ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আমরা শোকাহত ও মর্মাহত

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২৪:২৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
  • / ৩৩৭ বার পড়া হয়েছে

চকবাজারের অগ্নিকা-ে বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে নিমতলীর সেই ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনাকে। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে সেই একই ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি ঘটল। নিমতলীতে ২০১০ সালের ৩ জুনের আগুনে ১২৪ জনের প্রাণহানির পর বুধবার চকবাজারের চুড়িহাট্টাতে এই সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত আগুনে প্রাণহানি হয়েছে ৮১ জনের। এই মর্মান্তিক ঘটনায় আমরা শোকাহত। জানা গেছে, একটি প্রাইভেটকারের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে। আর রাস্তার পাশে থাকা ভবনের ভেতর প্লাস্টিকের দ্রব্য ও দাহ্য পদার্থ থাকায় তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। চারটি লাগোয়া অবকাঠামোর ভেতর দিয়ে আগুনের বিস্তার ঘটে। এসব ভবনে প্লাস্টিকের দানা ও বডি স্প্রের মজুদ ছিল। আগুন যখন ছড়িয়ে পড়ছিল, তখন সড়কজুড়ে যানজট ছিল। এতে সরু গলির ভেতর দিয়ে লোকজন পালাতে পারেননি। অগ্নিকা-ের সময় এর ভয়াবহতা এতটা তীব্র ছিল যে, সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় অবস্থানরত প্রাইভেটকার, রিকশা, সাইকেল, ভ্যানগাড়ি, মোটরসাইকেল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকায় বিপজ্জনক কেমিক্যালের শত শত কারখানা ও গুদাম রয়েছে এবং প্রায়ই কেমিক্যাল কারখানায় আগুন লেগে নানা দুর্ঘটনা ঘটে। তথ্যানুযায়ী, পুরান ঢাকায় প্রায় ২৫ হাজার রাসায়নিক কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ আবাসিক বাড়িতে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগের ট্রেড লাইসেন্স শাখার দেয়া তথ্যানুযায়ী পুরান ঢাকায় মাত্র আড়াই হাজার কারখানার ট্রেড লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। ডিএসসিসির তথ্য পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ওই এলাকায় বাকি কারখানাগুলো অবৈধ। সালফার, পটাশ, ফসফরাস, সালফিউরিক এসিড, নাইট্রিক এসিড, ইথানল, মিথাইল, রেক্টিফায়েড স্পিরিট, তারপিনসহ নানান প্রকার গান পাউডার বিক্রি হচ্ছে খুব স্বাভাবিকভাবেই। চাল-ডাল, তেল-সাবানসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মতোই ঝুঁকিপূর্ণ পদার্থ যেভাবে বিক্রি হচ্ছে তা রীতিমতো আতঙ্কিত হওয়ার মতো। নিমতলীর ঘটনার পর দাবি ওঠে সেসব কারখানা ও গুদাম ওই এলাকা থেকে অবিলম্বে সরিয়ে নেয়ার। ৮০০ রাসায়নিক গুদাম ও কারখানা পুরান ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। তবে শেষ পর্যন্ত কাজটি আর হয়নি। সিটি করপোরেশন কেমিক্যালের গুদাম ও কারখানা সরানোর উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। নিমতলীর ওই ভয়াবহ ঘটনার পর বুধবার আবারো ঘটল সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় রাসায়নিক গুদামে দাহ্য পদার্থ মজুদের পরিণতি যে কত ভয়ঙ্কর হতে পারে তার দৃষ্টান্ত চকবাজারের ঘটনা। এমন ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি আমরা দেখতে চাই না। ঘটনার তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। সঠিক তদন্ত কাম্য। আহত যারা হয়েছেন তাদের সুচিকিৎসার দায়িত্ব সরকার নিয়েছে। চিকিৎসায় যাতে কোনো ধরনের অবহেলা না হয় সেদিকে খেয়ালও রাখতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আমরা শোকাহত ও মর্মাহত

আপলোড টাইম : ০৯:২৪:২৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০১৯

চকবাজারের অগ্নিকা-ে বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে নিমতলীর সেই ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনাকে। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে সেই একই ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি ঘটল। নিমতলীতে ২০১০ সালের ৩ জুনের আগুনে ১২৪ জনের প্রাণহানির পর বুধবার চকবাজারের চুড়িহাট্টাতে এই সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত আগুনে প্রাণহানি হয়েছে ৮১ জনের। এই মর্মান্তিক ঘটনায় আমরা শোকাহত। জানা গেছে, একটি প্রাইভেটকারের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে। আর রাস্তার পাশে থাকা ভবনের ভেতর প্লাস্টিকের দ্রব্য ও দাহ্য পদার্থ থাকায় তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। চারটি লাগোয়া অবকাঠামোর ভেতর দিয়ে আগুনের বিস্তার ঘটে। এসব ভবনে প্লাস্টিকের দানা ও বডি স্প্রের মজুদ ছিল। আগুন যখন ছড়িয়ে পড়ছিল, তখন সড়কজুড়ে যানজট ছিল। এতে সরু গলির ভেতর দিয়ে লোকজন পালাতে পারেননি। অগ্নিকা-ের সময় এর ভয়াবহতা এতটা তীব্র ছিল যে, সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় অবস্থানরত প্রাইভেটকার, রিকশা, সাইকেল, ভ্যানগাড়ি, মোটরসাইকেল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকায় বিপজ্জনক কেমিক্যালের শত শত কারখানা ও গুদাম রয়েছে এবং প্রায়ই কেমিক্যাল কারখানায় আগুন লেগে নানা দুর্ঘটনা ঘটে। তথ্যানুযায়ী, পুরান ঢাকায় প্রায় ২৫ হাজার রাসায়নিক কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ আবাসিক বাড়িতে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগের ট্রেড লাইসেন্স শাখার দেয়া তথ্যানুযায়ী পুরান ঢাকায় মাত্র আড়াই হাজার কারখানার ট্রেড লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। ডিএসসিসির তথ্য পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ওই এলাকায় বাকি কারখানাগুলো অবৈধ। সালফার, পটাশ, ফসফরাস, সালফিউরিক এসিড, নাইট্রিক এসিড, ইথানল, মিথাইল, রেক্টিফায়েড স্পিরিট, তারপিনসহ নানান প্রকার গান পাউডার বিক্রি হচ্ছে খুব স্বাভাবিকভাবেই। চাল-ডাল, তেল-সাবানসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মতোই ঝুঁকিপূর্ণ পদার্থ যেভাবে বিক্রি হচ্ছে তা রীতিমতো আতঙ্কিত হওয়ার মতো। নিমতলীর ঘটনার পর দাবি ওঠে সেসব কারখানা ও গুদাম ওই এলাকা থেকে অবিলম্বে সরিয়ে নেয়ার। ৮০০ রাসায়নিক গুদাম ও কারখানা পুরান ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। তবে শেষ পর্যন্ত কাজটি আর হয়নি। সিটি করপোরেশন কেমিক্যালের গুদাম ও কারখানা সরানোর উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। নিমতলীর ওই ভয়াবহ ঘটনার পর বুধবার আবারো ঘটল সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় রাসায়নিক গুদামে দাহ্য পদার্থ মজুদের পরিণতি যে কত ভয়ঙ্কর হতে পারে তার দৃষ্টান্ত চকবাজারের ঘটনা। এমন ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি আমরা দেখতে চাই না। ঘটনার তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। সঠিক তদন্ত কাম্য। আহত যারা হয়েছেন তাদের সুচিকিৎসার দায়িত্ব সরকার নিয়েছে। চিকিৎসায় যাতে কোনো ধরনের অবহেলা না হয় সেদিকে খেয়ালও রাখতে হবে।