ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আরও প্রকট হবে বেকার সমস্যা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৪৩:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৭ অক্টোবর ২০১৭
  • / ৪৯৮ বার পড়া হয়েছে

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিবেদন

সমীকরণ ডেস্ক: কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ না হওয়ায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে বেকারত্ব বাড়ছেই। ভবিষ্যতে এটি দেশের অর্থনীতিতে ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে বেকার সমস্যা সবসময়ই থাকে। কিন্তু নতুন বার্তা হল বাংলাদেশে এই সমস্যা আরও বেড়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে তা আরও প্রকট হবে। দেশের শীর্ষ পর্যায়ের ৮০ ব্যবসায়ীর মতামতের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে আন্তর্জাতিক এ সংস্থা। সর্বশেষ হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা চার কোটি ৬৬ লাখ। কিন্তু আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সংজ্ঞা ব্যবহার করে কৌশলে এ তথ্য গোপন করে সরকারি হিসাবে দেখানো হচ্ছে মাত্র ২৬ লাখ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের তথ্য বিভ্রান্তিকর। তাদের মতে, বেকারত্ব নিরসনে সরকারকে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দেশের অর্থনীতিতে প্রতিষ্ঠিত সত্য হল বিনিয়োগ বাড়েনি। ফলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়া কঠিন। তিনি বলেন, বিনিয়োগের সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত। বিশেষ করে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি এবং মাথা পিছু আয় বিনিয়োগের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়। ফলে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ ছাড়া অন্য সূচকগুলো বাড়লে, ওই বৃদ্ধির বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। মির্জ্জা আজিজুল বলেন, ৮০ শতাংশ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় বেসরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে। ফলে এই খাতে বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কথা নয়। আইএলও’র সংজ্ঞা অনুযায়ী চার সপ্তাহ কাজ খুঁজেছে অথচ পায়নি, কিন্তু আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে কাজ পেতে পারে বা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই বিদ্যমান মজুরিতে কাজ শুরু করবে এমন মানুষ হচ্ছে বেকার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) দেশের শ্রমশক্তির যে জরিপ করেছে, তা এই সংজ্ঞার ওপর ভিত্তি করেই। চলতি বছর বেকারত্বের সংখ্যা প্রকাশ করেছে বিবিএস। এর প্রতিবেদনে দেখা গেছে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত বছরে দেশে মোট কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি ৬১ লাখ। এর মধ্যে শ্রমশক্তিতে যোগ হয়েছে ছয় কোটি ২১ লাখ। তার মধ্যে আবার কাজ করছে পাঁচ কোটি ৯৫ লাখ। বেকার রয়েছে ২৬ লাখ। কিন্তু বিবিএসই বলছে, চার কোটি ৪০ লাখ মানুষ কর্মক্ষম হলেও শ্রমশক্তিতে যোগ হয়নি। অথচ এদের বেকার দেখানো হয়নি। এ প্রসঙ্গে বিবিএসের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আইএলও সংজ্ঞা অনুযায়ী এরা বেকারও নয়, আবার কর্মেও যুক্ত নয়। কিন্তু বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় এরাও বেকার।’ খোদ সংস্থাটির নিজস্ব হিসাব থেকেই বোঝা যাচ্ছে এই চার কোটি ৪০ লাখ বেকারের তথ্য গোপন করা হয়েছে। ফলে ২৬ লাখ একেবারেই বেকার যোগ করলে প্রকৃত বেকার সংখ্যা দাঁড়ায় চার কোটি ৬৬ লাখ। বিবিএসের রিপোর্ট অনুসারে গত দেড় বছরে দেশে ১৪ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি হিসাব মতে, দেড় বছরে দেশে ৪০ লাখ জনশক্তি শ্রমবাজারে ছিল। সেখান থেকে ১৪ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। মোট বেকারের ৩৫ শতাংশের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেখানে দেশে একটি পিয়ন পদের চাকরির জন্য কয়েক হাজার আবেদন জমা পড়ে, সেখানে এ তথ্য ভিত্তিহীন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আরও প্রকট হবে বেকার সমস্যা

আপলোড টাইম : ১১:৪৩:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৭ অক্টোবর ২০১৭

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিবেদন

সমীকরণ ডেস্ক: কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ না হওয়ায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে বেকারত্ব বাড়ছেই। ভবিষ্যতে এটি দেশের অর্থনীতিতে ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে বেকার সমস্যা সবসময়ই থাকে। কিন্তু নতুন বার্তা হল বাংলাদেশে এই সমস্যা আরও বেড়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে তা আরও প্রকট হবে। দেশের শীর্ষ পর্যায়ের ৮০ ব্যবসায়ীর মতামতের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে আন্তর্জাতিক এ সংস্থা। সর্বশেষ হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা চার কোটি ৬৬ লাখ। কিন্তু আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সংজ্ঞা ব্যবহার করে কৌশলে এ তথ্য গোপন করে সরকারি হিসাবে দেখানো হচ্ছে মাত্র ২৬ লাখ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের তথ্য বিভ্রান্তিকর। তাদের মতে, বেকারত্ব নিরসনে সরকারকে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দেশের অর্থনীতিতে প্রতিষ্ঠিত সত্য হল বিনিয়োগ বাড়েনি। ফলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়া কঠিন। তিনি বলেন, বিনিয়োগের সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত। বিশেষ করে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি এবং মাথা পিছু আয় বিনিয়োগের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়। ফলে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ ছাড়া অন্য সূচকগুলো বাড়লে, ওই বৃদ্ধির বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। মির্জ্জা আজিজুল বলেন, ৮০ শতাংশ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় বেসরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে। ফলে এই খাতে বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কথা নয়। আইএলও’র সংজ্ঞা অনুযায়ী চার সপ্তাহ কাজ খুঁজেছে অথচ পায়নি, কিন্তু আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে কাজ পেতে পারে বা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই বিদ্যমান মজুরিতে কাজ শুরু করবে এমন মানুষ হচ্ছে বেকার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) দেশের শ্রমশক্তির যে জরিপ করেছে, তা এই সংজ্ঞার ওপর ভিত্তি করেই। চলতি বছর বেকারত্বের সংখ্যা প্রকাশ করেছে বিবিএস। এর প্রতিবেদনে দেখা গেছে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত বছরে দেশে মোট কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি ৬১ লাখ। এর মধ্যে শ্রমশক্তিতে যোগ হয়েছে ছয় কোটি ২১ লাখ। তার মধ্যে আবার কাজ করছে পাঁচ কোটি ৯৫ লাখ। বেকার রয়েছে ২৬ লাখ। কিন্তু বিবিএসই বলছে, চার কোটি ৪০ লাখ মানুষ কর্মক্ষম হলেও শ্রমশক্তিতে যোগ হয়নি। অথচ এদের বেকার দেখানো হয়নি। এ প্রসঙ্গে বিবিএসের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আইএলও সংজ্ঞা অনুযায়ী এরা বেকারও নয়, আবার কর্মেও যুক্ত নয়। কিন্তু বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় এরাও বেকার।’ খোদ সংস্থাটির নিজস্ব হিসাব থেকেই বোঝা যাচ্ছে এই চার কোটি ৪০ লাখ বেকারের তথ্য গোপন করা হয়েছে। ফলে ২৬ লাখ একেবারেই বেকার যোগ করলে প্রকৃত বেকার সংখ্যা দাঁড়ায় চার কোটি ৬৬ লাখ। বিবিএসের রিপোর্ট অনুসারে গত দেড় বছরে দেশে ১৪ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি হিসাব মতে, দেড় বছরে দেশে ৪০ লাখ জনশক্তি শ্রমবাজারে ছিল। সেখান থেকে ১৪ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। মোট বেকারের ৩৫ শতাংশের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেখানে দেশে একটি পিয়ন পদের চাকরির জন্য কয়েক হাজার আবেদন জমা পড়ে, সেখানে এ তথ্য ভিত্তিহীন।