ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আজ হরতাল, ইভিএমের ভোটে নানা অনিয়ম

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৪৩:২৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • / ১৮৯ বার পড়া হয়েছে

ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল বিএনপির প্রত্যাখ্যান
সমীকরণ প্রতিবেদন:
ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে কারচুপি ও ভোট জালিয়াতির প্রতিবাদে আজ রোববার ঢাকায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। গতরাতে রাত ৮টায় এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকা সিটি করপোরেশনের উত্তর ও দক্ষিণে নির্বাচনের ফলাফলকে আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। দুই সিটির নির্বাচনে ভয়াবহ রকমের কারচুপি, জালিয়াতি, জবরদস্তি করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কারণে এবং জনগণের রায়কে একেবারে পদদলিত করে দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এই নির্বাচনকে প্রভাবিত ও লুট করে ফলাফল নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করছি। এর প্রতিবাদে আমরা রোববার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সকাল-সন্ধ্যা ঢাকা শহরে হরতাল আহ্বান করছি। আমরা আশা করব, ঢাকাবাসী তাদের অধিকার রক্ষার জন্য শান্তিপূর্ণভাবে এই হরতাল পালন করবে এবং গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সহযোগিতা করবেন।’ বিএনপি মহাসচিব জানান, হরতালের আওতায় অ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী গাড়ি, ওষুধের দোকান, খাবার দোকান প্রভৃতি আওতামুক্ত থাকবে। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের উত্তর ও দক্ষিণ দুটোরই ফলাফল সরকারি ঘোষণা প্রায় স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আমরা যে আশঙ্কা করেছিলাম সেই আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। এই নির্বাচনও সরকার আগের নির্বাচনের মতোই তারা রাষ্ট্রীয় যন্ত্রকে ব্যবহার করে, নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে তারা তাদের মতো করে দখল করে নিয়েছে। এই সরকার অত্যন্ত সচেতনভাবে গণতন্ত্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে এবং তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে একটি একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। সেটাই তারা এখন করতে যাচ্ছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন যেভাবে গঠন করা হয়েছে তাদের ক্রীড়ানক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, আওয়ামী লীগের অধীনে কখনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। নির্বাচন কমিশন সরকার ‘বশংবদ’ কমিশন হিসেবে কাজ করছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ইভিএমের ভোটে নানা অনিয়ম:
সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণের মধ্য দিয়ে ঢাকা সিটির উত্তর ও দক্ষিণ অংশে গতকাল শনিবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমবারের মতো ঢাকা মহানগরীতে ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ভোট গ্রহণের সময় নানা অনিয়ম, ভোগান্তি ও জটিলতার ঘটনা ঘটে। বড় ধরনের সহিংসতা না ঘটলেও ভোটার উপস্থিতির হার ছিল কম। নির্বাচন কেন্দ্রগুলো ছিল সরকার সমর্থকদের দখলে। বাইরেও তাদের মহড়া ছিল চোখে পড়ার মতো। বহু কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্টদের দেখা যায়নি। নির্বাচনী প্রচারণার সময় যে ধরনের উৎসবমুখরতা ছিল ভোট প্রদানের সময় তা লক্ষ করা যায়নি। ইভিএম ভোট প্রদানে মানুষের সাড়া ছিল কম। ফলাফল নির্ধারিতÑ এমন আশঙ্কায় অনেকেই ভোটকেন্দ্রে যাননি বলে আলাপকালে জানিয়েছেন তারা। এসব অনিয়মের মধ্যেই কেউ কেউ ইভিএমে সহজে ভোট দিতে পারলেও বেশির ভাগ ভোটারকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। ইভিএমের ধীরগতি, আঙুলের ছাপ না মেলা এবং মেশিন কাজ না করার জটিলতায় ভোগান্তির শিকার হয়েছেন তারা। খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদাও ইভিএমের ভোগান্তি ও বিড়ম্বনা থেকে রেহাই পাননি। উত্তরায় একটি কেন্দ্রে শুরুর প্রথম ঘণ্টায় একটি ভোটও পড়েনি। ভোটারদের অনীহা, বিরোধী প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেয়া ও এজেন্ট দিতে না দেয়া, কোনো কোনো কেন্দ্রে ভোটারদের শুধু কন্ট্রোল ইউনিটে আঙুলের ছাপ নিয়েই ভোট হয়েছে বলে বিদায় করে দেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগ সমুর্থত প্রার্থীদের আধিপত্য বিস্তার ও ডিজিটাল ভোট চুরিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কেন্দ্রে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, কর্তব্যরত সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও রক্তাক্ত করা, তাদেরকে দায়িত্ব পালনে বাধা এবং এসব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নীরব দর্শকের ভূমিকার মধ্য দিয়ে সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। কেন্দ্রে লাঞ্ছিত হয়েছেন মোহাম্মদপুরে জাতীয় পার্টির কাউন্সিলর প্রার্থী ডেইজি সারওয়ার। ঢাকা দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেশির ভাগ কেন্দ্রেই ধানের শীষের এজেন্ট প্রবেশ করতে পারেননি। কেন্দ্রে মারধরের শিকার হয়েছেন কেউ কেউ। বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের গাড়িতে বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। একাধিক কেন্দ্রে ককটেল ফাটিয়ে আতঙ্ক তৈরি করা হয়েছে। সাখাওয়াত হোসেন সুমন নামে একজন ফটোসাংবাদিকের ওপর বেপরোয়া হামলা চালিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয়া হয়েছে। বিএনপি সমর্থিত বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরের ওপর হামলা হয়েছে। বহু কেন্দ্রে ভোট শুরুর আগেই বিএনপির এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়। কোনো কোনো কেন্দ্রে স্বয়ং প্রিজাইডিং অফিসার নিজেই বিএনপির এজেন্টকে বের করতে মদদ দেন। ধানের শীষের প্রার্থী তাবিথ আউয়াল এমন অভিযোগ পেয়ে দিনভর এক কেন্দ্র থেকে আরেক কেন্দ্রে ছুটেছেন। বহু কেন্দ্রে তিনি এজেন্টদের বসিয়ে দিয়ে চলে আসার পর, তাদের আবার বের করে দেয়া হয়েছে। অনেক কেন্দ্রে ভোটারদের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে ভোট দেয়া হয়ে গেছে বলে বিদায় করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে ওই ভোটারের ভোট তাদের পছন্দ মতো প্রার্থীকে দেয় সরকারি দলের লোকজন। কোনো কোনো কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়ে বিএনপির ভোটাররা ইভিএমে ধানের শীষ প্রতীক খুঁজে পাননি। ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের সময় বিএনপির অনেক ভোটারকে বাধা দেয়া হয়েছে। অনেক কেন্দ্রে ভোটাররা লাইনে দাঁড়াতে পারলেও ভোট দিতে পারেননি। আবার গেটের সামনে দীর্ঘ লাইন থাকলেও ভেতরে প্রবেশ করানো হয়নি। গুলশান কালাচাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়ালকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। কেন্দ্র ভোটশূন্য দেখে তিনি সকালে ওই কেন্দ্রে যান। প্রিজাইডিং অফিসারের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেও তাকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। দুপুরের আগেই ৫১টি ভোটকেন্দ্রে নানা অনিয়মের তথ্য জানিয়ে তাবিথ আউয়াল রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। এমন কী স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকেরা নৌকায় ভোট দেয়ার শর্তে ভোটারদের কেন্দ্রে প্রবেশ করায়। অনেক কেন্দ্রে ভোটারের চেয়ে কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি। প্রথম কয়েক ঘণ্টায় কেন্দ্রগুলোর বেশির ভাগ বুথে ভোটার উপস্থিতি ছিল না। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও পোলিং এজেন্টদের অলসভাবে বসে থাকতে দেখা যায়। আবার বিএনপিসহ সব প্রার্থীর এজেন্টও বেশির ভাগ বুথে ছিলেন না। আতঙ্ক, শঙ্কা ও ইভিএমের প্রতি বিতৃষ্ণার কারণেই ভোটার উপস্থিতি এতটা কম ছিল বলে বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজ হরতাল, ইভিএমের ভোটে নানা অনিয়ম

আপলোড টাইম : ১০:৪৩:২৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২০

ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল বিএনপির প্রত্যাখ্যান
সমীকরণ প্রতিবেদন:
ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে কারচুপি ও ভোট জালিয়াতির প্রতিবাদে আজ রোববার ঢাকায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। গতরাতে রাত ৮টায় এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকা সিটি করপোরেশনের উত্তর ও দক্ষিণে নির্বাচনের ফলাফলকে আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। দুই সিটির নির্বাচনে ভয়াবহ রকমের কারচুপি, জালিয়াতি, জবরদস্তি করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কারণে এবং জনগণের রায়কে একেবারে পদদলিত করে দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এই নির্বাচনকে প্রভাবিত ও লুট করে ফলাফল নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করছি। এর প্রতিবাদে আমরা রোববার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সকাল-সন্ধ্যা ঢাকা শহরে হরতাল আহ্বান করছি। আমরা আশা করব, ঢাকাবাসী তাদের অধিকার রক্ষার জন্য শান্তিপূর্ণভাবে এই হরতাল পালন করবে এবং গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সহযোগিতা করবেন।’ বিএনপি মহাসচিব জানান, হরতালের আওতায় অ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী গাড়ি, ওষুধের দোকান, খাবার দোকান প্রভৃতি আওতামুক্ত থাকবে। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের উত্তর ও দক্ষিণ দুটোরই ফলাফল সরকারি ঘোষণা প্রায় স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আমরা যে আশঙ্কা করেছিলাম সেই আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। এই নির্বাচনও সরকার আগের নির্বাচনের মতোই তারা রাষ্ট্রীয় যন্ত্রকে ব্যবহার করে, নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে তারা তাদের মতো করে দখল করে নিয়েছে। এই সরকার অত্যন্ত সচেতনভাবে গণতন্ত্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে এবং তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে একটি একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। সেটাই তারা এখন করতে যাচ্ছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন যেভাবে গঠন করা হয়েছে তাদের ক্রীড়ানক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, আওয়ামী লীগের অধীনে কখনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। নির্বাচন কমিশন সরকার ‘বশংবদ’ কমিশন হিসেবে কাজ করছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ইভিএমের ভোটে নানা অনিয়ম:
সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণের মধ্য দিয়ে ঢাকা সিটির উত্তর ও দক্ষিণ অংশে গতকাল শনিবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমবারের মতো ঢাকা মহানগরীতে ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ভোট গ্রহণের সময় নানা অনিয়ম, ভোগান্তি ও জটিলতার ঘটনা ঘটে। বড় ধরনের সহিংসতা না ঘটলেও ভোটার উপস্থিতির হার ছিল কম। নির্বাচন কেন্দ্রগুলো ছিল সরকার সমর্থকদের দখলে। বাইরেও তাদের মহড়া ছিল চোখে পড়ার মতো। বহু কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্টদের দেখা যায়নি। নির্বাচনী প্রচারণার সময় যে ধরনের উৎসবমুখরতা ছিল ভোট প্রদানের সময় তা লক্ষ করা যায়নি। ইভিএম ভোট প্রদানে মানুষের সাড়া ছিল কম। ফলাফল নির্ধারিতÑ এমন আশঙ্কায় অনেকেই ভোটকেন্দ্রে যাননি বলে আলাপকালে জানিয়েছেন তারা। এসব অনিয়মের মধ্যেই কেউ কেউ ইভিএমে সহজে ভোট দিতে পারলেও বেশির ভাগ ভোটারকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। ইভিএমের ধীরগতি, আঙুলের ছাপ না মেলা এবং মেশিন কাজ না করার জটিলতায় ভোগান্তির শিকার হয়েছেন তারা। খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদাও ইভিএমের ভোগান্তি ও বিড়ম্বনা থেকে রেহাই পাননি। উত্তরায় একটি কেন্দ্রে শুরুর প্রথম ঘণ্টায় একটি ভোটও পড়েনি। ভোটারদের অনীহা, বিরোধী প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেয়া ও এজেন্ট দিতে না দেয়া, কোনো কোনো কেন্দ্রে ভোটারদের শুধু কন্ট্রোল ইউনিটে আঙুলের ছাপ নিয়েই ভোট হয়েছে বলে বিদায় করে দেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগ সমুর্থত প্রার্থীদের আধিপত্য বিস্তার ও ডিজিটাল ভোট চুরিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কেন্দ্রে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, কর্তব্যরত সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও রক্তাক্ত করা, তাদেরকে দায়িত্ব পালনে বাধা এবং এসব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নীরব দর্শকের ভূমিকার মধ্য দিয়ে সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। কেন্দ্রে লাঞ্ছিত হয়েছেন মোহাম্মদপুরে জাতীয় পার্টির কাউন্সিলর প্রার্থী ডেইজি সারওয়ার। ঢাকা দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেশির ভাগ কেন্দ্রেই ধানের শীষের এজেন্ট প্রবেশ করতে পারেননি। কেন্দ্রে মারধরের শিকার হয়েছেন কেউ কেউ। বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের গাড়িতে বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। একাধিক কেন্দ্রে ককটেল ফাটিয়ে আতঙ্ক তৈরি করা হয়েছে। সাখাওয়াত হোসেন সুমন নামে একজন ফটোসাংবাদিকের ওপর বেপরোয়া হামলা চালিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয়া হয়েছে। বিএনপি সমর্থিত বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরের ওপর হামলা হয়েছে। বহু কেন্দ্রে ভোট শুরুর আগেই বিএনপির এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়। কোনো কোনো কেন্দ্রে স্বয়ং প্রিজাইডিং অফিসার নিজেই বিএনপির এজেন্টকে বের করতে মদদ দেন। ধানের শীষের প্রার্থী তাবিথ আউয়াল এমন অভিযোগ পেয়ে দিনভর এক কেন্দ্র থেকে আরেক কেন্দ্রে ছুটেছেন। বহু কেন্দ্রে তিনি এজেন্টদের বসিয়ে দিয়ে চলে আসার পর, তাদের আবার বের করে দেয়া হয়েছে। অনেক কেন্দ্রে ভোটারদের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে ভোট দেয়া হয়ে গেছে বলে বিদায় করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে ওই ভোটারের ভোট তাদের পছন্দ মতো প্রার্থীকে দেয় সরকারি দলের লোকজন। কোনো কোনো কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়ে বিএনপির ভোটাররা ইভিএমে ধানের শীষ প্রতীক খুঁজে পাননি। ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের সময় বিএনপির অনেক ভোটারকে বাধা দেয়া হয়েছে। অনেক কেন্দ্রে ভোটাররা লাইনে দাঁড়াতে পারলেও ভোট দিতে পারেননি। আবার গেটের সামনে দীর্ঘ লাইন থাকলেও ভেতরে প্রবেশ করানো হয়নি। গুলশান কালাচাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়ালকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। কেন্দ্র ভোটশূন্য দেখে তিনি সকালে ওই কেন্দ্রে যান। প্রিজাইডিং অফিসারের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেও তাকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। দুপুরের আগেই ৫১টি ভোটকেন্দ্রে নানা অনিয়মের তথ্য জানিয়ে তাবিথ আউয়াল রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। এমন কী স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকেরা নৌকায় ভোট দেয়ার শর্তে ভোটারদের কেন্দ্রে প্রবেশ করায়। অনেক কেন্দ্রে ভোটারের চেয়ে কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি। প্রথম কয়েক ঘণ্টায় কেন্দ্রগুলোর বেশির ভাগ বুথে ভোটার উপস্থিতি ছিল না। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও পোলিং এজেন্টদের অলসভাবে বসে থাকতে দেখা যায়। আবার বিএনপিসহ সব প্রার্থীর এজেন্টও বেশির ভাগ বুথে ছিলেন না। আতঙ্ক, শঙ্কা ও ইভিএমের প্রতি বিতৃষ্ণার কারণেই ভোটার উপস্থিতি এতটা কম ছিল বলে বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে।