ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আমরা কী খাচ্ছি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২২:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ মার্চ ২০১৯
  • / ৩৪২ বার পড়া হয়েছে

খাদ্য বিষমুক্ত করার ব্যবস্থা নিন
বেঁচে থাকার জন্য আমাদের খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। পুষ্টিকর সুষম খাদ্য একজন মানুষকে সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখে। কিন্তু প্রতিদিনের খাদ্যই যদি বিষাক্ত হয়, তাহলে? বাঙালির প্রধান খাদ্য ভাত। ধান থেকে চাল, চাল থেকে ভাত হয়। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন বেড়েছে। নতুন নতুন ধান এসেছে। উচ্চ ফলনশীল এসব ধান দেশে বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে। কিন্তু অধিক ফসল উৎপাদন করতে গিয়ে আমরা যে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছি, তা কি কেউ ভেবে দেখেছি? ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির গবেষণায় যে তথ্য মিলেছে, তা রীতিমতো ভয়াবহ। গবেষণার জন্য চালের যে ২৩২টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল, তার ১৩১টিতে মিলেছে বিভিন্ন মাত্রায় ক্রোমিয়াম। ১৩০টিতে পাওয়া গেছে ক্যাডমিয়াম ও সিসা। ৮৩টিতে মিলেছে আর্সেনিকের অস্তিত্ব। কী সাংঘাতিক! জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, সিসা ও আর্সেনিক মানুষের শরীরে ঢুকলে তা বের হতে পারে না। সব কটিই দীর্ঘ মেয়াদে কিডনি, লিভার ও মস্তিষ্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ ছাড়া ক্যান্সারসহ নানা ধরনের ক্রনিক রোগের বড় উৎস হচ্ছে এসব রাসায়নিক। এককথায় এগুলোর সব কটিই ধীরে ধীরে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে সক্ষম। মানব শরীরে অতিরিক্ত ক্যাডমিয়াম জমা হলে মারাত্মক বিষক্রিয়ায় ক্যান্সার, হৃদরোগ ও কিডনি রোগ দেখা দিতে পারে। ইউরোপীয় কমিশনের নীতিমালা অনুসারে মানবদেহের জন্য ক্রোমিয়ামের সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রা হচ্ছে ১ পিপিএম। কিন্তু জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের গবেষণায় চালে ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে ৩.৪১৪ পিপিএম পর্যন্ত। ক্যাডমিয়ামের সহনীয় মাত্রা ০.১ হলেও পাওয়া গেছে ৩.২৩৯৫ পর্যন্ত। সিসার সহনীয় মাত্রা ০.২ হলেও পাওয়া গেছে ১.৮৭ পর্যন্ত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চালে ক্যাডমিয়ামের প্রধান কারণ জমিতে নিম্নমানের টিএসপি সার প্রয়োগ এবং গার্মেন্ট, ওষুধ কারখানা, টেক্সটাইল ও ট্যানারির অপরিশোধিত বর্জ্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবেশদূষণের পাশাপাশি কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহারের পরিণতি কমবেশি সবাইকেই ভোগ করতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে শিশুরা সবচেয়ে বিপজ্জনক পর্যায়ে রয়েছে। বিশেষ করে সঠিক মান রক্ষা করে এবং প্রয়োগবিধি না মেনে বিষাক্ত কীটনাশক প্রয়োগের ফলে একাধারে উৎপাদিত ফসল, মাছ, পানি ও জমি মারাত্মকভাবে বিষাক্ত হয়ে থাকে। এর যেকোনো মাধ্যম থেকে মানুষের শরীরে সহজেই ঢুকে পড়ছে এই বিষাক্ত উপাদান। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফসল ও মাছে ভারী ধাতু ঢুকছে মূলত মাটি ও পানি থেকে। মাটি ও পানি এমনভাবেই রাসায়নিক দূষণের কবলে পড়েছে, যা খাদ্যচক্র হয়ে মানবদেহে ঢুকে মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তুলছে। নানা ধরনের জটিল রোগের ঝুঁকিতে ফেলছে মানুষকে। বেঁচে থাকার জন্য আমাদের যে খাদ্য গ্রহণ করতে হয়, সে খাদ্যই যদি রোগাক্রান্ত হওয়ার কারণ হয়, তাহলে? কোনো বিকল্প নেই। আমাদের খাদ্য বিষমুক্ত করার সব ব্যবস্থা এখনই নিতে হবে। বিষাক্ত কীটনাশক ও সার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। কারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়ও শৃঙ্খলা আনতে হবে। বিষমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপের কোনো বিকল্প নেই।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আমরা কী খাচ্ছি

আপলোড টাইম : ১০:২২:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ মার্চ ২০১৯

খাদ্য বিষমুক্ত করার ব্যবস্থা নিন
বেঁচে থাকার জন্য আমাদের খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। পুষ্টিকর সুষম খাদ্য একজন মানুষকে সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখে। কিন্তু প্রতিদিনের খাদ্যই যদি বিষাক্ত হয়, তাহলে? বাঙালির প্রধান খাদ্য ভাত। ধান থেকে চাল, চাল থেকে ভাত হয়। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন বেড়েছে। নতুন নতুন ধান এসেছে। উচ্চ ফলনশীল এসব ধান দেশে বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে। কিন্তু অধিক ফসল উৎপাদন করতে গিয়ে আমরা যে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছি, তা কি কেউ ভেবে দেখেছি? ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির গবেষণায় যে তথ্য মিলেছে, তা রীতিমতো ভয়াবহ। গবেষণার জন্য চালের যে ২৩২টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল, তার ১৩১টিতে মিলেছে বিভিন্ন মাত্রায় ক্রোমিয়াম। ১৩০টিতে পাওয়া গেছে ক্যাডমিয়াম ও সিসা। ৮৩টিতে মিলেছে আর্সেনিকের অস্তিত্ব। কী সাংঘাতিক! জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, সিসা ও আর্সেনিক মানুষের শরীরে ঢুকলে তা বের হতে পারে না। সব কটিই দীর্ঘ মেয়াদে কিডনি, লিভার ও মস্তিষ্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ ছাড়া ক্যান্সারসহ নানা ধরনের ক্রনিক রোগের বড় উৎস হচ্ছে এসব রাসায়নিক। এককথায় এগুলোর সব কটিই ধীরে ধীরে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে সক্ষম। মানব শরীরে অতিরিক্ত ক্যাডমিয়াম জমা হলে মারাত্মক বিষক্রিয়ায় ক্যান্সার, হৃদরোগ ও কিডনি রোগ দেখা দিতে পারে। ইউরোপীয় কমিশনের নীতিমালা অনুসারে মানবদেহের জন্য ক্রোমিয়ামের সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রা হচ্ছে ১ পিপিএম। কিন্তু জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের গবেষণায় চালে ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে ৩.৪১৪ পিপিএম পর্যন্ত। ক্যাডমিয়ামের সহনীয় মাত্রা ০.১ হলেও পাওয়া গেছে ৩.২৩৯৫ পর্যন্ত। সিসার সহনীয় মাত্রা ০.২ হলেও পাওয়া গেছে ১.৮৭ পর্যন্ত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চালে ক্যাডমিয়ামের প্রধান কারণ জমিতে নিম্নমানের টিএসপি সার প্রয়োগ এবং গার্মেন্ট, ওষুধ কারখানা, টেক্সটাইল ও ট্যানারির অপরিশোধিত বর্জ্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবেশদূষণের পাশাপাশি কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহারের পরিণতি কমবেশি সবাইকেই ভোগ করতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে শিশুরা সবচেয়ে বিপজ্জনক পর্যায়ে রয়েছে। বিশেষ করে সঠিক মান রক্ষা করে এবং প্রয়োগবিধি না মেনে বিষাক্ত কীটনাশক প্রয়োগের ফলে একাধারে উৎপাদিত ফসল, মাছ, পানি ও জমি মারাত্মকভাবে বিষাক্ত হয়ে থাকে। এর যেকোনো মাধ্যম থেকে মানুষের শরীরে সহজেই ঢুকে পড়ছে এই বিষাক্ত উপাদান। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফসল ও মাছে ভারী ধাতু ঢুকছে মূলত মাটি ও পানি থেকে। মাটি ও পানি এমনভাবেই রাসায়নিক দূষণের কবলে পড়েছে, যা খাদ্যচক্র হয়ে মানবদেহে ঢুকে মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তুলছে। নানা ধরনের জটিল রোগের ঝুঁকিতে ফেলছে মানুষকে। বেঁচে থাকার জন্য আমাদের যে খাদ্য গ্রহণ করতে হয়, সে খাদ্যই যদি রোগাক্রান্ত হওয়ার কারণ হয়, তাহলে? কোনো বিকল্প নেই। আমাদের খাদ্য বিষমুক্ত করার সব ব্যবস্থা এখনই নিতে হবে। বিষাক্ত কীটনাশক ও সার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। কারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়ও শৃঙ্খলা আনতে হবে। বিষমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপের কোনো বিকল্প নেই।