ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আজ একদলীয় ও একতরফা জেলা পরিষদ নির্বাচন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০২:৫০:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬
  • / ৪১০ বার পড়া হয়েছে

image_1764_270842সমীকরণ ডেস্ক: দল মনোনীত ও বিদ্রোহী প্রার্থী উভয়ই আওয়ামী লীগের। ভোটারদের অধিকাংশও একই দলের। আবার বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ভোট বর্জন করায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী এক-তৃতীয়াংশ ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী। ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের মতো এমন সব নেতিবাচক সমীকরণেই আলোচিত-সমালোচিত জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আজ। সকাল ১০টা শুরু হওয়া এই ভোট দুপুর ২টা পর্যন্ত চলবে। নির্বাচনে জেলায় অন্তর্ভুক্ত সিটি করপোরেশন (যদি থাকে), উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নির্বাচিত স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ভোট দেবেন। সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল এরশাদের জাতীয় পার্টি অনেক আগেই এই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। জয়ের ন্যূনতম সম্ভাবনা না থাকায় আওয়ামী মহাজোটের দলগুলোও নির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি। আবার সংসদের বাইরে থাকা প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিও এটাকে ‘সংবিধান বহির্ভূত’ ও ‘প্রহসনের নির্বাচন’ আখ্যা দিয়ে অংশ নেয়নি। অর্থাৎ জেলা পরিষদের আজ যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে- তাতে শুধু আওয়ামী লীগই অংশ নেবে। স্বভাবতই এই নির্বাচন আরও একটি একদলীয় ও একতরফা নির্বাচনের রেকর্ড স্থাপন করবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, আইন অনুযায়ী, প্রতিটি জেলায় স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের ভোটে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য নির্বাচিত হবেন। আর যেহেতু বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধি আওয়ামী লীগের, সেহেতু জেলা পরিষদ নির্বাচনে তাদের প্রার্থীদের জয় একরকম নিশ্চিত। এতে করে জেলা পরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণের প্রতিফলন কতটা ঘটবে- তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে, তেমনি এ নির্বাচনের মাধ্যমে ফের ৫ জানুয়ারির দুর্গন্ধ ছড়ানোর শঙ্কাও প্রকাশ করছেন অনেকে। প্রসঙ্গত, কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে প্রায় সব নির্বাচনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টিতে প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সে ধারাবাহিকতা বজায় ছিল চতুর্থ উপজেলা পরিষদ, নবম পৌরসভা নির্বাচন এমনকি নবম ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনেও। বর্তমান কমিশনে শেষ নির্বাচনে মূলত সেই ধারাবাহিকতাই বজায় থাকছে বলে মনে করছেন নির্বাচক বিশ্লেষকরা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ-জানিপপ চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, যেখানে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫৩ জন সাংসদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন, সেখানে ২২ জন চেয়ারম্যান কিংবা দুই জেলার সবাই বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়া দোষের কিছু নয়। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান জেলা পরিষদ। যদিও নানা কারণে এই পরিষদটি তার গুরুত্ব হারিয়েছে। তারপরও প্রথমবারের মতো পরোক্ষ ভোটে নির্বাচিত জেলা পরিষদ হতে যাচ্ছে। এটা একটা ভালো দিক, যাকে বলে ‘নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো’। আর সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন সরকার যেভাবে চাইবে, সেভাবেই হবে। এখানে নির্বাচন কমিশনের কোনো ভূমিকা নেই। তিনি বলেন, সরকার জেলা পরিষদ নির্বাচনে জেতার জন্য জনপ্রতিনিধিদের ভোটার করেছে। এজন্য তারা জিতবে। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার ৫ জানুয়ারির গণতন্ত্রই ফিরিয়ে আনবে বলে মনে করেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ২২ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। যাদের প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগ মনোনীত। ফলে আজকের নির্বাচনে ৬১ জেলার মধ্যে ৩৯টি চেয়ারম্যান পদের ভোট হবে। আবার পাঁচটি জেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে স্বতন্ত্র বা তুলনামূলক কম জনপ্রিয় দলের প্রার্থীরা লড়াই করবেন। যেখানে ওইসব দল থেকে প্রার্থীদের জেতার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই ওইসব জেলাতেও হচ্ছে একতরফা নির্বাচন। বাকি থাকা ৩৪ জেলায় আওয়ামী লীগ ও তাদের বিদ্রোহী প্রার্থীরা চেয়ারম্যান পদে নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। যেখানে স্বতন্ত্র নামে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা থাকলেও তারা রাজনৈতিক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাজনৈতিক পরিচয় বহন করতে পারছেন না। তাই সম্পূণরূপে একতরফা কায়দাতেই হচ্ছে জেলা পরিষদ নির্বাচন।
তথ্য অনুযায়ী ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর ৬১ জেলায় প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার। তাদের মেয়াদ পূর্তিতে এবারই প্রথম জেলা পরিষদে নির্বাচন হচ্ছে। সংশোধিত জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী জেলা পরিষদ নির্বাচন হবে ২১ সদস্যের, যেখানে প্রতিটি জেলায় একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সাধারণ ও পাঁচজন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য থাকবেন। নির্বাচনে প্রতি জেলায় মোট ১৫টি করে ভোটকেন্দ্র থাকবে। আর স্থানীয় সরকারের চারটি প্রতিষ্ঠানের (জেলায় অন্তর্ভুক্ত সিটি করপোরেশন (যদি থাকে), পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন) প্রায় ৬৭ হাজার নির্বাচিত প্রতিনিধি এই নির্বাচনে ভোট দেবেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদে। দেশের প্রায় চার হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদে গড়ে ১৩ জন করে প্রায় ৬০ হাজারের মতো নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছে। একইভাবে ৪৮৮টি উপজেলা পরিষদে নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছে প্রায় দেড় হাজার। ৩২০টি পৌরসভায় নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার এবং ১১টি সিটি করপোরেশনে প্রায় সাড়ে ৫০০ নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছেন, যারা জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
প্রস্তুত কমিশন: এদিকে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচনে ইতোমধ্যেই সকল প্রস্তুুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পৌঁছে দেয়া হয়েছে ব্যালট পেপার, ফরম, প্যাকেট, পরিচয়পত্র, প্রশিক্ষণ ম্যানুয়েল, নির্দেশিকা, অফিসিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাস সিল, লাল গালা, স্ট্যাম্প প্যাড, অমোচনীয় কালির কলমসহ নির্বাচনী সামগ্রী।
সূত্র জানায়, জেলা পরিষদের প্রতিটি ভোটকেন্দ্র পাহারায় থাকবে ২০ জন করে সদস্য। যেখানে পুলিশ, আর্মস পুলিশ ব্যাটালিয়ান, ব্যাটালিয়ান আনসার ও আনসার ভিডিপির সদস্যরা থাকবেন। এ ছাড়া একজন পুলিশ (কনস্টেবল) অস্ত্রসহ, আনসার একজন অস্ত্রসহ এবং অঙ্গীভূত আনসার ১৫ জন লাঠিসহ থাকবেন। যার মধ্যে পুরুষ আটজন ও মহিলা সাতজন।
স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বিজিবি ও র‌্যাব কেন্দ্রের বাইরে থাকবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি উপজেলায় বিজিবির দুটি মোবাইল টিম (প্রতি প্লাটুনে সদস্য ৩০ জন) এবং একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স (এক প্লাটুন) থাকবে। আর পেট্রোলিং ও স্ট্রাইকিংয়ের দায়িত্বে থাকবে র‌্যাব। এ হিসেবে প্রতিটি উপজেলায় র‌্যাবের দুটি মোবাইল টিম ও একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স (প্রতিটি টিমে ১০ জন করে সদস্য)। এ ছাড়া ৯১৫ জন ম্যাজিস্ট্রেট ও ৯১ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। নির্দলীয় এই নির্বাচনটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করবে কমিশন। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দশনা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্যরা (এমপি) যাতে আচরণবিধি মেনে চলেন, সে জন্যও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নিরাপত্তা সম্পর্কে মো. শাহনেওয়াজ বলেন, মূলত কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। যেহেতু এখানে জনপ্রতিনিধিরা ভোট দেবেন, তাই কেন্দ্রের বাইরের চেয়ে ভেতরের নিরাপত্তার দিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজ একদলীয় ও একতরফা জেলা পরিষদ নির্বাচন

আপলোড টাইম : ০২:৫০:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬

image_1764_270842সমীকরণ ডেস্ক: দল মনোনীত ও বিদ্রোহী প্রার্থী উভয়ই আওয়ামী লীগের। ভোটারদের অধিকাংশও একই দলের। আবার বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ভোট বর্জন করায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী এক-তৃতীয়াংশ ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী। ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের মতো এমন সব নেতিবাচক সমীকরণেই আলোচিত-সমালোচিত জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আজ। সকাল ১০টা শুরু হওয়া এই ভোট দুপুর ২টা পর্যন্ত চলবে। নির্বাচনে জেলায় অন্তর্ভুক্ত সিটি করপোরেশন (যদি থাকে), উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নির্বাচিত স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ভোট দেবেন। সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল এরশাদের জাতীয় পার্টি অনেক আগেই এই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। জয়ের ন্যূনতম সম্ভাবনা না থাকায় আওয়ামী মহাজোটের দলগুলোও নির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি। আবার সংসদের বাইরে থাকা প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিও এটাকে ‘সংবিধান বহির্ভূত’ ও ‘প্রহসনের নির্বাচন’ আখ্যা দিয়ে অংশ নেয়নি। অর্থাৎ জেলা পরিষদের আজ যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে- তাতে শুধু আওয়ামী লীগই অংশ নেবে। স্বভাবতই এই নির্বাচন আরও একটি একদলীয় ও একতরফা নির্বাচনের রেকর্ড স্থাপন করবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, আইন অনুযায়ী, প্রতিটি জেলায় স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের ভোটে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য নির্বাচিত হবেন। আর যেহেতু বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধি আওয়ামী লীগের, সেহেতু জেলা পরিষদ নির্বাচনে তাদের প্রার্থীদের জয় একরকম নিশ্চিত। এতে করে জেলা পরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণের প্রতিফলন কতটা ঘটবে- তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে, তেমনি এ নির্বাচনের মাধ্যমে ফের ৫ জানুয়ারির দুর্গন্ধ ছড়ানোর শঙ্কাও প্রকাশ করছেন অনেকে। প্রসঙ্গত, কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে প্রায় সব নির্বাচনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টিতে প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সে ধারাবাহিকতা বজায় ছিল চতুর্থ উপজেলা পরিষদ, নবম পৌরসভা নির্বাচন এমনকি নবম ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনেও। বর্তমান কমিশনে শেষ নির্বাচনে মূলত সেই ধারাবাহিকতাই বজায় থাকছে বলে মনে করছেন নির্বাচক বিশ্লেষকরা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ-জানিপপ চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, যেখানে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫৩ জন সাংসদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন, সেখানে ২২ জন চেয়ারম্যান কিংবা দুই জেলার সবাই বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়া দোষের কিছু নয়। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান জেলা পরিষদ। যদিও নানা কারণে এই পরিষদটি তার গুরুত্ব হারিয়েছে। তারপরও প্রথমবারের মতো পরোক্ষ ভোটে নির্বাচিত জেলা পরিষদ হতে যাচ্ছে। এটা একটা ভালো দিক, যাকে বলে ‘নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো’। আর সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন সরকার যেভাবে চাইবে, সেভাবেই হবে। এখানে নির্বাচন কমিশনের কোনো ভূমিকা নেই। তিনি বলেন, সরকার জেলা পরিষদ নির্বাচনে জেতার জন্য জনপ্রতিনিধিদের ভোটার করেছে। এজন্য তারা জিতবে। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার ৫ জানুয়ারির গণতন্ত্রই ফিরিয়ে আনবে বলে মনে করেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ২২ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। যাদের প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগ মনোনীত। ফলে আজকের নির্বাচনে ৬১ জেলার মধ্যে ৩৯টি চেয়ারম্যান পদের ভোট হবে। আবার পাঁচটি জেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে স্বতন্ত্র বা তুলনামূলক কম জনপ্রিয় দলের প্রার্থীরা লড়াই করবেন। যেখানে ওইসব দল থেকে প্রার্থীদের জেতার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই ওইসব জেলাতেও হচ্ছে একতরফা নির্বাচন। বাকি থাকা ৩৪ জেলায় আওয়ামী লীগ ও তাদের বিদ্রোহী প্রার্থীরা চেয়ারম্যান পদে নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। যেখানে স্বতন্ত্র নামে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা থাকলেও তারা রাজনৈতিক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাজনৈতিক পরিচয় বহন করতে পারছেন না। তাই সম্পূণরূপে একতরফা কায়দাতেই হচ্ছে জেলা পরিষদ নির্বাচন।
তথ্য অনুযায়ী ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর ৬১ জেলায় প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার। তাদের মেয়াদ পূর্তিতে এবারই প্রথম জেলা পরিষদে নির্বাচন হচ্ছে। সংশোধিত জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী জেলা পরিষদ নির্বাচন হবে ২১ সদস্যের, যেখানে প্রতিটি জেলায় একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সাধারণ ও পাঁচজন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য থাকবেন। নির্বাচনে প্রতি জেলায় মোট ১৫টি করে ভোটকেন্দ্র থাকবে। আর স্থানীয় সরকারের চারটি প্রতিষ্ঠানের (জেলায় অন্তর্ভুক্ত সিটি করপোরেশন (যদি থাকে), পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন) প্রায় ৬৭ হাজার নির্বাচিত প্রতিনিধি এই নির্বাচনে ভোট দেবেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদে। দেশের প্রায় চার হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদে গড়ে ১৩ জন করে প্রায় ৬০ হাজারের মতো নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছে। একইভাবে ৪৮৮টি উপজেলা পরিষদে নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছে প্রায় দেড় হাজার। ৩২০টি পৌরসভায় নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার এবং ১১টি সিটি করপোরেশনে প্রায় সাড়ে ৫০০ নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছেন, যারা জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
প্রস্তুত কমিশন: এদিকে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচনে ইতোমধ্যেই সকল প্রস্তুুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পৌঁছে দেয়া হয়েছে ব্যালট পেপার, ফরম, প্যাকেট, পরিচয়পত্র, প্রশিক্ষণ ম্যানুয়েল, নির্দেশিকা, অফিসিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাস সিল, লাল গালা, স্ট্যাম্প প্যাড, অমোচনীয় কালির কলমসহ নির্বাচনী সামগ্রী।
সূত্র জানায়, জেলা পরিষদের প্রতিটি ভোটকেন্দ্র পাহারায় থাকবে ২০ জন করে সদস্য। যেখানে পুলিশ, আর্মস পুলিশ ব্যাটালিয়ান, ব্যাটালিয়ান আনসার ও আনসার ভিডিপির সদস্যরা থাকবেন। এ ছাড়া একজন পুলিশ (কনস্টেবল) অস্ত্রসহ, আনসার একজন অস্ত্রসহ এবং অঙ্গীভূত আনসার ১৫ জন লাঠিসহ থাকবেন। যার মধ্যে পুরুষ আটজন ও মহিলা সাতজন।
স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বিজিবি ও র‌্যাব কেন্দ্রের বাইরে থাকবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি উপজেলায় বিজিবির দুটি মোবাইল টিম (প্রতি প্লাটুনে সদস্য ৩০ জন) এবং একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স (এক প্লাটুন) থাকবে। আর পেট্রোলিং ও স্ট্রাইকিংয়ের দায়িত্বে থাকবে র‌্যাব। এ হিসেবে প্রতিটি উপজেলায় র‌্যাবের দুটি মোবাইল টিম ও একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স (প্রতিটি টিমে ১০ জন করে সদস্য)। এ ছাড়া ৯১৫ জন ম্যাজিস্ট্রেট ও ৯১ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। নির্দলীয় এই নির্বাচনটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করবে কমিশন। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দশনা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্যরা (এমপি) যাতে আচরণবিধি মেনে চলেন, সে জন্যও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নিরাপত্তা সম্পর্কে মো. শাহনেওয়াজ বলেন, মূলত কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। যেহেতু এখানে জনপ্রতিনিধিরা ভোট দেবেন, তাই কেন্দ্রের বাইরের চেয়ে ভেতরের নিরাপত্তার দিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।