আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি মামলা
- আপলোড টাইম : ১০:৩৪:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ অগাস্ট ২০২০
- / ১৪৪ বার পড়া হয়েছে
ফেসবুকে অসংলগ্ন ও অশালীন পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে
নিজস্ব প্রতিবেদক:
সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গা আওয়ামী লীগের বিবদমান দুটি গ্রুপ একে অন্যের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অসংলগ্ন ও অশালীন পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুটি ভিন্ন ভিন্ন মামলা দায়ের করেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় সাংসদ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের পক্ষে জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাহাবুল ইসলাম এবং পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপুর পক্ষে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাফিজুর রহমান মাফি এ মামলা দায়ের করেন। এজাহারভুক্ত মামলা দুটির নম্বর ১২ এবং ১৩। উভয় মামলায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে ওয়েবসাইটে বা ফেসবুকে সম্মানহানীকর কথা বা পোস্ট দেওয়া, জনশৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটানোর উপক্রম হওয়ার কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৯ ও ৩১ ধারায় রুজু করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত ১৩ জুলাই চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত এক সভায় সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ভিজিএফ-এর চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ তোলেন পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপুর বিরুদ্ধে। এরপর ২৮ জুলাই চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় ভিজিএফ-এর চাল বিতরণের সময় আকস্মিকভাবে সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন উপস্থিত হন। এ সময় পৌর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কিছুটা বাগবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উভয়পক্ষ একই স্থানে পৌরসভার সামনে মানববন্ধন করে। মানববন্ধনে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে নিয়ে নানা প্রকার মন্তব্য করে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন আপত্তিকর তথ্য ছড়াতে থাকে। তখন থেকেই উভয় পক্ষের মধ্যে এক প্রকার চাপা ক্ষোভ বিরাজমান ছিল। এদিকে, গত ১৩ আগস্ট চুয়াডাঙ্গা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গনে জেলা পুলিশের একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রায় ১৬ মিনিট ৩০ সেকেন্ড বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সাংসদ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন। বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি জেলার হলুদ সাংবাদিকদের বিষয়ে কিছু কটূক্তিমূলক কথা বলেন। ওই বক্তব্যের ভিডিও কাটিং করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাড়া হলে চাপা উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পাই। উভয় পক্ষই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম পোস্ট দিতে থাকে। এদিকে, এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মামলা হবে এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল পাল্টাপাল্টি মামলার ঘটনা ঘটে।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ আগস্ট চুয়াডাঙ্গা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গনে জেলা পুলিশের অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের ভবিষ্যত নির্ধারণীমূলক এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রায় ১৬ মিনিট ৩০ সেকেন্ড বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সাংসদ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন। বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি জেলার হলুদ সাংবাদিকদের বিষয়ে কিছু কটূক্তিমূলক কথা বলেন। ওই বক্তব্যের ভিডিও চিত্র কৌশলে সংগ্রহ করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কিছুটা কাটিং করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাড়ে কিছু উচ্ছৃঙ্খল রাজনৈতিক নেতা-কর্মী। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে ‘পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান, ভয়ংকর মেজোভাই, সন্ত্রাসীর লালনকারী সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন’ এরকম কিছু শব্দ ব্যবহার করে। এ বিষয়ে সাংসদ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপির অনুমতি নিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ছয়জনের নাম উল্লেখসহ বেশ কিছু অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করেন জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাহাবুল ইসলাম।
অপর দিকে, গত ২৮ জুলাই চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় গরীব দুস্থদের মধ্যে ভিজিএফ-এর চাল বিতরণের সময় হঠাৎ সাংসদ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন উপস্থিত হলে এক অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এরই একপর্যায়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জানিফসহ বেশ কয়েকজন লাঞ্ছিত হন। পরবর্তীতে পৌর মেয়রকে চাল চোর বলাসহ অপ্রীতিকর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেন কয়েকজন উচ্ছৃঙ্খল রাজনৈতিক নেতা-কর্মী। এ ঘটনায় পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপুর অনুমতি নিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাফিজুর রহমান মাফি।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গায় আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপ দুটি ধারায় বিভক্ত। দুটি গ্রুপের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের মারামারি হয়েছে। বিভিন্ন সময় চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের বিবদমান দুটি গ্রুপ বিভিন্ন স্থানে তাদের একে-অপরকে নিয়ে বিভিন্ন অপ্রীতিকর বক্তব্য প্রদান করেন। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে যে, তারা এসব বক্তব্যের ভিডিও ও বিভিন্ন প্রকার অপ্রীতিকর মন্তব্য প্রকাশ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে। যেটা আইনের ভাষায় অপরাধ। কিছু উচ্ছৃঙ্খল রাজনৈতিক নেত-কার্মী এ ধরনের কাজে লিপ্ত আছে। এ বিষয়ে দুটি পক্ষই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু অপ্রীতিকর পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষ মামলা করেছে। আসলে রাজনৈতিকভাবে বিভিন্ন প্রকার বক্তব্য থাকতে পারে. তবে সেটিকে ডকুমেন্টারি হিসেবে প্রচার করা ঠিক নয়। মামলা রুজু হয়েছে, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে, ক্ষমতাসীন দলের দুটি পক্ষের এরুপ একে অপরের বিরুদ্ধে অসংলগ্ন ও অশালীন পোস্টকে কেন্দ্র করে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বড় ধরনের অবনতি না হয়, সেজন্য প্রশাসনের আইনি দৃষ্টি দেওয়া জরুরি বলে মনে করেন চুয়াডাঙ্গার সচেতন মহল।