ইপেপার । আজমঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আজ অনুমোদন হতে পারে আইএমএফের ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৭:৫৪:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ১৫ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
বাংলাদেশের জন্য বহু কাক্সিক্ষত আইএমএফের ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ সংস্থাটির বোর্ড সভায় অনুমোদন পেতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সময় আজ সোমবার রাত ৯টায় ওয়াশিংটনে অবস্থিত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান কার্যালয়ে এই বোর্ড সভাটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ৪৫০ কোটি ডলারের মধ্যে বর্ধিত ঋণসুবিধা (ইসিএফ) ও বর্ধিত তহবিল সুবিধার (ইএফএফ) আওতায় ৩২০ কোটি ডলার আর রেজিলিয়েন্স সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় ১৩০ কোটি ডলার ঋণ দেয়া হবে। ৪২ মাসের মেয়াদে এ ঋণ দেয়া হবে। সাত কিস্তিতে এই ঋণ দেবে তারা। প্রথম কিস্তির ঋণ পাওয়া যাবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। আর সর্বশেষ কিস্তির ঋণ পাওয়া যাবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে। আইএমএফের ঋণের সুদহার হবে বাজারদর অনুযায়ী। তাতে গড় সুদহার হবে ২ দশমিক ২ শতাংশ। এর আগে আইএমএফের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল, ঋণের ব্যাপারে বাংলাদেশের সাথে স্টাফ লেভেলে সমঝোতা হয়েছে। একে ওই ঋণের ব্যাপারে আইএমএফের গ্রিন সিগন্যাল বলা যেতে পারে। যখন কোনো দেশ আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়ে থাকে, তখন প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বিশেষজ্ঞদের একটি দল সে দেশ পরিদর্শন ও নীতিনির্ধারকদের সাথে আলোচনা করে। সাধারণত এই সফরের সময় ঋণ প্রাপ্তির জন্য অর্থনৈতিক সংস্কারের বেশকিছু শর্তও জুড়ে দেয়া হয়ে থাকে। এসব শর্তের ব্যাপারে একমত হলে ঋণের ব্যাপারে স্টাফ লেভেলে সমঝোতায় পৌঁছানোর কথা বলা হয়; কিন্তু এবারই প্রথম আইএমএফের পক্ষ থেকে কোনো শর্ত আরোপ করা হয়নি বলে দাবি করেছেন সরকার সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, এই স্টাফরা ঋণের ব্যাপারে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর তার ভিত্তিতে আইএমএফের নির্বাহী বোর্ড চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে; কিন্তু কোনো দেশের ঋণের ব্যাপারে স্টাফ লেভেলে সমঝোতা হলে সেটি প্রত্যাখ্যানে অতীতের কোনো নজির নেই। গত ২৬ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশ সফর করেছে আইএমএফের প্রতিনিধিদল। বেশির ভাগ বৈঠক ছিল আর্থিক খাতের সাথে সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সাথে। আইএমএফের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ দলটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সর্বশেষ তারা বৈঠকটি করেন অর্থমন্ত্রীর সাথে। এরপর গেল নভেম্বর মাসে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘যেভাবে আমরা চেয়েছিলাম, আইএমএফ সেভাবেই আমাদের ঋণ দিচ্ছে। আইএমএফের ঋণ আমরা পেতে যাচ্ছি।’ তিনি আরো বলেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে তারা ঋণ প্রদানের আনুষ্ঠানিকতা চূড়ান্ত করবে। ঋণের পরিমাণ সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী এক ডলার ১০৫ টাকা ধরলে ৫০ হাজার কোটি টাকা)। সাত কিস্তিতে ২০২৬ সাল পর্যন্ত ঋণ আসবে। প্রথম কিস্তি আসবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে। তিনি জানান, প্রথম কিস্তিতে আসবে ৪৪ কোটি আট লাখ ডলার। এর জন্য বাংলাদেশকে কোনো সুদ দিতে হবে না। পরবর্তী সাত কিস্তিতে বাকি অর্থ আসবে। প্রতি কিস্তি অর্থের পরিমাণ হবে ৫৫ কোটি ৯১ লাখ ডলার। এটার জন্য বাংলাদেশকে দুই দশমিক দুই শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। তিনি বলেন, বৈশ্বিক অস্থিরতা আগাম সতর্কতা হিসেবে আইএমএফের ঋণের জন্য অনুরোধ করেছিলাম। তাদের সাথে এর আগে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। চলমান ঋণ আলোচনার পর্বটি আজ আমরা সফলভাবে সমাপ্ত করলাম। মুস্তফা কামাল বলেন, আইএমএফ প্রতিনিধিদল আমাদের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কারের সাথে একমত পোষণ করেছে। সে অনুযায়ী আমরা চার বছর মেয়াদি ঋণ কর্মসূচি নিতে যাচ্ছি। এই ঋণ কর্মসূচির লক্ষ্য প্রসঙ্গে তিনি জানান, অর্থনীতির বহিঃখাতকে স্থিতিশীল করা, ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণকে সামনে রেখে অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তি দেয়া, আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করা, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলা করে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া। যেসব শর্ত দিয়েছে আইএমএফ : জানা গেছে, আইএমএফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাজস্ব বাড়ানো এবং যৌক্তিক ব্যয়ব্যবস্থা চালু করতে হবে। বিশেষ করে প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ব্যয় নির্ধারণ করতে হবে। যারা নাজুক অবস্থায় থাকবে, সেসব খাত লক্ষ্য করে সুনির্দিষ্ট সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং আধুনিক মুদ্রানীতি তৈরি করতে হবে। সেই সাথে মুদ্রা বিনিময় হার আরো নমনীয় করে তোলা। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে আধুনিক মুদ্রানীতি। আর্থিক খাতের দুর্বলতা দূর করা, নজরদারি বাড়ানো, সরকার ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের আওতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পুঁজিবাজারের উন্নয়ন করার কথাও বলেছে সংস্থাটি। এর পাশাপাশি, বাণিজ্য ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পরিবেশে তৈরি, মানব দক্ষতা বৃদ্ধি, আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নতের ওপর জোর দিয়েছে সংস্থাটি। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি কাটাতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করে তোলা, পরিবেশের উন্নতির পদক্ষেপ নেয়া এবং জলবায়ু সংক্রান্ত খাতে আরো বিনিয়োগ ও আর্থিক সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেল ও গ্যাস, যন্ত্র ও পণ্যের কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের রিজার্ভের ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি করেছে। সেই চাপ সামলাতেই আইএমএফ-সহ দাতা সংস্থাগুলোর দ্বারস্থ হয়েছে বাংলাদেশ। গত কয়েক মাসে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গত বছরের তুলনায় অনেক নিচে নেমে এসেছে। বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ ৩২ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু আইএমএফ হিসাব অনুসরণ করলে রিজার্ভের পরিমাণ কমে হবে ২৭ বিলিয়ন ডলার। এর পাশাপাশি ব্যালেন্স অব পেমেন্ট নিয়ে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে লেনদেনের ভারসাম্য নেতিবাচক হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, চলতি হিসাবেও বিশাল ঘাটতি লক্ষ করা যাচ্ছে। সরকার আশা করছে, আইএমএফের কাছ থেকে এই ঋণ পাওয়া গেলে অন্যান্য দাতা সংস্থার কাছ থেকে বর্ধিত ঋণসহায়তা পাওয়া সহজ হবে। তাই আইএমএফ এই ঋণ সরকারের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজ অনুমোদন হতে পারে আইএমএফের ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ

আপলোড টাইম : ০৭:৫৪:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৩

সমীকরণ প্রতিবেদন:
বাংলাদেশের জন্য বহু কাক্সিক্ষত আইএমএফের ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ সংস্থাটির বোর্ড সভায় অনুমোদন পেতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সময় আজ সোমবার রাত ৯টায় ওয়াশিংটনে অবস্থিত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান কার্যালয়ে এই বোর্ড সভাটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ৪৫০ কোটি ডলারের মধ্যে বর্ধিত ঋণসুবিধা (ইসিএফ) ও বর্ধিত তহবিল সুবিধার (ইএফএফ) আওতায় ৩২০ কোটি ডলার আর রেজিলিয়েন্স সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় ১৩০ কোটি ডলার ঋণ দেয়া হবে। ৪২ মাসের মেয়াদে এ ঋণ দেয়া হবে। সাত কিস্তিতে এই ঋণ দেবে তারা। প্রথম কিস্তির ঋণ পাওয়া যাবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। আর সর্বশেষ কিস্তির ঋণ পাওয়া যাবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে। আইএমএফের ঋণের সুদহার হবে বাজারদর অনুযায়ী। তাতে গড় সুদহার হবে ২ দশমিক ২ শতাংশ। এর আগে আইএমএফের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল, ঋণের ব্যাপারে বাংলাদেশের সাথে স্টাফ লেভেলে সমঝোতা হয়েছে। একে ওই ঋণের ব্যাপারে আইএমএফের গ্রিন সিগন্যাল বলা যেতে পারে। যখন কোনো দেশ আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়ে থাকে, তখন প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বিশেষজ্ঞদের একটি দল সে দেশ পরিদর্শন ও নীতিনির্ধারকদের সাথে আলোচনা করে। সাধারণত এই সফরের সময় ঋণ প্রাপ্তির জন্য অর্থনৈতিক সংস্কারের বেশকিছু শর্তও জুড়ে দেয়া হয়ে থাকে। এসব শর্তের ব্যাপারে একমত হলে ঋণের ব্যাপারে স্টাফ লেভেলে সমঝোতায় পৌঁছানোর কথা বলা হয়; কিন্তু এবারই প্রথম আইএমএফের পক্ষ থেকে কোনো শর্ত আরোপ করা হয়নি বলে দাবি করেছেন সরকার সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, এই স্টাফরা ঋণের ব্যাপারে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর তার ভিত্তিতে আইএমএফের নির্বাহী বোর্ড চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে; কিন্তু কোনো দেশের ঋণের ব্যাপারে স্টাফ লেভেলে সমঝোতা হলে সেটি প্রত্যাখ্যানে অতীতের কোনো নজির নেই। গত ২৬ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশ সফর করেছে আইএমএফের প্রতিনিধিদল। বেশির ভাগ বৈঠক ছিল আর্থিক খাতের সাথে সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সাথে। আইএমএফের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ দলটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সর্বশেষ তারা বৈঠকটি করেন অর্থমন্ত্রীর সাথে। এরপর গেল নভেম্বর মাসে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘যেভাবে আমরা চেয়েছিলাম, আইএমএফ সেভাবেই আমাদের ঋণ দিচ্ছে। আইএমএফের ঋণ আমরা পেতে যাচ্ছি।’ তিনি আরো বলেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে তারা ঋণ প্রদানের আনুষ্ঠানিকতা চূড়ান্ত করবে। ঋণের পরিমাণ সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী এক ডলার ১০৫ টাকা ধরলে ৫০ হাজার কোটি টাকা)। সাত কিস্তিতে ২০২৬ সাল পর্যন্ত ঋণ আসবে। প্রথম কিস্তি আসবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে। তিনি জানান, প্রথম কিস্তিতে আসবে ৪৪ কোটি আট লাখ ডলার। এর জন্য বাংলাদেশকে কোনো সুদ দিতে হবে না। পরবর্তী সাত কিস্তিতে বাকি অর্থ আসবে। প্রতি কিস্তি অর্থের পরিমাণ হবে ৫৫ কোটি ৯১ লাখ ডলার। এটার জন্য বাংলাদেশকে দুই দশমিক দুই শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। তিনি বলেন, বৈশ্বিক অস্থিরতা আগাম সতর্কতা হিসেবে আইএমএফের ঋণের জন্য অনুরোধ করেছিলাম। তাদের সাথে এর আগে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। চলমান ঋণ আলোচনার পর্বটি আজ আমরা সফলভাবে সমাপ্ত করলাম। মুস্তফা কামাল বলেন, আইএমএফ প্রতিনিধিদল আমাদের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কারের সাথে একমত পোষণ করেছে। সে অনুযায়ী আমরা চার বছর মেয়াদি ঋণ কর্মসূচি নিতে যাচ্ছি। এই ঋণ কর্মসূচির লক্ষ্য প্রসঙ্গে তিনি জানান, অর্থনীতির বহিঃখাতকে স্থিতিশীল করা, ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণকে সামনে রেখে অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তি দেয়া, আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করা, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলা করে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া। যেসব শর্ত দিয়েছে আইএমএফ : জানা গেছে, আইএমএফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাজস্ব বাড়ানো এবং যৌক্তিক ব্যয়ব্যবস্থা চালু করতে হবে। বিশেষ করে প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ব্যয় নির্ধারণ করতে হবে। যারা নাজুক অবস্থায় থাকবে, সেসব খাত লক্ষ্য করে সুনির্দিষ্ট সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং আধুনিক মুদ্রানীতি তৈরি করতে হবে। সেই সাথে মুদ্রা বিনিময় হার আরো নমনীয় করে তোলা। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে আধুনিক মুদ্রানীতি। আর্থিক খাতের দুর্বলতা দূর করা, নজরদারি বাড়ানো, সরকার ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের আওতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পুঁজিবাজারের উন্নয়ন করার কথাও বলেছে সংস্থাটি। এর পাশাপাশি, বাণিজ্য ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পরিবেশে তৈরি, মানব দক্ষতা বৃদ্ধি, আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নতের ওপর জোর দিয়েছে সংস্থাটি। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি কাটাতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করে তোলা, পরিবেশের উন্নতির পদক্ষেপ নেয়া এবং জলবায়ু সংক্রান্ত খাতে আরো বিনিয়োগ ও আর্থিক সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেল ও গ্যাস, যন্ত্র ও পণ্যের কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের রিজার্ভের ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি করেছে। সেই চাপ সামলাতেই আইএমএফ-সহ দাতা সংস্থাগুলোর দ্বারস্থ হয়েছে বাংলাদেশ। গত কয়েক মাসে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গত বছরের তুলনায় অনেক নিচে নেমে এসেছে। বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ ৩২ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু আইএমএফ হিসাব অনুসরণ করলে রিজার্ভের পরিমাণ কমে হবে ২৭ বিলিয়ন ডলার। এর পাশাপাশি ব্যালেন্স অব পেমেন্ট নিয়ে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে লেনদেনের ভারসাম্য নেতিবাচক হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, চলতি হিসাবেও বিশাল ঘাটতি লক্ষ করা যাচ্ছে। সরকার আশা করছে, আইএমএফের কাছ থেকে এই ঋণ পাওয়া গেলে অন্যান্য দাতা সংস্থার কাছ থেকে বর্ধিত ঋণসহায়তা পাওয়া সহজ হবে। তাই আইএমএফ এই ঋণ সরকারের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।