ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করলেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ!

নাহিদ হাসান, আলমডাঙ্গা:
  • আপলোড টাইম : ০১:৫৬:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ মে ২০২২
  • / ৬ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গোলাম ছরোয়ার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করেছেন। কলেজটির সাধারণ শিক্ষার্থীদের টানা ৭ ঘন্টা আন্দোলনের মুখে গতকাল শনিবার বিকেল চারটার দিকে তিনি সেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত পদত্যাগপত্রে গোলাম ছরোয়ার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়েছেন বলে জানা গেছে। পদত্যাগের পর সহকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বিদায়ী বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি। ওনার সভাপতিত্বে ১১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি আমাকে নিয়োগ দেন। চেয়ারে বসার পর থেকে নিয়ম মেনে দায়িত্বপালন করেছি।’
তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাঁকে (ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে) অবৈধ, দুর্নীতিবাজ, স্বৈরাচারী ও ঘুষখোর আখ্যা দিয়ে গতকাল সকাল থেকে কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। দুপুরের পর শিক্ষকেরা সংহতি প্রকাশ করলে আন্দোলন আরো চাঙা হয়ে ওঠে। উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক ও শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে গোলাম ছরোয়ার পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেন। পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লে আন্দোলনকারীরা আনন্দ মিছিল করতে করতে কলেজ চত্বর ত্যাগ করেন। পদত্যাগী গোলাম ছরোয়ার সন্ধ্যায় বাড়ির পথে রওনা দেন।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ‘নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর গোলাম ছরোয়ার কলেজকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেন। পরীক্ষার নামে অতিরিক্ত ফি আদায়, সেশন চার্জ বৃদ্ধি, জোরপূর্বক কলেজ প্রাঙ্গণে কোচিং বানিজ্য মেতে উঠেন গোলাম ছরোয়ার।’ কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশোভন আচরণও করতেন তিনি বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে গোলাম ছরোয়ারের পদত্যাগের পর নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়েও আলোচনা শুরু হয়। বিকেলে কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পরবর্তী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে সহকারী অধ্যাপক সৈয়দ আলী মামুন রেজার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। সৈয়দ আলী মামুন রেজা বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘দায়িত্ব পেলে কলেজকে দুর্নীতিমুক্ত করতে এবং শিক্ষার মানোন্নয়নে যা যা করার সবই করা হবে।’
পূর্বঘোষিত সময় অনুযায়ী সকাল ১০টায় আলমডাঙ্গা কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ব্যানার সহকারে কলেজ চত্বরে প্রবেশ করেন এবং অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। সকাল থেকেই তাঁরা ঘোষণা দেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ থেকে গোলাম ছরোয়ার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত কলেজ চত্বর ত্যাগ করবে না। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দুর্নীতি-অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরে আন্দোলনকারীরা বক্তব্য দেন।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ‘তৎকালীন পরিচালনা কমিটি পাঁচজনকে ডিঙিয়ে গোলাম ছরোয়ারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেয়। নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি (গোলাম ছরোয়ার) কলেজকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেন। কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন।’

এদিকে গতকাল বিকলে কলেজের সাধারণ শিক্ষকেরা কমনরুম থেকে একে একে বের হয়ে আসেন এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন। শিক্ষকদের সংহতি প্রকাশের পর আন্দোলন আরো জোরালো হয়। উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রনি আলম নূর, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল বারী ও আলমডাঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল আলিমকে সঙ্গে নিয়ে বিকেল সাড়ে চারটায় কলেজ চত্বরে প্রবেশ করেন। কর্মকর্তারা টানা পৌনে ছয়টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। তাঁরা অভিযুক্ত গোলাম ছরোয়ারসহ কলেজের একাডেমিক কাউন্সিল ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্তে পৌঁছান। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদত্যাগের মধ্যদিয়ে পরিবেশ শান্ত হয়।

ইউএনও রনি আলম নূর বলেন, প্রতিকূল পরিবেশের কারণে গোলাম ছরোয়ার স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগপত্রটি নিয়ম অনুযায়ী মাউশির মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো হবে এবং জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করলেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ!

আপলোড টাইম : ০১:৫৬:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ মে ২০২২

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গোলাম ছরোয়ার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করেছেন। কলেজটির সাধারণ শিক্ষার্থীদের টানা ৭ ঘন্টা আন্দোলনের মুখে গতকাল শনিবার বিকেল চারটার দিকে তিনি সেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত পদত্যাগপত্রে গোলাম ছরোয়ার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়েছেন বলে জানা গেছে। পদত্যাগের পর সহকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বিদায়ী বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি। ওনার সভাপতিত্বে ১১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি আমাকে নিয়োগ দেন। চেয়ারে বসার পর থেকে নিয়ম মেনে দায়িত্বপালন করেছি।’
তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাঁকে (ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে) অবৈধ, দুর্নীতিবাজ, স্বৈরাচারী ও ঘুষখোর আখ্যা দিয়ে গতকাল সকাল থেকে কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। দুপুরের পর শিক্ষকেরা সংহতি প্রকাশ করলে আন্দোলন আরো চাঙা হয়ে ওঠে। উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক ও শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে গোলাম ছরোয়ার পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেন। পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লে আন্দোলনকারীরা আনন্দ মিছিল করতে করতে কলেজ চত্বর ত্যাগ করেন। পদত্যাগী গোলাম ছরোয়ার সন্ধ্যায় বাড়ির পথে রওনা দেন।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ‘নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর গোলাম ছরোয়ার কলেজকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেন। পরীক্ষার নামে অতিরিক্ত ফি আদায়, সেশন চার্জ বৃদ্ধি, জোরপূর্বক কলেজ প্রাঙ্গণে কোচিং বানিজ্য মেতে উঠেন গোলাম ছরোয়ার।’ কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশোভন আচরণও করতেন তিনি বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে গোলাম ছরোয়ারের পদত্যাগের পর নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়েও আলোচনা শুরু হয়। বিকেলে কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পরবর্তী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে সহকারী অধ্যাপক সৈয়দ আলী মামুন রেজার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। সৈয়দ আলী মামুন রেজা বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘দায়িত্ব পেলে কলেজকে দুর্নীতিমুক্ত করতে এবং শিক্ষার মানোন্নয়নে যা যা করার সবই করা হবে।’
পূর্বঘোষিত সময় অনুযায়ী সকাল ১০টায় আলমডাঙ্গা কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ব্যানার সহকারে কলেজ চত্বরে প্রবেশ করেন এবং অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। সকাল থেকেই তাঁরা ঘোষণা দেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ থেকে গোলাম ছরোয়ার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত কলেজ চত্বর ত্যাগ করবে না। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দুর্নীতি-অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরে আন্দোলনকারীরা বক্তব্য দেন।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ‘তৎকালীন পরিচালনা কমিটি পাঁচজনকে ডিঙিয়ে গোলাম ছরোয়ারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেয়। নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি (গোলাম ছরোয়ার) কলেজকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেন। কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন।’

এদিকে গতকাল বিকলে কলেজের সাধারণ শিক্ষকেরা কমনরুম থেকে একে একে বের হয়ে আসেন এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন। শিক্ষকদের সংহতি প্রকাশের পর আন্দোলন আরো জোরালো হয়। উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রনি আলম নূর, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল বারী ও আলমডাঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল আলিমকে সঙ্গে নিয়ে বিকেল সাড়ে চারটায় কলেজ চত্বরে প্রবেশ করেন। কর্মকর্তারা টানা পৌনে ছয়টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। তাঁরা অভিযুক্ত গোলাম ছরোয়ারসহ কলেজের একাডেমিক কাউন্সিল ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্তে পৌঁছান। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদত্যাগের মধ্যদিয়ে পরিবেশ শান্ত হয়।

ইউএনও রনি আলম নূর বলেন, প্রতিকূল পরিবেশের কারণে গোলাম ছরোয়ার স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগপত্রটি নিয়ম অনুযায়ী মাউশির মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো হবে এবং জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হবে।