ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আফগানিস্তানে আবারও তালেবান

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৩৬:৩৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ অগাস্ট ২০২১
  • / ৩২ বার পড়া হয়েছে

সতর্ক পর্যবেক্ষণ রাখতে হবে
আবারও আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসছে তালেবান। বলা যায়, রাজধানী কাবুলসহ গোটা আফগানিস্তানই এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। তবে রক্তপাতের মাধ্যমে নয়, আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের অভিপ্রায় জানিয়েছে তারা। সেই প্রক্রিয়াও চলছে বলে জানা গেছে। এদিকে কাবুলে তালেবান বাহিনীর প্রবেশের পর আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি দেশত্যাগ করেছেন। বস্তুত, জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা আসার পরই বোঝা গিয়েছিল দেশটি অচিরেই আবার তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। বাস্তবে ঘটেছেও তাই। সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার সাড়ে তিন মাসের মাথায় তালেবানের দখলে চলে এসেছে দেশটি।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বহু জাতিগোষ্ঠী ও পর্বতসংকুল আফগানিস্তান হলো এমন একটি দেশ, যা কোনো বহিঃশক্তির পক্ষে দখলে রাখা সম্ভব নয়। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে যেভাবে ‘পরাজয়’ মেনে নিয়ে আফগানিস্তান থেকে সেন্য প্রত্যাহার করে নিতে হচ্ছে, গত শতকের আশির দশকের শেষদিকে তৎকালীন বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নকেও সেই একইভাবে নয় বছরের দখল শেষে আফগানিস্তান থেকে পিছু হটতে হয়েছিল। বস্তুত বহিঃশক্তি দ্বারা কোনো দেশ দখল সমর্থনযোগ্য নয়। প্রতিটি দেশের ভাগ্য নির্ধারণের বিষয়টি নিজ দেশের জনগণের ওপরই ছেড়ে দেওয়া উত্তম। সেদিক থেকে আফগানিস্তানে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশটির জনগণের ইচ্ছার প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন থাকবে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবস্থান যথার্থ বলে মনে করি আমরা। আফগানিস্তানে শান্তি ফিরে আসুক, এটাই আমরা চাই। ইতঃপূর্বে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবানের কঠোর শাসনকালে নানা তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল সেদেশের জনগণকে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও পড়েছিল তালেবানি শাসনের নানা নেতিবাচক প্রভাব। সে পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি কাম্য নয়।
ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে আফগানিস্তানের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়া, মধ্য এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের সংযোগ স্থানে। তাই দেশটিতে কী ঘটছে না ঘটছে, সে বিষয়ে আমাদের ব্যাপক কৌতূহল রয়েছে। রয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও। বিশেষ করে বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তালেবান ও জিহাদি গোষ্ঠীগুলোর সম্পর্কের বিষয়টি বহুল আলোচিত। দেশে জঙ্গিবাদের যে তৎপরতা ছিল বা এখনো সুপ্তাবস্থায় রয়েছে, এর সূচনা হয়েছিল আফগান যোদ্ধাদের মাধ্যমে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ থেকে লোকজন আফগানিস্তানে গিয়ে তালেবানের হয়ে যুদ্ধে অংশ নিয়েছে এবং তাদের মতাদর্শে দীক্ষিত হয়েছে, এমনকি সামরিক প্রশিক্ষণও পেয়েছে। তাদেরই অনেকে দেশে ফিরে এসে জঙ্গি তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। এমন তথ্যও রয়েছে যে, আবারও নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠী আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের কিছু সদস্য আফগানিস্তানে যাওয়ার পরিকল্পনার পর্যায়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। এখনো আফগানিস্তানে যাওয়ার চেষ্টা করছে কিছু মানুষ। এসব বিষয়ের ওপর আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। আফগানিস্তানের ঘটনাপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করে সতর্কতার সঙ্গে কূটনৈতিক ও অন্যান্য পদক্ষেপ নিতে হবে আমাদের।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আফগানিস্তানে আবারও তালেবান

আপলোড টাইম : ০৮:৩৬:৩৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ অগাস্ট ২০২১

সতর্ক পর্যবেক্ষণ রাখতে হবে
আবারও আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসছে তালেবান। বলা যায়, রাজধানী কাবুলসহ গোটা আফগানিস্তানই এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। তবে রক্তপাতের মাধ্যমে নয়, আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের অভিপ্রায় জানিয়েছে তারা। সেই প্রক্রিয়াও চলছে বলে জানা গেছে। এদিকে কাবুলে তালেবান বাহিনীর প্রবেশের পর আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি দেশত্যাগ করেছেন। বস্তুত, জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা আসার পরই বোঝা গিয়েছিল দেশটি অচিরেই আবার তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। বাস্তবে ঘটেছেও তাই। সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার সাড়ে তিন মাসের মাথায় তালেবানের দখলে চলে এসেছে দেশটি।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বহু জাতিগোষ্ঠী ও পর্বতসংকুল আফগানিস্তান হলো এমন একটি দেশ, যা কোনো বহিঃশক্তির পক্ষে দখলে রাখা সম্ভব নয়। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে যেভাবে ‘পরাজয়’ মেনে নিয়ে আফগানিস্তান থেকে সেন্য প্রত্যাহার করে নিতে হচ্ছে, গত শতকের আশির দশকের শেষদিকে তৎকালীন বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নকেও সেই একইভাবে নয় বছরের দখল শেষে আফগানিস্তান থেকে পিছু হটতে হয়েছিল। বস্তুত বহিঃশক্তি দ্বারা কোনো দেশ দখল সমর্থনযোগ্য নয়। প্রতিটি দেশের ভাগ্য নির্ধারণের বিষয়টি নিজ দেশের জনগণের ওপরই ছেড়ে দেওয়া উত্তম। সেদিক থেকে আফগানিস্তানে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশটির জনগণের ইচ্ছার প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন থাকবে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবস্থান যথার্থ বলে মনে করি আমরা। আফগানিস্তানে শান্তি ফিরে আসুক, এটাই আমরা চাই। ইতঃপূর্বে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবানের কঠোর শাসনকালে নানা তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল সেদেশের জনগণকে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও পড়েছিল তালেবানি শাসনের নানা নেতিবাচক প্রভাব। সে পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি কাম্য নয়।
ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে আফগানিস্তানের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়া, মধ্য এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের সংযোগ স্থানে। তাই দেশটিতে কী ঘটছে না ঘটছে, সে বিষয়ে আমাদের ব্যাপক কৌতূহল রয়েছে। রয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও। বিশেষ করে বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তালেবান ও জিহাদি গোষ্ঠীগুলোর সম্পর্কের বিষয়টি বহুল আলোচিত। দেশে জঙ্গিবাদের যে তৎপরতা ছিল বা এখনো সুপ্তাবস্থায় রয়েছে, এর সূচনা হয়েছিল আফগান যোদ্ধাদের মাধ্যমে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ থেকে লোকজন আফগানিস্তানে গিয়ে তালেবানের হয়ে যুদ্ধে অংশ নিয়েছে এবং তাদের মতাদর্শে দীক্ষিত হয়েছে, এমনকি সামরিক প্রশিক্ষণও পেয়েছে। তাদেরই অনেকে দেশে ফিরে এসে জঙ্গি তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। এমন তথ্যও রয়েছে যে, আবারও নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠী আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের কিছু সদস্য আফগানিস্তানে যাওয়ার পরিকল্পনার পর্যায়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। এখনো আফগানিস্তানে যাওয়ার চেষ্টা করছে কিছু মানুষ। এসব বিষয়ের ওপর আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। আফগানিস্তানের ঘটনাপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করে সতর্কতার সঙ্গে কূটনৈতিক ও অন্যান্য পদক্ষেপ নিতে হবে আমাদের।