ হাজার ৫৬ জন হোম আইসোলেশন ও হাসপাতাল আইসোলেশনে রয়েছে। এর মধ্যে হোম আইসোলেশনে আছে ১ হাজার ৯৩৮ জন ও হাসপাতাল আইসোলেশনে ১১৮ জন। জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ১৬৩ জনের। এর মধ্যে জেলায় আক্রান্ত হয়ে জেলার হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে মৃত্যু হয়েছে ১৪৬ জনের। এছাড়া চুয়াডাঙ্গায় আক্রান্ত অন্য ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে জেলার বাইরে।
মেহেরপুর:
মেহেরপুরে করোনা আক্রান্ত হয়ে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রাত নয়টায় মেহেরপুর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জিন এক্সপার্ট ল্যাবে পরীক্ষিত ৪৯৫টি নমুনার ফলাফল প্রকাশ করে এর মধ্যে ১৬৪টি নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে। নতুন আক্রান্ত ১৬৪ জনের মধ্যে সদর উপজেলার ৬৩ জন, গাংনী উপজেলার ৬৮ জন ও মুজিবনগর উপজেলার ৩৩ জন রয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩৩.১৩ শতাংশ। মেহেরপুর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে মেহেরপুর জেলায় মোট পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ৯০৩ জন। এর মধ্যে সদরে ২৬৪ জন, গাংনীতে ৫২০ ও মুজিবনগরে ১৯৯ জন। এ পর্যন্ত মেহেরপুরে মারা গেছেন মোট ১০১ জন। এর মধ্যে সদর উপজেলার ৪৪ জন, গাংনী ৩৬ জন ও মুজিবনগরে ২১ জন।
সারাদেশ:
দেশে দৈনিক মৃত্যু দুইশ’র নিচে নামছেই না। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে আরও ২৩১ জনের। এ নিয়ে দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১৮ হাজার ১২৫ জনে। এটাই দেশে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। এর আগে ১১ জুলাই দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২৩০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১৩ হাজার ৩২১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে । এ নিয়ে দেশে শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১১ লাখ ১৭ হাজার ৩১০ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৬ হাজার ৪৫১ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হলেও ৪৫ হাজার ১২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। যেখানে শনাক্তের হার ২৯.৫৯ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্তের মোট হার ১৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, একদিনে নতুন করে সুস্থ হয়েছেন ৯ হাজার ৩৩৫ জন। এ নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা ৯ লাখ ৪১ হাজার ৩৪৩ জন। বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মারা যাওয়া ২৩১ জনের ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে চারজন, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ১৭ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৪৪ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৭৪ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৪৩ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৩৩ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৯ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছয়জন, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে একজন রয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে পুরুষ ১৩৬ জন ও মহিলা ৯৫ জন। যাদের মধ্যে বাসায় ১৮ জন ছাড়া বাকিরা হাসপাতালে মারা গেছেন। একই সময়ে বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ ৭৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৩ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৬ জন, খুলনা বিভাগে ৫৭ জন, বরিশাল বিভাগে ছয়জন, সিলেট বিভাগে আটজন, রংপুর বিভাগে ১৭ জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে ১১ জন মারা গেছেন। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।