ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আন্তর্জাতিক চাপে দেশের চিকিৎসা শিক্ষা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:০২:১৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ মার্চ ২০২০
  • / ১৭৭ বার পড়া হয়েছে

বিদেশে ডাক্তারদের সুযোগ হারানোর শঙ্কা, অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠনের তাগিদ
সমীকরণ প্রতিবেদন:
চলতি বছরের মধ্যে সব দেশকে চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অ্যাক্রেডিটেশন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে বলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও)। একই সঙ্গে চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান নিশ্চিত করতে স্বাধীন অ্যাক্রেডিটেশন কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন (ডব্লিউএফএমই)। এ কারণে ২০২৩ সালের মধ্যে দেশের সব চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীন অ্যাক্রেডিটেশন কমিশনের স্বীকৃতি নিতে হবে। অন্যথায় এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি নেয়া চিকিৎসকরা আমেরিকা ও কানাডায় উচ্চশিক্ষা, প্রশিক্ষণ গ্রহণ বা পেশাগত কাজ করার সুযোগ হারাবেন। এমনকি বর্তমানে অধ্যয়নরত এমবিবিএস/বিডিএস কোর্সের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা ‘দি ইউনাইটেড স্ট্যাটস মেডিকেল লাইসেন্সিং এক্সামিনেশন (ইউএসএমএলই)’-এর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না। এমন পরিস্থিতিতে মানসম্পন্ন চিকিৎসা শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ‘বাংলাদেশ চিকিৎসা শিক্ষা অ্যাক্রেডিটেশন আইন-২০২০’র খসড়া চূড়ান্ত করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ। এর অধীনে চিকিৎসা শিক্ষা অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠন করা হচ্ছে, যা একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হবে। এখান থেকেই শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত ও সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা কার্যক্রমের তদারকি, নিয়ন্ত্রণ ও স্বীকৃতি দেয়া হবে। শিগগিরই আইনটির খসড়া অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূর বলেন, ‘উন্নত বিশ্বের মতো দেশের মেডিকেল শিক্ষার মান বাড়াতে বাংলাদেশ চিকিৎসা শিক্ষা অ্যাক্রেডিটেশন আইন- ২০২০’র খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনটি প্রণয়নের ব্যাপারে চিকিৎসা শিক্ষা সংক্রান্ত একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থার চাপ রয়েছে। এটি কার্যকর হলে মেডিকেল শিক্ষার মান ও মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো আন্তর্জাতিক মানের হবে। এমনকি রোগীর সঙ্গে একজন ডাক্তার কী আচরণ করবে, তা-ও এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখানো হবে। তখন আর আমাদের দেশের রোগীরা চিকিৎসার জন্য ভারতসহ অন্য দেশে যাবে না। আইনটি সময়মতো কার্যকর না করা গেলে বিদেশে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের সুযোগ-সবিধা কমবে। নানা অসুবিধার মুখোমুখি হতে হবে।’
জানা যায়, ২০১৪ সালের ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত জাতীয় স্বাস্থ্য কাউন্সিলের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দেন যে, ‘মেডিকেল শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবা বিশেষত বেসরকারি খাতের মেডিকেল শিক্ষা ও সেবা নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এ লক্ষ্যে একটি অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠন এবং প্রয়োজনীয় আইন ও বিধিবিধান প্রণয়ন করতে হবে।’ এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত আইনের খসড়া প্রণয়ন করতে ওই বছরের ২৬ জুন তৎকালীন স্বাস্থ্য সচিবের সভাপতিত্বে ১৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এরপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দুই ভাগে বিভক্ত করা হলে ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর নতুন করে আরও একটি কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ। গত বছরের ২৬ নভেম্বর স্টেকহোল্ডারদের মতামত নিয়ে আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। এরপর মতামতের জন্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। সংশ্লিষ্টদের মতামতের আলোকে ২৮ জানুয়ারি এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়।
ওই সভায় উপস্থিত চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিওএইচও) ‘গ্লোবাল স্ট্যাটেজি অন হিউম্যান রিসোর্সেস ফর হেলথ : ওয়ার্কফোর্স ২০৩০’-এ উল্লেখ করা হয়েছে যে, চলতি বছরের (২০২০) মধ্যে বিশ্বের সব দেশকে চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অ্যাক্রেডিটেশন ম্যাকানিজম প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই সংস্থার পাশাপাশি ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের (ডব্লিউএফএমই) যৌথ টাস্কফোর্স সম্মিলিতভাবে চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান উন্নয়ন নিশ্চিত করতে স্বাধীন অ্যাক্রেডিটেশন কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইউএসএ’র এডুকেশনাল কমিশন ফর ফরেন মেডিকেল গ্র্যাজুয়েটস (ইসিএফএমজি) ঘোষণা দিয়েছে, ২০২৩ সালের মধ্যে দেশের সব চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীন অ্যাক্রেডিটেশন কমিশনের স্বীকৃতি নিতে হবে। এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মান উন্নয়ন ও নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে একটি অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠন ও এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করতে হবে।
বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি বলেন, উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ, অত্যাধুনিক চিকিৎসা সেবা ও কারিগরি সহায়তা দেয়ার ক্ষমতা বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের নেই। তাই বাংলাদেশের মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ প্রয়োজনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাধ্যতামূলকভাবেই চিকিৎসা শিক্ষার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নির্ধারণে অ্যাক্রেডিটেশন আইন ও কাউন্সিল গঠন করতে হবে। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি বলেন, চিকিৎসা শিক্ষা একটি স্পর্শকাতর বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবস্থা। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে টিকে থাকতে হলে চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অ্যাক্রেডিটেশনের জন্য স্থায়ী প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন। জরুরি ভিত্তিতে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠন করে দেশীয় চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতির ব্যবস্থা না করা হলে বর্তমানে অধ্যয়নরত এমবিবিএস/বিডিএস কোর্সের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা ‘দি ইউনাইটেড স্ট্যাটস মেডিকেল লাইসেন্সিং এক্সামিনেশন (ইউএসএমএলই)’-এ অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
খসড়ায় যা রয়েছে :
আইনের ৪ ধারায় ‘বাংলাদেশ চিকিৎসা শিক্ষা অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল’ নামে একটি কাউন্সিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। কাউন্সিলে সরকার মনোনীত একজন চেয়ারম্যান থাকবেন। এর সদস্য হিসেবে থাকবেন সরকারের মনোনীত অধ্যাপক পদমর্যাদার দু’জন মেডিকেল গবেষণা ও উন্নয়নে বেসিক সায়েন্স এবং ক্লিনিক্যাল বিষয়ে স্বনামধন্য চিকিৎসক। যারা কাউন্সিলের পূর্ণকালীন সদস্য থাকবেন। এছাড়া খণ্ডকালীন সদস্য হিসেবে থাকবেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (পদাধিকার বলে), সরকারের মনোনীত চিকিৎসা শিক্ষায় অবদানকারী স্বনামধন্য একজন মেডিকেল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, ডেন্টাল কলেজ/ইন্সটিটিউটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, একজন নার্সিং কলেজ/ইন্সটিটিউটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এবং একজন আইএইচটি/ম্যাটসের সাবেক অধ্যক্ষ। এছাড়া পদাধিকারবলে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের যুগ্ম সচিব (চিকিৎসা শিক্ষা), বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি, বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) সভাপতিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার প্রতিনিধিরা কাউন্সিলের খণ্ডকালীন সদস্য হিসেবে থাকবেন।
কাউন্সিলের ক্ষমতা ও কার্যাবলি প্রসঙ্গে খসড়া আইনের ১০ ধারার উপধারা (ক)-এ বলা হয়েছে, এ আইনের অধীনে মেডিকেল শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে অ্যাক্রেডিটেশন সনদ প্রদান, নবায়ন, প্রত্যাখ্যান, স্থগিতকরণ ও বাতিলকরণের ক্ষমতা থাকবে কাউন্সিলের। পাশাপাশি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও মেডিকেল কলেজকে অ্যাক্রেডিটেশন সনদ প্রদানের জন্য শনাক্ত, এজন্য বিভিন্ন শর্ত নির্ধারণ এবং উক্ত নির্ণায়ক ও শর্তের মানোন্নয়নে কাজ করবে। খসড়ায় বলা হয়, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন লাভের পর এ আইনের অধীনে সব শর্ত পালন করে অ্যাক্রেডিটেশন সনদ গ্রহণ করতে হবে। এর মেয়াদ হবে ৫ বছর, যা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টিগোচর স্থানে সাঁটিয়ে রাখতে হবে। মেয়াদ শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে কাউন্সিলের প্রবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে। কাউন্সিল কর্তৃক প্রদত্ত সনদের শর্তাবলি প্রতিপালন ব্যতীত কোনো হাসপাতাল, ক্লিনিক, মেডিকেল কলেজ, সনদ প্রদানকারী সংস্থা, পরিদর্শন সংস্থা, প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি এ ধরনের মার্কের প্রতিচ্ছবি ব্যবহার করতে পারবে না। বিধি লঙ্ঘনের দায়ে রাখা হয়েছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও। আইনের ২৪ ধারায় বিধি লঙ্ঘনের দায়ে যথাযথ তদন্তসাপেক্ষে সনদ বাতিলের বিধান রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে রাখা হয়েছে আপিলের সুযোগও।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আন্তর্জাতিক চাপে দেশের চিকিৎসা শিক্ষা

আপলোড টাইম : ১১:০২:১৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ মার্চ ২০২০

বিদেশে ডাক্তারদের সুযোগ হারানোর শঙ্কা, অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠনের তাগিদ
সমীকরণ প্রতিবেদন:
চলতি বছরের মধ্যে সব দেশকে চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অ্যাক্রেডিটেশন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে বলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও)। একই সঙ্গে চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান নিশ্চিত করতে স্বাধীন অ্যাক্রেডিটেশন কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন (ডব্লিউএফএমই)। এ কারণে ২০২৩ সালের মধ্যে দেশের সব চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীন অ্যাক্রেডিটেশন কমিশনের স্বীকৃতি নিতে হবে। অন্যথায় এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি নেয়া চিকিৎসকরা আমেরিকা ও কানাডায় উচ্চশিক্ষা, প্রশিক্ষণ গ্রহণ বা পেশাগত কাজ করার সুযোগ হারাবেন। এমনকি বর্তমানে অধ্যয়নরত এমবিবিএস/বিডিএস কোর্সের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা ‘দি ইউনাইটেড স্ট্যাটস মেডিকেল লাইসেন্সিং এক্সামিনেশন (ইউএসএমএলই)’-এর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না। এমন পরিস্থিতিতে মানসম্পন্ন চিকিৎসা শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ‘বাংলাদেশ চিকিৎসা শিক্ষা অ্যাক্রেডিটেশন আইন-২০২০’র খসড়া চূড়ান্ত করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ। এর অধীনে চিকিৎসা শিক্ষা অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠন করা হচ্ছে, যা একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হবে। এখান থেকেই শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত ও সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা কার্যক্রমের তদারকি, নিয়ন্ত্রণ ও স্বীকৃতি দেয়া হবে। শিগগিরই আইনটির খসড়া অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূর বলেন, ‘উন্নত বিশ্বের মতো দেশের মেডিকেল শিক্ষার মান বাড়াতে বাংলাদেশ চিকিৎসা শিক্ষা অ্যাক্রেডিটেশন আইন- ২০২০’র খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনটি প্রণয়নের ব্যাপারে চিকিৎসা শিক্ষা সংক্রান্ত একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থার চাপ রয়েছে। এটি কার্যকর হলে মেডিকেল শিক্ষার মান ও মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো আন্তর্জাতিক মানের হবে। এমনকি রোগীর সঙ্গে একজন ডাক্তার কী আচরণ করবে, তা-ও এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখানো হবে। তখন আর আমাদের দেশের রোগীরা চিকিৎসার জন্য ভারতসহ অন্য দেশে যাবে না। আইনটি সময়মতো কার্যকর না করা গেলে বিদেশে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের সুযোগ-সবিধা কমবে। নানা অসুবিধার মুখোমুখি হতে হবে।’
জানা যায়, ২০১৪ সালের ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত জাতীয় স্বাস্থ্য কাউন্সিলের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দেন যে, ‘মেডিকেল শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবা বিশেষত বেসরকারি খাতের মেডিকেল শিক্ষা ও সেবা নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এ লক্ষ্যে একটি অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠন এবং প্রয়োজনীয় আইন ও বিধিবিধান প্রণয়ন করতে হবে।’ এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত আইনের খসড়া প্রণয়ন করতে ওই বছরের ২৬ জুন তৎকালীন স্বাস্থ্য সচিবের সভাপতিত্বে ১৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এরপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দুই ভাগে বিভক্ত করা হলে ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর নতুন করে আরও একটি কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ। গত বছরের ২৬ নভেম্বর স্টেকহোল্ডারদের মতামত নিয়ে আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। এরপর মতামতের জন্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। সংশ্লিষ্টদের মতামতের আলোকে ২৮ জানুয়ারি এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়।
ওই সভায় উপস্থিত চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিওএইচও) ‘গ্লোবাল স্ট্যাটেজি অন হিউম্যান রিসোর্সেস ফর হেলথ : ওয়ার্কফোর্স ২০৩০’-এ উল্লেখ করা হয়েছে যে, চলতি বছরের (২০২০) মধ্যে বিশ্বের সব দেশকে চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অ্যাক্রেডিটেশন ম্যাকানিজম প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই সংস্থার পাশাপাশি ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের (ডব্লিউএফএমই) যৌথ টাস্কফোর্স সম্মিলিতভাবে চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান উন্নয়ন নিশ্চিত করতে স্বাধীন অ্যাক্রেডিটেশন কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইউএসএ’র এডুকেশনাল কমিশন ফর ফরেন মেডিকেল গ্র্যাজুয়েটস (ইসিএফএমজি) ঘোষণা দিয়েছে, ২০২৩ সালের মধ্যে দেশের সব চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীন অ্যাক্রেডিটেশন কমিশনের স্বীকৃতি নিতে হবে। এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মান উন্নয়ন ও নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে একটি অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠন ও এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করতে হবে।
বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি বলেন, উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ, অত্যাধুনিক চিকিৎসা সেবা ও কারিগরি সহায়তা দেয়ার ক্ষমতা বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের নেই। তাই বাংলাদেশের মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ প্রয়োজনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাধ্যতামূলকভাবেই চিকিৎসা শিক্ষার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নির্ধারণে অ্যাক্রেডিটেশন আইন ও কাউন্সিল গঠন করতে হবে। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি বলেন, চিকিৎসা শিক্ষা একটি স্পর্শকাতর বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবস্থা। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে টিকে থাকতে হলে চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অ্যাক্রেডিটেশনের জন্য স্থায়ী প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন। জরুরি ভিত্তিতে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠন করে দেশীয় চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতির ব্যবস্থা না করা হলে বর্তমানে অধ্যয়নরত এমবিবিএস/বিডিএস কোর্সের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা ‘দি ইউনাইটেড স্ট্যাটস মেডিকেল লাইসেন্সিং এক্সামিনেশন (ইউএসএমএলই)’-এ অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
খসড়ায় যা রয়েছে :
আইনের ৪ ধারায় ‘বাংলাদেশ চিকিৎসা শিক্ষা অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল’ নামে একটি কাউন্সিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। কাউন্সিলে সরকার মনোনীত একজন চেয়ারম্যান থাকবেন। এর সদস্য হিসেবে থাকবেন সরকারের মনোনীত অধ্যাপক পদমর্যাদার দু’জন মেডিকেল গবেষণা ও উন্নয়নে বেসিক সায়েন্স এবং ক্লিনিক্যাল বিষয়ে স্বনামধন্য চিকিৎসক। যারা কাউন্সিলের পূর্ণকালীন সদস্য থাকবেন। এছাড়া খণ্ডকালীন সদস্য হিসেবে থাকবেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (পদাধিকার বলে), সরকারের মনোনীত চিকিৎসা শিক্ষায় অবদানকারী স্বনামধন্য একজন মেডিকেল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, ডেন্টাল কলেজ/ইন্সটিটিউটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, একজন নার্সিং কলেজ/ইন্সটিটিউটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এবং একজন আইএইচটি/ম্যাটসের সাবেক অধ্যক্ষ। এছাড়া পদাধিকারবলে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের যুগ্ম সচিব (চিকিৎসা শিক্ষা), বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি, বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) সভাপতিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার প্রতিনিধিরা কাউন্সিলের খণ্ডকালীন সদস্য হিসেবে থাকবেন।
কাউন্সিলের ক্ষমতা ও কার্যাবলি প্রসঙ্গে খসড়া আইনের ১০ ধারার উপধারা (ক)-এ বলা হয়েছে, এ আইনের অধীনে মেডিকেল শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে অ্যাক্রেডিটেশন সনদ প্রদান, নবায়ন, প্রত্যাখ্যান, স্থগিতকরণ ও বাতিলকরণের ক্ষমতা থাকবে কাউন্সিলের। পাশাপাশি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও মেডিকেল কলেজকে অ্যাক্রেডিটেশন সনদ প্রদানের জন্য শনাক্ত, এজন্য বিভিন্ন শর্ত নির্ধারণ এবং উক্ত নির্ণায়ক ও শর্তের মানোন্নয়নে কাজ করবে। খসড়ায় বলা হয়, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন লাভের পর এ আইনের অধীনে সব শর্ত পালন করে অ্যাক্রেডিটেশন সনদ গ্রহণ করতে হবে। এর মেয়াদ হবে ৫ বছর, যা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টিগোচর স্থানে সাঁটিয়ে রাখতে হবে। মেয়াদ শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে কাউন্সিলের প্রবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে। কাউন্সিল কর্তৃক প্রদত্ত সনদের শর্তাবলি প্রতিপালন ব্যতীত কোনো হাসপাতাল, ক্লিনিক, মেডিকেল কলেজ, সনদ প্রদানকারী সংস্থা, পরিদর্শন সংস্থা, প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি এ ধরনের মার্কের প্রতিচ্ছবি ব্যবহার করতে পারবে না। বিধি লঙ্ঘনের দায়ে রাখা হয়েছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও। আইনের ২৪ ধারায় বিধি লঙ্ঘনের দায়ে যথাযথ তদন্তসাপেক্ষে সনদ বাতিলের বিধান রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে রাখা হয়েছে আপিলের সুযোগও।