ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ইউনেস্কোর কথায় কিছু যায় আসে না : রিজভী

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:৪৮:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ জুলাই ২০১৭
  • / ৩৪১ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ ডেস্ক: বাগেরহাটের রামপালে নির্মাণাধীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে জাতিসংঘের শিক্ষা ও বিজ্ঞান বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর আপত্তি থেকে সরে আসায় বাংলাদেশের কিছু যায় আসে না। এমন মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘আমরা রামপাল চাই না। আমরা এই বিধ্বংসী প্রকল্পের বিরুদ্ধে।’ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। ‘বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও সাবেক বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবেদিন ফারুকসহ সকল নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে’ এ মানববন্ধনের আয়োজন করে স্বাধীনতা ফোরাম নামের বিএনপিপন্থী একটি সংগঠন। রিজভী বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে সুন্দরবন ধ্বংস করতেই রামপালের এই প্রকল্প শেখ হাসিনাকে দিয়ে ভারত তৈরি করছে। অথচ ভারত নিজেদের দেশে এ ধরনের প্রকল্প নির্মাণ করতে দেয় না।’ ২০১৩ সালে সুন্দরবনের অদূরে বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ২০১৯ সালের মধ্যে উৎপাদনে আসার লক্ষ্য নিয়ে ভারতের একটি কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে নেয়া এই প্রকল্পের শুরু থেকেই বিরোধিতায় নামে পরিবেশবাদী ও বামপন্থি বিভিন্ন সংগঠন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও গত বছরের মাঝামাঝিতে সংবাদ সম্মেলন করে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের দাবি জানান। বিরোধীদের অভিযোগ, এই বিদ্যুৎ প্রকল্প বিশ্ব ঐহিত্যের অংশ সুন্দরবনের বিনাশ নিয়ে আসবে। এটি কলকাতা থেকে নরসিংদী পর্যন্ত বিপর্যয় নিয়ে আসবে বলেও দাবি করা হয়েছে একটি সংস্থার পক্ষ থেকে। তবে বিদ্যুৎ প্রকল্পটি সুন্দরবনের প্রান্তসীমা থেকে ১৪ কিলোমিটার এবং সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্য থেকে ৮৬ কিলোমিটার দূরে জানিয়ে সরকার বলছে, সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এই বিদ্যুৎকেন্দ্র কোনোভাবেই দূষণ ছড়াবে না। বরং এই প্রকল্প স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের সুযোগ করবে। ফলে তারা আগের মতো সুন্দরবনে গিয়ে সম্পদ আহরণ করবে না। এতে বনের ক্ষতির বদলে ভালো হবে। প্রকল্প এলাকাতেও সাড়ে পাঁচ লাখ গাছ লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। তবে গত বছরের অক্টোবরে ইউনেস্কোও এই প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে সরকারকে চিঠি লিখে। এই চিঠির পর রামপালবিরোধীরা বিষয়টিকে সামনে তুলে আনে। তবে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পোল্যান্ডে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৪১তম অধিবেশনে রামপাল নিয়ে আপত্তি থেকে ইউনেস্কোর সরে আসার ঘোষণা এসেছে। তবে রিজভী রামপাল নিয়ে আপত্তি জানিয়েই যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের যারা পরিবেশবিদ, বিজ্ঞানী তারা কি জ্ঞানী নয়? তারা কি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেননি? তাদের গবেষণার কি কোনও ভিত্তি নেই? বিদেশি সংস্থা কী বলছে তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না।’ প্রকৃত বিরোধী দলকে সরকার হত্যা- গুম করছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী। বলেন, ‘সরকারের রোষানলেই প্রতিটি মুহূর্তেই প্রতিবাদের মধ্যে থাকতে হচ্ছে বিএনপিকে।’ বিএনপি নেতা বলেন, ‘একটি গুমের সংবাদের পরেই আমরা মুহূর্তের মধ্যে শুনতে পাই অন্য কোথাও আমাদের অন্য এক সতীর্থকে ক্রসফায়ারে হত্যা করে লাশ গুম করা হয়েছে। চরম এ দু:সময়ের মধ্যেই হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গুম-খুন ও হত্যার প্রতিবেদন দিয়েছে।’ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে অভিযোগ করেছে, গত চার বছরে বাংলাদেশে কয়েকশ বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মী বা তাদের স্বজনকে গুম বা গোপনে আটক করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এই প্রতিবেদনকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও সংস্থাটির তথ্যের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে রিজভী বলেন, ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যে তথ্য দিয়েছে, প্রকৃত তথ্য তার চেয়ে আরও কঠিন। আওয়ামী লীগ নেতারা প্রশ্ন তুলেছে এ তথ্য কোথায় পেল। আমি বলব, দেশের খেটে খাওয়া মানুষ রিকসা, বাস, ট্রাক চালককে জিজ্ঞেস করলে তথ্য পেয়ে যাবেন।’ ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ তথ্য কোথায় পেল’- ওবায়দুল কাদেরর এমন বক্তব্যের জবাবে রিজভী বলেন, ‘সিলেটের ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলমের পরিবারের সাথে কথা বলুন তথ্য-উপাত্ত পেয়ে যাবেন।’ দুর্নীতি মামলায় অভিযোগপত্র দেয়ার পর গাজীপুরের মেয়র এম এ মান্নানকে আবারও বরখাস্ত করার সমালোচনা করেন রিজভী। বলেন, ‘জনবিরোধী সরকার নিজেদের নেতাকর্মীদের আখের গোছানোর জন্য নির্বাচিত প্রতিনিধির উপর নির্যাতন চালাচ্ছে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ইউনেস্কোর কথায় কিছু যায় আসে না : রিজভী

আপলোড টাইম : ০৫:৪৮:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ জুলাই ২০১৭

সমীকরণ ডেস্ক: বাগেরহাটের রামপালে নির্মাণাধীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে জাতিসংঘের শিক্ষা ও বিজ্ঞান বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর আপত্তি থেকে সরে আসায় বাংলাদেশের কিছু যায় আসে না। এমন মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘আমরা রামপাল চাই না। আমরা এই বিধ্বংসী প্রকল্পের বিরুদ্ধে।’ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। ‘বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও সাবেক বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবেদিন ফারুকসহ সকল নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে’ এ মানববন্ধনের আয়োজন করে স্বাধীনতা ফোরাম নামের বিএনপিপন্থী একটি সংগঠন। রিজভী বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে সুন্দরবন ধ্বংস করতেই রামপালের এই প্রকল্প শেখ হাসিনাকে দিয়ে ভারত তৈরি করছে। অথচ ভারত নিজেদের দেশে এ ধরনের প্রকল্প নির্মাণ করতে দেয় না।’ ২০১৩ সালে সুন্দরবনের অদূরে বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ২০১৯ সালের মধ্যে উৎপাদনে আসার লক্ষ্য নিয়ে ভারতের একটি কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে নেয়া এই প্রকল্পের শুরু থেকেই বিরোধিতায় নামে পরিবেশবাদী ও বামপন্থি বিভিন্ন সংগঠন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও গত বছরের মাঝামাঝিতে সংবাদ সম্মেলন করে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের দাবি জানান। বিরোধীদের অভিযোগ, এই বিদ্যুৎ প্রকল্প বিশ্ব ঐহিত্যের অংশ সুন্দরবনের বিনাশ নিয়ে আসবে। এটি কলকাতা থেকে নরসিংদী পর্যন্ত বিপর্যয় নিয়ে আসবে বলেও দাবি করা হয়েছে একটি সংস্থার পক্ষ থেকে। তবে বিদ্যুৎ প্রকল্পটি সুন্দরবনের প্রান্তসীমা থেকে ১৪ কিলোমিটার এবং সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্য থেকে ৮৬ কিলোমিটার দূরে জানিয়ে সরকার বলছে, সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এই বিদ্যুৎকেন্দ্র কোনোভাবেই দূষণ ছড়াবে না। বরং এই প্রকল্প স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের সুযোগ করবে। ফলে তারা আগের মতো সুন্দরবনে গিয়ে সম্পদ আহরণ করবে না। এতে বনের ক্ষতির বদলে ভালো হবে। প্রকল্প এলাকাতেও সাড়ে পাঁচ লাখ গাছ লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। তবে গত বছরের অক্টোবরে ইউনেস্কোও এই প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে সরকারকে চিঠি লিখে। এই চিঠির পর রামপালবিরোধীরা বিষয়টিকে সামনে তুলে আনে। তবে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পোল্যান্ডে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৪১তম অধিবেশনে রামপাল নিয়ে আপত্তি থেকে ইউনেস্কোর সরে আসার ঘোষণা এসেছে। তবে রিজভী রামপাল নিয়ে আপত্তি জানিয়েই যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের যারা পরিবেশবিদ, বিজ্ঞানী তারা কি জ্ঞানী নয়? তারা কি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেননি? তাদের গবেষণার কি কোনও ভিত্তি নেই? বিদেশি সংস্থা কী বলছে তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না।’ প্রকৃত বিরোধী দলকে সরকার হত্যা- গুম করছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী। বলেন, ‘সরকারের রোষানলেই প্রতিটি মুহূর্তেই প্রতিবাদের মধ্যে থাকতে হচ্ছে বিএনপিকে।’ বিএনপি নেতা বলেন, ‘একটি গুমের সংবাদের পরেই আমরা মুহূর্তের মধ্যে শুনতে পাই অন্য কোথাও আমাদের অন্য এক সতীর্থকে ক্রসফায়ারে হত্যা করে লাশ গুম করা হয়েছে। চরম এ দু:সময়ের মধ্যেই হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গুম-খুন ও হত্যার প্রতিবেদন দিয়েছে।’ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে অভিযোগ করেছে, গত চার বছরে বাংলাদেশে কয়েকশ বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মী বা তাদের স্বজনকে গুম বা গোপনে আটক করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এই প্রতিবেদনকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও সংস্থাটির তথ্যের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে রিজভী বলেন, ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যে তথ্য দিয়েছে, প্রকৃত তথ্য তার চেয়ে আরও কঠিন। আওয়ামী লীগ নেতারা প্রশ্ন তুলেছে এ তথ্য কোথায় পেল। আমি বলব, দেশের খেটে খাওয়া মানুষ রিকসা, বাস, ট্রাক চালককে জিজ্ঞেস করলে তথ্য পেয়ে যাবেন।’ ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ তথ্য কোথায় পেল’- ওবায়দুল কাদেরর এমন বক্তব্যের জবাবে রিজভী বলেন, ‘সিলেটের ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলমের পরিবারের সাথে কথা বলুন তথ্য-উপাত্ত পেয়ে যাবেন।’ দুর্নীতি মামলায় অভিযোগপত্র দেয়ার পর গাজীপুরের মেয়র এম এ মান্নানকে আবারও বরখাস্ত করার সমালোচনা করেন রিজভী। বলেন, ‘জনবিরোধী সরকার নিজেদের নেতাকর্মীদের আখের গোছানোর জন্য নির্বাচিত প্রতিনিধির উপর নির্যাতন চালাচ্ছে।’