ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আজ বিশ্ব হার্ট দিবস

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৪৯:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • / ৩১৪ বার পড়া হয়েছে

হৃদরোগে মৃত্যু ঝুঁকিতে ৭৫ শতাংশ মানুষ
সমীকরণ প্রতিবেদন:
বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগে ৬৭ ভাগ মানুষের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে হৃদরোগ। এমনকি দেশে মোট মৃত্যুর শতকরা ৩০ ভাগই হচ্ছে হৃদরোগজনিত কারণে। গত বছরের অক্টোবরে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় অনুষ্ঠিত উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ওপর এক নীতিনির্ধারণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের এক তথ্যেও বলা হয় বাংলাদেশে প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে তিনজনই হৃদরোগ ঝুঁকিতে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছে, তামাক নিয়ন্ত্রণ ও যতথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি মোকাবিলা করা সম্ভব। এক্ষেত্রে সরকারকে আরও এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়া হৃদরোগ সারাবিশ্বে মৃত্যুর এক নম্বর ঘাতক ব্যাধি। বিশ্ব হার্ট ফেডারেশনের মতে, হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকজনিত সমস্যায় প্রতিবছর বিশ্বের প্রায় এক কোটি ৭৯ লাখ মানুষ মারা যায়। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আজ রোববার বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে দিবসটি। এ বছর ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশন কর্তৃক দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বি এ হার্ট হিরো মেক এ প্রমিজ অর্থাৎ আপনার হার্ট সুরক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ হোন।’ দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়া হলেও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কোনো কর্মসূচি নেই বলে নিশ্চিত করেছেন একাধিক চিকিৎসক। তারা জানান, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক দেশের বাইরে থাকায় এ বছর দিবসটি কেন্দ্র করে কোনো কর্মসূচি নেয়া হয়নি। তিনি বিদেশ সফর শেষে দেশে ফেরার পর কর্মসূচি গ্রহণ করা হতে পারে।
বিশ্ব হার্ট ফেডারেশনের মতে, হৃদরোগে মৃত্যু সব ধরনের মৃত্যুর মধ্যে তৃতীয় এবং অসংক্রামক রোগজনিত মৃত্যুর অর্ধেক। এমন তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে হৃদরোগ বিশেজ্ঞরাও বলছেন, বর্তমান বিশ্বে এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মারা যাচ্ছে হৃদরোগে। পাশাপাশি দেশে প্রতিবছর মোট মৃত্যুর ৩০ ভাগই হচ্ছে হৃদরোগের কারণে। রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০০২ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ৭ লাখ ১ হাজার ৫৩৪ জন হৃদরোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছে ৪৯ হাজার ৭৬৬ জন। শুধু ২০১৮ সালেই ভর্তি হয়েছে ৭ হাজার ৮৭ জন হৃদরোগী। এছাড়া গত ১৮ বছরে হাসপাতালটিতে ১৩ হাজার ২৯৮ জনের ওপেন হার্ট সার্জারি, ১ হাজার ৪৮০ জনের ক্লোজ হার্ট সার্জারি ও ১৯ হাজার ৮৭ জনের ভাস্কুলার সার্জারি সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ১০ হাজার ৫৭৪ জন রোগীর ক্যাথল্যাব প্রসিডিউর সম্পন্ন এবং সিএজি, পিসিআই, পি.পিসিআই, পিটিএমসি, ডিভাইস এএসডি, ভিএসডি, পিডিএ, ইপিএস, পিএজি, টিপিএম, পিপিএম ও অন্যান্যসহ ৫ হাজার ৬১৫টি হৃদরোগজনিত অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক বলেন, ৪১৪ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটিতে প্রতি মাসে গড়ে ৯০০ থেকে এক হাজার রোগী ভর্তি থাকছে। হৃদরোগের চিকিৎসা নিতে ও ভর্তি হতে আসা রোগীর এ সংখ্যা ক্রমেই বেড়েই চলছে। এ ধারাবাহিকতায় চলতি ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ৭ হাজার ৫৭১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৬ হাজার ৬৭৮, মার্চে ৭ হাজার ৬৫৪, এপ্রিলে ৬ হাজার ৮৭৯, মেতে ৫ হাজার ৪৬৮, জুনে ৫ হাজার ৮৮১, জুলাইয়ে ৬ হাজার ৩২৪ ও আগস্টে ৫ হাজার ৮৬২ জন হৃদরোগী আন্তঃবিভাগে ভর্তি হয়েছে। যাদের মধ্যে ৩ হাজার ২০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর বাইরে জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত গত আট মাসে ১ লাখ ৯৭ হাজার ২৬৩ জন রোগী হাসপাতালটির বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। দেশব্যাপী ক্রমবর্ধমানহারে হৃদরোগীর সংখ্যা বাড়ার কারণ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যলয়ের কার্ডিওলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আলী আহসান বলেন, বর্তমানে বিশ্বে মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৮৫ ভাগ মৃত্যুর কারণ হৃদরোগ এবং স্ট্রোক।
মূলত তামাক ও অ্যাকোহলজাতীয় পণ্য ব্যবহার, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও অপরিমিত ঘুমের ফলে হৃদরোগ ঝুঁকি বাড়ছে। এছাড়া মানুষের কায়িক পরিশ্রম কমায় ওজন বৃদ্ধি এবং দৈনন্দিন খাদ্যাভাস পরিবর্তিত হয়ে মিষ্টি ও লবণজাতীয় খাবার গ্রহণ করায় উচ্চ-রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস ঝুঁকি বাড়ছে। বর্তমানে দেশে ২৫ শতাংশ মানুষ উচ্চ-রক্তচাপ ও ৮ থেকে ১০ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছে। এসব রোগীর মধ্যে হৃদরোগ ঝুঁকিও বাড়ছে।
অন্যদিকে হৃদরোগ থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, ঝুঁকি কমাতে এখনই ব্যক্তি, রোগী পরিবার, সমাজ সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এ জন্য কায়িক পরিশ্রম যেমন— হাঁটাহাঁটি, সাঁতারকাটা, সাইকেল চালানো, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, ধূমপান না করা ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, প্রচুর শাক-সবজি খাওয়া, নিজেকে চিন্তামুক্ত রাখা ও খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। পাশাপাশি রাষ্ট্রকেও পদক্ষেপ নিতে হবে যেমন— হৃদরোগ আক্রান্তদের উপযুক্ত চিকিৎসা প্রদানে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সুবিধা দেওয়া। প্রয়োজনীয় ওষুধ নিশ্চিত করা, তামাক আইন কার্যকর করা ইত্যাদি।
প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাপী হৃদরোগ সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে তোলার জন্য এ দিবসটি পালন করা হয়। ১৯৯৯ সালে ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশন ও ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন যৌথভাবে বিশ্ব হার্ট দিবস পালনে সম্মত হয়। হার্ট দিবস সম্পর্কে সর্বপ্রথম ধারণা দেন ১৯৯৭-৯৯ সেশনে ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্বে থাকা অ্যান্থনি বেইস্ ডি লুনা। প্রথম হার্ট দিবসটি পালন করা হয় ২০০০ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর এবং ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রোববারটি বিশ্ব হার্ট দিবস হিসেবে পালন করা হতো। পরবর্তীকালে ২০১১ সাল থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর দিনটিকে বিশ্ব হার্ট দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজ বিশ্ব হার্ট দিবস

আপলোড টাইম : ০৯:৪৯:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

হৃদরোগে মৃত্যু ঝুঁকিতে ৭৫ শতাংশ মানুষ
সমীকরণ প্রতিবেদন:
বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগে ৬৭ ভাগ মানুষের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে হৃদরোগ। এমনকি দেশে মোট মৃত্যুর শতকরা ৩০ ভাগই হচ্ছে হৃদরোগজনিত কারণে। গত বছরের অক্টোবরে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় অনুষ্ঠিত উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ওপর এক নীতিনির্ধারণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের এক তথ্যেও বলা হয় বাংলাদেশে প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে তিনজনই হৃদরোগ ঝুঁকিতে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছে, তামাক নিয়ন্ত্রণ ও যতথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি মোকাবিলা করা সম্ভব। এক্ষেত্রে সরকারকে আরও এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়া হৃদরোগ সারাবিশ্বে মৃত্যুর এক নম্বর ঘাতক ব্যাধি। বিশ্ব হার্ট ফেডারেশনের মতে, হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকজনিত সমস্যায় প্রতিবছর বিশ্বের প্রায় এক কোটি ৭৯ লাখ মানুষ মারা যায়। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আজ রোববার বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে দিবসটি। এ বছর ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশন কর্তৃক দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বি এ হার্ট হিরো মেক এ প্রমিজ অর্থাৎ আপনার হার্ট সুরক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ হোন।’ দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়া হলেও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কোনো কর্মসূচি নেই বলে নিশ্চিত করেছেন একাধিক চিকিৎসক। তারা জানান, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক দেশের বাইরে থাকায় এ বছর দিবসটি কেন্দ্র করে কোনো কর্মসূচি নেয়া হয়নি। তিনি বিদেশ সফর শেষে দেশে ফেরার পর কর্মসূচি গ্রহণ করা হতে পারে।
বিশ্ব হার্ট ফেডারেশনের মতে, হৃদরোগে মৃত্যু সব ধরনের মৃত্যুর মধ্যে তৃতীয় এবং অসংক্রামক রোগজনিত মৃত্যুর অর্ধেক। এমন তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে হৃদরোগ বিশেজ্ঞরাও বলছেন, বর্তমান বিশ্বে এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মারা যাচ্ছে হৃদরোগে। পাশাপাশি দেশে প্রতিবছর মোট মৃত্যুর ৩০ ভাগই হচ্ছে হৃদরোগের কারণে। রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০০২ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ৭ লাখ ১ হাজার ৫৩৪ জন হৃদরোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছে ৪৯ হাজার ৭৬৬ জন। শুধু ২০১৮ সালেই ভর্তি হয়েছে ৭ হাজার ৮৭ জন হৃদরোগী। এছাড়া গত ১৮ বছরে হাসপাতালটিতে ১৩ হাজার ২৯৮ জনের ওপেন হার্ট সার্জারি, ১ হাজার ৪৮০ জনের ক্লোজ হার্ট সার্জারি ও ১৯ হাজার ৮৭ জনের ভাস্কুলার সার্জারি সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ১০ হাজার ৫৭৪ জন রোগীর ক্যাথল্যাব প্রসিডিউর সম্পন্ন এবং সিএজি, পিসিআই, পি.পিসিআই, পিটিএমসি, ডিভাইস এএসডি, ভিএসডি, পিডিএ, ইপিএস, পিএজি, টিপিএম, পিপিএম ও অন্যান্যসহ ৫ হাজার ৬১৫টি হৃদরোগজনিত অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক বলেন, ৪১৪ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটিতে প্রতি মাসে গড়ে ৯০০ থেকে এক হাজার রোগী ভর্তি থাকছে। হৃদরোগের চিকিৎসা নিতে ও ভর্তি হতে আসা রোগীর এ সংখ্যা ক্রমেই বেড়েই চলছে। এ ধারাবাহিকতায় চলতি ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ৭ হাজার ৫৭১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৬ হাজার ৬৭৮, মার্চে ৭ হাজার ৬৫৪, এপ্রিলে ৬ হাজার ৮৭৯, মেতে ৫ হাজার ৪৬৮, জুনে ৫ হাজার ৮৮১, জুলাইয়ে ৬ হাজার ৩২৪ ও আগস্টে ৫ হাজার ৮৬২ জন হৃদরোগী আন্তঃবিভাগে ভর্তি হয়েছে। যাদের মধ্যে ৩ হাজার ২০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর বাইরে জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত গত আট মাসে ১ লাখ ৯৭ হাজার ২৬৩ জন রোগী হাসপাতালটির বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। দেশব্যাপী ক্রমবর্ধমানহারে হৃদরোগীর সংখ্যা বাড়ার কারণ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যলয়ের কার্ডিওলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আলী আহসান বলেন, বর্তমানে বিশ্বে মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৮৫ ভাগ মৃত্যুর কারণ হৃদরোগ এবং স্ট্রোক।
মূলত তামাক ও অ্যাকোহলজাতীয় পণ্য ব্যবহার, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও অপরিমিত ঘুমের ফলে হৃদরোগ ঝুঁকি বাড়ছে। এছাড়া মানুষের কায়িক পরিশ্রম কমায় ওজন বৃদ্ধি এবং দৈনন্দিন খাদ্যাভাস পরিবর্তিত হয়ে মিষ্টি ও লবণজাতীয় খাবার গ্রহণ করায় উচ্চ-রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস ঝুঁকি বাড়ছে। বর্তমানে দেশে ২৫ শতাংশ মানুষ উচ্চ-রক্তচাপ ও ৮ থেকে ১০ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছে। এসব রোগীর মধ্যে হৃদরোগ ঝুঁকিও বাড়ছে।
অন্যদিকে হৃদরোগ থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, ঝুঁকি কমাতে এখনই ব্যক্তি, রোগী পরিবার, সমাজ সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এ জন্য কায়িক পরিশ্রম যেমন— হাঁটাহাঁটি, সাঁতারকাটা, সাইকেল চালানো, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, ধূমপান না করা ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, প্রচুর শাক-সবজি খাওয়া, নিজেকে চিন্তামুক্ত রাখা ও খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। পাশাপাশি রাষ্ট্রকেও পদক্ষেপ নিতে হবে যেমন— হৃদরোগ আক্রান্তদের উপযুক্ত চিকিৎসা প্রদানে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সুবিধা দেওয়া। প্রয়োজনীয় ওষুধ নিশ্চিত করা, তামাক আইন কার্যকর করা ইত্যাদি।
প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাপী হৃদরোগ সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে তোলার জন্য এ দিবসটি পালন করা হয়। ১৯৯৯ সালে ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশন ও ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন যৌথভাবে বিশ্ব হার্ট দিবস পালনে সম্মত হয়। হার্ট দিবস সম্পর্কে সর্বপ্রথম ধারণা দেন ১৯৯৭-৯৯ সেশনে ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্বে থাকা অ্যান্থনি বেইস্ ডি লুনা। প্রথম হার্ট দিবসটি পালন করা হয় ২০০০ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর এবং ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রোববারটি বিশ্ব হার্ট দিবস হিসেবে পালন করা হতো। পরবর্তীকালে ২০১১ সাল থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর দিনটিকে বিশ্ব হার্ট দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়।