ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আস্থা ফিরছে না চিকিৎসা সেবায়

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২৩:৩৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই ২০২০
  • / ১৮৭ বার পড়া হয়েছে

কভিড নন-কভিড কোনো রোগী যাচ্ছে না হাসপাতালে, ভোগান্তি সীমাহীন
সমীকরণ প্রতিবেদন:
করোনাভাইরাস মহামারীতে দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে অব্যবস্থাপনা, প্রতারণা, ভোগান্তির কারণে হাসপাতাল বিমুখ হচ্ছে রোগীরা। করোনা আক্রান্ত রোগীরা বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। সব হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি থাকায় হাসপাতালগুলোয় যাচ্ছেন না সাধারণ রোগীরা। আউটডোর, প্যাথলজি রোগী শূন্য হয়ে পড়েছে। চিকিৎসা সেবায় আস্থা পাচ্ছেন না রোগীরা।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরানোর বিষয়ে আমি সবার সহযোগিতা চাই। আপনারা এক-দুই মাস দেখেন আমরা কাজ করি, তারপর মূল্যায়ন করবেন। সবার সহযোগিতা পেলে আমরা অবশ্যই আস্থা ফেরাতে পারব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, সরকারি-বেসরকারি এখন সব হাসপাতালই করোনা রোগী নিয়ে ব্যস্ত। অন্য রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে তাদের মাথা ব্যথা নেই। অনেক জটিল রোগীও নানা ভোগান্তিতে পড়ছে। এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতাল ঘুরে ঘুরে রোগী মারাও যাচ্ছে। করোনা টেস্ট না করে এলে কেউ ভর্তিও করাতে চায় না। সারা দিন-রাত বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে তার সন্তান ভর্তি করাতে পারল না-এসব ঘটনা জানাজানি হওয়ার কারণে হাসপাতালের প্রতি মানুষের এক ধরনের অনাস্থাও তৈরি হয়। চলমান পরিস্থিতির শেষ কোথায় জানি না। করোনা কবে শেষ হবে, তাও জানি না। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, সারা দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য নির্ধারিত শয্যার সংখ্যা ১৫ হাজার ১৮২টি। গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত শয্যা খালি ছিল ১১ হাজার ৩৯টি। রাজধানীতে নির্ধারিত হাসপাতালে শয্যা ৭ হাজার ৪টি, এর মধ্যে খালি আছে ৪ হাজার ৮৭৯টি। চট্টগ্রামে করোনা রোগীদের জন্য বরাদ্দ শয্যা ৭৬২টি, খালি আছে ৪৫৩টি। করোনা আক্রান্ত অর্ধেক রোগীও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে না। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৭৭২ জন। আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীই বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিদিন গড়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আড়াই হাজার। হাসপাতালের সেবা ভোগান্তি, অব্যবস্থাপনায় হাসপাতাল বিমুখ হয়ে উঠেছেন রোগীরা। প্রথম দিকে রোগীর চাপ সামাল দিতে দ্রুত হাসপাতাল নির্মাণ শুরু করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি মার্কেটকে কভিড হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হয়। ১ হাজার ৫০০ শয্যার হাসপাতাল তৈরি করা হয় করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। কিন্তু এখন সেখানে রোগী ভর্তি না করে সেটাকে বিদেশগামী যাত্রীদের নমুনা সংরক্ষণের বুথ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল বলেছেন, করোনা যখন শুরু হয়, তখন সর্বত্রই এক ধরনের অস্থিরতা ছিল। তখন লোকজন মনে করত, করোনা হলেই সবাই মারা যাবে। করোনার উপসর্গ থাকলেই সবাই হাসপাতালে ভর্তির চেষ্টা করত। তখন দুই-চারটা হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা হতো। তখনই ঝামেলা হয়। যখন সরকারি ও বেসরকারি ৫০ শয্যার বেশি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা শুরু হয়, তখন উচ্চ মধ্যবিত্তরা চলে গেল প্রাইভেট হাসপাতালে। নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা সরকারি হাসপাতালে। ঢাকা শহরে আগে দু-একটি হাসপাতালে করোনা রোগী ছিল এখন অন্তত ২৫টি হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। হাসপাতাল বেশি হওয়ায় রোগীরা ভাগ হয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালের প্রতি অনাস্থা, রোগী কম যাচ্ছে-এটা বলা ঠিক হবে না। এ ছাড়া রোগীরা গণমাধ্যমের সুবাদে বুঝে গেছে, হালকা জ্বর বা কাশিতে হাসপাতালে যাওয়া জরুরি নয়। এ জন্য বড় একটি অংশ বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছে। নন-কভিড রোগীরাও হাসপাতালে যেতে চাচ্ছে না। কারণ, এখনো করোনা পরিস্থিতি শেষ হয়নি। ভয় ও সতর্কতার কারণে অন্য রোগীরাও পারতপক্ষে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না। হাসপাতালে যাচ্ছেন না সাধারণ রোগীরাও। সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সরকারিভাবে। সব হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি করায় সাধারণ রোগীরা ঝুঁকিতে পড়েছেন। জরুরি পরিস্থিতি তৈরি না হলে কেউ হাসপাতালে যাচ্ছেন না। সবচেয়ে অসুবিধায় পড়েছেন কিডনি রোগী ও ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী প্রীতম হাসান বলেন, ‘আমার স্ত্রী তিন বছর ধরে কিডনি সমস্যায় ভুগছে। প্রতি সপ্তাহে ডায়ালাইসিস করতে হয়। কোন হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করাব সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছি। অধিকাংশ হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি। কোনোভাবে আক্রান্ত ব্যক্তির ডায়ালাইসিস করা মেশিনে যদি আমার স্ত্রীর ডায়ালাইসিস করা হয়, তাহলে তাকে আর বাঁচানো যাবে না। প্রতি সপ্তাহে ভয় নিয়ে হাসপাতালে যাই। এমনিতেই ডায়ালাইসিসে অনেক ঝুঁকি থাকে তারপরে করোনায় বিপদ আরও বেড়েছে।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপপরিচালক ডা. মুখলেসুজ্জামান হিরো বলেন, সারা বিশ্বের মতো করোনাভাইরাস বাংলাদেশে অনেক দিন থেকেই চলছে। প্রথমদিকে মানুষ এ চিকিৎসা বুঝে উঠতে পারেনি। কোনো দিক নির্দেশনাও পায়নি। তারা সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে যে যেখানে পেরেছে সেখানেই দৌড়াদৌড়ি করেছে। এ কারণে যথাযথ চিকিৎসা তারা পায়নি। ঘুরতে ঘুরতে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এরপর সরকারি হাসপাতালগুলো চেষ্টা করছে, কীভাবে ভালো চিকিৎসা করা যায়। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে সেবার চেয়ে ব্যবসার মনোভাবই বেশি। তারা হাসপাতালে চিকিৎসার নামে ব্যবসা করে। কিন্তু হাসপাতালগুলোর ব্যবসা ও অব্যবস্থাপনার কারণে, সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা ও সেবা না পাওয়ার কারণেই মূলত মানুষের মনে অনাস্থার মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রামক রোগ। এ জন্য মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে তাতে ঘরে চিকিৎসা নেওয়াই ভালো। তবে কোনো রোগীর অবস্থা জটিল হলে সেক্ষেত্রে হাসপাতালে যেতে পারে। বিপদে পড়েছেন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা। প্রতিটা থেরাপির আগে রোগীদের করোনা পরীক্ষা করাতে হয়। নেগেটিভ সনদ মিললে তবেই দেওয়া হবে থেরাপি। প্রতি থেরাপির আগে নমুনা দিতে ভোগান্তি পোহাতে হয় রোগী ও তার স্বজনদের। বারবার হাসপাতালে নমুনার লাইনে দাঁড়ানোর কারণে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে। ছয় মাস আগে মিরপুরের মুদি দোকানি এন্তাজুল হোসেনের মায়ের ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ে। এরপর শুরু হয় থেরাপি। তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত দুটি থেরাপি দেওয়া হয়েছে। প্রতিবার থেরাপি দেওয়ার আগে করোনামুক্ত সনদ নিয়ে যেতে হয়। মাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে নমুনা দেওয়া খুব মুশকিল হয়ে যায়। ক্যান্সার জীবাণুর সঙ্গে শরীর লড়ছে। কিন্তু এর মধ্যে কোনোভাবে করোনা আক্রান্ত হলে কী হবে সেটা নিয়ে আমরা খুব দুশ্চিন্তায় আছি।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আস্থা ফিরছে না চিকিৎসা সেবায়

আপলোড টাইম : ০৯:২৩:৩৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই ২০২০

কভিড নন-কভিড কোনো রোগী যাচ্ছে না হাসপাতালে, ভোগান্তি সীমাহীন
সমীকরণ প্রতিবেদন:
করোনাভাইরাস মহামারীতে দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে অব্যবস্থাপনা, প্রতারণা, ভোগান্তির কারণে হাসপাতাল বিমুখ হচ্ছে রোগীরা। করোনা আক্রান্ত রোগীরা বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। সব হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি থাকায় হাসপাতালগুলোয় যাচ্ছেন না সাধারণ রোগীরা। আউটডোর, প্যাথলজি রোগী শূন্য হয়ে পড়েছে। চিকিৎসা সেবায় আস্থা পাচ্ছেন না রোগীরা।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরানোর বিষয়ে আমি সবার সহযোগিতা চাই। আপনারা এক-দুই মাস দেখেন আমরা কাজ করি, তারপর মূল্যায়ন করবেন। সবার সহযোগিতা পেলে আমরা অবশ্যই আস্থা ফেরাতে পারব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, সরকারি-বেসরকারি এখন সব হাসপাতালই করোনা রোগী নিয়ে ব্যস্ত। অন্য রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে তাদের মাথা ব্যথা নেই। অনেক জটিল রোগীও নানা ভোগান্তিতে পড়ছে। এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতাল ঘুরে ঘুরে রোগী মারাও যাচ্ছে। করোনা টেস্ট না করে এলে কেউ ভর্তিও করাতে চায় না। সারা দিন-রাত বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে তার সন্তান ভর্তি করাতে পারল না-এসব ঘটনা জানাজানি হওয়ার কারণে হাসপাতালের প্রতি মানুষের এক ধরনের অনাস্থাও তৈরি হয়। চলমান পরিস্থিতির শেষ কোথায় জানি না। করোনা কবে শেষ হবে, তাও জানি না। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, সারা দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য নির্ধারিত শয্যার সংখ্যা ১৫ হাজার ১৮২টি। গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত শয্যা খালি ছিল ১১ হাজার ৩৯টি। রাজধানীতে নির্ধারিত হাসপাতালে শয্যা ৭ হাজার ৪টি, এর মধ্যে খালি আছে ৪ হাজার ৮৭৯টি। চট্টগ্রামে করোনা রোগীদের জন্য বরাদ্দ শয্যা ৭৬২টি, খালি আছে ৪৫৩টি। করোনা আক্রান্ত অর্ধেক রোগীও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে না। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৭৭২ জন। আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীই বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিদিন গড়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আড়াই হাজার। হাসপাতালের সেবা ভোগান্তি, অব্যবস্থাপনায় হাসপাতাল বিমুখ হয়ে উঠেছেন রোগীরা। প্রথম দিকে রোগীর চাপ সামাল দিতে দ্রুত হাসপাতাল নির্মাণ শুরু করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি মার্কেটকে কভিড হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হয়। ১ হাজার ৫০০ শয্যার হাসপাতাল তৈরি করা হয় করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। কিন্তু এখন সেখানে রোগী ভর্তি না করে সেটাকে বিদেশগামী যাত্রীদের নমুনা সংরক্ষণের বুথ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল বলেছেন, করোনা যখন শুরু হয়, তখন সর্বত্রই এক ধরনের অস্থিরতা ছিল। তখন লোকজন মনে করত, করোনা হলেই সবাই মারা যাবে। করোনার উপসর্গ থাকলেই সবাই হাসপাতালে ভর্তির চেষ্টা করত। তখন দুই-চারটা হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা হতো। তখনই ঝামেলা হয়। যখন সরকারি ও বেসরকারি ৫০ শয্যার বেশি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা শুরু হয়, তখন উচ্চ মধ্যবিত্তরা চলে গেল প্রাইভেট হাসপাতালে। নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা সরকারি হাসপাতালে। ঢাকা শহরে আগে দু-একটি হাসপাতালে করোনা রোগী ছিল এখন অন্তত ২৫টি হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। হাসপাতাল বেশি হওয়ায় রোগীরা ভাগ হয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালের প্রতি অনাস্থা, রোগী কম যাচ্ছে-এটা বলা ঠিক হবে না। এ ছাড়া রোগীরা গণমাধ্যমের সুবাদে বুঝে গেছে, হালকা জ্বর বা কাশিতে হাসপাতালে যাওয়া জরুরি নয়। এ জন্য বড় একটি অংশ বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছে। নন-কভিড রোগীরাও হাসপাতালে যেতে চাচ্ছে না। কারণ, এখনো করোনা পরিস্থিতি শেষ হয়নি। ভয় ও সতর্কতার কারণে অন্য রোগীরাও পারতপক্ষে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না। হাসপাতালে যাচ্ছেন না সাধারণ রোগীরাও। সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সরকারিভাবে। সব হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি করায় সাধারণ রোগীরা ঝুঁকিতে পড়েছেন। জরুরি পরিস্থিতি তৈরি না হলে কেউ হাসপাতালে যাচ্ছেন না। সবচেয়ে অসুবিধায় পড়েছেন কিডনি রোগী ও ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী প্রীতম হাসান বলেন, ‘আমার স্ত্রী তিন বছর ধরে কিডনি সমস্যায় ভুগছে। প্রতি সপ্তাহে ডায়ালাইসিস করতে হয়। কোন হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করাব সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছি। অধিকাংশ হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি। কোনোভাবে আক্রান্ত ব্যক্তির ডায়ালাইসিস করা মেশিনে যদি আমার স্ত্রীর ডায়ালাইসিস করা হয়, তাহলে তাকে আর বাঁচানো যাবে না। প্রতি সপ্তাহে ভয় নিয়ে হাসপাতালে যাই। এমনিতেই ডায়ালাইসিসে অনেক ঝুঁকি থাকে তারপরে করোনায় বিপদ আরও বেড়েছে।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপপরিচালক ডা. মুখলেসুজ্জামান হিরো বলেন, সারা বিশ্বের মতো করোনাভাইরাস বাংলাদেশে অনেক দিন থেকেই চলছে। প্রথমদিকে মানুষ এ চিকিৎসা বুঝে উঠতে পারেনি। কোনো দিক নির্দেশনাও পায়নি। তারা সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে যে যেখানে পেরেছে সেখানেই দৌড়াদৌড়ি করেছে। এ কারণে যথাযথ চিকিৎসা তারা পায়নি। ঘুরতে ঘুরতে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এরপর সরকারি হাসপাতালগুলো চেষ্টা করছে, কীভাবে ভালো চিকিৎসা করা যায়। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে সেবার চেয়ে ব্যবসার মনোভাবই বেশি। তারা হাসপাতালে চিকিৎসার নামে ব্যবসা করে। কিন্তু হাসপাতালগুলোর ব্যবসা ও অব্যবস্থাপনার কারণে, সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা ও সেবা না পাওয়ার কারণেই মূলত মানুষের মনে অনাস্থার মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রামক রোগ। এ জন্য মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে তাতে ঘরে চিকিৎসা নেওয়াই ভালো। তবে কোনো রোগীর অবস্থা জটিল হলে সেক্ষেত্রে হাসপাতালে যেতে পারে। বিপদে পড়েছেন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা। প্রতিটা থেরাপির আগে রোগীদের করোনা পরীক্ষা করাতে হয়। নেগেটিভ সনদ মিললে তবেই দেওয়া হবে থেরাপি। প্রতি থেরাপির আগে নমুনা দিতে ভোগান্তি পোহাতে হয় রোগী ও তার স্বজনদের। বারবার হাসপাতালে নমুনার লাইনে দাঁড়ানোর কারণে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে। ছয় মাস আগে মিরপুরের মুদি দোকানি এন্তাজুল হোসেনের মায়ের ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ে। এরপর শুরু হয় থেরাপি। তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত দুটি থেরাপি দেওয়া হয়েছে। প্রতিবার থেরাপি দেওয়ার আগে করোনামুক্ত সনদ নিয়ে যেতে হয়। মাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে নমুনা দেওয়া খুব মুশকিল হয়ে যায়। ক্যান্সার জীবাণুর সঙ্গে শরীর লড়ছে। কিন্তু এর মধ্যে কোনোভাবে করোনা আক্রান্ত হলে কী হবে সেটা নিয়ে আমরা খুব দুশ্চিন্তায় আছি।’