ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আলমডাঙ্গায় ভাতিজির সাথে অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকা অবস্থায় আ.লীগ নেতা আটক

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:১১:২১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ অগাস্ট ২০২১
  • / ৩৫ বার পড়া হয়েছে

ভ্রাম্যমাণ প্রতিবেদক, আলমডাঙ্গা:
আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ্ ইউনিয়নের চিলাভালকি গ্রামে ভাতিজির সাথে অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকা অবস্থায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাগরকে (৩৫) আটক করেছে বেরসিক জনতা। অভিযুক্ত সাগর ওই গ্রামের তাহাজুদ্দিনের ছেলে। বিষয়টি লোক জানাজানি হলে রাতেই বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। তাঁরা গ্রামের হুজুর কামরুজ্জামানকে ডেকে সাগর ও রেবেকার সম্পর্ক চাচা-ভাতিজি হওয়া সত্ত্বেও সাদা কাগজে সাক্ষর নিয়ে ৩ লাখ টাকা দেনমোহরে লোক দেখানো বিবাহ সম্পন্ন করেন। তবে এ বিবাহ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা সাগরের প্রথম বিবাহ নয়, সাগরের ঘরে রয়েছে সামাজিক নিয়ম-নীতি মেনে ১০ বছর পূর্বে বিবাহ করা একই ইউনিয়নের জোড়গাছা গ্রামের ভাদালিপাড়ার আবু জাফরের মেয়ে আঁখি খাতুন।
এবিষয়ে রেবেকার বাবা ওহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গত শনিবার রাতে খাওয়া-দাওয়া করে যে যার ঘরে ঘুমাতে যায়। হঠাৎ মধ্যরাতে আমি আমার মেয়ের ঘর থেকে নানা কথার শব্দ শুনতে পাই। শব্দ শুনে উঠে মেয়ের ঘরে গিয়ে দেখি ঘর ভেতর থেকে আটকানো, ঘরের সামনে অনেক মানুষ। কারণ জানতে চাইলে তারা বলে, তোমার মেয়ের ঘরে পুরুষ মানুষ আছে। আমি আমার মেয়েকে ডাক দিলে আমার মেয়ে সাথে সাথে দরজা খুলে দেয় ও আমি চৌকির নিচে লম্পট সাগরকে দেখতে পাই। স্থানীয়রা সাগরকে ধরে ফেলে। আমি আমার মেয়ের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে আমার মেয়ে বলে, “আমাকে প্রায় তিন বছর যাবৎ হত্যার ভয় দেখিয়ে আমার সাথে অনৈতিক সম্পর্ক করে আসছে সাগর। শুধু ঘরে নয়, আমাকে ভয় দেখিয়ে আরও অনেক জায়গায় নিয়ে গিয়ে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনা শুনে স্থানীয়রা সাগরকে উত্তম-মধ্যম দিতে গেলে হাজির হন স্থানীয় একই গ্রামের মৃত ছানোয়ার মণ্ডলের ছেলে স্থানীয় যুবলীগ নেতা হাসিবুল ইসলাম হাসু মিয়া। তিনি সম্পর্কে সাগরের মামা। হাসু মিয়া উপস্থিত হয়ে সাগরের সাথে কথা বলেন ও আমাদের বলেন সাগর রেবেকাকে বিয়ে করবে, সাথে সাথেই সে হুজুর ডেকে নিজেই বিয়ের সাক্ষী হয়ে দায়সারাভাবে আমার মেয়ের সাথে সাগরের বিয়ে দেয়। আমাদের বলে কাল কাজি ডেকে বিবাহ রেজিস্ট্রি করে দেব। কিন্তু সকাল হতেই আমরা কাজি ডাকলেও তারা কোনো রেজিস্ট্রি করে দেয়নি। সাগর বলেছে কোনো রেজিস্ট্রি হবে না। পারলে কিছু করে নাও। সাগরের ঘরে আগের বউ আছে, তাহলে এখন আমার মেয়ের কী হবে। এখন আমার মরা ছাড়া কোনো পথ রইল না। তারা আওয়ামী লীগের নেতা, তাদের গোষ্ঠী বড়, তারা প্রভাবশালী, তাই আমি কিছুই করতে পারছি না।’
এবিষয়ে সাগর বলেন, ‘আমি কারো ঘরে যাইনি, আমাকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে আমার সাথে এসব রটিয়েছে। আমাকে জিম্মি করে আমার সাথে বিবাহ দিয়েছে, আমি কোনো অপরাধ করিনি।’
এবিষয়ে মেয়ে রেবেকা খাতুন বলেন, ‘আমার সাথে দীর্ঘদিন যাবত ভয় দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করে আসছিল আমার চাচা সাগর। গত শনিবার রাতে সে আমার ঘরে গেলে স্থানীয় মানুষ ধরে ফেললে সাগর আমাকে ৩ লক্ষ টাকা দেনমোহরে সাদা কাগজে সই করে বিবাহ করেছে। কিন্তু এখন সে বিবাহ কাজি দ্বারা রেজিস্ট্রি করতে নারাজ। তার ঘরে একটি বউ আছে, এখন আমার কি হবে।’
এবিষয়ে স্থানীয় যুবলীগ নেতা হাসিবুল ইসলাম হাসু বলেন, ‘অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে সাগর। পরে সাগর রেবেকাকে বিবাহ করার কথা বললে আমরা স্থানীয়ভাবে তাদের বিবাহ দিয়ে দিয়েছি। তবে সাগর ভালো মানুষ নয়। সাগরের নামে এ রকম অভিযোগ আরও অনেক আছে।’
এবিষয়ে সাগরের প্রথম স্ত্রী আঁখি খাতুন বলেন, ‘আমার ১০ বছরের সোনার সংসার নষ্ট হয়ে গেল, আমার স্বামী মানুষ ভালো না। আমার স্বামী এই প্রথম না, এর আগেও এ রকম কাজ অনেকবার করেছে। কিন্তু আমি ক্ষমা করেছি। কিন্তু আর নয়, আমি আমার সংসার বাঁচাতে এবার আইনের সহায়তা নেব। আমি আমার স্বামীর করা অপরাধের সঠিক বিচার চাই।’
এবিষয়ে নাগদাহ্ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি লোকমুখে শুনেছি। কিন্তু কোনো পক্ষ কোনো অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে আসেনি। তাই আমি বিষয়টি আমলে নিইনি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামবাসী অনেকে জানান, ‘সাগর গোষ্ঠীগতভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় ও রাজনৈতিক ক্ষমতার বলে নানা অপকর্ম করে আসছে দীর্ঘদিন যাবৎ। মৃত্যুর ভয়ে এ যাবৎ আমরা কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। সাগরের অত্যাচারে আমরা গ্রামের গরীব লোকেরা আমাদের কন্যাসন্তান নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। আমরা ওই লম্পটের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আলমডাঙ্গায় ভাতিজির সাথে অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকা অবস্থায় আ.লীগ নেতা আটক

আপলোড টাইম : ০৮:১১:২১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ অগাস্ট ২০২১

ভ্রাম্যমাণ প্রতিবেদক, আলমডাঙ্গা:
আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ্ ইউনিয়নের চিলাভালকি গ্রামে ভাতিজির সাথে অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকা অবস্থায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাগরকে (৩৫) আটক করেছে বেরসিক জনতা। অভিযুক্ত সাগর ওই গ্রামের তাহাজুদ্দিনের ছেলে। বিষয়টি লোক জানাজানি হলে রাতেই বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। তাঁরা গ্রামের হুজুর কামরুজ্জামানকে ডেকে সাগর ও রেবেকার সম্পর্ক চাচা-ভাতিজি হওয়া সত্ত্বেও সাদা কাগজে সাক্ষর নিয়ে ৩ লাখ টাকা দেনমোহরে লোক দেখানো বিবাহ সম্পন্ন করেন। তবে এ বিবাহ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা সাগরের প্রথম বিবাহ নয়, সাগরের ঘরে রয়েছে সামাজিক নিয়ম-নীতি মেনে ১০ বছর পূর্বে বিবাহ করা একই ইউনিয়নের জোড়গাছা গ্রামের ভাদালিপাড়ার আবু জাফরের মেয়ে আঁখি খাতুন।
এবিষয়ে রেবেকার বাবা ওহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গত শনিবার রাতে খাওয়া-দাওয়া করে যে যার ঘরে ঘুমাতে যায়। হঠাৎ মধ্যরাতে আমি আমার মেয়ের ঘর থেকে নানা কথার শব্দ শুনতে পাই। শব্দ শুনে উঠে মেয়ের ঘরে গিয়ে দেখি ঘর ভেতর থেকে আটকানো, ঘরের সামনে অনেক মানুষ। কারণ জানতে চাইলে তারা বলে, তোমার মেয়ের ঘরে পুরুষ মানুষ আছে। আমি আমার মেয়েকে ডাক দিলে আমার মেয়ে সাথে সাথে দরজা খুলে দেয় ও আমি চৌকির নিচে লম্পট সাগরকে দেখতে পাই। স্থানীয়রা সাগরকে ধরে ফেলে। আমি আমার মেয়ের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে আমার মেয়ে বলে, “আমাকে প্রায় তিন বছর যাবৎ হত্যার ভয় দেখিয়ে আমার সাথে অনৈতিক সম্পর্ক করে আসছে সাগর। শুধু ঘরে নয়, আমাকে ভয় দেখিয়ে আরও অনেক জায়গায় নিয়ে গিয়ে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনা শুনে স্থানীয়রা সাগরকে উত্তম-মধ্যম দিতে গেলে হাজির হন স্থানীয় একই গ্রামের মৃত ছানোয়ার মণ্ডলের ছেলে স্থানীয় যুবলীগ নেতা হাসিবুল ইসলাম হাসু মিয়া। তিনি সম্পর্কে সাগরের মামা। হাসু মিয়া উপস্থিত হয়ে সাগরের সাথে কথা বলেন ও আমাদের বলেন সাগর রেবেকাকে বিয়ে করবে, সাথে সাথেই সে হুজুর ডেকে নিজেই বিয়ের সাক্ষী হয়ে দায়সারাভাবে আমার মেয়ের সাথে সাগরের বিয়ে দেয়। আমাদের বলে কাল কাজি ডেকে বিবাহ রেজিস্ট্রি করে দেব। কিন্তু সকাল হতেই আমরা কাজি ডাকলেও তারা কোনো রেজিস্ট্রি করে দেয়নি। সাগর বলেছে কোনো রেজিস্ট্রি হবে না। পারলে কিছু করে নাও। সাগরের ঘরে আগের বউ আছে, তাহলে এখন আমার মেয়ের কী হবে। এখন আমার মরা ছাড়া কোনো পথ রইল না। তারা আওয়ামী লীগের নেতা, তাদের গোষ্ঠী বড়, তারা প্রভাবশালী, তাই আমি কিছুই করতে পারছি না।’
এবিষয়ে সাগর বলেন, ‘আমি কারো ঘরে যাইনি, আমাকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে আমার সাথে এসব রটিয়েছে। আমাকে জিম্মি করে আমার সাথে বিবাহ দিয়েছে, আমি কোনো অপরাধ করিনি।’
এবিষয়ে মেয়ে রেবেকা খাতুন বলেন, ‘আমার সাথে দীর্ঘদিন যাবত ভয় দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করে আসছিল আমার চাচা সাগর। গত শনিবার রাতে সে আমার ঘরে গেলে স্থানীয় মানুষ ধরে ফেললে সাগর আমাকে ৩ লক্ষ টাকা দেনমোহরে সাদা কাগজে সই করে বিবাহ করেছে। কিন্তু এখন সে বিবাহ কাজি দ্বারা রেজিস্ট্রি করতে নারাজ। তার ঘরে একটি বউ আছে, এখন আমার কি হবে।’
এবিষয়ে স্থানীয় যুবলীগ নেতা হাসিবুল ইসলাম হাসু বলেন, ‘অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে সাগর। পরে সাগর রেবেকাকে বিবাহ করার কথা বললে আমরা স্থানীয়ভাবে তাদের বিবাহ দিয়ে দিয়েছি। তবে সাগর ভালো মানুষ নয়। সাগরের নামে এ রকম অভিযোগ আরও অনেক আছে।’
এবিষয়ে সাগরের প্রথম স্ত্রী আঁখি খাতুন বলেন, ‘আমার ১০ বছরের সোনার সংসার নষ্ট হয়ে গেল, আমার স্বামী মানুষ ভালো না। আমার স্বামী এই প্রথম না, এর আগেও এ রকম কাজ অনেকবার করেছে। কিন্তু আমি ক্ষমা করেছি। কিন্তু আর নয়, আমি আমার সংসার বাঁচাতে এবার আইনের সহায়তা নেব। আমি আমার স্বামীর করা অপরাধের সঠিক বিচার চাই।’
এবিষয়ে নাগদাহ্ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি লোকমুখে শুনেছি। কিন্তু কোনো পক্ষ কোনো অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে আসেনি। তাই আমি বিষয়টি আমলে নিইনি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামবাসী অনেকে জানান, ‘সাগর গোষ্ঠীগতভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় ও রাজনৈতিক ক্ষমতার বলে নানা অপকর্ম করে আসছে দীর্ঘদিন যাবৎ। মৃত্যুর ভয়ে এ যাবৎ আমরা কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। সাগরের অত্যাচারে আমরা গ্রামের গরীব লোকেরা আমাদের কন্যাসন্তান নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। আমরা ওই লম্পটের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’