ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আবারও নিষ্ফলা বৈঠক : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দ্রুত শুরু হোক

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:৩১:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ মে ২০১৮
  • / ৩২০ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করছে। একটি নাজুক অর্থনীতির পক্ষে এটি এক অসহনীয় পরিস্থিতি। অথচ এর কোনো আশু সমাধানও দেখা যাচ্ছে না। মিয়ানমার বলছে, তারা পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে। এ ব্যাপারে গত নভেম্বরে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হয়েছে; কিন্তু প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়া এগোচ্ছে না। দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্বে গঠিত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ এ নিয়ে কাজ করছে। এই গ্রুপের প্রথম বৈঠক হয় জানুয়ারিতে নেপিডোতে, আর দ্বিতীয় বেঠক হয়েছে গত বৃহস্পতিবার ঢাকায়। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে অস্পষ্টতা থেকেই যাচ্ছে। প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার যা করছে তাতে সদিচ্ছার ঘাটতি প্রবল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ মিয়ানমারের কাছে আট হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গার একটি তালিকা হস্তান্তর করে। মিয়ানমার সেগুলো যাচাই-বাছাই করছে। এখন পর্যন্ত মিয়ানমার মাত্র ৮৭৮ জনের যাচাই-বাছাই শেষ করেছে। তাদেরও ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারিত হয়নি। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার মতো যে পরিবেশ তৈরির কথা ছিল, সে ক্ষেত্রেও বিশেষ কোনো অগ্রগতি নেই। এ অবস্থায় মিয়ানমার ফিরিয়ে নিতে চাইলেও রোহিঙ্গারা সেখানে ফিরে যাবে না। আর আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী স্বেচ্ছায় ফিরে না গেলে কোনো রোহিঙ্গাকে জোর করে সেখানে ফেরত পাঠানো যাবে না। রোহিঙ্গারা নিজেদের বাড়িঘরে ফিরে যেতে চায়। অথচ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে তাদের নানা রকম স্থাপনা তৈরি করছে। এটি কোনোভাবেই প্রত্যাবাসনের জন্য সহায়ক নয়। জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) জানিয়েছে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে দৈনিক গড়ে ৬০টি শিশুর জন্ম হচ্ছে। গত ৯ মাসে সেখানে জন্ম নিয়েছে ১৬ হাজার শিশু। প্রায় ১৫ হাজার নারী অন্তঃসত্বা। তাদের অনেকেই মিয়ানমার সেনাদের ধর্ষণের শিকার হয়ে এখানে পালিয়ে এসেছে। এ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের প্রশাসনিক রাজধানী নেপিডোতে দেশটির সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী ড. উইন মিয়াট আয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিয়েছেন, সেনাবাহিনীর কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে অনেক গুরুতর অভিযোগ আছে। তাদের অপকর্মের দায় পুরো বাহিনী কেন নেবে? অভিযুক্তদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। বাংলাদেশে যারা পালিয়ে গেছে তারাও নিপীড়নের প্রতিকার চেয়ে মামলা করতে পারবে। সরকার তাদের সব রকম সহায়তা দেবে, মামলার খরচও জোগাবে। মিয়ানমারের মন্ত্রীর এ ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা দ্রুত এ ঘোষণার বাস্তবায়ন দেখতে চাই। মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী দেশ। আমরা চাই, দুই দেশ হাতে হাত মিলিয়ে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাক, সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করুক। রোহিঙ্গা সংকট সেই সম্পর্কের ক্ষেত্রে কাঁটা হয়ে থাকুক, তা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। আমরা আশা করি, উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আবারও নিষ্ফলা বৈঠক : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দ্রুত শুরু হোক

আপলোড টাইম : ০৫:৩১:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ মে ২০১৮

বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করছে। একটি নাজুক অর্থনীতির পক্ষে এটি এক অসহনীয় পরিস্থিতি। অথচ এর কোনো আশু সমাধানও দেখা যাচ্ছে না। মিয়ানমার বলছে, তারা পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে। এ ব্যাপারে গত নভেম্বরে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হয়েছে; কিন্তু প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়া এগোচ্ছে না। দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্বে গঠিত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ এ নিয়ে কাজ করছে। এই গ্রুপের প্রথম বৈঠক হয় জানুয়ারিতে নেপিডোতে, আর দ্বিতীয় বেঠক হয়েছে গত বৃহস্পতিবার ঢাকায়। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে অস্পষ্টতা থেকেই যাচ্ছে। প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার যা করছে তাতে সদিচ্ছার ঘাটতি প্রবল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ মিয়ানমারের কাছে আট হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গার একটি তালিকা হস্তান্তর করে। মিয়ানমার সেগুলো যাচাই-বাছাই করছে। এখন পর্যন্ত মিয়ানমার মাত্র ৮৭৮ জনের যাচাই-বাছাই শেষ করেছে। তাদেরও ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারিত হয়নি। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার মতো যে পরিবেশ তৈরির কথা ছিল, সে ক্ষেত্রেও বিশেষ কোনো অগ্রগতি নেই। এ অবস্থায় মিয়ানমার ফিরিয়ে নিতে চাইলেও রোহিঙ্গারা সেখানে ফিরে যাবে না। আর আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী স্বেচ্ছায় ফিরে না গেলে কোনো রোহিঙ্গাকে জোর করে সেখানে ফেরত পাঠানো যাবে না। রোহিঙ্গারা নিজেদের বাড়িঘরে ফিরে যেতে চায়। অথচ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে তাদের নানা রকম স্থাপনা তৈরি করছে। এটি কোনোভাবেই প্রত্যাবাসনের জন্য সহায়ক নয়। জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) জানিয়েছে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে দৈনিক গড়ে ৬০টি শিশুর জন্ম হচ্ছে। গত ৯ মাসে সেখানে জন্ম নিয়েছে ১৬ হাজার শিশু। প্রায় ১৫ হাজার নারী অন্তঃসত্বা। তাদের অনেকেই মিয়ানমার সেনাদের ধর্ষণের শিকার হয়ে এখানে পালিয়ে এসেছে। এ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের প্রশাসনিক রাজধানী নেপিডোতে দেশটির সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী ড. উইন মিয়াট আয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিয়েছেন, সেনাবাহিনীর কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে অনেক গুরুতর অভিযোগ আছে। তাদের অপকর্মের দায় পুরো বাহিনী কেন নেবে? অভিযুক্তদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। বাংলাদেশে যারা পালিয়ে গেছে তারাও নিপীড়নের প্রতিকার চেয়ে মামলা করতে পারবে। সরকার তাদের সব রকম সহায়তা দেবে, মামলার খরচও জোগাবে। মিয়ানমারের মন্ত্রীর এ ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা দ্রুত এ ঘোষণার বাস্তবায়ন দেখতে চাই। মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী দেশ। আমরা চাই, দুই দেশ হাতে হাত মিলিয়ে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাক, সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করুক। রোহিঙ্গা সংকট সেই সম্পর্কের ক্ষেত্রে কাঁটা হয়ে থাকুক, তা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। আমরা আশা করি, উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।