ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আর কত বয়স হলে আমার কপালে জুটবে একটি ভাতার কার্ড

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২৪:৪০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯
  • / ২০২ বার পড়া হয়েছে

মিঠুন মাহমুদ:
‘বয়স তো আর কম হলো না। দেকতি দেকতি ৭৫ বচর পেরিয়ে গেল। ৪০ বচর ধরি প্রতিবন্ধী অবস্থায় পড়ে আচি বিচেনে। তক্তায় বসে চটের বস্তার উপরে বেধে একটি ছোট্র দোকান দিয়ে কোনোরকম জীবনযাপন করচি। অভাবের সংসারে খেয়ে না খেয়ে বেচে আচি। অনেক সুস্থ, সবল মানুষরা পাচ্ছে প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ও বিধবা ভাতার কার্ড। কিন্তু একটা কার্ডের জন্যি কতবার মেম্বারের বাড়িতে গেলাম, কোনো ফল হলো না। আর কত বয়স হলে জুটবে আমার কপালে একটি ভাতার কার্ড।’ এভাবে বিভিন্ন স্পর্শকাতর কথা বলছিলেন জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের কয়া গ্রামের স্কুলপাড়ার মৃত আশরাফ উদ্দিনের স্ত্রী ছামেলা বেগম (৭৫)।
গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সরেজমিনে প্রতিবন্ধী ছামেলা বেগমের বাড়িতে যেয়ে দেখা যায়, একটি কাঠের খাটের ওপর শীতে জড়ো হয়ে বসে আছেন ছামেলা বেগম। ওপরে প্লাস্টিকের বস্তা আর পাশে খোলা জায়গা। দোকানে আছে অল্প কিছু সরিষার তৈল, চানাচুর, বিস্কুট ও রুটি। এসব বিক্রি করেই চলে তাঁর সংসার। তিনি যে বাড়িতে বসবাস করেন, সেটিও একেবারে জরাজীর্ণ অবস্থায়। মাটির দেওয়াল আর টিনের ছাবড়া যেকোনো সময় ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সরকারিভাবে সুযোগ-সুবিধার কথা জানতে চাইলে ছামেলা খাতুন অশ্রুসিক্ত চোখে বলেন, ‘আমি ৪০ বছর যাবৎ প্রতিবন্ধী অবস্থায় পড়ে আছি। অনেকের কাছে গিয়েছি, কোনো ফল হয়নি। শেষে মোমিন মেম্বারের বললাম, বাবা গ্রামে একজন প্রতিবন্ধী মারা গেছে, যদি ওই কার্ডও আমার ব্যবস্থা করে দাও, তাহলে আমি কোনো রকম চলাচল করতে পারব। কিন্তু সেটিও মেম্বার আমার করে দিল না। বরং যারা চলাফেরা করতে পারে, যাদের অবস্থা ভালো, মেম্বার তাদের প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ও বিধবা ভাতার কার্ড করে দিয়েছে। আর কত বয়স হলে আমি একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড পাব।’
সীমান্ত ইউনিয়ন প্রবীণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক বলেন, ‘ছামেলা বেগম একজন প্রতিবন্ধী অসহায় দরিদ্র মানুষ। কিন্তু এখনো তাঁকে সরকারিভাবে একটি বয়স্ক, প্রতিবন্ধী এমনকি বিধবা ভাতার কার্ড জোটেনি। আমরা প্রবীণ কমিটির সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যান, মেম্বারের কাছে বলেছি। আশা করি তাঁরা এ প্রতিবন্ধী বৃদ্ধার একটি কার্ডের ব্যবস্থা করে দিবেন।’
সীমান্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন ময়েন বলেন, ‘কয়া গ্রামের প্রতিবন্ধী বিধবা ছামেলা বেগমের বিষয়টি মেম্বার সাহেব আমাকে বলেনি, তবে আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। এবার কার্ড এলেই তার একটি কার্ডের ব্যবস্থা করে দেব।’
জীবননগর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আপনাদের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ছামেলা বেগমের সন্ধান পেয়ে ইউএনও স্যারের নির্দেশে তাঁর বাড়িতে যেয়ে তাঁকে একটি কম্বল দিয়ে এসেছি। তিনি একজন প্রতিবন্ধী কার্ড পাওয়ার যোগ্য। এবার কার্ড এলেই তাঁকে একটি কার্ড দেওয়া হবে।’
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবন্ধী ছামেলা বেগমের বিষয়টি আমি শুনেছি। তাঁকে প্রাথমিক পর্যায়ে শীত নিবারনের জন্য একটি কম্বল দেওয়া হয়েছে। এবার কার্ড এলেই তাঁকে একটি কার্ড দেওয়ার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান এবং উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে বলে দেওয়া হয়েছে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আর কত বয়স হলে আমার কপালে জুটবে একটি ভাতার কার্ড

আপলোড টাইম : ১০:২৪:৪০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯

মিঠুন মাহমুদ:
‘বয়স তো আর কম হলো না। দেকতি দেকতি ৭৫ বচর পেরিয়ে গেল। ৪০ বচর ধরি প্রতিবন্ধী অবস্থায় পড়ে আচি বিচেনে। তক্তায় বসে চটের বস্তার উপরে বেধে একটি ছোট্র দোকান দিয়ে কোনোরকম জীবনযাপন করচি। অভাবের সংসারে খেয়ে না খেয়ে বেচে আচি। অনেক সুস্থ, সবল মানুষরা পাচ্ছে প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ও বিধবা ভাতার কার্ড। কিন্তু একটা কার্ডের জন্যি কতবার মেম্বারের বাড়িতে গেলাম, কোনো ফল হলো না। আর কত বয়স হলে জুটবে আমার কপালে একটি ভাতার কার্ড।’ এভাবে বিভিন্ন স্পর্শকাতর কথা বলছিলেন জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের কয়া গ্রামের স্কুলপাড়ার মৃত আশরাফ উদ্দিনের স্ত্রী ছামেলা বেগম (৭৫)।
গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সরেজমিনে প্রতিবন্ধী ছামেলা বেগমের বাড়িতে যেয়ে দেখা যায়, একটি কাঠের খাটের ওপর শীতে জড়ো হয়ে বসে আছেন ছামেলা বেগম। ওপরে প্লাস্টিকের বস্তা আর পাশে খোলা জায়গা। দোকানে আছে অল্প কিছু সরিষার তৈল, চানাচুর, বিস্কুট ও রুটি। এসব বিক্রি করেই চলে তাঁর সংসার। তিনি যে বাড়িতে বসবাস করেন, সেটিও একেবারে জরাজীর্ণ অবস্থায়। মাটির দেওয়াল আর টিনের ছাবড়া যেকোনো সময় ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সরকারিভাবে সুযোগ-সুবিধার কথা জানতে চাইলে ছামেলা খাতুন অশ্রুসিক্ত চোখে বলেন, ‘আমি ৪০ বছর যাবৎ প্রতিবন্ধী অবস্থায় পড়ে আছি। অনেকের কাছে গিয়েছি, কোনো ফল হয়নি। শেষে মোমিন মেম্বারের বললাম, বাবা গ্রামে একজন প্রতিবন্ধী মারা গেছে, যদি ওই কার্ডও আমার ব্যবস্থা করে দাও, তাহলে আমি কোনো রকম চলাচল করতে পারব। কিন্তু সেটিও মেম্বার আমার করে দিল না। বরং যারা চলাফেরা করতে পারে, যাদের অবস্থা ভালো, মেম্বার তাদের প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ও বিধবা ভাতার কার্ড করে দিয়েছে। আর কত বয়স হলে আমি একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড পাব।’
সীমান্ত ইউনিয়ন প্রবীণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক বলেন, ‘ছামেলা বেগম একজন প্রতিবন্ধী অসহায় দরিদ্র মানুষ। কিন্তু এখনো তাঁকে সরকারিভাবে একটি বয়স্ক, প্রতিবন্ধী এমনকি বিধবা ভাতার কার্ড জোটেনি। আমরা প্রবীণ কমিটির সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যান, মেম্বারের কাছে বলেছি। আশা করি তাঁরা এ প্রতিবন্ধী বৃদ্ধার একটি কার্ডের ব্যবস্থা করে দিবেন।’
সীমান্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন ময়েন বলেন, ‘কয়া গ্রামের প্রতিবন্ধী বিধবা ছামেলা বেগমের বিষয়টি মেম্বার সাহেব আমাকে বলেনি, তবে আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। এবার কার্ড এলেই তার একটি কার্ডের ব্যবস্থা করে দেব।’
জীবননগর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আপনাদের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ছামেলা বেগমের সন্ধান পেয়ে ইউএনও স্যারের নির্দেশে তাঁর বাড়িতে যেয়ে তাঁকে একটি কম্বল দিয়ে এসেছি। তিনি একজন প্রতিবন্ধী কার্ড পাওয়ার যোগ্য। এবার কার্ড এলেই তাঁকে একটি কার্ড দেওয়া হবে।’
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবন্ধী ছামেলা বেগমের বিষয়টি আমি শুনেছি। তাঁকে প্রাথমিক পর্যায়ে শীত নিবারনের জন্য একটি কম্বল দেওয়া হয়েছে। এবার কার্ড এলেই তাঁকে একটি কার্ড দেওয়ার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান এবং উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে বলে দেওয়া হয়েছে।’