ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১২:০৯:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮
  • / ৩০৫ বার পড়া হয়েছে

সব দলের বিরুদ্ধেই অভিযোগ-অ্যাকশনে ইসির ধীরগতি
ডেস্ক রিপোর্ট: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ৬ দিন বাকি। প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা। কিন্তু শুরু থেকেই আচরণবিধির তোয়াক্কা করছেন না অনেকেই। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) প্রতিদিনই ধরনা দিচ্ছে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ প্রায় সব কটি দল। যদিও তাদের এসব অভিযোগ প্রতিকারে ইসির ভূমিকা শ্লথ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে কাদা ছুড়াছুড়ি বেড়েই চলেছে, বাড়ছে অভিযোগও। মন্ত্রী-সাংসদদের বিরুদ্ধে গাড়িসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেয়ার অভিযোগ যেমন আছে, তেমনি প্রতিপক্ষের নির্বাচনী কর্মকা-ে বাধা দেয়া ও হামলা, প্রচারণায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে ইসিতে অভিযোগ করেছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, বামপন্থী দল, ইসলামী ঐক্যজোটসহ বিভিন্ন দল ও তাদের প্রার্থীরা। তবে এসব অভিযোগের কার্যকর কোনো সুরাহা করছে না ইসি। বরং এসব ঘটনাকে ভোটের সৌন্দর্য হিসেবে বর্ণনা করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদাসহ অন্য কমিশনার ও ইসি কর্মকর্তারা। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে- নির্বাচনের আগে মন্ত্রী-সাংসদরা পদত্যাগ না করে সরকারি সুযোগ-সুবিধা পূর্ণ মাত্রায় ব্যবহার করছেন। গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নোয়াখালীতে তার প্রচারণায় সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেছেন। অন্য প্রায় সব মন্ত্রী-সাংসদই সরকারি গাড়ি ও বাংলো ব্যবহার এবং পুলিশি প্রটোকল নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন- এমন অভিযোগ বিএনপির। এমনকি কোনো কোনো মন্ত্রী-সাংসদের পক্ষে পুলিশসহ প্রশাসনের কোনো কোনো কর্মকর্তা প্রকশ্যে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন, বিরোধী প্রার্থী ও সমর্থকদের হয়রানি- গ্রপ্তার করা হচ্ছে, তাদের প্রচারণায় বাধা দেয়া হচ্ছে, এমনকি নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর ও আগুনে পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগও এসেছে বিএনপিসহ ও অন্য বিরোধী প্রার্থীদের পক্ষ থেকে। এমনকি প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা বিরোধী প্রার্থীদের পোস্টার টাঙাতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ এসেছে ইসিতে। আবার বিএনপির প্রার্থী ও তার অনুসারীরা আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সমর্থকদের ওপর হামলা করছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। গত শুক্রবার ও তার আগে প্রায় ৪-৫ বার তিনি সিইসির সঙ্গে দেখা করে বিএনপির বিরুদ্ধে সহিংসতা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে তিনি জানান, গত ১২ ডিসেম্বর নরসিংদী সদর উপজেলার আমাদিয়া ইউনিয়নে প্রচার চালানোর সময় বিএনপি প্রার্থী ড. আবদুল মঈন খানের সমর্থকরা আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান ও তার সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তারা আওয়ামী লীগের প্রচারণা-সামগ্রী ভেঙে ফেলে। ১১ ডিসেম্বর ফরিদপুর ৩ আসনের আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ইউসুফ আল মামুনকে বিএনপি সমর্থকরা পিটিয়ে মেরে ফেলে এবং অফিস ভাঙচুর করে। ১২ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আফছারুল আমীনের গণসংযোগে বিএনপি হামলা চালায় এবং প্রচারণায় বাধা দেয়। নোয়াখালী সদরে যুবলীগের নেতাকে গুলি করে বিএনপির সমর্থক। এ ছাড়া কুমিল্লাসহ দেশের প্রায় সব জেলায় বিএনপি সমর্থকরা আওয়ামী লীগের ওপর হামলা ও প্রার্থীর নির্বাচনী অফিসে আগুন দেয়া ও ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ আনেন তিনি। এ-সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ ইসিতে জমা দিয়ে হামলা-সংঘর্ষ না কমায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন এইচ টি ইমাম। অন্যদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনে অন্তত ২০-২৫টি চিঠি দেয়া হয়। এসব চিঠিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার, পুলিশি প্রটেকশন নেয়া এবং পুলিশ সঙ্গে নিয়ে বিএনপি প্রার্থীদের প্রচারে ও পোস্টার টাঙানোয় বাধা দেয়ার বিষয়ে ইসির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। এমনকি মন্ত্রী ও সাংসদরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারি খরচে ও ডিসি-এসপি-ওসিদের নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ করা হয়। রাজশাহীর বাগমারায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেন বাগমারা বিএনপির প্রার্থী আবু হেনা। বাদ যাননি স্বতন্ত্র ও ঐক্যফ্রন্টের প্রাথীরাও। বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীসহ অন্য দলের প্রার্থীরা তাদের প্রচারণা অফিস পুড়িয়ে বা ভাঙচুর করার অভিযোগ তোলেন ইসিতে। সম্প্রতি সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনে পুলিশের পোশাক পরে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে ভোট চাওয়ার অভিযোগ করেন ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির প্রার্থী হাবিবুল ইসলাম হাবিব। এর ফলে গতকাল শনিবার কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মারুফ আহম্মেদকে প্রত্যাহার করার নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে একজন ওসির এ রকম আচরণ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৭৭ অনুচ্ছেদ ও নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ বিধিমালা ভঙ্গ হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসি। এ ছাড়া এর আগে বিএনপি প্রার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে ১ জন ডিসি, ১ জন এডিসি এবং ৪ জন ওসিকে প্রত্যাহার ও ২ জন এসপিকে বদলি করার নির্দেশনা দেয় ইসি। এদিকে বামপন্থী দলগুলোর প্রচারণায় বাধা ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ করেছেন বাসদের সম্পাদক খালেকুজ্জামান। বাম দলগুলোর জোটের পক্ষ থেকে ইসিতে এ বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে পুলিশ প্রশাসন আওয়ামী লীগ জোটের প্রার্থীদের হয়ে কাজ করছে এমন অভিযোগ এসেছে বিরোধী সব দলের পক্ষ থেকেই। এ বিষয়ে গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এবারে নির্বাচনে একটু বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটছে, যা প্রতিরোধে পুলিশ কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছে। আবার সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, এবারের নির্বাচনে সহিংসতা ও বিরোধীপক্ষকে মাঠে নামতে বাধা দেয়ার অভিযোগ দেখেছি পত্র-পত্রিকায়। তা ছাড়া পুলিশের অতিউৎসাহী কিছু সদস্য নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন বলেও বিএনপির পক্ষ থেকে ইসিতে অভিযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু এসব বিষয়ে কমিশন অনেকটাই নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। এখনি যদি এসব প্রতিরোধ না করা যায় তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা তা বলা মুশকিল। তবে তিনি প্রতিটি দল ও প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে চলার সংস্কৃতি রপ্ত করার আহ্বান জানান। আবার আরেক সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হুসাইন মনে করেন এবার প্রথম কোনো দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হচ্ছে। সে কারণে মন্ত্রী-সাংসদ একটু বেশি সুবিধা ভোগ করছে- এটা স্বাভাবিক। তবে বিরোধীদের প্রচার-প্রচারণায় বাধা দেয়ার ঘটনা ঘটছে বলে পত্র-পত্রিকায় উল্লেখ করা হচ্ছে। তা ছাড়া দল ও প্রার্থীর পক্ষ থেকে ইসিতে প্রতিকার চেয়ে আবেদন জানানো হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পর অনেক ক্ষমতার অধিকারী হয়। তারা তাদের এ সাংবিধানিক ক্ষমতার পূর্ণ প্রয়োগ কেন করছে না বলা মুশকিল। এভাবে চলতে থাকলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক

আপলোড টাইম : ১২:০৯:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮

সব দলের বিরুদ্ধেই অভিযোগ-অ্যাকশনে ইসির ধীরগতি
ডেস্ক রিপোর্ট: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ৬ দিন বাকি। প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা। কিন্তু শুরু থেকেই আচরণবিধির তোয়াক্কা করছেন না অনেকেই। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) প্রতিদিনই ধরনা দিচ্ছে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ প্রায় সব কটি দল। যদিও তাদের এসব অভিযোগ প্রতিকারে ইসির ভূমিকা শ্লথ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে কাদা ছুড়াছুড়ি বেড়েই চলেছে, বাড়ছে অভিযোগও। মন্ত্রী-সাংসদদের বিরুদ্ধে গাড়িসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেয়ার অভিযোগ যেমন আছে, তেমনি প্রতিপক্ষের নির্বাচনী কর্মকা-ে বাধা দেয়া ও হামলা, প্রচারণায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে ইসিতে অভিযোগ করেছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, বামপন্থী দল, ইসলামী ঐক্যজোটসহ বিভিন্ন দল ও তাদের প্রার্থীরা। তবে এসব অভিযোগের কার্যকর কোনো সুরাহা করছে না ইসি। বরং এসব ঘটনাকে ভোটের সৌন্দর্য হিসেবে বর্ণনা করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদাসহ অন্য কমিশনার ও ইসি কর্মকর্তারা। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে- নির্বাচনের আগে মন্ত্রী-সাংসদরা পদত্যাগ না করে সরকারি সুযোগ-সুবিধা পূর্ণ মাত্রায় ব্যবহার করছেন। গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নোয়াখালীতে তার প্রচারণায় সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেছেন। অন্য প্রায় সব মন্ত্রী-সাংসদই সরকারি গাড়ি ও বাংলো ব্যবহার এবং পুলিশি প্রটোকল নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন- এমন অভিযোগ বিএনপির। এমনকি কোনো কোনো মন্ত্রী-সাংসদের পক্ষে পুলিশসহ প্রশাসনের কোনো কোনো কর্মকর্তা প্রকশ্যে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন, বিরোধী প্রার্থী ও সমর্থকদের হয়রানি- গ্রপ্তার করা হচ্ছে, তাদের প্রচারণায় বাধা দেয়া হচ্ছে, এমনকি নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর ও আগুনে পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগও এসেছে বিএনপিসহ ও অন্য বিরোধী প্রার্থীদের পক্ষ থেকে। এমনকি প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা বিরোধী প্রার্থীদের পোস্টার টাঙাতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ এসেছে ইসিতে। আবার বিএনপির প্রার্থী ও তার অনুসারীরা আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সমর্থকদের ওপর হামলা করছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। গত শুক্রবার ও তার আগে প্রায় ৪-৫ বার তিনি সিইসির সঙ্গে দেখা করে বিএনপির বিরুদ্ধে সহিংসতা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে তিনি জানান, গত ১২ ডিসেম্বর নরসিংদী সদর উপজেলার আমাদিয়া ইউনিয়নে প্রচার চালানোর সময় বিএনপি প্রার্থী ড. আবদুল মঈন খানের সমর্থকরা আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান ও তার সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তারা আওয়ামী লীগের প্রচারণা-সামগ্রী ভেঙে ফেলে। ১১ ডিসেম্বর ফরিদপুর ৩ আসনের আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ইউসুফ আল মামুনকে বিএনপি সমর্থকরা পিটিয়ে মেরে ফেলে এবং অফিস ভাঙচুর করে। ১২ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আফছারুল আমীনের গণসংযোগে বিএনপি হামলা চালায় এবং প্রচারণায় বাধা দেয়। নোয়াখালী সদরে যুবলীগের নেতাকে গুলি করে বিএনপির সমর্থক। এ ছাড়া কুমিল্লাসহ দেশের প্রায় সব জেলায় বিএনপি সমর্থকরা আওয়ামী লীগের ওপর হামলা ও প্রার্থীর নির্বাচনী অফিসে আগুন দেয়া ও ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ আনেন তিনি। এ-সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ ইসিতে জমা দিয়ে হামলা-সংঘর্ষ না কমায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন এইচ টি ইমাম। অন্যদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনে অন্তত ২০-২৫টি চিঠি দেয়া হয়। এসব চিঠিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার, পুলিশি প্রটেকশন নেয়া এবং পুলিশ সঙ্গে নিয়ে বিএনপি প্রার্থীদের প্রচারে ও পোস্টার টাঙানোয় বাধা দেয়ার বিষয়ে ইসির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। এমনকি মন্ত্রী ও সাংসদরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারি খরচে ও ডিসি-এসপি-ওসিদের নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ করা হয়। রাজশাহীর বাগমারায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেন বাগমারা বিএনপির প্রার্থী আবু হেনা। বাদ যাননি স্বতন্ত্র ও ঐক্যফ্রন্টের প্রাথীরাও। বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীসহ অন্য দলের প্রার্থীরা তাদের প্রচারণা অফিস পুড়িয়ে বা ভাঙচুর করার অভিযোগ তোলেন ইসিতে। সম্প্রতি সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনে পুলিশের পোশাক পরে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে ভোট চাওয়ার অভিযোগ করেন ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির প্রার্থী হাবিবুল ইসলাম হাবিব। এর ফলে গতকাল শনিবার কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মারুফ আহম্মেদকে প্রত্যাহার করার নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে একজন ওসির এ রকম আচরণ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৭৭ অনুচ্ছেদ ও নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ বিধিমালা ভঙ্গ হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসি। এ ছাড়া এর আগে বিএনপি প্রার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে ১ জন ডিসি, ১ জন এডিসি এবং ৪ জন ওসিকে প্রত্যাহার ও ২ জন এসপিকে বদলি করার নির্দেশনা দেয় ইসি। এদিকে বামপন্থী দলগুলোর প্রচারণায় বাধা ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ করেছেন বাসদের সম্পাদক খালেকুজ্জামান। বাম দলগুলোর জোটের পক্ষ থেকে ইসিতে এ বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে পুলিশ প্রশাসন আওয়ামী লীগ জোটের প্রার্থীদের হয়ে কাজ করছে এমন অভিযোগ এসেছে বিরোধী সব দলের পক্ষ থেকেই। এ বিষয়ে গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এবারে নির্বাচনে একটু বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটছে, যা প্রতিরোধে পুলিশ কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছে। আবার সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, এবারের নির্বাচনে সহিংসতা ও বিরোধীপক্ষকে মাঠে নামতে বাধা দেয়ার অভিযোগ দেখেছি পত্র-পত্রিকায়। তা ছাড়া পুলিশের অতিউৎসাহী কিছু সদস্য নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন বলেও বিএনপির পক্ষ থেকে ইসিতে অভিযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু এসব বিষয়ে কমিশন অনেকটাই নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। এখনি যদি এসব প্রতিরোধ না করা যায় তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা তা বলা মুশকিল। তবে তিনি প্রতিটি দল ও প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে চলার সংস্কৃতি রপ্ত করার আহ্বান জানান। আবার আরেক সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হুসাইন মনে করেন এবার প্রথম কোনো দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হচ্ছে। সে কারণে মন্ত্রী-সাংসদ একটু বেশি সুবিধা ভোগ করছে- এটা স্বাভাবিক। তবে বিরোধীদের প্রচার-প্রচারণায় বাধা দেয়ার ঘটনা ঘটছে বলে পত্র-পত্রিকায় উল্লেখ করা হচ্ছে। তা ছাড়া দল ও প্রার্থীর পক্ষ থেকে ইসিতে প্রতিকার চেয়ে আবেদন জানানো হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পর অনেক ক্ষমতার অধিকারী হয়। তারা তাদের এ সাংবিধানিক ক্ষমতার পূর্ণ প্রয়োগ কেন করছে না বলা মুশকিল। এভাবে চলতে থাকলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য।