ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ইসিই মানছে না নির্বাচনী আইন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:২১:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ মার্চ ২০১৯
  • / ৩৪১ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ ডেস্ক:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ব্যয়ের হিসাব সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারদের কাছে জমা দেওয়ার শেষ সময় পার হয়ে গেছে ৩০ জানুয়ারি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুসারে রিটার্নিং অফিসাররা ওই ব্যয় বিবরণী নির্বাচন কমিশনে (ইসি) পাঠাবেন এবং তা কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। কিন্তু সময় শেষ হওয়ার এক মাস পরও তা ইসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও জানেন না কতজন প্রার্থী এই বিধান প্রতিপালন করেছেন।
এ ছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন শেষে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। নির্বাচিত প্রার্থীরা শপথ নিয়েছেন গত ২০ ফেব্রুয়ারি। অথচ সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের ব্যক্তিগত আট তথ্যসংবলিত হলফনামা গত সোমবার পর্যন্ত ইসির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়নি। এর ফলে এবার যে ৪৯ জন নারী সংসদ সদস্য হলেন তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, সম্পদ এসব তথ্য এখনো সাধারণ নাগরিকের জানার বাইরে। এতেও আদালতের নির্দেশ ও নির্বাচনী আইনের লঙ্ঘন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে প্রার্থীর হলফনামার তথ্য প্রকাশ করে আসছে ইসি। মূলত প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিলের পরপরই হলফনামা প্রকাশ করা হয়। সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্যদের জন্যও একই বিধান প্রযোজ্য। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর অনুষ্ঠিত ওই সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের পরপরই তাঁদের হলফনামা প্রকাশ করা হয়। এর মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক ও সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রার্থীদের ঋণ ও বিল সংক্রান্ত তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ পায়। সে নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় বিটিসিএলের টেলিফোন বিল খেলাপের অভিযোগে রিটার্নিং অফিসার দুই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিলেন।
জানা যায়, গত ১০ ফেব্রুয়ারি ইসি সচিবালয় রিটার্নিং অফিসারদের দেওয়া একটি চিঠিতে সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থীদের হলফনামা প্রচারের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টের নির্দেশনা এবং আরপিওর সংশ্লিষ্ট বিধান স্মরণ করিয়ে দেয়। এর পরও এই বাধ্যবাধকতা মানা হয়নি। ওই নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও ইসি সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আবুল কাসেম এ বিষয়ে গত রোববার বলেন, ‘ব্যস্ততার কারণে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্যের হলফনামা এখনো প্রকাশ করা যায়নি। আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
একাদশ জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থীদের ব্যয় বিবরণী সম্পর্কে ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কমিশন থেকে এ বিষয়ে রিটার্নিং অফিসারদের কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি। এই হিসাব ইসির ওয়েবসাইটে কবে প্রকাশিত হবে, তা-ও বলতে পারছেন না তাঁরা। অথচ আরপিওর ৪৪ডি(৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে ইসির ওয়েবসাইটে প্রার্থীদের ব্যয় বিবরণী জনগণের অবগতির জন্য প্রকাশ করতে হবে।
আরপিওর ৪৪-সি অনুচ্ছেদের (১) দফার বিধান অনুসারে নির্বাচিত প্রার্থীর নাম সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে প্রার্থী বা প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টকে নির্ধারিত ফরমে এফিডেভিটসহ সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব দাখিল করতে হবে। একই সঙ্গে এর অনুলিপি রেজিস্টার্ড ডাকযোগে ইসি সচিবালয়ে পাঠাতে হবে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়ালে এ সম্পর্কে বলা আছে, বিজয়ী/পরাজিত সব প্রার্থীর জন্যই নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব দাখিল বাধ্যতামূলক। এই বিধান লঙ্ঘনের শাস্তি দুই থেকে সাত বছর পর্যন্ত কারাদ- ও অর্থদ-। দশম সংসদ নির্বাচনেও ইসি অনেক দেরিতে প্রার্থীদের ব্যয় বিবরণী সম্পর্কে খোঁজ শুরু করেছিল। সে সময় ইসির জোর তাগাদার কারণে রিটার্নিং অফিসাররা অনেক প্রার্থীর ব্যয় বিবরণী পাঠানো শুরু করেন নির্বাচনের ফল প্রকাশের প্রায় দুই মাস পর। এর মধ্যে বেশ কিছু ব্যয় বিবরণী ছিল দায়সারা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর জন্য ভোটারপ্রতি গড় ব্যয় ১০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ব্যয় ২৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল ইসি। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মোট এক হাজার ৮৬১ জন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ইসিই মানছে না নির্বাচনী আইন

আপলোড টাইম : ১১:২১:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ মার্চ ২০১৯

সমীকরণ ডেস্ক:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ব্যয়ের হিসাব সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারদের কাছে জমা দেওয়ার শেষ সময় পার হয়ে গেছে ৩০ জানুয়ারি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুসারে রিটার্নিং অফিসাররা ওই ব্যয় বিবরণী নির্বাচন কমিশনে (ইসি) পাঠাবেন এবং তা কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। কিন্তু সময় শেষ হওয়ার এক মাস পরও তা ইসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও জানেন না কতজন প্রার্থী এই বিধান প্রতিপালন করেছেন।
এ ছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন শেষে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। নির্বাচিত প্রার্থীরা শপথ নিয়েছেন গত ২০ ফেব্রুয়ারি। অথচ সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের ব্যক্তিগত আট তথ্যসংবলিত হলফনামা গত সোমবার পর্যন্ত ইসির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়নি। এর ফলে এবার যে ৪৯ জন নারী সংসদ সদস্য হলেন তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, সম্পদ এসব তথ্য এখনো সাধারণ নাগরিকের জানার বাইরে। এতেও আদালতের নির্দেশ ও নির্বাচনী আইনের লঙ্ঘন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে প্রার্থীর হলফনামার তথ্য প্রকাশ করে আসছে ইসি। মূলত প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিলের পরপরই হলফনামা প্রকাশ করা হয়। সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্যদের জন্যও একই বিধান প্রযোজ্য। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর অনুষ্ঠিত ওই সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের পরপরই তাঁদের হলফনামা প্রকাশ করা হয়। এর মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক ও সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রার্থীদের ঋণ ও বিল সংক্রান্ত তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ পায়। সে নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় বিটিসিএলের টেলিফোন বিল খেলাপের অভিযোগে রিটার্নিং অফিসার দুই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিলেন।
জানা যায়, গত ১০ ফেব্রুয়ারি ইসি সচিবালয় রিটার্নিং অফিসারদের দেওয়া একটি চিঠিতে সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থীদের হলফনামা প্রচারের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টের নির্দেশনা এবং আরপিওর সংশ্লিষ্ট বিধান স্মরণ করিয়ে দেয়। এর পরও এই বাধ্যবাধকতা মানা হয়নি। ওই নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও ইসি সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আবুল কাসেম এ বিষয়ে গত রোববার বলেন, ‘ব্যস্ততার কারণে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্যের হলফনামা এখনো প্রকাশ করা যায়নি। আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
একাদশ জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থীদের ব্যয় বিবরণী সম্পর্কে ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কমিশন থেকে এ বিষয়ে রিটার্নিং অফিসারদের কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি। এই হিসাব ইসির ওয়েবসাইটে কবে প্রকাশিত হবে, তা-ও বলতে পারছেন না তাঁরা। অথচ আরপিওর ৪৪ডি(৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে ইসির ওয়েবসাইটে প্রার্থীদের ব্যয় বিবরণী জনগণের অবগতির জন্য প্রকাশ করতে হবে।
আরপিওর ৪৪-সি অনুচ্ছেদের (১) দফার বিধান অনুসারে নির্বাচিত প্রার্থীর নাম সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে প্রার্থী বা প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টকে নির্ধারিত ফরমে এফিডেভিটসহ সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব দাখিল করতে হবে। একই সঙ্গে এর অনুলিপি রেজিস্টার্ড ডাকযোগে ইসি সচিবালয়ে পাঠাতে হবে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়ালে এ সম্পর্কে বলা আছে, বিজয়ী/পরাজিত সব প্রার্থীর জন্যই নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব দাখিল বাধ্যতামূলক। এই বিধান লঙ্ঘনের শাস্তি দুই থেকে সাত বছর পর্যন্ত কারাদ- ও অর্থদ-। দশম সংসদ নির্বাচনেও ইসি অনেক দেরিতে প্রার্থীদের ব্যয় বিবরণী সম্পর্কে খোঁজ শুরু করেছিল। সে সময় ইসির জোর তাগাদার কারণে রিটার্নিং অফিসাররা অনেক প্রার্থীর ব্যয় বিবরণী পাঠানো শুরু করেন নির্বাচনের ফল প্রকাশের প্রায় দুই মাস পর। এর মধ্যে বেশ কিছু ব্যয় বিবরণী ছিল দায়সারা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর জন্য ভোটারপ্রতি গড় ব্যয় ১০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ব্যয় ২৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল ইসি। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মোট এক হাজার ৮৬১ জন।